হোসাইন ইবনে আলী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
"টেমপ্লেট:Persondata" অপসারণ
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৩৯ নং লাইন:
*[[Zainab bint Husayn|Zainab]].
}}
'''আল-হোসেইন ইবন আলী ইবন আবি তালিব''' ('''হুসেইন''' বানান-ও প্রচলিত) ({{lang-ar|الحُسين بن علي بن أبي طالب}}) (১১ অথবা ১৩ জানুয়ারি ৬২৬ খ্রি. - ১৩ অক্টোবর ৬৮০ খ্রি. ) (৩ / ৫ শাবান ৪ হি. - ১০ মুহাররম ৬১ হি.) ছিলেন ইসলামের [[খোলাফায়ে রাশিদীন]]-এর সর্বশেষ খলিফা ও প্রথম [[শিয়া ইমাম]] [[আলী]] ইবন আবি তালিব এবং প্রবর্তক নবী মুহাম্মদের কন্যা [[ফাতিমা]] জাহরা-এর পুত্র ও [[হাসান ইবন আলী]]-এর কনিষ্ঠ ভ্রাতা। হোসেইন ইমাম হিসেবে ও [[আহল আল-বায়াত]] বা নবী মুহাম্মদের পরিবারের সদস্য এবং [[আহল আল-কিসা]] -এর সদস্য হিসেবে ইসলামের একজন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।
 
== প্রাথমিক জীবন ==
৪৫ নং লাইন:
=== মুবাহালা সম্পাদনার ঘটনা ===
 
= কারবালা : প্রতিরোধের প্রথম দৃষ্টান্ত:: =
== হোসেইন এবং খিলাফত ==
[আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী এর ১৫ মুহাররম ১৪১২ হি. মোতাবেক ২৮ জুলাই ১৯৯১ ঈ. লক্ষ্ণৌর মাওলানা আব্দুস শাকুর হলে দেওয়া দীর্ঘ ভাষণের একটি অংশ এ লেখাটি। ভাষণটিতে যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণে খেলাফতে রাশেদার ধারাবাহিকতা এবং হযরত হাসান ও হোসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পদক্ষেপসমূহের সঠিকতা তুলে ধরা হয়েছে। পুস্তিকাকারে প্রকাশিত ওই ভাষণের ২৯ থেকে ৩৬ পৃষ্ঠার অনুবাদ এখানে পেশ করা হল।]
 
আমি এখন আপনাদের বলছি, আল্লাহ তাআলা এই পদ্ধতিতেই আদর্শ ধারাটি চালু রেখেছেন। এ ধারারই পর্যায়ক্রম ছিল হযরত হাসান রাযিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত হোসেন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পদক্ষেপ। পরিষ্কার ভাষায় বলছি, হযরাত হাসানাইন (হাসান ও হোসাইন) রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পদক্ষেপ ছিল আল্লাহ তাআলার নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা যে বিশেষ বিশেষ মুআমালা করেছেন এবং তাঁকে দুনিয়ার সর্বোত্তম যেসব নেয়ামত দান করেছেন, তার মধ্যে এই দুটি ফুলেরও অন্তর্ভুক্তি রয়েছে। তাদেরকে উপাধি দেওয়া হয়েছিল ‘রায়হানাতাই রাসূলিল্লাহ’-রাসূলুল্লাহর দুই ফুল।
=== হোসেইন এবং খোলাফায়ে রাশিদীন ===
ইমাম হোসাইন ইয়াজিদের বাইয়্যাত গ্রহণের প্রস্তাব অস্বীকার করে আপনজনদের কাছে ফিরে আসলেন এবং সবাইকে একত্রিত করে বললেন, ''আমার প্রিয়জনেরা! যদি আমি পবিত্র মদীনা শহরে অবস্থান করি, এরা আমাকে ইয়াযীদের বাইয়াত করার জন্য বাধ্য করবে, কিন্তু আমি কখনও বাইয়াত গ্রহণ করতে পারবো না। তারা বাধ্য করলে নিশ্চয়ই যুদ্ধ হবে, ফাসাদ হবে; কিন্তু আমি চাইনা আমার কারণে মদীনা শরীফে লড়াই বা ফাসাদ হোক। আমার মতে, এটাই সমীচীন হবে যে, এখান থেকে হিজরত করে মক্কা শরীফে চলে যাওয়া।'' নিজের আপনজনেরা বললেন, ‘আপনি আমাদের অভিভাবক; আমাদেরকে যা হুকুম করবেন তাই মেনে নেব।’ অতঃপর তিনি মদীনা শরীফ থেকে হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তথন তিনি নবী মুহাম্মাদের রওযায় উপস্থিত হয়ে বিদায়ী সালাম পেশ করলেন এবং আত্মীয়-পরিজন সহকারে মদীনা থেকে হিজরত করে মক্কায় চলে গেলেন। হেরেম শরীফের সীমানায় অবস্থান করে স্রষ্টার ইবাদত বন্দেগীতে বাকী জীবন কাটিয়ে দিবেন - এই ছিলো তার মনোবাসনা।
 
আমি আমার ইতিহাস অধ্যয়নের আলোকে বলতে পারি, হযরত মুআবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর সঙ্গে হযরত হাসান রাযিয়াল্লাহু আনহু যে আচরণ করেছেন, যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা ছিল সম্পূর্ণ সঠিক। হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত হাসানের দিকে তাকিয়ে ইরশাদ করেছিলেন-
== মুয়াবিয়ার সময় ==
 
إن ابني هذا سيد وسيصلح الله به بين فئتين من المسلمين
== ইয়াজীদ-এর শাসন ==
 
আমার এই ছেলে (বংশধর) নেতা হবে। আশা করি  আল্লাহ তাআলা তার মাধ্যমে মুসলমানদের বড় দুটি দলের মধ্যে সন্ধি করিয়ে দেবেন।-আল ইসাবা খন্ড-১ পৃষ্ঠা-২৩০
=== গণআন্দোলন ===
 
এই কথাটি হযরত হাসান রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর জন্য কেবল একটি ভবিষ্যত-সংবাদ ছিল না, বরং এটি ছিল নবীজীর পক্ষ থেকে একটি অসিয়্যতও, এবং একটি মনোচাহিদা বা দাবিও। এটি মনোচাহিদা ছিল আল্লাহর রাসূলের, ছিল প্রিয় নানাজীরও। হযরত হাসান রাযিয়াল্লাহু আনহু তাই সেটিকে নিখাঁদ নববী নির্দেশ হিসেবেই গ্রহণ করেছেন এবং সঠিক পদক্ষেপটি নিয়েছেন হযরত মুআবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর সঙ্গে। যিনি সাহাবী ছিলেন, কাতেবে ওহী ছিলেন এবং তাঁর নিকটাত্মীয়ও ছিলেন। সশস্ত্র অভিযান ও তলোয়ার কোষমুক্ত করার কোনো উপদান তখন ছিল না। মুআবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর বিরুদ্ধে তাঁর দ্বারা সেনা-অভিযান পরিচালিত হলে অহেতুক রক্তপাত ছাড়া আর কিছুই হত না। অথচ আবেগে-উত্তেজিত কিছু লোক তাকে কটাক্ষ করে বলেছে, এই সন্ধি তো বড়ই লজ্জা ও গ্লানির বিষয়। তখন তিনি প্রশান্ত মনে উত্তর দিয়েছেন-
== কারবালার যুদ্ধ ==
{{মূল|কারবালার যুদ্ধ}}
 
العار خير من النار
=== সুন্নি মতবাদ ===
 
অগ্নির চেয়ে লজ্জা ভাল।
=== শিয়া মতবাদ ===
 
এই ধারা বেয়ে যখন ইয়াযীদের বিয়টি সামনে এল তখন হযরত হোসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুও শতভাগ সঠিক পদক্ষেপটি নিলেন। কারণ, সেটিই ছিল তাঁর করণীয়। তিনি তা না করলে কেয়ামত পর্যন্ত বিচ্যুত শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কোনো দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে থাকতো না। যখন কোনো ভুল ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, সমাজে অনাচারের ধস নামার অশঙ্কা জেগে উঠে আর ভালোর আহবান ও মন্দের  প্রতিরোধ এবং তাকওয়া-তাহারাত জাগানো ও খোদাভীতি ও ইবাদতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির পরিবর্তে শুরু হয় ভ্রমণ-শিকার ও আমোদ-প্রমোদের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধির আয়োজন, চলতে থাকে রাষ্ট্র ও ক্ষমতার গলদ ব্যবহার* তখন আমাদের সামনে একটি দৃষ্টান্ত থাকা দরকার হয়ে পড়ে যে, এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহর কোনো বান্দা দাঁড়িয়ে গেছেন, এসবের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন এবং প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছেন। যদি এমনটি না ঘটতো তাহলে আপনারা  ইসলামের পরবর্তী যুগের ইতিহাসে  দুঃশাসকদের ব্যাপারে কেবল সমর্থন ও নীরবতার নমুনাই দেখতে পেতেন। সবাই শুধু এ পংক্তিরই অনুসরণ করত-
=== হোসেইন-এর মস্তকের তাঁর শরীরের নিকট প্রত্যাবর্তন ===
 
বাতাস যেদিকেই বয়ে যাক
=== হোসেইন-এর মস্তকের প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে ফাতেমীয়দের বিশ্বাস ===
 
তুমি এই একদিকেই এগিয়ে চল
== মৃত্যুর ফলাফল ==
 
তাদের মনোভাব থাকত এমন যে, যত দুঃশাসনই প্রতিষ্ঠা হোক আর যত দুরাচরী সরকারই ক্ষমতায় আসুক-আমরা শুধু তাদের আনুগত্য করে যাব। এটাই আমাদের তকদীর। কারণ আমাদের সামনে দুঃশাসনের আনুগত্য না করার ক্ষেত্রে কোনো দৃষ্টান্ত নেই। কিছু করার মতো অনুসরণীয় কোনো উদাহরণ নেই। তাছাড়া এ আশংকাও থাকতো যে, এতে ইসলামী ঐক্যের ওপর  নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মুসলমানদের সংঘবদ্ধতা পড়ে যাবে ঝুঁকির মুখে। তাই সবাই নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকত।
 
এজন্যই হযরত হোসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর এই দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে যে, না, এভাবে চলবে না। সবাই চোখবন্ধ আনুগত্য করবে না। বরং কিছু লোকের এমনও হওয়া উচিত যে, এ দুঃসহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরোয়াহীনভাবে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এরই ফল হল, পরের যুগের মুজাহিদদের ইতিহাস। যদি আপনারা পড়ে দেখেন সে ইতিহাস, অধ্যয়ন করেন তাদের মনস্তত্ব ও মানসিকতা। তাদের সংলাপ ও বক্তব্য তাহলে অবশ্যই অনুভব করবেন বিভিন্ন যুগে, বিভিন্ন দেশে যেসব সংস্কারবাদী আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে, যেসব বৈপ্লবিক প্রয়াস উচ্চকিত হয়েছে, সেসব কটিরই পেছনে হযরত হোসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর স্থাপিত দৃষ্টান্ত ভূমিকা রেখেছে। আমীর আবদুল কাদের জাযায়েরী, আবদুল করীম রেফী, শায়খ সান্নুসী, শায়খ শামিল দাগিস্তানী অথবা সাইয়েদ আহমদ শহীদ আর শাহ ইসলামইল শহীদ, যার কথাই ধরুন, এদের প্রত্যেকের আত্মবিশ্বাস ও সৎসাহস বাড়িয়ে তোলা আর সংগ্রামের আবেগ ও প্রত্যয় জাগিয়ে তোলার পেছনে ভূমিকা রেখেছিল হযরত হোসাইন-এর এই দৃষ্টান্ত। তারা ওই দৃষ্টান্ত থেকে অনুধাবন  করেছেন, এজাতীয় প্রতিরোধ শিশুসুলভ কোনো চাঞ্চল্য নয়, নয় কোনো উত্তেজক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী অস্থিরতা। বরং এটি হচ্ছে হোসাইনী সুন্নত। হযরত হোসাইনের আদর্শ-নীতি।
 
এ প্রতিরোধের ধারা আমাদের এ যুগেও চালু আছে। খেলাফত আন্দোলনের একটি বড় কেন্দ্র ছিল এই লক্ষ্ণৌ। এ আন্দোলনের যিনি প্রধান নেতা, স্বাধীনতাকামীদের পুরোধা রঈসুল আহরার মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর, তার অন্তরেও প্রবহমান ছিল হযরত হোসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুকে অনুসরণের আবেগ ও প্রত্যয়। কবিতায় তিনি বলেছেন-
 
যে পয়গাম এসেছিল হোসাইন ইবনে আলীর কাছে/আমি আনন্দিত, সে ওফাদারির পয়গাম এসেছে এখন আমারও জন্য।
 
পরবর্তী সময়ের ইতিহাস আপনারা দেখুন। হযরত হোসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর নাতি ও হযরত যয়নুল আবেদীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাহেবযাদা যায়েদ ইবনে আলী ইবনে হোসাইন যখন হিশাম ইবনে আব্দুল মালেকের (নিঃসন্দেহে যিনি ইয়াযীদের চেয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো ছিলেন) মোকাবেলায় রুখে দাঁড়ালেন তখন ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি দশ হাজার দিরহাম-যা ওই যুগের হিসাবে এবং ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পক্ষ থেকে (একজন মুজতাহিদ ও ফকীহ হিসেবেই যিনি পরিচিত ছিলেন, বড় কোনো পুঁজিপতি ছিলেন না) অনেক বড় অংকের অনুদান ছিল-তার কাছে পাঠালেন এবং বলে দিলেন আপনি এ টাকা কাজে লাগান।’ এর পর হযরত মুহাম্মাদ যুন্নাফস যাকিয়্যা (হযরত হাসান-এর ধারায় হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পঞ্চম পুরুষ। মুহাম্মাদ যুন্নাফস যাকিয়্যা ইবনে আব্দুল্লাহ আল মহয ইবনে হাসান আল মুসান্না ইবনে হাসান আল মুজতবা ইবনে সাইয়েদুনা আলী মুরতাযা রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন খলিফা মনসুরের মোকাবেলায় (যিনি খলিফা হারুনুর রশীদের দাদা এবং বাগদাদে খেলাফতে আববাসিয়ার প্রতিষ্ঠাতা) রুখে দাঁড়ালেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তখন ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে সমর্থন দিয়েছেন এবং আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন। তাছাড়া খলিফা মনসুরের সেনাপতি হাসান ইবনে কুহতবাকে ইমাম আবু হানিফা এ কথা বলে নিবৃত্ত করেন যে, মুহাম্মাদ যুন্নাফস যাকিয়্যা ও তার ভাই ইবরাহীমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা তোমার জন্য জায়েয হবে না। এরা ছিলেন দু’ভাই। মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (যুন্নাফস) রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মদীনায়। হাদীস শরীফে আছে-আমার বংশধরদের মধ্যে যুন্নাফস যাকিয়্যার জন্ম হবে এবং সে মদীনার আহজারে যায়তে শহীদ হবে।’ এ ভবিষ্যদ্বাণী তার ব্যাপারে সত্যে পরিণত হয়েছিল। অপর ভাই ইবরাহীম রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বাগদাদে। কিন্তু দিন-তারিখের সমন্বয়ে কিছু অমিল হওয়ায় তারা একসঙ্গে মিলিত হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি। তবে, ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি দু’জনকেই সমর্থন ও অর্থসহযোগিতা দিয়েছিলেন।
 
এখন কেউ যদি আপত্তি উঠিয়ে বলেন, হযরত হোসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু, হযরত যায়েদ ইবনে আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মুহাম্মদ যুন্নাফস যাকিয়্যার আন্দোলন-সংগ্রাম ও পদক্ষেপগুলো ছিল ইসলামী ঐক্য ও ইসলামী শাসনক্ষমতার বিরুদ্ধে একেকটি অনুত্তম পদক্ষেপ ও অপরিণামদর্শী কান্ড তাহলে তিনি যেন প্রকারান্তরে এটাই বলতে চাচ্ছেন যে, তিনি ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর চেয়েও বড় ফকীহ ও মুজতাহিদ এবং তাদের চেয়েও বেশি খোদাভীর" ও ধর্মপ্রাণ। আপনাদের জানা আছে নিশ্চয়ই, তারা দু’জন শুধু ফকীহ ও মুজতাহিদই ছিলেন না, বরং তারা ছিলেন এমনই উচ্চতর অবস্থানের ফকীহ ও মুজতাহিদ যে, শরীয়ত, ফিকহ ও বিভিন্ন ধর্মতত্ত্বের তুলনামূলক অধ্যয়নের একজন তালিবুল ইলম হিসেবে আমি বলছি-দুনিয়ার ধর্ম-জাতিগুলোর মাঝে তাদের মতো ব্যক্তিত্বের কোনো নজির পাওয়া যাবে না। তাহলে কি তারা ভেবে দেখেননি যে, ইসলামী রাষ্ট্রের কর্ণধারদের বিরুদ্ধে এসব ব্যক্তিত্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন? তাদের কী এমন সেনাশক্তি ছিল? তাদের পদক্ষেপের ফলাফল তো তাহলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই ছিল না! এরপরও ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালেক চোখবন্ধ করে কেন তাদের সমর্থন দিয়ে গেলেন?
 
এটাই আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অনন্য বিশেষত্ব যে, আমরা সাহাবায়ে কেরামের প্রতি, তাদের ফযীলত ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা আহলে বাইতের প্রতি মহববত পোষণ করি। আর আমাদের এই প্রাচুর্য নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। এই মিলনায়তনটি যার স্মৃতি বহন করছে (ইমামে আহলে সুন্নত হযরত মাওলানা আব্দুশ শাকুর ফারূকী রহমতুল্লাহি আলাইহি) আমি নিজে সাক্ষ দিচ্ছি, তার নিজেরও মতাদর্শ এটাই ছিল। এটাই ছিল হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তার বংশধরদের মতাদর্শ। এ মতাদর্শটি লালন করতেন হযরত মুজাদ্দেদে আলফেসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। আমি পড়েছি, স্পষ্ট মনে আছে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পিতার (হযরত শায়খ আব্দুল আহাদ সেরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি) ইন্তেকালের সময় যখন ঘনিয়ে এল, একদম উর্ধ্বশ্বাস জারি হয়ে গেল তখন মুজাদ্দিদে আলাফেসানী বললেন, আববাজান! আপনি তো বহুবার বলেছেন, আহলে বাইতের প্রতি মহববত পোষণ মানুষের ঈমানসহ সুন্দর মৃত্যুর ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রাখে।’ উত্তরে তার আববা বললেন-আমি তো সেরকমই দেখতে পাচ্ছি।’
 
ওই কিতাবে এ ঘটনা বর্ণনার পর পরই এই কবিতাটি লেখা হয়েছে-
 
الہى بحق بنى فاطمہ + كہ بر قول ايماں كنى خاتمہ
 
অর্থ : হযরত ফাতেমা রাযিয়াল্লাহু আনহা-এর সন্তানদের অসিলায় হে আল্লাহ!/ঈমানসহ আমাদের মৃত্যু দান কর।
 
এই মতাদর্শই আমাদের শিআর-ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য। কোনো মূল্যের বিনিময়েই এ মতপথ আমরা ছাড়তে প্রস্ত্তত নই। এই ধারাবাহিকতার সঙ্গেই আমরা খোলাফায়ে রাশেদীনকে (সব মানুষের মাঝে খেলাফতের সবচেয়ে বেশি হকদার) বিশ্বাস করি। তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাধান্যও  এই ধারাবাহিকতার সঙ্গে নির্ধারিত বলে আমরা বিশ্বাস করি। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযিয়াল্লাহু আনহু দ্বিতীয় হযরত ওমর ফরূক রাযিয়াল্লাহু আনহু তৃতীয় হযরত উসমান গণী রাযিয়াল্লাহু আনহু এবং চতুর্থ হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু-এই ধারাবাহিকতার প্রতি আমরা বিশ্বাস পোষণ করি। আমরা তাদের ধারাবাহিকতা, তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও খেলাফতের সত্যতার ব্যাপারে পূর্ণ আস্থাশীল। একই সঙ্গে আমরা আহলে বাইতের প্রতিও মহববত পোষণ করি এবং হযরত হাসান-হোসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পদক্ষেপকে সম্পূর্ণ সঠিক মনে করি।
 
আমাদের নির্ভরযোগ্য মুজতাহিদ ও ইমামদের সবাই ইয়াযীদের মাধ্যমে অনাচার ও পাপাচার সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে দ্বিধাহীন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে পরিষ্কার একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, তার সাহেবযাদা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আববাজান! কেউ কেউ বলে যে, আপনি ইয়াযীদকে পছন্দ করেন। তিনি উত্তর দিলেন, বেটা! যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাস করে সে কি ইয়াযীদকে পছন্দ করতে পারে? সাহেবযাদা তাকে বললেন, তাহলে তাকে লা’নত করেন না কেন? তখন তিনি বললেন, তুমি তোমার বাবাকে কখনও কারও প্রতি লা’নত করতে শুনেছ? (ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া, খন্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৪৪৩)
 
ইমাম ইবনে তাইমিয়ারও মতাদর্শ ছিল এটাই। যখন তাতারী নেতা বোলায়ীর সঙ্গে তার কথোপকথন হয় তখন তিনি ইয়াযীদ সম্পর্কে কঠোর নিন্দাবাক্য উচ্চারণ করেন।  বোলায়ী তখন ইয়াযীদপ্রীতি থেকে নিজের দূরত্বের কথা ব্যক্ত করে এবং ইয়াযীদের কর্মকান্ডের ত্রুটিবিচ্যুতি তুলে ধরে। (ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া, খন্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫১১)
 
হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমাদের সব পূর্বসূরীর মতাদর্শ ও মাসলাকও ছিল এটাই। ইমামে আহলে সুন্নত মাওলানা আব্দুশ শাকুর রহমতুল্লাহি আলাইহিকে আমি জানতাম। আহলে বাইতের প্রতি, হযরত হোসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর প্রতি তার গভীর মহববত ছিল। এমনকি আহলে বাইতের সঙ্গে সম্পর্কিত ও যুক্তজনদের প্রতিও তাঁর কী পরিমাণ ভালোবাসা ছিল-সেটা সবাই জানি। এই বিশেষত্ব থেকে আমাদেরকে কখনো দূরে সরানো যাবে না। এ বিষয়ে আমাদের কখনো কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া চলবে না। না সাহাবায়ে কেরামের প্রতি সম্মাননার বিষয়ে, না খোলাফায়ে রাশেদীনের ধারাক্রমের বিষয়ে এবং না হযরত হাসান-হোসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর কর্মের সঠিকতা ও তাদের পদক্ষেপের শুদ্ধতা ও বরকতময়তা সম্পর্কে। এসব বিষয়ে তাদের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধার অটুট অবস্থান বজায় রাখতে হবে।
 
টীকা :
 
<nowiki>*</nowiki> ইয়াযীদের জীবন ও কর্মকান্ড নিয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য হতে পারে তার ছেলে মুআবিয়া ইবনে ইয়াযীদের বক্তব্য। শাসন ক্ষমতায় না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তাতেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকরা লিখেন-
 
তিনি তার বাবার শাসন ক্ষমতার আলোচনা করতে গিয়ে তার বাবার অসঙ্গত আচরণ ও কর্মকান্ড, তার নিজের ওপর অত্যাচার, উম্মতে মুহাম্মদিয়ার খেলাফতে উযমার বিষয়ে তার অযোগ্যতা, জুলুম-নির্যাতন, আল্লাহর বিধানের বিষয়ে দুঃসাহসী আচরণ আর রাসূলের বংশধরদের চরম অবমাননা প্রসঙ্গে কথা বলেন। তার দু’চোখে অশ্রু ভরে যায়। দীর্ঘক্ষণ তিনি কাঁদতে থাকেন। (তারীখুল খামীস, দ্বিতীয় খন্ড, প্রণেতা : শায়খ হোসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনুল হাসান দিয়ারবকরী, পৃষ্ঠা-৩৩৬ মুদ্রণ : ১৩০২ হিজরী)
 
এছাড়াও কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার পাশাপাশি খোদ মদীনার হাররাতেও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। এতে রাসূলের শহর-দারুল হিজরার চরম অসম্মান এবং ওখানকার বাসিন্দাদের চূড়ান্ত অবমাননা হয়েছে। এটিও কম নিন্দাযোগ্য কোনো ঘটনা ছিল না।
 
== পরিবার ==
৯৩ ⟶ ১২৮ নং লাইন:
 
== সময়পঞ্জি ==
{{S-start}}
{{a-hou|[[Banu Hashim]]|3rd [[Sha'aban|Sha‘bān]] [[Islamic calendar|4 AH]]|[[Approximation|≈]] 11 January 626 [[Common Era|CE]]|10th [[Muharram]] [[Islamic calendar|61 AH]]|[[Approximation|≈]] 13 October 680 [[Common Era|CE]]|[[Quraysh (tribe)|Banu Quraish]]}}
{{S-rel|sh}}
{{S-bef|rows=2|before = [[Hasan ibn Ali]]<br /><small>Disputed by [[Nizari]]</small>}}
{{S-ttl|rows=2|title = 3rd [[Imamah (Shia doctrine)|Imam]] of [[Shia Islam]]|years = 669–680}}
{{S-aft|after = [[Zayn al-Abidin|‘Alī ibn Ḥusayn]]}}
|-
{{S-aft|after = [[Muhammad ibn al-Hanafiyyah]]<br /><small>[[Kaysanites Shia|Kaysanites]] successor</small>}}
{{end}}
 
== আরও দেখুন ==
{{Wikiquote-inline|Imam Husayn}}