পৌষ সংক্রান্তি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
Ami.bangali (আলোচনা | অবদান)
সংশোধন
১ নং লাইন:
{{Infobox Holiday
|holiday_name = পৌষ সংক্রান্তি বা পৌষ পার্বণ
|type = বাঙালি হিন্দু
|longtype = ঋতুভিত্তিক, ঐতিহ্যবাহী
|significance = ফসল তোলার উৎসব, দক্ষিণ অয়নান্ত ও উত্তরায়ণের সূচনা উদ্‌যাপন
|image = Kite shop in Lucknow.jpg
|caption =
|caption = [[লখনউ|লখনউয়ের]] একটি দোকানে বিক্রয়যোগ্য বর্ণময় ঘুড়ি
|official_name = মকর সংক্রান্তি
|nickname = সংক্রান্তি
|date = বর্তমানে ১৪/১৫ জানুয়ারি
|celebrations = ঘুড়িপিঠে পুলি ওড়ানো
|relatedto =
}}
১৫ নং লাইন:
[[চিত্র:PoushSonkrantiManja.JPG|thumb|200px|ঘুড়ি উড়ানোর জন্য সূতায় মাঞ্জা দিতে সুতা প্রস্তুত করা হচ্ছে]]
'''পৌষ সংক্রান্তি''' বা '''মকর সংক্রান্তি''' বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা [[পৌষ]] মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করে খাকে। তার মধ্যে পিঠা খাওয়া, [[ঘুড়ি]] উড়ানো অন্যতম। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানোব পরে সন্ধ্যায় পটকা ফুটিয়ে ফানুস উড়িয়ে উৎসবের সমাপ্তি করে। [[ভারত|ভারতের]] [[বীরভূম জেলা|বীরভূমের]] [[কেন্দুলী]] গ্রামে এই দিনটিকে ঘিরে ঐতিহ্যময় [[জয়দেব মেলা]] হয়। [[বাউল গান]] এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ। মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি ক্ষণ। 'মকরসংক্রান্তি' শব্দটি দিয়ে নিজ কক্ষপথ থেকে [[সূর্য|সূর্যের]] মকর রাশিতে প্রবেশকে বোঝানো হয়ে থাকে। ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী 'সংক্রান্তি' একটি সংস্কৃত শব্দ, এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। ১২টি রাশি অনুযায়ী এরকম সর্বমোট ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে।<ref name="KK">''[http://www.kalerkantho.com/index.php?view=details&type=gold&data=Mobile&pub_no=763&cat_id=2&menu_id=20&news_type_id=1&news_id=221028&archiev=yes&arch_date=16-01-2012 চরাচর: মকরসংক্রান্তি]'', সুজন মঞ্জুর, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। ১৬ জানুয়ারি ২০১২, সম্পাদকীয় পাতা। সংগ্রহের তারিখ: ১ এপ্রিল ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।</ref>
== পশ্চিমবঙ্গে পৌষ পার্বণ ==
 
== উৎসব ==
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় এই দিবস বা ক্ষণকে ঘিরে উদযাপিত হয় [[উৎসব]]। নেপালে এই দিবসটি '''মাঘি''' নামে, থাইল্যান্ডে '''সংক্রান''', লাওসে '''পি মা লাও''', মিয়ানমারে '''থিং ইয়ান''' এবং কম্বোডিয়ায় '''মহাসংক্রান''' নামে উদযাপিত হয়। অবশ্যিকভাবে দেশ ভেদে এর নামের মতোই উৎসবের ধরণে থাকে পার্থক্য।
=== ভারত ===
==== পশ্চিমবঙ্গ ====
[[চিত্র:Gangasagar Fair Transit Camp - Kolkata 2012-01-14 0586.JPG|thumb|right|পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলার একটি চিত্র]]
[[ভারত|ভারতের]] [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গে]] মকর সংক্রান্তি বা '''পৌষসংক্রান্তি'''-তে মূলত নতুন ফসলের উৎসব 'পৌষ পার্বণ' উদযাপিত হয়। নতুন ধান, খেজুরের গুড় এবং পাটালি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি করা হয়, যার জন্য প্রয়োজন হয় চালের গুঁড়া, নারিকেল, দুধ আর খেজুরের গুড়। মকরসংক্রান্তি নতুন ফসলের উৎসব ছাড়াও ভারতীয় সংস্কৃতিতে 'উত্তরায়ণের সূচনা'<ref name="মকর সংক্রান্তি ও উত্তরায়ণ"/> হিসেবে পরিচিত। একে অশুভ সময়ের শেষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, পঞ্জিকা মতে, জানুয়ারির<ref name="মকর সংক্রান্তি ও উত্তরায়ণ">[http://www.mypanchang.com/uttarynadakshinayana.php Makarsamkranti and Uttarayana misconception and Panchang Siddhanta]</ref><ref name="স্টার আনন্দ">[http://starananda.newsbullet.in/video/state/15989 জমজমাট গঙ্গাসাগর, স্টার আনন্দ, ১২ জানুয়ারি ২০১২]</ref> মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়। এই দিনে [[দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা|দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার]] অন্তর্গত [[গঙ্গাসাগর|সাগরদ্বীপে]] মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে পুণ্যস্নান ও বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সহস্রাধিক<ref name="স্টার আনন্দ"/> পুণ্যার্থী ও অন্যান্য রাজ্য থেকে আগত দর্শনার্থীদের সমাগম হয় এই মেলায়।<ref name="স্টার আনন্দ"/><ref>[http://zeenews.india.com/bengali/zila/gangasagar-bath_2549.html গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান, ২৪ ঘণ্টা]</ref><ref>[http://starananda.newsbullet.in/video/state/15764-2012-01-09-11-15-02 গঙ্গাসাগরে প্রস্তুতি, স্টার আনন্দ, ৯ জানুয়ারি ২০১২]</ref>
 
=== আউনি বাউনি ===
==== অন্যান্য রাজ্য ====
'''আউনি বাউনি''' (বানানান্তরে '''আওনি বাওনি''') বা '''আগলওয়া''' পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে পালিত একটি শস্যোৎসব।<ref name="kosh">{{cite book |title=বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ |editor-last=চক্রবর্তী |editor-first=ড: বরুণকুমার |year=২০০১ |month=জানুয়ারী |publisher=অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স (প্রকাশন বিভাগ) |location=কলকাতা|isbn=81-86036-13-X |page=২০}}</ref> এই উৎসব ক্ষেতের পাকা ধান প্রথম ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষক পরিবারে পালনীয় অনুষ্ঠানবিশেষ। হেমন্তকালে আমন ধান ঘরে প্রথম তোলার প্রতীক হিসেবে কয়েকটি পাকা ধানের শিষ ঘরে এনে কিছু নির্দিষ্ট আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়। [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গে]] পৌষ সংক্রান্তির দিন দু-তিনটি ধানের শিষ বিনুনি করে 'আউনি বাউনি' তৈরি করা হয়। শিষের অভাবে দু-তিনটি খড় একত্রে লম্বা করে পাকিয়ে তার সঙ্গে ধানের শিষ, মুলোর ফুল, সরষে-ফুল, আমপাতা ইত্যাদি গেঁথে 'আউনি বাউনি' তৈরি করারও রেওয়াজ রয়েছে। এই আউনি বাউনি ধানের গোলা, ঢেঁকি, বাক্স-পেটরা-তোরঙ্গ ইত্যাদির উপর এবং খড়ের চালে গুঁজে দেওয়া হয়।<ref>"আউনি বাউনি", তারাপদ মাইতি; ''বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ'', ড. দুলাল চৌধুরী সম্পাদিত, আকাদেমি অফ ফোকলোর, কলকাতা, ২০০৪, পৃ. ৩২২</ref> বছরের প্রথম ফসলকে অতিপবিত্র ও সৌভাগ্যদায়ক মনে করে একটি পবিত্র ঘটে সারা বছর ধরে সংরক্ষণ করা হয়। এই আচারটিকেই 'আউনি বাউনি' বলা হয়।<ref>''বাংলার লোকসংস্কৃতি''; আশুতোষ ভট্টাচার্য; ন্যাশানাল বুক ট্রাস্ট, ইন্ডিয়া; নতুন দিল্লি; ২০০৫; পৃ. ৭১</ref>
 
== নানা দেশে এই উৎসবের নানা নাম ==
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় এই দিবস বা ক্ষণকে ঘিরে উদযাপিত হয় [[উৎসব]]। নেপালে এই দিবসটি '''মাঘি''' নামে, থাইল্যান্ডে '''সংক্রান''', লাওসে '''পি মা লাও''', মিয়ানমারে '''থিং ইয়ান''' এবং কম্বোডিয়ায় '''মহাসংক্রান''' নামে উদযাপিত হয়। অবশ্যিকভাবে দেশ ভেদে এর নামের মতোই উৎসবের ধরণে থাকে পার্থক্য।
 
===ভারতের নানা রাজ্যে একই দিনে উদযাপিত অনুষ্ঠান ===
ভারতের উত্তর এবং পশ্চিম প্রদেশগুলোতে উৎসবটি প্রবল আগ্রহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে সংক্রান্তি দিবস হিসেবে পালিত হয়। প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতেও এই দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। তাই সামাজিক এবং ভৌগোলিক গুরুত্ব ছাড়াও এই দিনটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে।<ref name="KK"/>
 
পশ্চিম ভারতীয় প্রদেশ গুজরাটে উৎসবটি আরো অনেক বড় আকারে উদযাপিত হয়। মানুষ, [[সূর্য দেবতা|সূর্য দেবতার]] কাছে নিজেদের ইচ্ছা বা আকূতিকে সুন্দর সুন্দর ঘুড়ির মাধ্যমে প্রকাশ করতে পালন করে [[ঘুড়ি উৎসব]], যা মূলত প্রিয় দেবতার কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি রূপক বা [[প্রতীক]] হিসেবে কাজ করে। গ্রামগঞ্জে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। মকরসংক্রান্তি সম্মান, অভিলাষ এবং জ্ঞানের দেবী [[সরস্বতী]]কে সম্মান প্রদানের মাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। যেহেতু উৎসবটি শীতের মাঝামাঝি সময়ে উদযাপিত হয়, সেহেতু এই উৎসবে এমন ধরণের খাবার তৈরি করা হয়, যা শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং বেশ শক্তি জোগায়। গুড় দিয়ে তৈরি তিলের লাড্ডু এই উৎসবের অন্যতম উপাদেয় খাবার। মহারাষ্ট্রে একে বলা হয় 'তিলগুল'। কর্ণাটকে একে বলা হয় 'ইল্লু বিল্লা'। অন্য কিছু প্রদেশে গবাদিপশুকে নানা রঙে সজ্জিত করা হয় এবং আগুনের ওপর দিয়ে ঝাঁপ দেওয়ানো হয়।<ref name="KK"/>
 
=== আউনি বাউনি ===
'''আউনি বাউনি''' (বানানান্তরে '''আওনি বাওনি''') বা '''আগলওয়া''' পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে পালিত একটি শস্যোৎসব।<ref name="kosh">{{cite book |title=বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ |editor-last=চক্রবর্তী |editor-first=ড: বরুণকুমার |year=২০০১ |month=জানুয়ারী |publisher=অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স (প্রকাশন বিভাগ) |location=কলকাতা|isbn=81-86036-13-X |page=২০}}</ref> এই উৎসব ক্ষেতের পাকা ধান প্রথম ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষক পরিবারে পালনীয় অনুষ্ঠানবিশেষ। হেমন্তকালে আমন ধান ঘরে প্রথম তোলার প্রতীক হিসেবে কয়েকটি পাকা ধানের শিষ ঘরে এনে কিছু নির্দিষ্ট আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়। [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গে]] পৌষ সংক্রান্তির দিন দু-তিনটি ধানের শিষ বিনুনি করে 'আউনি বাউনি' তৈরি করা হয়। শিষের অভাবে দু-তিনটি খড় একত্রে লম্বা করে পাকিয়ে তার সঙ্গে ধানের শিষ, মুলোর ফুল, সরষে-ফুল, আমপাতা ইত্যাদি গেঁথে 'আউনি বাউনি' তৈরি করারও রেওয়াজ রয়েছে। এই আউনি বাউনি ধানের গোলা, ঢেঁকি, বাক্স-পেটরা-তোরঙ্গ ইত্যাদির উপর এবং খড়ের চালে গুঁজে দেওয়া হয়।<ref>"আউনি বাউনি", তারাপদ মাইতি; ''বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ'', ড. দুলাল চৌধুরী সম্পাদিত, আকাদেমি অফ ফোকলোর, কলকাতা, ২০০৪, পৃ. ৩২২</ref> বছরের প্রথম ফসলকে অতিপবিত্র ও সৌভাগ্যদায়ক মনে করে একটি পবিত্র ঘটে সারা বছর ধরে সংরক্ষণ করা হয়। এই আচারটিকেই 'আউনি বাউনি' বলা হয়।<ref>''বাংলার লোকসংস্কৃতি''; আশুতোষ ভট্টাচার্য; ন্যাশানাল বুক ট্রাস্ট, ইন্ডিয়া; নতুন দিল্লি; ২০০৫; পৃ. ৭১</ref>
 
=== বাংলাদেশ ===