অর্ধনারীশ্বর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
২৬ নং লাইন:
==উৎস ও প্রাচীন মূর্তিসমূহ==
[[File:Kushana Ardhanareswar.jpg|thumb|upright|অর্ধনারীশ্বর মূর্তির মস্তক, [[কুষাণ যুগ|কুষাণ যুগের]] প্রথম ভাগের ভাস্কর্য। এটি রাজঘাট থেকে আবিষ্কৃত এবং বর্তমানে [[মথুরা সংগ্রহালয়|মথুরা সংগ্রহালয়ে]] রক্ষিত।]]
অর্ধনারীশ্বর ধারণাটি সম্ভবত [[বেদ|বৈদিক]] সাহিত্যের যুগ্মমূর্তি [[যম (দেবতা)|যম]]-[[যমী]],<ref name = "Chakravati44"/><ref name = "swami58">Swami Parmeshwaranand p. 58</ref> আদি সৃষ্টিকর্তা বিশ্বরূপ বা [[প্রজাপতি (দেবতা)|প্রজাপতি]] ও [[অগ্নি|অগ্নির]] বৈদিক বর্ণনা “যিনি একাধারে বৃষ ও গাভী”,<ref name ="Kramrisch200"/><ref name = "Srinivasan57"/> ''[[বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌]]'' গ্রন্থে উভলিঙ্গ বিশ্বমানব [[পুরুষ (হিন্দুধর্ম)|পুরুষ]] রূপী [[আত্মা (হিন্দু দর্শন)|আত্মা]]<ref name = "Chakravati44"/><ref name = "Srinivasan57"/> এবং [[প্রাচীন গ্রিস|প্রাচীন গ্রিসের]] [[হার্মাফ্রোডিটাস]] ও [[ফ্রিজিয়ান]] [[আগডিস্টিস]] অংক্রান্তঅঙ্ক্রান্ত পুরাণকথা<ref name ="Kramrisch200"/><ref name = "Daniélou63ff"/> থেকে অনুপ্রাণিত।অণুপ্রাণিত। ''বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌'' গ্রন্থে বলা হয়েছে, পুরুষ নিজেকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। একটি ভাগ পুরুষ ও অপর ভাগ নারী। এই দুই ভাগ মিলিত হয়ে সকল প্রাণ সৃষ্টি করেছেন। অর্ধনারীশ্বর কাহিনির মূল বিষয়বস্তু।<ref>Srinivasan pp. 57, 59</ref> ''[[শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদ্‌]]'' [[পুরাণ|পৌরাণিক]] অর্ধনারীশ্বর ধারণার বীজ বপন করেছে। এই গ্রন্থ মতে, পৌরাণিক শিবের আদি সত্ত্বা [[রুদ্র]] সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনিই [[সাংখ্য]] দর্শনের পুরুষ (পুরুষ তত্ত্ব) ও [[প্রকৃতি (দর্শন)|প্রকৃতির]] মূল। এই ধারণা অনুসারেঅণুসারে, রুদ্র একাধারে পুরুষ ও নারী। এই ধারণা থেকে রুদ্রের উভলিঙ্গ সত্ত্বার একটি আভাস পাওয়া যায়।<ref>Srinivasan pp. 57–8</ref>
 
অর্ধনারীশ্বর ধারণাটির উদ্ভব ঘটেছিল যুগপৎ [[কুষাণ]] ও গ্রিক সংস্কৃতিতে। কুষাণ যুগে (৩০-৩৭৫ খ্রিস্টাব্দ) অর্ধনারীশ্বরের মূর্তিতত্ত্বটি বিবর্তিত হয়। কিন্তু গুপ্ত যুগেই (৩২০-৬০০ খ্রিস্টাব্দ) এই মূর্তিতত্ত্ব পূর্ণাঙ্গ রূপ পরিগ্রহ করে।<ref name = "swami55ff">Swami Parmeshwaranand pp. 55–6</ref><ref name="Chakravarti p. 146">Chakravarti p. 146</ref> কুষাণ যুগের (খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীর মধ্যভাগের) একটি [[কেন্দ্রস্তম্ভ]] এখন [[মথুরা সংগ্রহালয়|মথুরা সংগ্রহালয়ে]] রক্ষিত আছে। এই স্তম্ভে একটি অর্ধনারী-অর্ধপুরুষ মূর্তি খোদিত রয়েছে। সেই সঙ্গে আরও তিনটি মূর্তিও খোদিত আছে। এই তিনটি মূর্তি [[বিষ্ণু]], [[গজলক্ষ্মী]] ও [[কুবের|কুবেরের]] মূর্তি হিসেবে চিহ্নিত করা গিয়েছে।<ref name = "swami58"/><ref>See image in Goldberg pp. 26–7</ref> অর্ধনারী-অর্ধপুরুষ মূর্তিটির পুরুষার্ধটি ‘উর্ধলিঙ্গ’ এবং এই অংশে [[অভয় মুদ্রা]] প্রদর্শিত হয়েছে। অন্যদিকে নারী-অর্ধটির স্তনটি সুডৌল এবং এই অংশে মূর্তির হাতে একটি দর্পণ দেখা যায়। এটিই অর্ধনারীশ্বর মূর্তির সর্বজনস্বীকৃত প্রাচীনতম নিদর্শন।<ref name = "swami58"/><ref name = "Goldberg30"/> মথুরা সংগ্রহালয়ে রাজঘাট থেকে প্রাপ্ত একটি প্রাচীন অর্ধনারীশ্বর মূর্তির মস্তকভাগও রক্ষিত আছে। এই মস্তকের পুরুষার্ধটির মাথায় নরকরোটি সম্বলিতসংবলিত জটা অর্ধচন্দ্র এবং বাঁদিকের নারী-অর্ধে সুবিন্যস্ত ও পুষ্পশোভিত কেশ এবং কানে পত্রকুণ্ডল বা দুল দেখা যায়। এই মুখে একটিই [[তৃতীয় নয়ন]] রয়েছে। অধুনা [[বিহার]] রাজ্যের [[বৈশালী (প্রাচীন শহর)|বৈশালী]] থেকে প্রাপ্ত একটি টেরাকোটার সিলমোহরে অর্ধনারী-অর্ধপুরুষ মূর্তির চিত্র খোদিত রয়েছে।<ref name = "swami58"/> কুষাণ যুগের অর্ধনারীশ্বর মূর্তিগুলি সাধারণ দ্বিভূজ মূর্তি। তবে পরবর্তীকালে রচিত ধর্মগ্রন্থ ও নির্মিত ভাস্কর্যগুলিতে অর্ধনারীশ্বরের মূর্তিতত্ত্বটি আরও জটিল আকার নেয়।<ref name = "Srinivasan57"/>
 
গ্রিক লেখক [[স্টোবিয়াস]](৫০০ খ্রিস্টাব্দ) [[বার্ডাসেনেস|বার্ডাসেনেসের]] (১৫৪-২২২ খ্রিস্টাব্দ) রচনা থেকে অর্ধনারীশ্বরের কথা উদ্ধৃত করেছেন। বার্ডাসেনেস [[এলাগাবালাস|এলাগাবালাসের]] (এমেসার অ্যান্টোনিয়াস) (২১৮-২২ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্বকালে [[সিরিয়া|সিরিয়ায়]] একটি ভারতীয় দূতাবাসে সফরে এসে অর্ধনারীশ্বরের কথা জানতে পারেন।<ref name = "Chakravati44">Chakravarti p. 44</ref><ref name = "swami55ff"/> [[তক্ষশীলা|তক্ষশীলায়]] খননকার্য চালিয়ে [[শক]]-[[পার্থিয়ান সাম্রাজ্য|পার্থিয়ান]] যুগের টেরাকোটার একটি উভলিঙ্গ আবক্ষ মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। এই মূর্তিতে নারীর স্তনবিশিষ্ট এক দাড়িওয়ালা পুরুষকে দেখা যায়।<ref name = "swami55ff"/><ref name="Chakravarti p. 146"/>
৩৫ নং লাইন:
 
==মূর্তিতত্ত্ব==
[[File:Shakta Ardhanari.jpg|thumb|left|শাক্ত অর্ধনারীশ্বর মূর্তির একটি দুষ্প্রাপ্যদোষ্প্রাপ্য নিদর্শন। এই মূর্তিতে প্রধান ডানদিকটি নারী-অর্ধ।]]
১৬শ শতাব্দীর মূর্তিতত্ত্ব সংক্রান্ত গ্রন্থ [[শিল্পরত্ন]], [[মৎস্যপুরাণ]] এবং অংশুমাদভেদাগম, কামিকাগম, সুপ্রেদাগম ও কারণাগম প্রভৃতি [[আগম]] শাস্ত্রে অর্ধনারীশ্বরের মূর্তিতত্ত্বটি বর্ণিত হয়েছে। উল্লেখ্য, উপরিউক্ত আগমগুলি প্রধানত দক্ষিণ ভারতে রচিত হয়।<ref>Rao p. 323</ref><ref name = "matsya"/> শরীরের ডানদিকের ভাগটি প্রধান। এই ভাগটি সাধারণত শিবের। বাঁদিকের ভাগটি পার্বতীর। কোনো কোনো দুর্লভ বিবরণ অনুসারেঅণুসারে, ডানদিকের প্রধান অংশটি পার্বতীর। এই বিবরণগুলি শাক্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।<ref name = "goldberg145">Goldberg pp. 145–8</ref> অর্ধনারীশ্বর মূর্তি সাধারণত চতুর্ভূজ, ত্রিভূজত্রিভুজ বা দ্বিভূজ। কোনো কোনো দুষ্প্রাপ্যদোষ্প্রাপ্য অষ্টভূজ মূর্তিও পাওয়া গিয়েছে। ত্রিভূজত্রিভুজ মূর্তিগুলির ক্ষেত্রে পার্বতীর অংশে একটি মাত্র হাত রয়েছে। এর মাধ্যমে এই মূর্তিতে পার্বতীর ভূমিকা হ্রাসের আভাস দেওয়া হয়েছে।
 
===পুরুষার্ধ===
অর্ধনারীশ্বর মূর্তির পুরুষার্ধটির মস্তকে ‘জটামুকুট’ (মুকুটের আকারে জটা) দেখা যায়। এই জটামুকুটে শোভা পায় একটি অর্ধচন্দ্র। কোনো কোনো মূর্তিতে জটামুকুটে থাকে সর্প এবং সেই জটা থেকে দেবী [[গঙ্গা (দেবী)|গঙ্গাকে]] নির্গত হতে দেখা যায়। ডান কানে থাকে একটি ‘নক্রকুণ্ডল’, ‘সর্পকুণ্ডল’ (সাপের দুল) বা সাধারণ কুণ্ডল বা কানের দুল। কোনো কোনো মূর্তিতে নারী-অর্ধের তৃতীয় চক্ষুটির চেয়ে পুরুষার্ধের তৃতীয় চক্ষুটি ছোটো এবং পুরুষার্ধে দেখা যায় একটি অর্ধেক গোঁফ।<ref name = "Rao324ff"/><ref name = "Goldberg4"/> শাস্ত্রে পুরুষার্ধে একটি অর্ধ তৃতীয় নেত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। কোনো কোনো বর্ণনা অনুসারেঅণুসারে, অর্ধনারীশ্বরের কপালের মধ্যস্থলে একটি পূর্ণাঙ্গ তৃতীয় নেত্রটি মাঝখান থেকে দুই ভাগে বিভক্ত। পার্বতীর সিন্দূর-বিন্দুর উপরে বা নিচে একটি অর্ধ নেত্রের উল্লেখও রয়েছে।<ref name = "Rao324ff"/><ref name = "Goldberg5"/> মাথার পিছনে একটি একক ডিম্বাকার জ্যোতিশ্চক্রও (‘প্রভামণ্ডল’ বা ‘প্রভাবলি’) দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই জ্যোতিশ্চক্রটি দিক অনুসারেঅণুসারে ভিন্ন প্রকার।<ref name = "Goldberg5"/>
 
চতুর্ভূজ মূর্তিগুলিতে ডান হাতে থাকে একটি ‘[[পরশু]]’ (কুঠার) এবং অন্য হাতটি ‘অভয় মুদ্রা’র ভঙ্গিতে থাকে। কোনো কোনো মূর্তিতে দেখা যায়, ডান হাতদুটির একটি সামান্য বেঁকে শিবের বাহন [[নন্দী|নন্দীর]] উপর স্থাপিত এবং অন্য হাতে দেখা যায় ‘অভয় মুদ্রা’। অন্য একটি ধরনে দেখা যায়, ডান হাতে একটি [[ত্রিশূল]] ও অপর হাতটিতে ‘[[বরমুদ্রা]]’। অপর একটি শাস্ত্রের বর্ণনা অনুসারেঅণুসারে, ডান হাত দুটিতে থাকে ত্রিশূল ও [[অক্ষমালা]]। দ্বিভূজ মূর্তিতে ডান হাতে থাকে ‘কপাল’ বা নরকরোটির পাত্র অথবা বরমুদ্রা।<ref name = "Rao324ff">Rao pp. 324–5</ref><ref name = "Goldberg4">Goldberg p. 12</ref> কোনো কোনো মূর্তিতে শুধুমাত্র নরকরোটিও দেখা যায়।<ref name = "matsya"/> [[বাদামী]] ভাস্কর্যে চতুর্ভূজ মূর্তিতে দেখা যায়, অর্ধনারীশ্বর বাঁ হাত ও ডান হাতের সাহায্যে [[বীণা]] বাজাচ্ছেন। তাঁর অপর ডান হাতে একটি পরশু এবং নারী-অর্ধের হাতে একটি পদ্ম রয়েছে।<ref name = "Rao327ff">Rao pp. 327–8</ref>
 
[[File:Ardhanari.png|thumb|upright|ব্রোঞ্জনির্মিত ত্রিভূজত্রিভুজ অর্ধনারীশ্বর মূর্তি]]
অর্ধনারীশ্বর মূর্তির শিব-অর্ধে দেখা যায় চ্যাপ্টা পুরুষালি বক্ষস্থল, ঋজু আনুভূমিক বক্ষস্থল, প্রসারিত কাঁধ, প্রসারিত কোমর ও পুরুষোচিত উরুদেশ।<ref name = "Goldberg4"/> তাঁর বুকে ঝোলে একটি [[যজ্ঞোপবীত]]। কোথাও কোথাও এই যজ্ঞোপবীতটি হল ‘নাগযজ্ঞোপবীত’ (সর্পনির্মিত যজ্ঞোপবীত) বা মুক্তো বা মণির মালা। কোথাও কোথাও যজ্ঞোপবীতটি দেহের মধ্যভাগটিকে পুরুষ ও নারী-অর্ধে বিভক্ত করেছে। পুরুষার্ধে শিবের মূর্তিতত্ত্ব অনুসারেঅণুসারে, সর্পভূষণ সহ নানা অলংকার দেখা যায়।<ref name = "matsya"/><ref name = "Rao324ff"/><ref name = "Goldberg5"/><ref name="britannica"/>
 
কোনো কোনো উত্তর ভারতীয় মূর্তিতে<ref name = "Goldberg5"/> পুরুষার্ধটির পুরুষাঙ্গটি উন্নত। এটিকে বলা হয় ‘উর্ধলিঙ্গ’ বা ‘উর্ধরেতা’। কোনো কোনো মূর্তিতে পুরুষাঙ্গটি অর্ধেক এবং ডিম্বাশয়ও একটি।<ref name = "Goldberg30"/> যদিও দক্ষিণ ভারতে এমন কোনো মূর্তি পাওয়া যায়নি।<ref name = "Goldberg5">Goldberg p. 13</ref> মূর্তির কটিদেশে সাধারণত কাপড় (কোনো কোনো ক্ষেত্রে রেশম বা সূতির [[ধুতি]] অথবা বাঘ বা হরিণের চামড়া) থাকে। কাপড়টি হাঁটু অবধি ঝোলে। কোমরে থাকে ‘সর্পমেখলা’ বা সাপের তৈরি কোমরবন্ধনী বা অন্য অলংকার। ডান পাটি সামান্য বাঁকা। এটি অনেক ক্ষেত্রে ‘পদ্মপীঠ’ বা পদ্মের বেদীর উপর স্থাপিত অবস্থায় দেখা যায়। সমগ্র ডান-ভাগটি ভষ্মমাখা ও ভয়ংকর। এটি লাল বা সোনালি বা প্রবালের রঙের। যদিও এই ধরনের মূর্তিগুলির বিবরণ দুর্লভ।<ref name = "Rao324ff"/><ref name = "Goldberg5"/>