দেবীভাগবত পুরাণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৪৫ নং লাইন:
[[File:Bhuvaneshwari temple in the Mysore Palace grounds.jpg|thumb|[[মহীশূর রাজবাড়ি]] চত্বরে অবস্থিত ভুবনেশ্বরী মন্দির। এই পুরাণের ৭ম স্কন্ধে ভুবনেশ্বরীকে সর্বোচ্চ দেবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।{{Sfn|Tracy Pintchman|2014|p=26-28}}]]
''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থের সপ্তম স্কন্ধে বিষয়বস্তু অনেকটা দর্শনের দিকে বাঁক নিয়েছে। এই অংশে বেদের সারমর্মের শাক্ত ব্যাখ্যা প্রদত্ত হয়েছে।{{Sfn|Rocher|1986|p=170}} ''দেবীগীতা'' এই স্কন্ধেরই অন্তর্গত।{{Sfn|Rocher|1986|p=170}}{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|p=1-2, 85-98}} দেবী ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনিই জগৎ সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্ম। এখানে [[অদ্বৈত বেদান্ত|অদ্বৈত]] মত অনুসরণ করে বলা হয়েছে যে, আধ্যাত্মিক মুক্তি তখনই লাভ করা যায় যখন ব্যক্তির নিজের আত্মার সঙ্গে ব্রহ্মের অভেদত্ব অনুধাবন করতে পারে।{{Sfn|Rocher|1986|p=170}}{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|p=12-17}} দেবীর মতে, নিজেকে জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজ আত্মার ধ্যানে রত হলে এই জ্ঞান অর্জন করা যায়।।{{Sfn|Rocher|1986|p=170}}{{Sfn|Tracy Pintchman|2015|pp=131-138}}
 
====দেবীগীতা====
''[[ভগবদ্গীতা]]'' গ্রন্থের মতো ''দেবীগীতা'' অংশটিও একটি সংক্ষিপ্ত দার্শনিক সন্দর্ভ।{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|pp=179-198}} এই গ্রন্থে দিব্য নারীসত্ত্বাকে ব্রহ্মাণ্ডে শক্তিশালী ও স্নেহময়ী সৃষ্টিকর্ত্রী, পরিব্যাপ্তকারিণী ও রক্ষয়িত্রী রূপে চিত্রিত করা হয়েছে।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=1-3}} ব্রাউন বলেছেন, ''দেবীগীতা'' গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে তিনি দয়াময়ী ও সুন্দরী বিশ্বজননী। তাঁর নাম ভুবনেশ্বরী (অর্থাৎ, ভুবনের ঈশ্বরী)।{{Sfn|Tracy Pintchman|2014|p=26-28}}{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|pp=179-198}} এরপর ২য় থেকে ১০ অধ্যায় (পুরাণের ৩২শ থেকে ৪০শ অধ্যায়) পর্যন্ত ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন-সংক্রান্ত শিক্ষা দান করা হয়েছে।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=1-3}} ''দেবীগীতা'' অংশের কিছু কিছু শ্লোক ''[[দেব্যুপনিষদ্‌]]'' গ্রন্থের প্রায় অনুরূপ।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=25-26, 77 with note 26}}
 
{{Quote box
|quote = '''আত্মা ও দেবী'''
<poem>
[আমার পবিত্র অক্ষর হ্রীঁ] সর্বোৎকর্ষ,{{refn|group=note|‘হ্রীঁ’ হল একটি তান্ত্রিক বীজমন্ত্র। এটির অর্থ (দুঃখ) হরণ করা’।<ref>[http://www.spokensanskrit.de/index.php?tinput=hrIm&direction=SE&script=HK&link=yes&beginning=0 hrIm], Sanskrit-English Dictionary, Koeln University, Germany (2012)</ref>}}
নাম ও নামীর পার্থক্য,
সকল দ্বৈতবোধের উর্ধ্বে।
ইহা পূর্ণ,
অনন্ত [[সচ্চিদানন্দ]]।
সেই সত্যকে ধ্যান করা উচিত,
চৈতন্যের জ্বলন্ত আলোকের মধ্যে।
সকল স্থান ও কাল পরিব্যাপ্তকারিণী দেবী রূপে
আমাতে মন নিবিষ্ট করে,
আত্মা ও [[ব্রহ্ম|ব্রহ্মের]] একত্ব
উপলব্ধির মাধ্যমে সহজেই আমাতে যুক্ত হওয়া যায়।
</poem>
|source = —''দেবীগীতা'', লিন ফাউলস্টোন, স্টুয়ার্ট অ্যাবোটের অনুবাদ অনুসারে<br>''দেবীভাগবত পুরাণ'', ৭ম স্কন্ধ{{Sfn|Lynn Foulston |Stuart Abbott|2009|pp=74-75}}
|bgcolor=#FFE0BB
|align = right
}}
''দেবীগীতা'' প্রায়শই ''ভগবদ্গীতা'' থেকে উদ্ধৃতি দানের মাধ্যমে শাক্ত ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করেছে।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=1-3}} এই গ্রন্থে দেবীকে বলা হয়েছে প্রত্যেক ব্যক্তিসত্ত্বার অন্তরস্থ “বিশ্বজনীন পরাশক্তি”। এই পরিভাষাটি [[হিন্দু দর্শন|হিন্দু দর্শনের]] [[সাংখ্য]] শাখা থেকে গৃহীত।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=1-3}} এই গ্রন্থে [[অদ্বৈত বেদান্ত]] ধারণাগুলি গ্রহণ করা হয়েছে। অদ্বৈততত্ত্বের উপর এতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সকল দ্বৈতবোধকে এখানে ভ্রান্ত বলে প্রত্যেক জীবিত আত্মার সঙ্গে ব্রহ্মের একত্ব বোধকেই মুক্তির পথ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=1-3, 12-17}}{{Sfn|Tracy Pintchman|2015|pp=9, 34, 89-90, 131-138}}{{Sfn|Lynn Foulston|Stuart Abbott|2009|pp=15-16}} যদিও ট্রেসি পিন্টম্যানের মতে, ''দেবীগীতা'' গ্রন্থে তান্ত্রিক ধারণায় দেবীকে চিত্রিত করা হয়েছে। এখানে দেবী একটি মাতৃসমা চরিত্র। যা [[আদি শঙ্কর|আদি শঙ্করের]] অদ্বৈত বেদান্তের লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ব্রহ্মের ধারণার থেকে অনেকটাই পৃথক।{{Sfn|Tracy Pintchman|2014|p=9-10}}
 
''দেবীগীতা'' গ্রন্থের [[ভক্তি|ভক্তিতত্ত্বটি]] সম্ভবত ''ভগবদ্গীতা'' থেকে অনুপ্রাণিত। [[কৃষ্ণ|কৃষ্ণের]] প্রতি প্রেমপূর্ণ ভক্তির ধারণাটি ''[[ভাগবত পুরাণ]]'' গ্রন্থে পাওয়া যায়। এই সকল গ্রন্থ একটি সাংখ্য দার্শনিক কাঠামোর মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের ভক্তির কথা আলোচনা করেছে।{{Sfn|June McDaniel|2004|pp=158-161}}{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=23-25}} এই গ্রন্থ মতে, ‘তামসিক ভক্তি’ হল এমন এক ভক্তি যেখানে ভক্ত ক্রুদ্ধ। তিনি অন্যের ক্ষতি করার জন্য, অন্যকে যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য বা অন্যের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে দেবীপূজা করছেন।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=23-25}} ‘রাজসিক ভক্তি’ হল সেই ধরনের ভক্তি, যেখানে ভক্ত অন্যের ক্ষতি করার জন্য দেবীপূজা করছেন না। তাঁর পূজার উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত সুবিধা, খ্যাতি বা ঐশ্বর্য লাভ।{{Sfn|June McDaniel|2004|pp=158-161}} ‘সাত্ত্বিক ভক্তি’ হল এমন এক ভক্তি যেখানে ভক্ত নিজের সুবিধা বা অন্যের ক্ষতি – কোনও কারণেই পূজা করছেন না। তাঁর পূজার উদ্দেশ্য নিজেকে শুদ্ধ করা, পাপ মুক্ত হওয়া ও নিজের মুক্তির জন্য দেবীতে আত্মনিয়োগ করা।{{Sfn|June McDaniel|2004|pp=158-161}}
 
ম্যাকড্যানিয়েল বলছেন যে, ''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থে ‘পরাভক্তি’কে ভক্তির সর্বোচ্চ স্তর বলা হয়েছে। এই স্তরে ভক্ত বর বা মুক্তি কিছুই চান না। তিনি দেবীকে ভালবাসেন বলে তাঁকে স্মরণ করে কাঁদেন। তিনি সর্বত্র দেবীর উপস্থিতি অনুভব করেন এবং সকল জীবিত সত্ত্বায় দেবীকে দেখেন। তিনি দেবীর ধারণা ও উপস্থিতিতে মগ্ন হয়ে থাকেন।{{Sfn|June McDaniel|2004|pp=158-161}}{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=23-25}}
 
==আরও দেখুন==