আনন্দমোহন বসু: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
116.58.202.169-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে Ashiq Shawon-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
১৩ নং লাইন:
'''আনন্দমোহন বসু''' ([[২৩শে সেপ্টেম্বর]], [[১৮৪৭]]- [[২০শে আগস্ট]], [[১৯০৬]]) ছিলেন [[বাঙালি]] রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবক। [[ময়মনসিংহ জেলা|ময়মনসিংহ জেলার]] জয়সিদ্ধি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহ জজ আদালতের পেশকার পদ্মলোচন বসু ছিলেন তার পিতা। বিজ্ঞানী [[জগদীশচন্দ্র বসু|জগদীশচন্দ্র বসুর]] বোন স্বর্ণপ্রভা বসু তাঁর স্ত্রী। আনন্দমোহন বসু সস্ত্রীক [[ব্রাহ্মধর্ম|ব্রাহ্মধর্মে]] দীক্ষিত হয়েছিলেন।
 
== জীবনী ==
ভারতীয় উপমহাদেশে বৃহত্তর ময়মনসিংহকে প্রথমদিকে যারা সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন,সবার মাঝে ময়মনসিংহকে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন, আনন্দমোহন বসু তাঁদের অন্যতম। তিনি ছিলেন একাধারে একজন জাতীয়তাবাদী নেতা, সমাজ সংস্কারক ও সাধারণ ব্রাম্ম সমাজের প্রতিষ্টাতা। তিনি ততকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহের অন্তর্ভূক্ত কিশোরগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) জয়সিদ্ধি গ্রামে ১৮৪৭ সালে এক ভূস্বামী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পদ্মলোচন বসু ছিলেন ময়মনসিংহ জজ আদালতের পেশকার।
আনন্দমোহন বসু বৃহত্তর ময়মনসিংহের [[কিশোরগঞ্জ জেলা|কিশোরগঞ্জ জেলার]] জয়সিদ্ধি গ্রামের এক ভূস্বামী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু হয় ময়মনসিংহেই।‘ময়মনসিংহেই। [[ময়মনসিংহ জিলা স্কুল’স্কুল]] থেকে মেধা তালিকায় ৯ম স্থান অধিকার করে ১৮৬২ সালে এনট্রান্স পরীক্ষা পাশ করেন। তিনি এফ.এ[[এফএ]] এবং বি.এ[[বিএ]] উভয়পরীক্ষা পরীক্ষায়দেন ‘প্রেসিডেন্সি[[প্রেসিডেন্সী কলেজ’কলেজ]] হতেথেকে। উভয় পরীক্ষায়ই শীর্ষস্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন। পরীক্ষাসমূহে ধারাবাহিকভাবে তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের ফলে তিনিকরেন। [[১৮৭০]] সালে কাঙ্ক্ষিত[[কলকাতা ‘কলকাতাবিশ্ববিদ্যালয়]] বিশ্ববিদ্যালয়’কর্তৃক এরপ্রদত্ত ‘প্রেমচাঁদ[[প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি’’বৃত্তি]] লাভ করেন। বৃত্তি লাভের ফলে বসুর পক্ষেনিয়ে উচ্চ শিক্ষারশিক্ষা জন্যঅর্জনের ইংল্যান্ডেলক্ষ্যে যাওয়া[[ইংল্যান্ড]] সম্ভবযান। হয়।সেখানে তিনি ক্যামব্রিজের[[কেমব্রিজ|কেমব্রিজের]] [[ক্রাইস্ট চার্চকলেজ]] কলেজেথেকে উচ্চতর গণিত বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি অনার্সসহ ডিগ্রিডিগ্রী পরীক্ষায়পরীক্ষা তথা (ট্রাইপস) পরীক্ষা প্রথম শ্রেণিশ্রেণী লাভ করেন এবংকরে প্রথম ভারতীয় র্যার‌্যাংলার ঙলারহবার হন।সৌভাগ্য এরপরঅর্জন করেন।<ref>'''আনন্দমোহন বসু''' - বাংলাপিডিয়া নিবন্ধ; লেখক - সিরাজুল ইসলাম। প্রথম অণুচ্ছেদের নিচ থেকে দ্বিতীয় লাইন</ref> [[১৮৭৪]] সাল থেকে তিনি আইন ব্যবসা শুরু করেন।করেছিলেন।
 
ব্যাক্তিজীবনে আনন্দমোহন বসু আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর বোন স্বর্ণপ্রভা বসুকে বিয়ে করেন। জীবনের প্রথম দিক হতেই তাঁর মন ছিল ধর্মপ্রবণ। ইংল্যান্ডে যাওয়ার পূর্বেই তিনি ১৮৬৯ সালে সস্ত্রীক ব্রাহ্ম ধর্মমত গ্রহণ করেন।
== রাজনৈতিক দর্শন ==
১৮৭১ সালে লন্ডনে তাঁর সাক্ষাৎ হয় আরেক জাতীয়তাবাদী নেতা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি র সাথে। যিনি পরবর্তীতে সামাজিক জীবনে আনন্দমোহন বসুর অন্যতম পরামর্শদাতা ছিলেন । আনন্দমোহন বসু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে কেশবচন্দ্র সেন এর পরিচালনাধীন তৎকালীন ব্রাহ্ম সমাজ পরিচালিত ধর্মীয় এবং সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে যোগদান করেন। ধর্মীয় বিশ্বাসে বসুর অপরাপর সহযোগীরা ছিলেন পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী, উমেশচন্দ্র দত্ত, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী এবং দ্বারকানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮৭৮ সালে নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে ব্রাহ্ম সমাজে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে অন্যতম ছিল কেশবচন্দ্র সেনের নাবালিকা কন্যার সঙ্গে কুচবিহারের রাজার নাবালক পুত্রের বিয়ে। আনন্দমোহন ভিন্ন মতাবলম্বীদের নেতৃত্ব দেন এবং ‘সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ’ নামে একটি নতুন ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। এ নতুন ব্রাহ্ম সমাজের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন তিনিই। সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের কর্মকান্ডের ব্যবস্থাপনা এবং এর আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আনন্দমোহন একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলেন। টানা ১৩ বছর ধরে তিনি এর সভাপতি হিসেবে কাজ করেন এবং এ সময়কালে তিনি ব্রাহ্ম সমাজের জন্য কলকাতায় অনেকগুলি ব্রাহ্ম প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে বিস্তৃত একটি পাকা চত্বরও (কমপ্লেক্স) ছিল। ব্রাহ্ম প্রতিষ্ঠানসমূহের ছাত্রদের শারীরিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণের জন্য বসু তাঁর ঘনিষ্ঠতম সহযোগী পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর সহায়তায় ‘Students Weekly Service’ নামে একটি নৈতিক শিক্ষাকোর্স প্রবর্তন করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন এ বিষয়ের বক্তা।
আনন্দমোহন বসু [[১৮৮৪]], [[১৮৯০]] এবং [[১৮৯৫]] সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি [[১৯০৫]] সালের [[বঙ্গভঙ্গ|বঙ্গভঙ্গের]] তীব্র বিরোধিতা করেন।
রাজনৈতিকভাবে আনন্দমোহন বসুর দুটি উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তিনিই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন যে, উপনিবেশিক পরিমন্ডলে সমাজের সর্বাপেক্ষা সচেতন শ্রেণি ছাত্রসমাজকে অবশ্যই দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সে লক্ষ্যে তাদের নিজস্ব একটি সংগঠন থাকা উচিত। বসু ১৮৭৫ সালে ‘ক্যালকাটা স্টুডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং একে মর্যাদা দেওয়ার জন্য তিনি নিজেই এর প্রথম সভাপতি হন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বসু ১৮৭৬ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন (Indian Association) নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে নতুন পথ প্রদর্শনকারী হিসেবে আর একটি অবদান রেখে যান। এর উদ্দেশ্য ছিল উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত করা।
 
== অবদান ==
আনন্দমোহন বসু
* ময়মনসিংহ শহরে ''ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন'' নামে বিদ্যালয় স্থাপন করেন (১৮৮৩), বর্তমানে [[আনন্দমোহন কলেজ|আনন্দমোহন কলেজ (বাংলাদেশ)]]।
১৮৮৩ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন একটি জাতীয় আলোচনা সভা আহবান করে। পরে এ অ্যাসোসিয়েশনই ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসএ পরিণত হয়। বসু এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৯৮ সালের মাদ্রাজ অধিবেশনে বসু কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।
* [[শিবনাথ শাস্ত্রী|শিবনাথ শাস্ত্রীর]] সহযোগিতায় [[কলকাতা|কলকাতায়]] ''[[সিটি কলেজ (আমহারস্ট স্ট্রীট)|সিটি স্কুল]]'' প্রতিষ্ঠা করেন (১৮৭৯)। এটি এখন [[আনন্দমোহন কলেজ (কলকাতা)]]।
আনন্দমোহন বসু ১৮৮৪, ১৮৯০ এবং ১৮৯৫ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
* কলকাতায় [[বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়]] স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন (১৮৭৬)।
সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে আনন্দমোহন বসুর অবদান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নারীশিক্ষার উন্নয়নের জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন। সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য সামাজিক কর্মসূচি প্রণয়ন করতে তিনি সকলকে উদাত্ত আহবান জানান। ১৮৭৬ সালে তিনি কলকাতায় ‘বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। নারীশিক্ষা সংগঠনে অধিকতর ভাল ফল লাভের আশায় পরে তিনি বিদ্যালয়টিকে বেথুন স্কুলের সাথে একীভূত করেন। ১৮৭৯ সালে তিনি কলকাতায় সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নিজ শহর ময়মনসিংহে তাঁর নিজের বাসায় সিটি কলেজের একটি শাখা খোলা হয়। সিটি কলেজিয়েট স্কুল নামে প্রতিষ্ঠানটি এখনও বর্তমান। বসুর সম্মানে সিটি কলেজটির পুনঃনামকরণ করা হয় আনন্দমোহন কলেজ। এক্ষেত্রে তাঁর বাল্যবন্ধু,ময়মনসিংহের আরেক কৃতী সন্তান হামিদউদ্দীন মৌলভী বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
আনন্দমোহনের উজ্জ্বল শিক্ষাজীবন ও শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগের কারণে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ১৮৮২ সালে ইন্ডিয়ান এডুকেশন কমিশনের (হান্টার কমিশন) সদস্য করে। ক্রমাগতভাবে তিনি বঙ্গীয় আইন সদস্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ‘ফেলো’ মনোনীত হন। তাঁরই অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে ‘Calcutta University Act of Incorporation’ এমনভাবে সংশোধন করা হয় যাতে এটিকে কেবলমাত্র একটি পরীক্ষা গ্রহণকারী সংস্থা হতে পরীক্ষা গ্রহণকারী ও শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা যায়। ১৮৯২ সালের ভারত আইনের অধীনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গীয় আইন পরিষদে একজন সদস্য নির্বাচন করার অধিকার লাভ করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বঙ্গীয় আইন পরিষদ এর সদস্যনির্বাচিত হন আনন্দমোহন বসু। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে বসু তীব্রভাবে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেন। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি বঙ্গভঙ্গবিরোধী এক সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং রোগশয্যা হতে বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দেন। ১৯০৬ সালের ২০ আগস্ট আনন্দমোহন বসুর মৃত্যু হয়।
 
== তথ্যসূত্র ==
<references/>
 
http://mymensinghdivision24.com/news/3300 = ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল
 
{{অসম্পূর্ণ}}