গোপালগঞ্জ জেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Bodhisattwa (আলাপ)-এর সম্পাদিত 2010140 নম্বর সংশোধনটি বাতিল করা হয়েছে
৩৯ নং লাইন:
 
'''গোপালগঞ্জ জেলা''' [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] মধ্যাঞ্চলের [[ঢাকা বিভাগ|ঢাকা বিভাগের]] একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।
 
== ইতিহাস ==
গোপালগঞ্জ বলে যে শহরটির আদি নাম ছিল খাটরা। এ শহরটি খাটরা মৌজায় অবস্থিত। এখানে গোপালগঞ্জ নামে ভিন্ন কোন স্থান গ্রাম বা মৌজা নেই। এ অঞ্চলটি অতীতে ছিল জঙ্গলাকীর্ণ ও বিপদসংকুল। সম্ভবত সুলতানি আমলে পশ্চিমা সৈন্য সামন্তদের উত্তরাঞ্চলে যেতে হলে এ পথেই যেতে হতো। এ অঞ্চলটি বিপদসংকুল হওয়ার কারণে ফার্সি ভাষায় ওইসব সৈন্য সামন্ত খত্রা নামে অভিহিত করে এ এলাকাকে। তাদের উচ্চারিত খত্রা শব্দের অপভ্রংশই খাটরা হয়ে বৃটিশ আমলে সিএস জরিপে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে।
 
=== নামকরণ ===
গোপালগঞ্জের পূর্ব নাম ছিল রাজগঞ্জ। মকিমপুর স্টেটের জমিদার রানী রাসমণির জমিদারি এলাকা খাটরা মৌজায়। আর এই খাটরা মৌজায় ছিল রাজগঞ্জ। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় একজন উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ কর্মকর্তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন জেলে সম্প্রদায়ের মেয়ে রাসমণি। এ মহৎ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি লাভ করেছিলেন মকিমপুর পরগনার জমিদারি। খাটরা মৌজা ছিল মকিমপুর পরগনার আওতাধীন একটি এস্টেট। রাণী রাসমণি বাস করতেন কলকাতার করনেশন স্টেটে। তার হয়ে নায়েব রজনী ঘোষ আজকের গোপালগঞ্জ (তত্কালীন রাজগঞ্জ) এলাকার জমিদারি তদারকি করতেন। রাণী রাসমণির স্নেহ ভাজন নায়েব রজনী ঘোষের এক আদুরে নাতির নাম ছিল নবগোপাল। রানী প্রজাদের ইচ্ছায় নবগোপালের নামের অংশ গোপাল-এর সাথে পূর্বেকার রাজগঞ্জের নামের গঞ্জ যুক্ত করে গোপালগঞ্জ নামের প্রবর্তন করেন।
 
সুলতানি আমল ও মোগল আমলে জেলা ফতেহবাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল এ অঞ্চল। পরে গোপালগঞ্জ ফতেহবাদের থানা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারক সেন্ট মথুরনাথ বসুর প্রচেষ্টায় গোপালগঞ্জকে মহকুমায় উন্নীত করা হয়। সেন্ট মথুরনাথ বসুই প্রথমে গোপালগঞ্জে কোর্ট এবং স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
 
== ভৌগলিক অবস্থান ও সীমানা ==
৫০ ⟶ ৫৮ নং লাইন:
* [[কোটালীপাড়া উপজেলা]] এবং
* [[টুঙ্গিপাড়া উপজেলা]]
 
== ইতিহাস ==
১৯৮৪ সালে [[ফরিদপুর জেলা]]র মহকুমা থেকে গোপালগঞ্জ জেলা সৃষ্টি হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে গোপালগজ্ঞ এলাকা [[ফরিদপুর জেলা]]য় [[মাদারিপুর]] মহকুমা ও থানাধীন ছিল। ঐ সময়ে মাদারিপুরের সাথে এ এলাকায় জলপথ ছাড়া কোন স্থল পথের সংযোগ ছিল না। কোন স্টীমার বা লঞ্চ চলাচলও ছিল না। কেবলমাত্র বাচাড়িনৌকা, পানসি নৌকা, টাবুরিয়া নৌকা, গয়না নৌকা, ইত্যাদি ছিল চলাচলের একমাত্র বাহন। যাতায়াতের অসুবিধার কারণে এ এলাকায় পুলিশ প্রশাসন ছিল খুবই দুর্বল। মামলায় আসামীরা গ্রেফতারের ভয়ে দুর্গম বিল অঞ্চলে আত্বগোপন করে থাকত। এ সমস্ত অসুবিধার দরুন ১৮৭০ সালে গোপালগজ্ঞ থানা স্থাপিত হয়। ১৮৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর [[কলকাতা]] গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এর সীমানা নির্ধারিত হয়। ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে। বর্তমানে যেখানে থানা অবস্থিত ঐ স্থানে একটি টিনের ঘরে থানা অফিসের কাজকর্ম চালু করা হয়।<ref name="gopal" />
 
১৯০৯ সালে ফরিদপুর সদর মহকুমা থেকে কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর থানা এবং মাদারিপুর থেকে গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া থানা নিয়ে গোপালগজ্ঞ মহকুমা স্থাপিত হয়। মিশন স্কুলের দক্ষিণ পার্শ্বে দেওয়ানী আদালত ও সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের স্থান নির্দিষ্ট হয়। তার দক্ষিণে মোক্তার লাইব্রেরীসহ ফৌজদারী আদালত ভবন ও সংশ্লিষ্ট অফিসের জন্য নির্ধারিত হয়। বর্তমানে যেখানে ডিসি অফিস সেখানে বিরাটকায় চারচালা গোলপাতার ঘর বাঁশের বেড়া দিয়ে ফৌজদারী কোর্ট ও সংশ্লিষ্ট অফিসের জন্য নির্মিত হয়। তার দক্ষিণে বর্তমান জেলখানার স্থানে একটি বিরাটকায় গোলের ঘর তুলে মজবুত বাঁশের বেড়া অস্থায়ী জেলখানা নির্মিত হয়। বর্তমানে যেখানে মোক্তার বার ভবন ঐ স্থানে একটি ছনের ঘরে মোক্তারগণ আইন ব্যবসা শুরু করেন। ঐ সময়ে কোন উকিল এখানে আইন ব্যবসা করতে আসেনি। গোপালগজ্ঞের প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন মি: সুরেশ চন্দ্র সেন। ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়। পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান পান্না বিশ্বাস। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গোপালগজ্ঞ সদর থানা উপজেলায় উন্নীত হয়। প্রথম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছিলেন জনাব এইচ নুর মোহাম্মদ।
 
== ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ==
এ অঞ্চলের ঘর্ঘরা (বর্তমান ঘাঘর) নদীর তীরে মোগল সম্রাট বাবরের সঙ্গে বাংলার সুলতান নুশরত শাহর যুদ্ধ হয়। ব্রিটিশ আমলের গোড়ার দিকে এ অঞ্চলের সন্ন্যাসি ও ফকির বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। ৬৯ সালে গণঅভ্যুথানের সময় শহীদ হন জলিরপাড় স্কুলের ছাত্র মহানন্দ বিশ্বাস।
 
মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের সংগে আলাউদ্দিন হোসেন শাহর পুত্র নাসির উদ্দিন নসরত্ শাহর যুদ্ধ হয় এ অঞ্চলের ঘর্ঘরা নদীর তীরে। ঘর্ঘরা নদীই বর্তমানে কোটালীপাড়ার পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘাঘর নদী। নসরত্ শাহর আমলে দক্ষিণাঞ্চলে পর্তুগিজদের আক্রমণ ও লুটতরাজ বৃদ্ধি পেলে গোপালগঞ্জের সাধারণ লোকজন নিয়ে তিনি তা মোকাবেলা করেন।
 
ব্রিটিশ আমলের শুরুতেই এ অঞ্চলে সন্ন্যাসি বিদ্রোহ ও ফকির বিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে। তৎকালিন মাদরিপুরের কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জ সন্ন্যাসি ও ফকিরদের বেশ কিছু আখড়া ছিল। এ অঞ্চলের সবচেয়ে ঐতিহাসিক আন্দোলন হলো ফরায়েজি আন্দোলন। এখানে নীল চাষ বিরোধী আন্দোলনও হয়েছে। ১৮৪৬ সালে দুদু মিয়ার অনুচর কাদের বক্সের
নেতৃত্বে পাঁচ চরে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ হয়। নীল কুঠির কর্নধার ডানলপ পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে কোটালীপাড়ার বান্ধাবাড়ী গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস শহীদ হন। তিনি এ জেলার প্রথম শহীদ। ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনের সময় শহীদ হন জলিরপাড় গ্রামের মহানন্দ বিশ্বাস।
 
== প্রাকৃতিক সম্পদ ==
প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে কোটালীপাড়া উপজেলায় বিদ্যমান শামুক এবং ঝিনুক। এছাড়া অত্র জেলার সকল উপজেলায় প্রচুর পরিমান দেশী প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়, তার মধ্যে বর্ণির বাওড়ের মাছ বেশী প্রসিদ্ধ। যেমন- কই, মাগুর, সিং, সোল, গজার, টাকি, ফলি, পাবদা, রয়না, দেশী বেলে, বোল, বড় চিতল ইত্যাদি। এ জেলায় প্রচুর পরিমানে বোরো ধান জন্মে। এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য ধানের মধ্যে রয়েছে বোরো, আউশ, আমন,বি.আর-২৮, বি.আর-২৯, হীরা-২, পান্না, লালতীর, কালোজিরা, সোনার বাংলা, গৌরকাজল প্রভৃতি। খনিজ সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মুকসুদপুর উপজেলার চান্দার বিলের পীট কয়লার খনি।
 
== অর্থনীতি ==
গোপালগঞ্জ মূলত কৃষি প্রধান অঞ্চল। এখানে ধান, গম, পাট, আখ, নানা ধরনের সব্জি জন্মে। এছাড়া মৎস আহরণসহ এ জায়গার লোকজন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। বর্তমানে প্রবাসে বসবাসকারীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
 
== ভাষা ও সংস্কৃতি ==
উল্লেখযোগ্য শিল্পী গোষ্ঠী হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, ত্রিবেনী গণ সাংস্কৃতিক সংস্থা, মধুমতি পল্লী বাউল শিল্পীগোষ্ঠী, উদীচী শিল্পী গোষ্টী, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক জোট, সুর সন্ধান শিল্পী গোষ্ঠী, চন্দ্রিমাশিল্পী গোষ্ঠী ইত্যাদি। বর্তমান সময়কালের উল্লেখ্যোগ্য শিল্পীরা হচ্ছেন অনিল বিশ্বাস, নিপর্না বিশ্বাস, শাহানাজ রেজা এ্যানী, রাখাল ঠাকুর, দুলাল দাস, প্রফুল্ল বল প্রমুখ।
 
== শিক্ষা ==
 
== বিবিধ ==
* ক্রীড়া - ঘোড়া দৌড়, জলিরপাড়ের নৌকা বাইচ, [[ষাঁড়ের লড়াই]], চড়ক ঘুল্লি।
 
== চিত্তাকর্ষক স্থান ==
৭৫ ⟶ ১১০ নং লাইন:
* উলপুর জমিদারবাড়ি,
* ৭১-এর বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ (স্মৃতিস্তম্ভ),
* আদালত ভবন,
* পুরাতন হাসপাতাল ভবন,
* রাজা স্কন্ধ গুপ্তের (৪৫৫-৪৬৭ খ্রিস্টাব্দে) স্বর্নমূদ্রা,
* রাজা সমাচার দেব, ধর্মাদিত্য ও গোপচন্দ্রের আমলের তাম্রলিপি,
* সত্য ধর্মের প্রবর্তক দীননাথ সেনের সমাধিসৌধ (জলিরপাড়, মুকসুদপুর)।
৯৮ ⟶ ১৩৬ নং লাইন:
* [[নরেন বিশ্বাস]] (বাক শিল্পী),
* [[খালেক বিন জয়েন উদ্দিন]] (শিশু সাহিত্যিক),
* খালিদ (শিল্পী, চাইম ব্যান্ড),
* [[মারজুক রাসেল]] (অভিনেতা, কবি ও সঙ্গীত পরিচালক),
* [[প্রদ্যোত]] (কবি, আবৃত্তিকার ও শিক্ষক),
* [[আবদুস সামাদ]] (কৃতি ফুটবলার),
* [[সোহরাব হোসেন]] (কৃতি ফুটবলার),
১০৪ ⟶ ১৪৪ নং লাইন:
* [[আবু সাঈদ]] (সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার),
* [[ফিরোজা বেগম]] (সংগীত শিল্পি),
* ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার।
 
== আরও দেখুন ==
১১১ ⟶ ১৫২ নং লাইন:
==তথ্যসুত্র==
{{Reflist}}
 
==বহিঃসংযোগ==
 
{{বাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চল}}