ফলার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Sujay25 (আলোচনা | অবদান)
ইতিহাস সম্প্রসারণ
Sujay25 (আলোচনা | অবদান)
২ নং লাইন:
 
==ইতিহাস==
ফলার ঠিক কতদিনের প্রাচীন তা বলা কঠিন, তবে মধ্যযুগীয় বাংলায় এই খাবারটির বেশ প্রচলন ছিল। বৈষ্ণবদের মহোৎসবে প্রচলিত প্রসিদ্ধ 'চিঁড়াভোগ' এই ফলারেরই আরেকরূপ। ষোলো শতকের প্রথমার্ধে পানিহাটিতে নিত্যানন্দপ্রভুর আগমন উপলক্ষে ভক্ত রঘুনাথদাস বিখ্যাত চিঁড়াদধিমহোৎসব আয়োজন করেন। সেই উৎসবে প্রচুর পরিমাণ চিঁড়ে, দই, দুধ, সন্দেশ ও কলা ভক্তদের মধ্যে পরিবেশিত হয়েছিল। এর কিছুকাল পরে নরোত্তমদাস-আয়োজিত খেতুরীর প্রসিদ্ধ মহোৎসবেও চিঁড়ে-দই পরিবেশন করার কথা জানা যায়। বৈষ্ণব মহোৎসবে মাটির সরা বা মালসায় এই খাবারটি অগণিত ভক্তদের মধ্যে বিলানো হত। এখনও বৈষ্ণবদের উৎসবে ফলারের বেশ চলন আছে।<ref name=B>{{বই উদ্ধৃতি|last1=রায়|first1=প্রণব|title=বাংলার খাবার|date=জুলাই, ১৯৮৭|publisher=সাহিত্যলোক|location=কলকাতা|page=৭৪}}</ref>
 
'কবিকঙ্কণ-চণ্ডী'-তে নিদয়ার সাধে খাবারের তালিকায় 'চিঁড়া চাঁপাকলা দুধের সর' এবং ভালো 'মহিষা-দই', খই, চিনি ও পাকা চাঁপাকলা মিশ্রিত ফলারের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেকালে দুপুরের খাবারের আগে বাড়ির মহিলারা স্নান করে সকালে 'খণ্ড, কলা, চিঁড়া ও দই' খেতেন।<ref name=B>{{বই উদ্ধৃতি|last1=রায়|first1=প্রণব|title=বাংলার খাবার|date=জুলাই, ১৯৮৭|publisher=সাহিত্যলোক|location=কলকাতা|page=৭৪}}</ref> 'কবিকঙ্কণ-চণ্ডী'-তে আছে:
<poem style="margin-left: 20em;">
স্নান করি দুর্বলা{{pad|12.0em}}খায় দধি খণ্ড কলা
:::চিঁড়া দই দেয় ভারি জনে।
</poem>
 
প্রাতরাশের জন্যে সেকালে 'খণ্ড', চিনি, চাঁপাকলার বহুল ব্যবহার ছিল। আঠারো শতকের শেষার্ধের কবি অকিঞ্চন চক্রবর্তীর অপ্রকাশিত 'চণ্ডীমঙ্গল' কাব্যে লহনা কর্তৃক খুল্লনাকে আপ্যায়ণ করে 'জলপান'-এর জন্যে এই দ্রব্যগুলি প্রদানের উল্লেখ আছে। ফলারকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে নদীয়া-কৃষ্ণনগরের কিছু ভূমিকা ছিল জানা যায়। শোনা যায়, এই অঞ্চলের এক গোয়ালা কোন সময় তদানীন্তন নদীয়ারাজকে কলাপাতায় করে খুব মিহি চিঁড়ে, অতি সুস্বাদু ক্ষীর, দই, কলা ও অন্যান্য ফল দিয়ে এমন অ্যাপ্যায়িত করেছিলেন যে, রাজাও তঁআরতাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন।<ref name=B>{{বই উদ্ধৃতি|last1=রায়|first1=প্রণব|title=বাংলার খাবার|date=জুলাই, ১৯৮৭|publisher=সাহিত্যলোক|location=কলকাতা|page=৭৪}}</ref>
 
ফলার নামটি পরবর্তীকালে শুধুমাত্র চিঁড়ে, দই, ফলের আহার্যকে না বুঝিয়ে নৈমিত্তিক ভোজনে আহার্যমাত্রকেই বোঝাতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে প্রাচীন বাংলার এই উত্তম ও সরস খাদ্যটি ফলার তালিকায় মধ্যম-শ্রেণীভুক্ত হয়। উত্তম ফলারের স্থান দখল করে লুচি, কচুরি, মিঠাইমণ্ডা প্রভৃতি। বিগত শতকের মাঝামাঝি সময়ে(বাংলা ১২৬১ সাল) লেখা রামনারায়ণ তর্করত্নের 'কুলীন কুলসর্বস্ব'-এ উত্তম, মধ্যম ও অধম— এই তিপ্রকার ফলারের বর্ণনা আছে।<ref name=C>{{বই উদ্ধৃতি|last1=রায়|first1=প্রণব|title=বাংলার খাবার|date=জুলাই, ১৯৮৭|publisher=সাহিত্যলোক|location=কলকাতা|page=৭৫}}</ref>
 
উত্তম ফলার হল:
<poem style="margin-left: 20em;">
ঘিয়ে ভাজা তপ্ত লুচি{{pad|2.0em}}দুচারি আদার কুচি
::::কচুরি তাহাতে খান দুই।
ছকা আর শাকভাজা,{{pad|2.0em}}মতিচূর বঁদে খাজা
::::ফলারের জোগাড় বড়ই॥
নিখুতি জিলাপি গজা{{pad|2.0em}}ছানাবড়া বড় মজা
::::শুনে সক্‌ সক্‌ করে নোলা।
খুরি পুরি ক্ষীর তায়{{pad|2.0em}}চাহিলে অধিক পায়
::::কাতারি কাটিয়ে সুখো দই।
অনন্তর বাম হাতে{{pad|2.0em}}দক্ষিণা পানের সাতে
::::উত্তম ফলার তাকে কই॥
</poem>
 
মধ্যম ফলার হল:
<poem style="margin-left: 20em;">
সরু চিঁড়ে সুখো দই{{pad|2.0em}}মত্তমান ফাকা খই
::::খাসা মণ্ডা পাতপোরা হয়।
মধ্যম ফলার তবে{{pad|2.0em}}বৈদিক ব্রাহ্মণে কবে
::::দক্ষিণাটা ইহাতেও রয়॥
</poem>
 
অধম ফলার:
<poem style="margin-left: 20em;">
গুমো চিঁড়ে জলো দই{{pad|2.0em}}তিত গুড় ধেনো খই
::::পেট ভরা যদি নাহি হয়।
রোদ্দুরেতে মাথা ফাটে{{pad|2.0em}}হাত দিয়ে পাত চাটে
::::অধম ফলার তাকে কয়॥
</poem>
 
প্রাতরাশের জন্যে সেকালে 'খণ্ড', চিনি, চাঁপাকলার বহুল ব্যবহার ছিল। আঠারো শতকের শেষার্ধের কবি অকিঞ্চন চক্রবর্তীর অপ্রকাশিত 'চণ্ডীমঙ্গল' কাব্যে লহনা কর্তৃক খুল্লনাকে আপ্যায়ণ করে 'জলপান'-এর জন্যে এই দ্রব্যগুলি প্রদানের উল্লেখ আছে। ফলারকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে নদীয়া-কৃষ্ণনগরের কিছু ভূমিকা ছিল জানা যায়। শোনা যায়, এই অঞ্চলের এক গোয়ালা কোন সময় তদানীন্তন নদীয়ারাজকে কলাপাতায় করে খুব মিহি চিঁড়ে, অতি সুস্বাদু ক্ষীর, দই, কলা ও অন্যান্য ফল দিয়ে এমন অ্যাপ্যায়িত করেছিলেন যে, রাজাও তঁআর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন।
==তথ্যসূত্র==
{{সূত্র তালিকা}}
'https://bn.wikipedia.org/wiki/ফলার' থেকে আনীত