তথ্যগুপ্তিবিদ্যা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Rezaul Rabbi (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Rezaul Rabbi-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে NahidSultanBot-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
১ নং লাইন:
[[চিত্র:Lorenz-SZ42-2.jpg|thumbnail|320px|জার্মান লোরেন্‌ৎস সাইফার মেশিন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জেনারেল স্টাফ বার্তা গোপন করার জন্য ব্যবহার করা হতো।]]
'''ক্রিপ্টোগ্রাফি''' বা '''তথ্যগুপ্তিবিদ্যা''' হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের নিরাপত্তা এলাকার একটি শাখা, যাতে তথ্য গোপন করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে গবেষণা করা হয়। '''ক্রিপ্টোগ্রাফি''' শব্দটি এসেছে [[গ্রিক ভাষা|গ্রিক]] κρυπτός (উচ্চারণ ''ক্রিপ্টোস'') যার অর্থ "গোপন," এবং γράφω (উচ্চারণ ''গ্রাফি'') যার অর্থ লিখন হতে। ক্রিপ্টোগ্রাফি হচ্ছে একটি তৃতীয় পক্ষের ({{lang-en|Adversary}}) উপস্থিতিতে নিরাপদ যোগাযোগের পদ্ধতিসমূহ সংক্রান্ত চর্চা ও আলোচনা। সাধারণভাবে ক্রিপ্টোগ্রাফি বা তথ্যগুপ্তিবিদ্যা হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের প্রবেশ বন্ধের জন্য কার্যপদ্ধতি সৃষ্টি ও বিশ্লেষণ করা। [[গণিত]], [[কম্পিউটার বিজ্ঞান]] এবং [[তড়িৎ প্রকৌশল]] প্রভৃতি ক্ষেত্রে আধুনিক ক্রিপ্টোগ্রাফি বা তথ্যগুপ্তিবিদ্যা''-'র উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। [[এটিএম কার্ড]], [[পাসওয়ার্ড|কম্পিউটার পাসওয়ার্ড]], [[ই-কমার্স]]- এর ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোগ্রাফির ব্যাবহারিক প্রয়োগ রয়েছে।
 
ক্রিপ্টোগ্রাফি শুরু হয়েছিলো হাজার বছর আগে । প্রাচীন কালে Cryptography বা তথ্য গোপন করার কাজটা করা হত কাগজ , কলম আর যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করে। একে এক কথায় বলা যেতে পারে Classic Cryptography. এখন আসুন দেখা যাক পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতায় কিভাবে এই কাজটি করা হত।
 
 
প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় Cryptography
 
 
প্রাচীন সভ্যতা গুলোর মধ্যে সর্ব প্রথম Cryptography র প্রমান পাওয়া যায় মিসরীয় সভ্যতায়। ৪৫০০ বছর আগের Hieroglyphs বর্ণমালা মিশরের সভ্যতায় ব্যাবহার করা Cryptography এর দারুণ এক উদাহরণ।
 
hieroglyphics_01.jpg hieroglyphics_02.jpg
Hieroglyphs
 
 
ধারণা করা হয় এটি মিশরীয়দের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য ব্যবহার করা হত । এটাতে জড়িয়ে আছে একধরণের রহস্য যেখানে প্রাচীন মিশরীয়দের জীবন ধারার কথা বলা আছে বলে মনে করা হয় ।
 
 
Mesopotamia সভ্যতায় Cryptography
 
 
মেসোপটেমিয়া কাদামাটি থেকে আবিষ্কৃত কিছু ট্যাবলেট এর ছবি নিচে দেয়া হলঃ
 
mesoptomia_01.png mesoptomia_02.jpg
Mesopotamia এর Tablets
 
 
ধারণা করা হয় তারা তাদের নিজস্ব ইনফরমেশন গুলো লিখে সবার থেকে গোপন করে রাখার জন্য এরকম কৌশল ব্যাবহার করত। গোপন তথ্যাদির মধ্যে ছিল রান্নার রেসিপি কিংবা এমন কিছু যা তারা তাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্য বলে যেতে চাইত। কিন্তু চাইত না অন্য কেও জানুক।
 
 
রোমান এবং গ্রীক সভ্যতায় Cryptography
 
 
ইতালির Scytale প্রাচীন একধরণের যন্ত্র বা পদ্ধতি যেটার মাধ্যমে ডাটা এনক্রিপ্ট করা হত । তবে গ্রিক কবি আরহেনিয়াস সবার আগে এটার ব্যবহারের পদ্ধতি জানতেন । এটা প্রায় ২৫০০ বছর আগের কথা। ব্যাপারটা মোটামুটি এরকম ছিলঃ
 
প্রাচীন গ্রীকেরা তাদের যুদ্ধ ক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য সাইটেল ব্যবহার করতো ।
Sender এবং Receiver এর কাছে একি ব্যসার্ধের একটা দণ্ড থাকতো । কাগজ দণ্ডটার উপর পেঁচিয়ে চিঠি লিখা হত ।
চিঠিটা শুধু একি ব্যাসের দণ্ড ব্যবহার করে পড়া যেত । অন্য কোন দণ্ডের উপর পেঁচিয়ে চিঠিটা পড়া যেত না ।
 
skytale_03.png skytale_02.png
Skytale
 
 
সাইটেলে ইন ক্রিপ্ট করার পদ্ধতির একটা উদাহরণ দেখা যাক-
 
আসল মেসেজঃ Kill king tomorrow midnight
 
skytale_04.jpg
 
 
এনক্রিপ্ট করা মেসেজঃ : ktm ioi lmd lon kri irg noh gwt
 
কৌশল টা বোঝার জন্য আসা করি নিচের চিত্রটি ভাল কাজে দিবে। এখানে একটি পেন্সিল এর গায়ে একটি ফিতা পেঁচিয়ে তার উপর গোপন কথাটি লেখা হয়েছে। যদি আপনি একি ব্যাসের কোনও পেন্সিলে ফিতাটি আবার না পেঁচান তাহলে কখনই আসল লেখাটি আর পড়া যাবে না।
 
skytale_01.gif
 
 
 
Spartan সৈন্য বাহিনীও এ ধরণের কৌশল তাদের তথ্য যোগাযোগ ব্যাবস্থাকে নিরাপদ রাখার জন্য ব্যবহার করত। আপনারা হয়ত অনেকেই Troy চলচিত্রটি দেখেছেন। সেখানে কিভাবে একটি বিশাল ঘোড়া উপহার দেবার মাধ্যমে তাদের প্রাচীর ভেদ করে শত্রু পক্ষ ভেতরে প্রবেশ করে সেটা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। আমাদের বর্তমান কালের কুখ্যাত Trojan Malware এর মূলনীতি অনেকটা সেরকম ভাবেই কাজ করে। মনে হয় জিনিসটা আমাদের দরকারি। কিন্তু আসলে সেটা একটা মারাত্বক Malware!
troy_horse.jpg
 
 
গ্রীকরা আরও একটা ক্রিপ্টোগ্রাফির মেথড বানিয়ে ছিলেন। সেটার আবিষ্কারক ছিলেন Polybius । এখন এটাকে আমরা Polybius Square নামে চিনি ।
 
polybius_square.jpg
 
Polybius Square
 
 
এক্ষেত্রে প্রত্যেকটা ইংরেজি অক্ষরগুলকে একটা Square এ সাজানো হয়। তারপর প্রত্যেকটি অক্ষরকে তার Row Number এবং Column Number দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেমন ধরুন উপরের চিত্র অনুসারে G কে প্রকাশ করা হবে 21 দিয়ে যেখানে 2 হল তার Row Number এবং 1 হল তার Column Number. সুতরাং G মানে হল 12.
 
যেমন “BAT” কে Polybius Square পদ্ধতিতে লিখা হত 22 11 44 .
 
 
Caesar cipher
 
 
রোমানরাও ক্রিপ্টোগ্রাফির ব্যবহার করত । তারা যে পদ্ধতি ব্যবহার করত সেটাকে বলা হয় Caesar cipher ।জুলিয়ার সিজা্রের নামে এই মেথড তৈরি করা হয়েছিল। জুলিয়াস সিজার তার সেনা প্রধানদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করতেন।
 
julias_ceaser.JPG ceaser_cipher_01.jpg
Caesar cipher
 
 
এই পদ্ধতির আরও একটা নাম আছে। সেটা হল shift cipher। এই পদ্ধতিতে অক্ষর কয়েক ঘর সিফট করা হয় । যার ফলে একটা অক্ষরকে অন্য একটা অক্ষর দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয় । যেমনঃ
 
 
ceaser_cipher_02.png
 
 
Hebrew Scholars দের Cipher
 
 
৫০০-৬০০ BC এর হিব্রু পণ্ডিতেরা আর এক ধরণের সাইফার পদ্ধতি ব্যবহার করতো। সেটাকে সাবস্টিটিউশন সাইফার বলা হয় । এটাকে এটবাস (Atbus) সাইফারও বলা হয় । এটবাস সাইফার পদ্ধতিতে অক্ষরগুলোকে রিভার্স ভাবে প্রকাশ করা হয় । যেমন ইংরেজি A কে Z দিয়ে B কে Y দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এভাবে চলতে থাকবে ।
 
উদাহরনঃ
আসল মেসেজঃ This is a secret message
সাইফার কৃত মেসেজঃ Gsrh rh z hvxivg nvhhztv
 
 
মুসলিম সভ্যতায় Cryptography
 
 
আল-কিন্দি নামক একজন মুসলিম বিজ্ঞানী ৮৫০ সালে ক্রিপ্টোগ্রাফি সম্পর্কে একটা বই লিখেন যার নাম Risalah fi Istikhraj al-Mu'amma (Manuscript for the Deciphering Cryptographic Messages)।
alkindi.jpg
 
আবু ইউসুফ ইয়াকুব ইবনে ইসহাক আল-কিন্দি (৮০১-৮৭৩)
 
 
 
তার কাজ Cryptography কে নতুন এক পর্যায়ে নিয়ে যায় যা পরবর্তী সময়ে probability , statistics এবং বিজ্ঞানের আরও নানা শাখার জন্ম দান করে।
 
Al-kindi_cryptographic.png
 
 
এটা আল-কিন্দির বইয়ের প্রথম পাতা ।
এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি cryptanalysis by frequency analysis
নামক নতুন এক ধারনার জন্ম দেন।
 
 
 
গণিতবিদ আল-কিন্দি আরবি গনিতেও দারুণ অবদান রাখেন। তিনি অক্ষরের frequency analysis এর মাধ্যমে বিভিন্ন Cipher কে ভাঙ্গার উপায় দেখান । তিনি তার গানিতিক ও চিকিৎসা দক্ষতা ব্যবহার করে ঔষধের শক্তির একটা স্কেলও প্রনয়ন করেন ।আল-কিন্দি তার Risalah fi Istikhraj al-Mu'amma বইয়ে প্রথম cryptanalysis টেকনিক সম্পর্কে আলোচনা করেছেন ।
 
ইংরেজি ভাষায় অক্ষরের আপেক্ষিক ফ্রিকোয়েন্সিঃ
 
english_letter_frequency.png
 
 
 
তার এই পদ্ধতি অনুযায়ী কোন ভাষার অক্ষরের ফ্রিকোয়েন্সি জানা থাকলে খুব সহজে কোনও cipher কে ভাঙ্গা যেত। যেমন এনক্রিপ্ট করা বাক্যে যে অক্ষরটি সব চেয়ে বেশিবার থাকবে বুঝতে হবে সেটা আসলে সেই ভাষার সব চেয়ে বহুল ব্যবহৃত অক্ষরটি। এভাবে কিছুটা আগালেই Cipher টিকে ভেঙ্গে ফেলা যেত।
 
 
রেনেসাঁ সময়ের Cryptography
 
 
রেনেসাঁর সময়ের Cryptography এর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ছিল polyalphabetic cipher. polyalphabetic cipher আবিষ্কার হবার আগ পর্যন্ত মোটামুটি সব গুলো Cipher কেই cryptanalysis by frequency analysis দ্বারা খুব সহজেই ভেঙ্গে ফেলা যেত। ১৪৬৭ সালে polyalphabetic cipher গুলোর সবচেয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা করেছেন Leon Battista Alberti । এ কারনে তাকে ওয়েস্টার্ন ক্রিপ্টোগ্রাফির জনক বলা হয় ।
 
leon_battista.jpg
 
Leon Battista Alberti
 
 
 
ইউরোপে, ক্রিপ্টোগ্রাফি রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং ধর্মীয় বিপ্লবের কারনে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । কিন্তু ইউরোপ এর বাইরে মুসলিমরা তাদের সেই জ্ঞান চর্চাকে হারিয়ে ফেলে। ফলে ইউরোপ এর বাইরে এই চর্চা আর তেমন একটা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
 
 
১৮০০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আগ পর্যন্ত Cryptography ব্যাবহার
 
 
আমরা জানি Cryptography একটা বিশাল ইতিহাস আছে । তারপরও ১৯ শ শতকের আগে ক্রিপ্টোগ্রাফির তেমন ভাবে কোনও বাস্তব প্রয়োগ দেখা যায় নি। এর আগ পর্যন্ত Cryptography ছিল হাতে গনা কিছু কৌশল যার মাধ্যমে কোনও তথ্যকে গোপন রাখার চেষ্টা করা হত । উদাহরনস্বরূপ ১৯ শতকের Auguste Kerckhoffs এর ক্রিপ্টোগ্রাফিক লিখা ।
edgar_allen_poe.jpg
 
Edgar Allan Poe
 
 
 
Edgar Allan Poe ১৮৪০ সালের দিকে systematic method ব্যাবহার করে Cipher ভাংতে পারতেন। তিনি তার এই দক্ষতার কথা জানিয়ে Philadelphia paper Alexander's Weekly (Express) Messenger একটি বিজ্ঞপ্তি দেন। জানামতে তার কাছে আসা প্রায় বেশিরভাগ Cipherই তিনি ভাংতে পেরেছিলেন!
 
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় Admiralty's Room 40 জার্মানদের নৌ কোড ভেঙ্গে যুদ্ধের সময় এক বিরাট ভুমিকা পালন করে । ১৯১৭ সালে গিলবার্ট ভেরনাম টেলিটাইপ নামে একটা Cipher প্রস্তাবনা করেন । যেটাতে একটা Key নির্ধারণ করা হয়। Key টিকে Plain Text এর প্রতি অক্ষরের সাথে মিশ্রিত করে Cipher Text উৎপন্ন করা হয়। এটা মুলত Electro Mechanical Device এর মাধ্যমে তৈরি করা Cipher এর প্রথম উদাহরণ।
 
 
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ের Cryptography ব্যাবহার
 
 
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় Electro Mechanical Cipher গুলোর ব্যাবহার ছিল ব্যাপক । যেখানে মেশিন গুলো ম্যানুয়ালি নিয়ন্ত্রণ করা হত ।
enigma.jpg
 
এটা Enigma machine যেটা দ্বারা জার্মানরা তাদের মেসেজ এন-ক্রিপ্ট করে পাঠিয়ে দিত ।
 
 
 
Allied cipher মেশিন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা ব্যাবহার করতো । আর আমেরিকা ব্যাবহার করতো SIGABA মেশিন । দুইটাই Electro Mechanical ।
 
মার্কিনীরা যুদ্ধে এম-২০৯ আর এম-৯৪ মেশিন ব্যাবহার করতো । ব্রিটিশ এজেন্টরা তাদের সাইফার গুলোকে কবিতা আকারে সাজিয়ে নিত যেখানে কবিতার মধ্যেই কোড এন-ক্রিপ্ট ও ডি-ক্রিপ্ট করার key দেয়া হত ।
sigaba.png
 
Sigaba মেশিন
 
 
 
আধুনিক Cryptography
 
 
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর Cryptography আর cryptanalysis উপর আরও বেশী গানিতিক বিশ্লেষণ এবং গবেষণা শুরু করা হয়।কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের দ্রুত প্রসারের কারণে এই যোগাযোগ মাধ্যমটিকে নিরাপদ রাখাটা জরুরী হয়ে পরে । আর সেখানেই আসলে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে Cryptography প্রভাব বিস্তার শুরু করতে থাকে।
claude_shannon.jpg
 
Claude Shannon
 
 
 
আধুনিক Cryptography এর পেছনে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশী তাদের একজন হলেন Claude Shannon । তাকে তার বিশেষ অবদানের জন্য গাণিতিক Cryptography এর জনক বলা হয়।
 
 
[[বিষয়শ্রেণী:কম্পিউটার নিরাপত্তা]]