সাগরময় ঘোষ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
বিষয়শ্রেণী:১৯৯৯-এ মৃত্যু যোগ হটক্যাটের মাধ্যমে
সম্প্রসারণ, তথ্যসূত্র যোগ/সংশোধন
১ নং লাইন:
{{কাজ চলছে|date=জানুয়ারি ২০১৭}}
'''সাগরময় ঘোষ''' একজন স্বনামখ্যাত সাহিত্যিক যিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত [[দেশ]] পত্রিকার সম্পাদকীয় দায়িত্ব পালন করে জীবন্ত কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন।<ref>[http://archives.anandabazar.com/archive/1120618/18karcha.html আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ-১]</ref><ref>[http://archives.anandabazar.com/archive/1120204/4pustak1.html আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ-২]</ref> ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুতে লণ্ডনের [[দ্য গার্ডিয়ান]] পত্রিকায় প্রকাশিত শোকসংবাদে তাঁকে বাংলার ‘সাহিত্য ব্যাঘ্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। মৃত্যুর কিছু পূর্বে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিংশ শতাব্দীর সবেচেয়ে দীর্ঘজীবি বাংলা সাপ্তাহিক ''দেশ'' পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।<ref>[https://www.theguardian.com/news/1999/mar/18/guardianobituaries1 Bengal's literary tiger]</ref><ref>[http://www.anandabazar.com/todayinhistory/%E0%A7%A8%E0%A7%A8-%E0%A6%9C-%E0%A6%A8-%E0%A7%A7%E0%A7%AF%E0%A7%A7%E0%A7%A8-1.416807 আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ-৩]</ref>
 
== জীবন বৃত্তান্ত==
তাঁর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বঙ্গে, বর্তমান বাংলাদেশের [[চাঁদপুর|চাঁদপুরে]], ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ২২শে জুন তারিখে। চাঁদপুরেই ছিল সেখানেই ছিলো তাদের পৈত্রিক ভিটা। কালক্রমে নদী ভাঙনে হারিয়ে গেছে সেই পৈত্রিকা ভিটা। তাঁর পিতা কালিমোহন ঘোষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ সহচর। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা [[শান্তিদেব ঘোষ]] ছিলেন রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিশেষ সাধক। সাগরময় ঘোষ শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন, তিনি রবীন্দ্রনাথের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। শান্তিনিকেতনে অধ্যয়নকালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রভাবে সাহিত্য ও সঙ্গীত, সর্বোপরি শিল্পের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ জন্মে যা প্রয়াণাবধি তাঁর মানসপ্রতিভাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।<ref>[https://www.theguardian.com/news/1999/mar/18/guardianobituaries1 Bengal's literary tiger]</ref>
তাঁর জন্ম চাঁদপুরে। সেখানেই ছিলো তার পৈত্রিক ভিটা। নদী ভাঙনে হারিয়ে গেছে সাগরময় ঘোষের স্মৃতিভিটা। সাগরময় ঘোষ রবীন্দ্রনাথের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেছেন। ৮৬ বছর বয়সে ১৯৯৯-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি পরলোকগমন করেন।
 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ’আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে এই পৃথিবীতে জন্মে তুমি কি পেলে? আমার উত্তর রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ আর রবীন্দ্রনাথ।’ ''দেশ'' পত্রিকায় যোগদানের তাঁর ওপর অর্পিত প্রথম দায়িত্ব ছিল [[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর|কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের]] কাছ থেকে একটা কবিতা আর গল্প সংগ্রহ করা। সেটি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কবিগুরুর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে মাত্র। যে গল্পটি তিনি সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন তা হলো '''শেষ কথা'''।
== দেশের সম্পাদকীয় দায়িত্ব==
কলকাতার দেশ পত্রিকার সঙ্গে সাগরময় ঘোষ-এর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিলো ৫০ বছরের। ১৯৩৯ সালে যোগ দিয়েছিলেন তিনি সহকারি সম্পাদক হিসেবে। দিনে দিনে পূর্ণতায় তিনি ১৯৭৬ এ দেশ সম্পাদক হন। সাগরময় ঘোষের এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, 'দেশ' পত্রিকায় যোগ দিয়ে প্রথম যে এসাইনমেন্টটি করেছিলাম তা ছিল কবিগুরুর কাছ থেকে একটা কবিতা আর গল্প নেওয়া। সেটা কবিগুরুর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে মাত্র। কথা প্রসঙ্গে বলেন, স্বদেশি আন্দোলন করার জন্য একবার জেলে গিয়েছিলাম। সেই জেলখানায় পরিচয় হয় আনন্দবাজারের সম্পাদকের সঙ্গে। তিনিও জেলে। আমার চাকরি হয়ে যায় জেলখানায়। আমাকে তিনটা অপশন দিয়েছিলেন তিনি। আমি নিলাম 'দেশ' পত্রিকায় চাকরির কাজ। সেই থেকে আছি। দেশ পত্রিকায় আমার চাকরির বয়স পঞ্চাশ পার হয়েছে। তবে সম্পাদকের দায়িত্বে আছি এই সেদিন ১৯৭৬ থেকে, ১৪ বছর হলো।’ প্রখ্যাত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাগরময় ঘোষের আহ্বানে আনন্দবাজারে রবিবাসরীয় পাতায় যুক্ত হন; তাঁর আহ্বানে দেশ শারদীয় সংখ্যায় ১৯৬৬ সালে সুনীল লেখেন তাঁর প্রথম উপন্যাস 'আত্মপ্রকাশ'। বাংলা সাহিত্য ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনেক।<ref>http://www.bd-pratidin.com/various/2014/09/12/29836</ref><ref>http://www.shahidulazam.com/details.php?nid=283</ref>
 
তিনি একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তানের জনক। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৮৬ বছর বয়সে সাগরময় ঘোষ পরলোকগমন করেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের পরিমণ্ডলে শোকের বিশেষ ছায়াপাত হয়েছিল।
== প্রকাশনা==
 
== দেশের''দেশ'' পত্রিকার সম্পাদকীয় দায়িত্ব==
তাঁর জীবনের প্রারম্ভ ঘটনার ঘনঘটায় পূর্ণ। রবীন্দ্রনাথের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্য, কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা, ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়ে কারাবরণ, সরকারি চাকরি, বেঙ্গল ইমিউনিটি এবং দু-একটি পত্রিকায় কিছুকাল কাজ করার পর তিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ''দেশ'' পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত এক নাগাড়ে তিনি এ সাহিত্যমুখী পত্রিকাটির হাল দৃঢ়তা এবং দক্ষতার সঙ্গে ধরে রেখেছিলেন। ঔপন্যাসিক [[সুবোধ ঘোষ|সুবোধ ঘোষের]] ''তিলাঞ্জলি'', [[সমরেশ বসুর]] দুটি উপন্যাস [[বিবর]] এবং [[প্রজাপতি]] সহ নানা বিতর্কিত রচনা মুদ্রণের দায়ে তিনি অভিযুক্ত হলেও লক্ষ্যে একাগ্র এবং কাজে একনিষ্ঠ থেকেছেন, থেকেছেন নিরাপোশ। নিজে অন্তরালে থেকে নতুন নতুন লেখক-কবি-কথাসাহিত্যিককে আবিষ্কার করে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দীর্ঘ দিন একই পদের দায়িত্ব পালন করেও তিনি জ্বরাগ্রস্ত হন নি, বরং সমকালীনতাকে আশ্রয় করে পত্রিকা সাজানোর কাজটি করে গেছেন, দেশকে রেখেছেন চির-আধুনিক। তাঁর সম্বন্ধে কবি [[নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী]] লিখেছিলেন, ‘সাগরদাদা আপনি বুড়ো হলেন না বিলকুল,/ পঁচাত্তরেও তরতাজা মন, ভ্রমরকৃষ্ণ চুল’। তাঁর রাশভারী ব্যক্তিত্ব এবং মেজাজের নবীনতা তাকে দিয়েছে তুলনারহিত সাফল্য।<ref>[http://archives.anandabazar.com/archive/1120618/18karcha.html আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ-১]</ref>
 
''দেশ'' পত্রিকার সঙ্গে সাগরময় ঘোষ-এর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিলো ৫০ বছরের। সাগরময় ঘোষের এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ''দেশ'' পত্রিকায় যোগ দিয়ে প্রথম যে এসাইনমেন্টটি করেছিলাম তা ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে একটা কবিতা আর গল্প সংগ্রহ করা। সেটা কবিগুরুর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে মাত্র। স্বদেশি আন্দোলন করার জন্য একবার জেলে গিয়েছিলেন তিনি। তখন জেলখানায় আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক [[অশোক সরকার|অশোক সরকারের]] সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তিনিও তখন জেল খাটছিলেন। তাকে তিনটি পদের কথা বলা হয়েছিল। তিনি ''দেশ'' পত্রিকায় চাকরির কাজ বাছােই করেছিলেন। <ref>http://www.bd-pratidin.com/various/2014/09/12/29836</ref><ref>http://www.shahidulazam.com/details.php?nid=283</ref>
 
== সাহিত্যকৃতি ও প্রকাশনা==
পত্রিকার সম্পাদনায় একনিষ্ঠ হলেও নিজের লেখালিখির বিষয়ে উদাসীন ছিলেন সাগরময় ঘোষ। লেখালেখির চেয়েও তিনি সাহিত্যের আড্ডায় অনেক সময় ব্যয় করতে পছন্দ করতেন। এ কারণে দীর্ঘ জীবনের তুলনায় তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা কম।
 
ক্ষিতীশ সরকার [[জলসা]] পত্রিকার জন্য সাগরময় ঘোষের লেখা চেয়েছিলেন। এর উত্তরে তিনি প্রথমবারের মতো লিখতে শুরু করেন্ তাঁর লেখা প্রতি মাসে ‘সম্পাদকের বৈঠকে’ শিরোনামে তিন বছর একাদিক্রমে মুদ্রিত হয়েছে। এভাবেই তাঁর লেখক জীবনের গোড়াপত্তন। অতঃপর কানাইলাল সরকার ''জলসা'' পত্রিকা প্রকাশিত নিবন্ধগুলো ১৩৬৮ বঙ্গাব্দে গ্রন্থাকরে প্রকাশ করেন। এ গ্রন্থটিএকজন দক্ষ গদ্যশিল্পীর রচনা বলে স্বীকৃত।
 
তাঁর লেখক হওয়া বিষয়ে সাগরময় ঘোষ বলেছেন, ‘লেখক হবার দুর্মতি আমার হয়েছিল শ্রদ্ধেয় শিল্পীস্রষ্টা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্ররোচনায়।’ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় একবার প্রশ্ন করেছিলেন, “সাগর কি লেখক? সে কি এক লাইন কখনও কিছু লিখেছে যে তাকে লেখক শ্রেণীভুক্ত করে আমন্ত্রণ জানাতে হবে?”<ref>[http://www.dainikazadi.org/details2.php?news_id=3520&table=august2016&date=2016-08-30&page_id=46&view=0&instant_status নাজমুস সাকিব রহমান লিখিত ‘হীরের নাকছাবি ও অন্যান্’য]</ref>
 
তিনি ''দেশ'' পত্রিকায় প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রবন্ধ ও গল্পের চার খণ্ড সংকলন গ্রন্থের সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে:
* পরম রমণীয়
* সম্পাদকের বৈঠকে
১৬ ⟶ ২৯ নং লাইন:
* রচনা সংগ্রহ
* শত বর্ষের শত গল্প
* অনেক দিনের অনেক কথা <br />
 
== সম্মাননা ==
''একটি পেরেকের কাহিনী'' গ্রন্থের জন্য [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] তাঁকে প্রথমবারের মতো ‘নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় পুরস্কার’-এ ভূষিত করে। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে [[বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়]] তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মাননায় ভূষিত করে।<ref>[http://www.anandabazar.com/todayinhistory আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ-৩]</ref>
 
 
==তথ্যসূত্র==
<references/>