আইজাক নিউটন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
খালিদ সাইফ (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
২৮ নং লাইন:
|page=315
|url=http://books.google.com/books?id=jpFrgSAaKAUC}}, [http://books.google.com/books?id=jpFrgSAaKAUC&pg=PA315 Extract of page 315]
</ref> ১৬৮৭ সনে তার বিশ্ব নন্দিত গ্রন্থ [[ফিলসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা]] প্রকাশিত হয় যাতে তিনি সর্বজনীন মহাকর্ষ এবং গতির তিনটি সূত্র বিধৃত করেছিলেন। এই সূত্র ও মৌল নীতিগুলোই [[চিরায়ত বলবিজ্ঞান|চিরায়ত বলবিজ্ঞানের]] ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে, আর তার গবেষণার ফলে উদ্ভূত এই চিরায়ত বলবিজ্ঞান পরবর্তী তিন শতক জুড়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার জগতেজগৎে একক আধিপত্য করেছে। তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন, পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের সকল বস্তু একই প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। কেপলারের গ্রহীয় গতির সূত্রের সাথে নিজের মহাকর্ষ তত্ত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাঁর গবেষণার ফলেই সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বের ধারণার পেছনে সামান্যতম সন্দেহও দূরীভূত হয় বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ত্বরান্বিত হয়।
 
[[বলবিজ্ঞান|বলবিজ্ঞানের]] ভিত্তিভূমি রচনা করেছেন নিউটন। রৈখিক এবং কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রের মাধ্যমে তিনি এই ভিত্তি রচনা করেন। আলোকবিজ্ঞানের কথায় আসলে তার হাতে তৈরি প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের কথা এসে যায়। একই সাথে তিনি আলোর বর্ণের উপরএকটি তত্ত্ব দাড় করান যা একটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন। পর্যবেক্ষণটি ছিল ত্রিভুজাকার প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়া আলোর বিক্ষেপণের উপর যার মাধ্যমে দৃশ্যমান বর্ণালীরবর্ণালির সৃষ্টি হয়েছিল। শব্দের দ্রুতি এবং শীতলীকরণ প্রক্রিয়া বিষয়েও তিনি গবেষণা পরিচালনা করেন যা থেকে [[নিউটনের শীতলীকরণ সূত্র]] এসেছে।
 
গণিতের জগতেওজগৎেও নিউটনের জুড়ি মেলা ভার। নিউটন এবং লাইবনিজ যৌথভাবে [[ক্যালকুলাস]] নামে গণিতের একটি নতুন শাখার পত্তন ঘটান। এই নতুন শাখাটিই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জগতেজগৎে বিপ্লব সাধনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া নিউটন সাধারণীকৃত দ্বিপদী উপপাদ্য প্রদর্শন করেন, একটি ফাংশনের শূন্যগুলোর আপাতকরণের জন্য তথাকথিত ''নিউটনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন'' এবং পাওয়ার সিরিজের অধ্যয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
 
[[২০০৫]] সনে রয়েল সোসাইটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে কার প্রভাব সবচেয়ে বেশি এ প্রশ্ন নিয়ে একটি ভোটাভুটির আয়োজন করে। ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, এক্ষেত্রে নিউটন আইনস্টাইনের চেয়েও অধিক প্রভাবশালী।<ref>http://royalsociety.org/News.aspx?id=1324&terms=Newton+beats+Einstein+in+plls+of+scientists+and+the+public</ref>
৪০ নং লাইন:
=== প্রাথমিক জীবন ===
[[চিত্র:Woolsthorpe manor.jpg|left|200px|thumb|[[উল্‌সথর্প ম্যানর|উল্‌সথর্প ম্যানরে]] নিউটনের বাড়ি]]
আধুনিক বর্ষপঞ্জি অনুসারেঅণুসারে [[১৬৪৩]] খ্রিস্টাব্দের [[জানুয়ারি ৪|৪ঠা জানুয়ারিতে]] আইজাক নিউটন জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান [[লিঙ্কনশায়ার|লিঙ্কনশায়ারের]] উল্‌সথর্প ম্যানরে। ম্যানর অঞ্চলটি উল্‌সথর্প-বাই-কোল্‌স্টারওয়ার্থের মধ্যে অবস্থিত। নিউটনের যখন জন্ম হয় তখনও ইংল্যান্ডে সমসাময়িককালের আধুনিকতম প্যাপাল বর্ষপঞ্জির ব্যবহার শুরু হয়নি। তাই তার জন্মের তারিখ নিবন্ধন করা হয়েছিল ১৬৪২ সনের ক্রিস্‌মাস দিবস হিসেবে। তিনি তার পিতা আইজাকের মৃত্যুর তিন মাস পর জন্ম নেন। তার বাবা গ্রামের একজন সাধারণ [[কৃষক]] ছিলেন। জন্মের সময় নিউটনের আকার-আকৃতি ছিল খুবই ছোট। তার মা ''হানাহ্‌ এইসকফ'' প্রায়ই বলতেন ছোট্টবেলার সেই নিউটনকে অনায়াসে একটি কোয়ার্ট মগের ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া যেত। তিন বছর বয়সে তার মা আরেকটি বিয়ে করেন এবং নতুন স্বামী রেভারেন্ড বার্নাবাউস স্মিথের সাথে বসবাস করতে থাকেন। এসময় নিউটন তার মায়ের সাথে ছিলেন না। নানী ''মার্গারি এইসকফের'' তত্ত্বাবধানে তার দিন কাটতে থাকে। নিউটন তার সৎ বাবাকে পছন্দ করতে পারেন নি। তার মা এই লোককে [[বিয়ে]] করেছে বলে মায়ের প্রতি তার কিছুটা ক্ষোভও ছিল। নিউটন তার ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত করা পাপ কাজগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছিলেন। সেই তালিকা থেকে মায়ের প্রতি তার এই ক্ষোভের প্রমাণ পাওয়া যায়। তালিকায় লিখা ছিল : "আমার বাবা ও মা-কে এই বলে ভয় দেখানো যে আমি তাদের থাকবার ঘর জ্বালিয়ে দেবো"। জনৈকা মিস স্টোরির সাথে নিউটনের বাগদান হয়, কিন্তু পড়াশোনা ও [[গবেষণা|গবেষণায়]] খুব বেশি নিমগ্ন থাকার কারণে নিউটন বিয়ে করেন নি।<ref>http://www.newton.ac.uk/newtlife.html</ref><ref>http://scidiv.bellevuecollege.edu/MATH/Newton.html</ref><ref>http://books.google.com/?id=1ZcYsNBptfYC&pg=PA8&lpg=PA8&dq=isaac+newton+miss+storey&q=miss%20storey</ref>
 
নিউটনের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় বাড়ির পাশের এক ক্ষুদ্রায়তন স্কুলে। ১২ বছর বয়সে তাকে গ্রান্থামের ব্যাকরণ স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তিনি এক ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতার বাড়িতে থাকতেন। এই স্কুলে নিউটন ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বিঅপ্রতিদ্বন্দ্ব্বি যা থেকে তার [[মেধা|মেধার]] পরিচয় পাওয়া যায়। প্রথমদিকে তার সাথে কেউ না পারলেও এক সময় আরেকটি ছেলে তার সাথে ভালো প্রতিযোগিতা করতে সমর্থ হয়েছিল। স্কুল জীবনের প্রথম থেকেই নিউটনের সবচেয়ে বেশি ঝোঁক ছিল বিভিন্ন ধরণেরধরনের যন্ত্র তৈরির প্রতি। সেই বয়সেই তিনি উইন্ডমিল, [[জল-ঘড়ি]], [[ঘুড়ি]] এবং সান-ডায়াল তৈরি করেছিলেন। এছাড়া তার গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ ছিল একটি চার চাকার বাহন যা আরোহী নিজেই টেনে চালাতে পারতেন। [[১৬৫৬]] খ্রিস্টাব্দে নিউটনের সৎ বাবা মারা যান। এরপর তার মা উল্‌সথর্পে ফিরে এসে তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল বাড়িতে ক্ষেত-খামারের কাজ শিখিয়ে ভবিষ্যতের বন্দোবস্ত করে দেওয়া। কিন্তু সত্বরই তিনি বুঝতে পারেন যে, খামারের কাজের দিকে নিউটনের কোনো ঝোঁক নেই। নিউটনের কাকা ছিলেন বার্টন কগলিসের রেক্টর। এই চাচার উপদেশ শুনেই পরিবার থেকে তাকে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়।
 
=== ট্রিনিটি কলেজে নিউটন ===
৪৮ নং লাইন:
নিউটন ট্রিনিটি কলেজ থেকে [[১৬৬১]] সনে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি তার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য কলেজের বিভিন্ন স্থানে ভৃত্যের কাজ করতেন। ছাত্র হিসেবে বড় কোন কিছু তিনি করেছেন বলে ট্রিনিটি কলেজের কোন দলিলপত্র লেখা নেই। তবে জানা যায় তিনি মূলত [[গণিত]] ও [[বলবিজ্ঞান]] বিষয়ে অধিক পড়াশোনা করেছিলেন। ট্রিনিটি কলেজে প্রথমে তিনি [[ইয়োহানেস কেপলার | কেপলারের ]]আলোকবিজ্ঞান বিষয়ক সূত্রের উপর অধ্যয়ন করেন। এরপর অবশ্য তিনি [[ইউক্লিড|ইউক্লিডের]] জ্যামিতির প্রতি মনোনিবেশ করেন। কারণ মেলা থেকে কেনা জ্যোতিষ শাস্ত্রের একটি বইয়ে উল্লেখিত বেশ কিছু রেখাচিত্র তিনি বুঝতে পারছিলেন না। এগুলো বোঝার জন্য [[ইউক্লিড|ইউক্লিডের]] জ্যামিতি জানা থাকাটা আবশ্যিক ছিল। তা সত্ত্বেও নিউটন বইটির কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এটি অকিঞ্চিৎকর বই হিসেবে সরিয়ে রাখেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার শিক্ষক [[আইজাক ব্যারো]] তাকে বইটি আবার পড়তে বলেন। বইটি লেখা হয়েছিল [[রনে দেকার্ত|দেকার্তের]] জ্যামিতিক গবেষণা ও কর্মের উপর।
 
স্নাতক শিক্ষা গ্রহণকালে নিউটন একটি ছোট বইয়ের তাক বা এ ধরণেরধরনের কোন স্থানে তার সব বই সাজিয়ে রাখতেন। সেই তাক থেকে নিউটনের সে সময়ে লেখা বেশ কিছু নিবন্ধ পাওয়া গেছে। এই লেখাগুলোর বিষয়ের মধ্যে রয়েছে: কৌণিক বিভাজন, বক্রসমূহের বর্গকরণ,সঙ্গীতের অনন্য সুর সম্বন্ধে কিছু গাণিতিক হিসাব, ভিয়েটা এবং ভ্যান স্কুটেনের জ্যামিতিক সমস্যা, ওয়ালিস রচিত ''এরিথমেটিক অফ ইনফিনিটিস'' বইয়ের উপর কিছু মন্তব্য, গোলীয় আলোক গ্লাসের ঘর্ষণের ফলাফল, লেন্সের ত্রুটি এবং সকল ধরণেরধরনের মূল বের করার সূত্র। [[১৬৬৫]] খ্রিস্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রী লাভের প্রাক্কালেই নিউটন তার বিখ্যাত [[দ্বিপদী উপপাদ্য]] বিষয়ক সূত্র প্রমাণ করেন এবং একইসাথে [[ফ্লাক্‌সিয়নের পদ্ধতি]] (method of fluxion) আবিষ্কার বিষয়ক প্রথম তত্ত্ব প্রদান করেন। ট্রনিটি কলেজের এই দিনগুলো তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু [[১৬৬৫]] সনে [[কেমব্রিজ]] এবং [[লন্ডন|লন্ডনে]] [[প্লেগ]] রোগ মহামারী আকার ধারণ করে। এর ফলে কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। নিউটন লিংকনশায়ারে তাদের খামর বাড়িতে ফিরে যান।
 
=== লিংকনশায়ারে গবেষণা কাজ ===
৬০ নং লাইন:
 
=== আলোক বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা ===
[[১৬৬৭]] সনে ট্রিনিটি কলেজ পুনরায় খোলা হয়। এবার কলেজ নিউটনকে ফেলো নির্বাচিত করে<ref>http://venn.lib.cam.ac.uk/cgi-bin/search.pl?sur=&suro=c&fir=&firo=c&cit=&cito=c&c=all&tex=RY644J&sye=&eye=&col=all&maxcount=50</ref> এবং এর দুই বছর পর অর্থাৎ তার ২৭তম জন্মদিনের কিছুদিন আগে তিনি সেখানকার গণিত বিভাগের [[লুকাসিয়ান প্রফেসর অব ম্যাথমেটিক্স|লুকাসিয়ান অধ্যাপক]] নিযুক্ত হন। তার আগে ট্রিনিটি কলেজের এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তারই বন্ধু ও শিক্ষক ডঃ বারো। তখনকার সময়ে কেমব্রিজ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো হতে হলে কাউকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত অ্যাংগ্লিকান ধর্মপ্রচারক হতে হতো। আবার [[লুকাসিয়ান প্রফেসর অব ম্যাথমেটিক্স|লুকাসিয়ান অধ্যাপকদের]] চার্চের সাথে যোগাযোগ থাকা নিষিদ্ধ ছিল, কারণ তা বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষতি করতে পারে। নিউটন লুকাসিয়ান অধ্যাপক হওয়ার সময় এই শর্ত থেকে নিজে অব্যাহতি চান। তখনকার রাজা [[চার্লস ২]] তার দাবী মেনে নিয়ে তাকে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করেন। এতে অ্যাংগ্লিকানদের সাথে নিউটনের ধর্মীয় চিন্তাধারার বিরোধের অবসান ঘটে। এরই মধ্যে [[১৬৬৮]] খ্রিস্টাব্দে নিউটন একটি প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করে ফেলেছিলেন। [[১৬৭১]] সনের ডিসেম্বরে নিউটন দ্বিতীয় আরেকটি দূরবীন তৈরি করে [[রয়েল সোসাইটি|রয়েল সোসাইটিকে]] উপহার দেন। এর দুই মাস পর রয়েল সোসাইটির একজন ফেলো হিসেবে তিনি আলো সম্বন্ধে তার আবিষ্কারসমূহ প্রচার করেন এবং এর মাধ্যমে আলো সম্বন্ধে একটি বিতর্কের সূচনা করেন। অনেক বছর ধরে এই বিতর্ক অব্যাহত ছিল। এই বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন [[রবার্ট হুক]], লুকাস, [[লিনাস পাউলিং]] এবং আরো অনেকে। নিউটন অবশ্য এ ধরণেরধরনের বিতর্ককে সবসময়ই বিস্বাদ জ্ঞান করতেন। আলো সম্বন্ধে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি তত্ত্বের পক্ষে অবস্থাননিয়ে একটি বিতর্কের জন্ম দেয়ার জন্য তিনি নিজের প্রজ্হাকেই দোষারোপ করতেন। আলোক বিজ্র্ঞান সম্বন্ধে তার গবেষণাপত্রসমূহের অধিকাংশই [[১৬৭২]] সন থেকে [[১৬৮৪]] সনের মধ্যে রয়েল সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয়। তার এই গবেষণাপত্রগুলোই [[১৭০৪]] সনে তার [[অপটিক্‌স]] নামক গ্রন্থে সংকলিত হয়েছিল।
 
=== প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা প্রকাশ ===
[[চিত্র:NewtonsPrincipia.jpg|thumb|right|200px|প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা বইয়ের ছবি]]
[[১৬৮৪]] সনের পূর্বে নিউটন মহাকর্ষ সম্বন্ধে তার গবেষণাকর্মগুলো প্রকাশের তেমন কোন তাগিদ অনুভবঅণুভব করেন নি। এর মধ্যে হুক, [[এডমান্ড হ্যালি]] এবং স্যার [[ক্রিস্টোফার রেন]] মহাকর্ষ সম্বন্ধে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু তত্ত্ব বা তথ্য আবিষ্কার করেছিলেন যদিও তারা কেউই গ্রহের কক্ষপথ সম্বন্ধে কোন সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব প্রদানে সক্ষম হন নি। ঐ বছর বিজ্ঞানী এডমুন্ড হ্যালি এ বিষয়টি সম্বন্ধে নিউটনের সাথে কথা বলেন এবং এই দেখে অবাক হন যে নিউটন বিষয়টি এতোদিনে সমাধান করে ফেলেছেন। নিউটন হ্যালির কাছে চারটি উপপাদ্য এবং সাতটি সমস্যা প্রস্তাব করেন যেগুলো তার গবেষণা কাজের মূল অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। [[১৬৮৫]] এবং [[১৬৮৬]] সালের মধ্যে প্রায় সতের-আঠার মাস জুড়ে তার লেখা সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ তথা [[ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা]] রচনা করেন যার ইংরেজি নাম দেয়া হয় Mathematical Principles of Natural Philosophy। এই গ্রন্থের তিনটি অংশ আছে। নিউটন তৃতীয় অংশটিকে সংক্ষিপ্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হ্যালি তাকে তৃতীয় অংশটি বিস্তারিত লেখার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। রয়েল সোসাইটি গ্রন্থটি প্রকাশের অর্থ সংকুলানে অপারগতা প্রকাশ করে। এবারও হেলিই এগিয়ে আসেন। তিনি বইটি প্রকাশের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেন এবং এর ফলে [[১৬৭৮]] সনে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় এই বইটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর সমগ্র ইউরোপ জুড়ে এটি বিপুল সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তখনকার সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাত [[ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্‌স]] [[১৬৮৯]] সনে নিউটনের সাথে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করার জন্য ইংল্যান্ডে যান।
 
=== সরকারি চাকরি ও ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে গবেষণা ===
৮২ নং লাইন:
== গবেষণা কর্ম ও আবিষ্কার ==
=== গণিত ===
বর্তমানকালের গণিতজ্ঞ ও ইতিহাসবিদদের মতে নিউটন এবং লাইবনিজ প্রায় একই সাথে গণিতের একটি নতুন শাখার উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন যা [[ক্যালকুলাস]] নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি বিপ্লবের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছিল। অবশ্য ক্যালকুলাসের প্রকৃত উদ্ভাবক কে তা নিয়ে অনেক সংশয় ও বিরোধ রয়েছে। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তার [[আ ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম]] গ্রন্থে নিউটনকে ধুরন্ধর ও মিথ্যাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে একটি প্রবল বিতর্কের জন্ম হয়েছিল যা [[নিউটন বনাম লাইবনিজ ক্যালকুলাস বিতর্ক]] নামে বহুল পরিচিত। এ নিয়ে সমালোচনা অনুচ্ছেদেঅণুচ্ছেদে বিস্তারিত লেখা হয়েছে।
 
নিউটন [[দ্বিপদী উপপাদ্য|দ্বিপদী উপপাদ্যের]] একটি সাধারণ রুপ উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত। এই রুপটি যেকোন ঘাতের জন্য প্রযোজ্য হয়। এছাড়াও নিউটন আবিষ্কার করেন: নিউটনের আইডেনটিটি, নিউটনের পদ্ধতি, শ্রেণীবিন্যাসকৃত ঘনতলীয় বক্র (দ্বিচলবিশিষ্ট তিন মাত্রার বহুপদী)। তিনি সসীম পার্থক্যের তত্ত্বের উপর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, প্রথম ব্যক্তি হিসেবে fractional indice ব্যবহার করেন এবং [[দিওফান্তিন সমীকরণ]] প্রমাণ করার জন্য স্থানাংক জ্যামিতি প্রয়োগ করেন। নিউটন লগারিদমের মাধ্যমে হারমোনিক ধারার আংশিক সমষ্টির আনুমানিক মান নির্ণয় করেন যা [[অয়লারের যোগফল সূত্র|অয়লারের যোগফল সূত্রের]] পূর্বসূরী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। তিনিই প্রথম আত্মবিশ্বাসের সাথে power series ব্যবহার করেন এবং একে revert করেন। এছাড়া [[পাই]]-এর জন্য একটি নতুন সূত্র আবিষ্কার করেন।
৮৮ নং লাইন:
=== আলোক বিজ্ঞান ===
[[চিত্র:NewtonsTelescopeReplica.jpg|thumb|right|200px|নিউটনের ৬ ইঞ্চি [[দূরবীন|দূরবীনের]] একটি প্রতিরূপ<ref>{{Cite book|url=http://books.google.com/?id=KAWwzHlDVksC&dq=history+of+the+telescope&printsec=frontcover |title='&#39;The History of the Telescope'&#39; By Henry C. King, Page 74 |publisher=Google Books |accessdate=16 January 2010|isbn=9780486432656|author1=King, Henry C|year=2003}}</ref>]]
[[১৬৭০]] থেকে [[১৬৭২]] খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিউটন আলোক বিজ্ঞানের উপর লেকচার প্রদান করেন।<ref>{{cite web|last=Newton|first=Isaac|title=Hydrostatics, Optics, Sound and Heat|url=http://cudl.lib.cam.ac.uk/view/MS-ADD-03970/|publisher=Cambridge University Digital Library|accessdate=10 January 2012}}</ref> এ সময় তিনি আলোর প্রতিসরণ [[আবিষ্কার]] করেন। প্রিজম পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি এ আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখেন, একটি ত্রিভুজাকার প্রিজমের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত সাদা আলোকে একটি পর্দার উপর ফেললে তা আলোকীয় বর্ণালীতেবর্ণালিতে বিশ্লিষ্ট হয়। আবার একটি লেন্স এবং দ্বিতীয় আরেকটি প্রিজমের মাধ্যমে এ বহুবর্ণী আলোকে সংশ্লিষ্ট করে সাদা আলোতে পরিণত করা সম্ভব। তিনি দেখান বর্ণীল আলো থেকে একটি বর্ণের রশ্মিকে পৃথক করে বিভিন্ন বস্তুর উপর ফেললেও এর ধর্মের কোন পরিবর্তন হয় না। তিনি দেখতে পান প্রতিসরিত, বিক্ষিপ্ত বা সঞ্চালিত যা-ই হোক না কেন আলোর বর্ণ সব সময় একই থাকে। সুতরাং, আমরা যে বর্ণ পর্যবেক্ষণ করি তা আপতিত বর্ণীল আলোর সাথে বস্তুর মিথস্ক্রিয়ার ফলাফল; বস্তু কখনই বর্ণ তৈরি করতে পারে না। <!-- বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: [[আইজাক নিউটনের প্রাথমিক জীবন#বর্ণ বিষয়ক তত্ত্ব|নিউটনের বর্ণ বিষয়ক তত্ত্ব]] -->
 
তার এ সকল গবেষণা কর্ম থেকে তিনি মন্তব্য করেন, যে কোন প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র আলোর বিভিন্ন বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগবে। এ সমস্যাকে অতিক্রম করার জন্য তিনি একটি প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ করেন যা বর্তমানে [[নিউটনীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র]] নামে পরিচিত। [[নিউটনের বলয়]] ব্যবহার করে নিজের দূরবীনে ব্যবহৃত দর্পণে শান দেয়ার মাধ্যমে তিনি তার দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির আলোকীয় কর্মক্ষমতার মান সম্বন্ধে ধারণা লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। এভাবে তিনি প্রতিসরণ দূরবীনের চেয়ে কর্মক্ষম ও উঁচু দরের দূরবীন তৈরি করেন যাতে দর্পণের ব্যাস ছিল আগের চেয়ে বেশী। [[১৬৭১]] খ্রিস্টাব্দে [[রয়েল সোসাইটি]] তার প্রতিসরণ দূরবীনের একটি প্রদর্শনী দেয়ার আহ্বান জানায়। এদের উৎসাহেই তিনি তার আলোক বিজ্ঞান বিষয়ক [[গবেষণা]] "অন কালার" নামক একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন যা পরবর্তীতে তার বিখ্যাত গ্রন্থ [[অপটিক্‌স]]-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। [[রবার্ট হুক]] নিউটনের কিছু চিন্তাধারা সমালোচনা করায় নিউটন সকল ধরণেরধরনের গণ বিতর্ক থেকে ইস্তফা দেন। হুকের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তারা পরষ্পরেরপরস্পরের শত্রু ছিলেন।
 
আলো কণা দিয়ে তৈরি এবং ঘনতর মাধ্যমে ত্বরণ সহকারে চলার সময় আলোর প্রতিসরণ ঘটে, এ ধারণা নিউটন প্রথমটায় বিশ্বাস করতেন না। অবশ্য পরে তিনি আলোকে [[তরঙ্গ]] এবং কণা উভয়টি দ্বারা গঠিত হিসেবে কল্পনা করে আলোর [[অপবর্তন]] ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, আলোকে একেবারে বিশুদ্ধ তরঙ্গ হিসেবে ধরে না নিলে এর অপবর্তণ কোনভাবেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। বর্তমানকালের [[কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান]], [[ফোটন]] এবং [[তরঙ্গ-কলা দ্বিত্ব]] নিউটন আলোকে যেভাবে বুঝেছিলেন তারই এক ক্ষুদ্র সাদৃশ্যমাত্র।
 
[[১৬৭৫]] খ্রিস্টাব্দে ''আলোকীয় প্রকল্প'' প্রদানের সময় নিউটন দুটি কণার মধ্যে বলের আদান-প্রদাণ ঘটানোর মাধ্যম হিসেবে [[ইথার|ইথারের]] অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে ঘোষণা করেন। ধর্মতাত্ত্বিক সোফিবাদে বিশ্বাসী [[হেনরি মুর|হেনরি মুরের]] সাথে যোগাযোগ থাকার সুবাদে নিউটন এ সময় [[আলকেমি]] নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন। হার্মেটীয়রা কণাসমূহের মধ্যবর্তী আকর্ষণ-বিকর্ষণের কারণ হিসেবে এক ধরণেরধরনের অতিলৌকিক বলের কল্পনা করতো। নিউটন তার ইথার তত্ত্বকে এই অতিলৌকিক বলের ধারণা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেন। [[জন মেনার্ড কেইনস]], যিনি নিউটনের আলকেমি বিষয়ক অনেক লেখা সংগ্রহ করেছেন, তিনি একবার এ বিষয়ে বলেছিলেন, "নিউটন কারণ অনুসন্ধানেরঅণুসন্ধানের যুগের প্রথম নন, বরং জাদুকরদের যুগের শেষ ব্যক্তি।" অবশ্য নিউটনের আলকেমি বিষয়ক উৎসাহকে তার বিজ্ঞানের প্রতি অবদান থেকে আলাদা করে দেখার কোন উপায় নেই। তখন আলকেমি এবং বিজ্ঞানের মধ্যে কোন সুস্পষ্ট পার্থক্য রেখা টানা ছিল না। শূন্যস্থানের মধ্য দিয়ে এক অতিলৌকিক ক্রিয়া দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কাজ করে, এ ধারণা যদি নিউটন না করতেন, তাহলে হয়তো তার অভিকর্ষ বিষয়ক তত্ত্ব আবিষ্কারই সম্ভব হতো না। <!-- আরও দেখুন: [[আইজাক নিউটনের জাদুবিদ্যা চর্চ]] -->
 
[[১৭০৪]] খ্রিস্টাব্দে নিউটন [[অপটিক্‌স]] নামক একটি গ্রন্থ লিখেন যাতে তিনি আলোর কণা তত্ত্ব বিষয়ে তার অভিমত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। তার মত ছিল, আলো অসংখ্য অতি সূক্ষ্ম কণা দ্বারা গঠিত এবং সাধারণ পদার্থগুলোর গাঠনিক উপাদান হচ্ছে অপেক্ষাকৃত স্থুল কণা। তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করেন, "এক ধরণেরধরনের আলকেমিজাত ট্রান্সম্যুটেশনের মাধ্যমে কি সাধারণ পদার্থের স্থুল কণার সাথে আলোর মধ্যকার সূক্ষ্ণ কণাসমূহের পারষ্পরিক রুপান্তর ঘটানো সম্ভব নয়, এবং যে আলো কোন বস্তুর মধ্যে প্রবেশ করে সে আলোর মধ্যবর্তী কণাসমূহের কারণে কি বস্তুটি তার অনেকগুলো ক্রিয়া করতে সক্ষম হয়না?" এছাড়াও নিউটন কাচের গ্লোব ব্যবহার করে একটি আদি প্রকারের ঘর্ষণ [[স্থির-বৈদ্যুতিক জেনারেটর]] তৈরি করতে সক্ষম হন।
 
=== বলবিজ্ঞান এবং মহাকর্ষ ===
১১১ নং লাইন:
{{cquote|
<i>অভিকর্ষ গ্রহসমূহের গতির বিষয়টি ব্যাখ্যা করে, কিন্তু এটি ব্যাখ্যা করতে পারেনা, কে গ্রহগুলোকে গতিশীল হিসেবে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করে দিলে। ঈশ্বর সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন এবং যা কিছু ঘটছে বা যা কিছু ঘটা সম্ভব তার সবই তিনি জানেন।}}
বিজ্ঞান চর্চা নিউটনের ধর্মীয় সাধনায় কোন ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি। তিনি প্রতিদিন নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করতেন এবং চার্চের আদি পিতারা ছিলেন নিউটনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।অণুপ্রেরণা। এমনকি বিজ্ঞানের চেয়ে তিনি ধর্ম গ্রন্থ, ধর্মীয় পিতা এবং [[আলকেমি]] অধ্যয়ন করে অধিক সময় ব্যায় করতেন। তিনি নিজেই বলেছেন, বাইবেলকে তিনি ঈশ্বরের শব্দ হিসেবে মৌলিকভাবে বিশ্বাস করেন এবং ঈশ্বর কর্তৃক অনুপ্রাণিতঅণুপ্রাণিত ব্যক্তিরাই এটি রচনা করেছেন বলেও তার বিশ্বাস ছিল। তিনি নিজেও এসব গ্রন্থ-রচনার সমালোচনামূলক একটি বই লিখেছেন যার নাম ''অ্যান হিস্টরিক্যাল অ্যাকাউন্ট অফ টু নোটেব্‌ল করাপশন্‌স অফ স্ক্রিপচার''। নিউটন নির্ধারণ করেছিলেন যে, [[৩৩]] খ্রিস্টাব্দের [[এপ্রিল ৩|৩ এপ্রিল]] তারিখে [[যীশু খ্রিস্ট|যীশু খ্রিস্টকে]] ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে। প্রথাগতভাবে গ্রহণযোগ্য তারিখের সাথে তার গণনাকৃত এই তারিখের মিল ছিল। নিউটন বাইবেলের মধ্যকার গুপ্ত তথ্যসমূহ অনুসন্ধানেরঅণুসন্ধানের চেষ্টা করেছিলেন, যদিও একাজে তার সফলতা আসেনি। [[ধর্মতত্ত্ব]] এবং আলকেমি বিষয়ে তার বিশেষ উৎসাহ থাকলেও অন্য অনেকের মত তিনি অন্ধভাবে তিনি এগুলোর চর্চা করেননি, বরং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে এগুলোর পরীক্ষণ পরিচালনা করেছেন। তার কাছে ধর্ম এবং বিজ্ঞান নিয়ে তার করা তার পরীক্ষণগুলো একই। কারণ উভয়েরই লক্ষ্য বিশ্ব কিভাবে ক্রিয়া করছে তা পর্যবেক্ষণ এবং বোঝার চেষ্টা করা।
 
নিউটনকে ট্রিনিটিতে চার্চের আইনসমূহ অমান্য করতে হতে পারতো। সংখ্যালঘুদের দৃষ্টি দিয়ে চিন্তা করলে দেখা যায়, T.C. Pfizenmaier ট্রিনিটি চার্চের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেছিলেন, নিউটন অধিকাংশ [[প্রোটেস্ট্যান্ট]], [[অ্যাংগ্লিকান]] এবং [[রোমান ক্যাথলিক]] কর্তৃক পরিচালিত চার্চ তথা পশ্চিমাঞ্চলীয় মৌল বিশ্বাসের প্রতি অতটা আস্থাশীল ছিলেননা; বরং তিনি [[পূর্বাঞ্চলীয় অর্থোডক্স চার্চ|পূর্বাঞ্চলীয় অর্থোডক্স]] বিশ্বাসের অনুসারীঅণুসারী ছিলেন। সমকালীন সময়ে নিউটনকে একজন [[রসিক্রুশিয়ানবাদ|রসিক্রুশিয়ান]] হিসেবেও সন্দেহ করা হতো। অবশ্য রয়েল সোসাইটি এবং রাজা চার্লস ২-এর বিচারালয়ের অনেকেই এই মতবাদের অনুসারীঅণুসারী ছিলেন। জীবদ্দশায় বিজ্ঞানের চেয়ে নিউটন ধর্ম বিষয়েই বেশি লিখেছেন। তিনি যুক্তিসম্মতভাবে একটি চিরন্তন বিশ্বের ধারণা পোষণ করতেন; কিন্তু [[হাইলোজোইজ্‌ম]]-এ বিশ্বাস করেননি কখনও, যা [[লাইবনিজ]] এবং [[বারুচ স্পিনোজা|বারুচ স্পিনোজার]] মধ্যে প্রচ্ছন্ন ছিল। তার মতে নিয়মতান্ত্রিক এবং গতিশীল মহাবিশ্ব একটি সক্রিয়া কারণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু সেজন্যে এটিকে অবশ্যই হতে হবে নিয়মিত।
 
=== ধর্মীয় চিন্তার উপর নিউটনের প্রভাব ===
১২১ নং লাইন:
মহাবিশ্ব সম্বন্ধে বয়েলের যান্ত্রিক ধারণা, প্রাক-এনলাইটেনমেন্ট যুগের জাদুকরী ধারণাসমূহ এবং খ্রিস্টান ধর্মের রহস্যাবৃত উপকরণসমূহের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ পরিচালিত হয়েছিল তাকে একটি ভিত্তির উপর দাড় করিয়ে দেয়। নিউটন কেবল গাণিতিক প্রমাণের বয়েলের চিন্তাধারাকে পূর্ণতা দান করেন। একই সাথে তিনি একে জনপ্রিয় করে তোলার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মধ্যস্থতাকারী ঈম্বরের ধারণাকে পরিত্যাগ করে নিউটন এমন একটি মহাবিশ্বের ধারণাকে পুনর্জীবন দান করেছিলেন, যা একজন ঈশ্বরের সুনিপুণ হাতে নির্মিত হয়েছে এবং যুক্তিসঙ্গত এবং সর্বজনীন মৌল নীতির মাধ্যমে যার সমগ্র নকশা করা হয়েছে।
 
নিউটন ঈশ্বরকে এমন একজন মহান স্রষ্টা হিসেবে দেখেছেন, সমগ্র সৃষ্টিজগতেরসৃষ্টিজগৎের এই বিশালতার মুখেও যার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু অদূরদর্শী ধর্মতাত্ত্বিক গবেষণার শেষে এখন ঈশ্বরকে বিশ্ব পরিচালনার ক্রিয়াকর্ম থেকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে; অন্তত নিউটনের নীতি বিষয়ে বলতে গিয়ে লাইবনিজ এ বিষয়টির দিকেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কারণ ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ব পরিচালনায় মধ্যস্থতার ধারণা মেনে নিলে ঈশ্বরের সৃষ্টির মধ্যেই একটি ত্রুটির ধারণা প্রকট হয়ে উঠে; একজন মহাপরাক্রমশালী ও সব দিক দিয়ে সঠিক স্রষ্টার পক্ষে যা সৃষ্টি করা সম্ভব হতে পারেনা। এই কারণ দর্শানোর মাধ্যমে সব কিছু করা হলো, অথচ নিউটন নিজে কখনই এই কারণের দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি। লাইবনিজের ব্যাখ্যার মাধ্যমে নিজের সৃষ্ট জগৎ থেকে স্রষ্টার ধারণাকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছে। ঈশ্বরবিহীন এই মহাবিশ্বে তাই এখন কেবল মানুষের রাজত্ব। মানুষই এর সৃষ্টি ও পরিচালনা প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার দাবীদার এবং সে-ই জগতেরজগৎের সব অনিষ্ট অপসারণের ক্ষমতার অধিকারী। অপরদিকে, ল্যাটিচুডিনারিয়ান এবং নিউটনীয় ধারণাকে আত্মস্থ করার মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে ধর্মের আরেকটি নতুন দল যারা [[মিলেনারিয়ান]] নামে পরিচিত। এরা যান্ত্রিক মহাবিশ্বের ধারণা বিশ্বাসী। কিন্তু এই বিশ্বাস নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েও মিলেনারিয়ানরা সেই প্রাচীন এনথুসিয়াজ্‌ম এবং রহস্যময়তার সম্মুখীন হয়েছেন যার মুলোৎপাটন করার জন্য এনলাইটেনমেন্টের যুগে অনেক প্রচেষ্টাই করা হয়েছে।
 
== বিশ্বের সমাপ্তি সম্বন্ধনীয় ধারণা ==
{{মূল|আইজাক নিউটনের জ্যোতিষ শাস্ত্র চর্চা}}
 
[[১৭০৪]] খ্রিস্টাব্দে লেখা একটি পাণ্ডুলিপিতে নিউটন বাইবেল থেকে বৈজ্ঞানিক তথ্য বের করে আনার জন্য তার প্রচেষ্টার কথা লিখেছেন। তিনি অনুমানঅণুমান করেছিলেন [[২০৬০]] সালের আগে বিশ্ব ধ্বংস হবেনা। এই ভবিষ্যদ্বাণী করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন:
{{cquote|
<i>আমি এটি এজন্য উল্লেখ করিনি যে, বিশ্ব চরাচর কখন ধ্বংস হবে তার সময় আমি সবাইকে জানাতে চাই; বরং এজন্য যে, কল্পনার রাজ্যে বসবাসকারী ব্যক্তিরা বিশ্বের ধ্বংস সম্বন্ধে যা বলছেন তার সবগুলোকে একটি সীমার মধ্যে বেঁধে দেয়া। এবং এটি করার মাধ্যমে আমি পবিত্র ভবিষ্যদ্বাণীসমূহের যেটি ব্যর্থ প্রমাণিত হবে তাকে সাথে সাথে বিফল হিসেবে চিহ্নিত করার উপায় নির্ধারণ করলাম।}}
 
== জাল মুদ্রা প্রস্তুতকারকদের প্রতি নিউটন ==
[[রয়েল মিন্ট|রয়েল মিন্টের]] ওয়ার্ডেন থাকাকালীন সময়ে নিউটন অনুমানঅণুমান করেন যে, গ্রেট রিকয়েনেজের সময় প্রাপ্ত মুদ্রাসমূহের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগই জাল। মুদ্রা জাল করা একটি কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল যার কারণে জেল, জরিমানা বা ফাঁসি পর্যন্ত হতে পারতো। এতদসত্ত্বেও সবচেয়ে এ বিষয়ে প্রতাপশালী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তো। এই কাজে নিউটন অন্যদের মতই পারঙ্গমতা প্রদর্শনে সক্ষম হন।
 
বিভিন্ন সরাইখানার আশেপাশে চলাচল করার সময়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অনেক সাক্ষ্যপ্রমাণ নিউটন নিজেই জোগাড় করেছিলেন। ইংরেজ আইনে প্রাচীন অনেক প্রথাই বেশ গুরেত্বের সাথে বিরাজমান ছিল যার মাধ্যমে বিচারের পথে সব বাঁধা দূর করা সম্ভব ছিল। নিউটন এ কাজটিই করেছিলেন। নিউটন ''জাস্টিস অফ দ্য পিস'' পদে দায়িত্ব পান এবং [[১৬৯৮]] থেকে [[১৬৯৯]] সনের মধ্যে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণসহ প্রায় ২০০ জন সন্দেহভাজন দুষ্কৃতিকারীরদোষ্কৃতিকারীর মুখোমুখি হন। তিনি তার অবিযোগগুলোতে বিজয় লাভ করেন এবং ১৬৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১০ জন আসামীকে শাস্তি প্রদানের উপযুক্ত করে তোলেন। পরবর্তীতে তিনি তার সব পুলিশী তদন্তের সূত্র ধ্বংস করে ফেলেন।
 
সম্ভবত রাজার এটর্নি হিসেবে নিউটনের সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছিল উইলিয়াম ক্যালোনারের বিরুদ্ধে। ক্যালোনারের নীল নকশার মধ্যে একটি ছিল ক্যাখলিকদের মধ্যে ষড়যন্ত্রের বীজ বুনে দেয়া এবং পরবর্তীতে দুর্ভাগা ষড়যন্ত্রকারীদেরকে বিপদে ফেলা যাদেরকে মূলত সে-ই ফাঁদে ফেলেছিল। ক্যালোনার এতোটাই ধনী হয়ে উঠেছিল যে তাকে সবাই ভদ্রলোক হিসেবেই জ্ঞান করতো। সে আইনসভায় একটি পিটিশন দেয় এই বলে যে, রয়েল মিন্ট জাল মুদ্রা প্রস্তুতকারকদের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাহায্য করছে। অন্য আরও কয়েকজন এই পিটিশন দিয়েছিল। ক্যালোনার প্রস্তাব করে মিন্টের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তাকে মিন্টের কার্যপ্রণালী নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেয়া হোক। একই সাথে সে জাল মুদ্রা বানানোর সাথেও জড়িত ছিল। এতে নিউটন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং ক্যালোনারের সব কুকর্ম প্রকাশের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। বিভিন্ন সাক্ষ্যপ্রমাণের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, ক্যালোনার মুদ্রা জাল করার কাজে জড়িত আছে। অবিলম্বে তিনি ক্যালোনারকে বিচারের সম্মুখীন করেন। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে প্রচুর বন্ধু থাকার সুবাদে সে ছাড়া পেয়ে যায়। দ্বিতীয় আরেকবার নিউটন তাকে বিচারের সম্মুখীন করে এবং এ সময় নিউটনের হাতে চূড়ান্ত প্রমাণ ছিল। এর ফলে ক্যালোনারকে অভিযুক্ত করা হয় এবং [[১৬৯৯]] সনের [[মার্চ ২৩]] তারিখে লন্ডনের টাইবার্নে তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়।
 
== আলোকিত যুগের দার্শনিকেরা ==
আলোকিত যুগের দার্শনিকেরা বিজ্ঞানের জগতেজগৎে পূর্বসূরী এবং উত্তরসূরীধের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেন। এই তালিকার মূল ব্যক্তিত্ব ছিলেন [[গ্যালিলিও]], [[রবার্ট বয়েল]] এবং নিউটন। বর্তমান যুগের প্রতিটি ভৌত এবং সামাজিক ক্ষেত্রের প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক নিয়মের ধারণা উপস্থাপনে এই তিনজনকে বলা হয়েছে অগ্রদূত এবং পথপ্রদর্শক। এর সাপেক্ষে ইতিহাসের দীক্ষা এবং এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা সামাজিক গঠনকে বাদ দিয়ে দেয়া যায়।
 
প্রকৃতি এবং যুক্তি দ্বারা বোধগম্য মৌল নীতিসমূহের আলোকে নিউটনই প্রথম মহাবিশ্বের ধারণাকে পরিষ্কার করতে সমর্থ হন। এজন্য একেই বলা যায় আলোকিত যুগের আদর্শের সূচনা। [[জন লক]] এবং [[ভলতেয়ার]] রাজনৈতিক পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক নিয়মের প্রয়োগ ঘটিয়েছেনএবং এর মাধ্যমে অন্তর্জাত অধিকার সম্বন্ধে উপদেশ দিয়েছেন; [[অ্যাডাম স্মিথ]] এবং অনেক ফিজিওক্র্যাটরা [[মনোবিজ্ঞান]] এবং আত্ম-চাহিদার প্রাকৃতিক ধারণাসমূহকে অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করেন এবং সমাজবিজ্ঞানীরা প্রগতির প্রাকৃতিক নকশার সাথে ইতিহাসের সামঞ্জস্য স্থাপনের চেষ্টা করার জন্য বর্তমান সামাজিক আইনের সমালোচনা করেন। Monboddo এবং [[স্যামুয়েল ক্লার্ক]] নিউটনের গবেষণার উপাদানসমূহ নিয়ে কাজ করা থেকে বিরত থেকেছেন, কিন্তু অনিবার্যভাবেই প্রকৃতি সম্বন্ধে তাদের শক্তিশালী ধর্মীয় চিন্তাধারার সাথে বিরোধ স্থাপনের জন্য তারা নিউটনের গবেষণা যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে বাধ্য হয়েছেন।
১৫৮ নং লাইন:
</blockquote>
 
প্রশ্ন এটি ছিলনা যে, অভিকর্ষ বল আদৌ আছে কি-না। বরং প্রশ্ন ছিল এই বলটি এতো দূরত্ব পর্যন্ত আপন প্রভাব প্রসারিত করতে পারে কি-না যাতে এমনকি চন্দ্রের উপরও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায়। নিউটন দেখান যে, এই বলটি যদি দূরত্বের বিপরীত বর্গীয় সূত্রানুসারেসূত্রাণুসারে কমতে থাকে তাহলে চাঁদের কক্ষীয় পর্যায়ের যে মান পাওয়া যায় তা সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি ধারণা করেন এই একই বল অন্যান্য সকল কক্ষীয় গতির জন্য দায়ী। আর তাই এর নাম দেন "সর্বজনীন মহাকর্ষ"।
 
[[উইলিয়াম স্টাকলি]] নামক অপর একজন সমসাময়িক লেখক তার "মেময়ের্‌স অফ স্যার আইজাক নিউটন্‌স লাইফ" নামক গ্রন্থে [[১৭২৬]] সনের [[এপ্রিল ১৫]] তারিখে কেনিংস্টনে নিউটনের সাথে তার একটি বাক্যালাপের বর্ণনা দেন। এই বাক্যালাপের এক পর্যায়ে নিউটন বলেন যে, "মহাকর্ষ নিয়ে তিনি আগে থেকেই চিন্তিত ছিলেন। এমন সময় বাগানে গবেষণার মুড নিয়ে বসে থাকার সময় গাছ থেকে একটি আপেল মাটিতে পতিত হয়। আপেলটি কেন সব সময় অভিলম্ব বরাবর মাটির দিকে পতিত হয়, তিনি নিজের মনে চিন্তা করেন। কেন পাশে বা উপর দিকে যায়না, সবসময়ই কেন পৃথিবীর কেন্দ্রের দিক বরাবর পতিত হয়।" একই ধরণেরধরনের বাক্যের সমাবেশে ভলতেয়ার তার "এসে অন এপিক পোয়েট্রি" (১৭২৭) নামক প্রবন্ধে লিখেছেন "আইজাক নিউটন যখন তার বাগানে হাটছিলেন. তখন গাছ থেকে একটি আপেলকে মাটিতে পড়তে দেখে প্রথম মহাকর্ষ পদ্ধতি সম্বন্ধে তার বোধদয় হয়।" এই বর্ণনাগুলো সম্ভবত কিছুটা অতিরঞ্জিত। কারণ নিউটনের নিজের বর্ণনা অনুযায়ীঅণুযায়ী, তিনি উল্‌সথর্প ম্যানরে তার নিহের বাসার জানালার কাছে বসে ছিলেন। এমন সময় জানালা দিয়ে গাছ থেকে একটি আপেল মাটিতে পড়তে দেখেন।
 
নিউটন যে গাছটির কথা বলেছেন তা চিহ্নিত করতে গিয়ে অনেকগুলো গাছকেই নির্বাচিত করা হয়েছে। গ্রান্থামের কিংস স্কুলের দাবী অনুসারেঅণুসারে গাছটি স্কুল কর্তপক্ষ কিনে নিয়েছিল। কিনে নেয়ার পর গাছটি উপড়িয়ে ফেলে প্রধান শিক্ষকের বাগানে পুনরায় লাগানো হয়। বর্তমানে উল্‌সথর্প ম্যানরের দায়িত্বে থাকা ন্যাশনাল ট্রাস্ট এই দাবী মেনে নেয়নি। তাদের মতে ম্যানরের বাগানেই গাছটি রয়েছে। এই গাছের একটি বংশধর কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের প্রধান ফটকের পাশে বেড়ে উঠতে দেখা যায়। নিউটন ট্রিনিটি কলেজে অধ্যয়নকালে যে কক্ষে থাকতেন তার ঠিক নিচেই গাছটি অবস্থিত।
 
== বিশ্বের সমাপ্তি ==
১৭২ নং লাইন:
থ্য-উপাত্তগুলোর অবিলম্বে প্রকাশের দাবী করেন। কিন্তু তিনি উপাত্তগুলো পান নি। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ফ্ল্যামস্টিডের গবেষণাকর্ম তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে এডমন্ড হ্যালির নামে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন; অথচ হ্যালি ছিলেন ফ্ল্যামস্টিডের আজীবন শত্রু। সুবিচারের আশায় ফ্ল্যামস্টিড আদালতের আশ্রয় নেন এবং বিচারের পর তার কাছ থেকে চুরি করে নেওয়া গবেষণাকর্মের প্রকাশনা বণ্টনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নিউটন তার লেখা প্রিন্সিপিয়া বইয়ের পরবর্তী সংস্করণসমূহে ফ্ল্যামস্টিডের নামে উল্লেখিত সকল তথ্যসূত্র কেটে বাদ দিয়ে দেন।
 
নিউটনের সাথে আরেকটি বড় ধরণেরধরনের বিরোধ ছিল জার্মান দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ [[গটফ্রিড লাইবনিজ|গটফ্রিড লাইবনিজের]]। লাইবনিজ এবং নিউটন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে প্রায় একই সময়ে বিজ্ঞানের একটি নতুন শাখার উন্নয়ন ঘটান যা [[ক্যালকুলাস]] নামে পরিচিত। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে এই শাখাটি। যদিও আমরা এখন জানি নিউটন লাইবনিজের কয়েক বছর পূর্বেই এটি আবিষ্কার করেছিলেন, তবে তিনি তা প্রকাশ করেছিলেন অনেক পরে অর্থাৎ ১৬৯৩ সনে; আর পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করেছিলেন [[১৭০৪]] খ্রিস্টাব্দে। অথচ লাইবনিজ তার কাজের একটি পূর্ণ বিবরণ ১৬৮৪ সালেই প্রকাশ করেছিলেন। মূলত লাইবনিজের ব্যবকলন পদ্ধতিই পরবর্তীকালে মহাদেশ জুড়ে গৃহীত হয়েছিল।<ref name="ReferenceA">ইংরেজি উইকিপিডিয়া, নিবন্ধ: Isaac Newton, অনুচ্ছেদঅণুচ্ছেদ: Mathematics</ref> কে আগে এটি আবিষ্কার করেছেন তা নিয়ে তৎকালীন বিজ্ঞানী সমাজের মাঝে প্রবল বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। দুজনের বিরুদ্ধে ও পক্ষেই অনেক লেখালেখি হয়। আশ্চর্যের বিষয়, নিউটনের পক্ষে লিখিত অধিকাংশ নিবন্ধই ছিল তার নিজের লেখা এবং তার বন্ধুদের নামে প্রকাশিত। বাগ্‌বিতণ্ডা চলতে থাকায় লাইবনিজ বিষয়টি রয়েল সোসাইটিতে উত্থাপন করেন। সোসাইটির সভাপতি নিউটন এর সঠিক অনুসন্ধানেরঅণুসন্ধানের জন্য তার বন্ধুদের নিয়ে একটি পক্ষপাতিত্বমূলক কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ শুরু করে [[১৭১১]] সনে।<ref name="ReferenceA"/> রয়েল সোসাইটির প্রতিবেদনে লাইবনিজকে গবেষণা কর্ম চুরির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। এরপর নিউটন নাম গোপন করে এক সাময়িকীতে রয়েল সোসাইটির প্রতিবেদনের পক্ষেও লিখেছিলেন। লাইবনিজের মৃত্যুর পর নিউটন বলেছিলেন. লাইবনিজের মন ভেঙ্গে দিয়ে তিনি খুব শান্তি পেয়েছেন। লাইবনিজের সাথে যখন তার বিরোধ চলছিল তখনই নিউটন কেমব্রিজ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। বিজ্ঞানের জগৎ ছেড়ে তিনি ক্যাথলিক-বিরোধী রাজনীতি ও পরবর্তীকালে সংসদীয় কাজে যোগ দেন। একসময় রয়েল মিন্টের ওয়ার্ডেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন। সেখান থেকে তিনি জাল-বিরোধী কর্মকাণ্ডকে জোরদার করে তুলেন। এর কারণে অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছিল বলে স্টিফেন হকিং তার বইয়ে লিখেছেন।cs
 
== রচনাসমূহ ==