শ্রীরামপুর, পশ্চিমবঙ্গ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
DCB (আলোচনা | অবদান)
Serampore WestBengal (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১৩৪ নং লাইন:
স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন, তবে একটি পুরসভা 'ভিলেজ কমিটি', তার গভর্নর হিসেবে ওলে'বি এর সঙ্গে হিসাবে পরিচিত একটি প্রোটোটাইপ দ্বারা বাহিত হয় আউট। ডেনিশ বহির্বাণিজ্যের সুবাসিত দিন মূলত কারখানা প্রধান হিসেবে ওলেবাই থেকে সেবার সঙ্গে মিলে, মাত্র কয়েক বাধা ১৭৭৬ থেকে ১৮০৫।
=== শ্রীরামপুর ত্রয়ীর আগমন (উইলিয়াম কেরী, জোশুয়া মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ড) ===
[[চিত্র:শেরাম্পরে2016-06-08 09.45.48.jpg|thumb|শ্রীরামপুর]]
শ্রীরামপুরের প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে কমবেশি অনেকেই অবগত আছেন। এখন মনে করা যাক আমরা ২০০ বছরেরও আগে ডেনিশ অধিকৃত ফ্রেডেরিক্সনগরে চলে গেছি। কলকাতা থেকে প্রায় ৩২ কিমি উজানে গঙ্গা নদীর পশ্চিম উপকূলে মনোরম পরিবেশে সুদৃশ্য শ্রীরামপুর(ফ্রেডেরিক্সনগর) শহর। ১৭৫৫ সাল থেকে এই ফ্রেডেরিক্সনগরে দিনেমারদের(ডেনিশদের) উপনিবেশ ক্রমশ বাণিজ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে। গঙ্গার ঠিক অপর দিকে ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট আর এক মাইল উপকূল জুড়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির গভর্নরসহ উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারিদের অবসর বিনোদনের পরিসর। এপারে ডেনিশ পতাকা গাড়া নিশান ঘাটে উঠেই ডানদিকে '''ডেনিশ ট্যাভার্ণ অ্যান্ড হোটেল'''(১৭৮৬) আর বামদিকে '''গভর্মেন্ট গোডাউন''' রয়েছে। তাদের মাঝখানের পথ ধরে সোজা এগোলে ঘেরা ১৭ বিঘা ফুলগাছে সাজানো বাগানের চওড়া গেটের ভেতরদিকে রাজকীয় '''গভর্মেন্ট হাউস'''(১৭৭১) দেখা যাচ্ছে। গেটের পাশে '''ওয়াচ হাউস'''(১৭৭১) তখনও ২তলা হয়নি। গঙ্গার ধারে '''ক্যাথেলিক চার্চ'''(১৭৬১) তৈরি হলেও '''লিউদেরিয়ান চার্চ সেন্ট ওলাফ''' কিন্তু হয়নি। এমনকি গভর্মেন্ট হাউস এর পিছনের দিকে ৬বিঘা জমিতে '''ক্রাউন বাজার'''(বর্তমানে টিনবাজার) ও তার মধ্যে বিশাল বিশাল স্টোর হাউস বা কাছেই জেলখানার অস্তিত্ব নেই। তবে যুগল-আড্ডি ঘাটে দু ঘরের বারান্দাসমেত বাড়িটা অসুস্থ মরণাপন্নদের গঙ্গাযাত্রী নিবাস (১৭৫৭) তৈরি হয়েছে। আর কিছু দূরে প্রায় ৯০০০ ফুটের '''পেয়ারাপুর ক্যানেল'''(১৭৮১,ডিসেম্বর) ডেনিশরা কেটে ঐ অঞ্চলে চাষের প্রয়োজনীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। এই বন্দরনগরীর একপাশে ছোটবড় পালতোলা নৌকার আনাগোনায় স্রোতস্মিনী মা গঙ্গা কল্লোল মুখর হয়ে থাকে দিনের আলোয়। রাত্রি নিশিথে শান্ত হয়ে আসে পরিমন্ডল। এমন সময় একদিন অতি প্রত্যুষে দুটো নৌক এসে নোঙর করে নিশান ঘাটে। চার মিশনারি পরিবারের সদস্যেরা নৌক থেকে ডাঙায় অবতরণ করে ১৭৯৯ সালের ১৩ অক্টোবর। তাঁরা হলেন '''উইলিয়াম ওয়ার্ড''' ও স্ত্রী সন্তানাদিসহ '''জশুয়া মার্শম্যান''', তাঁর বন্ধু '''জন গ্র্যান্ট''' ও '''ইমানুয়েল ব্রান্সডন'''। সঙ্গে আনেন লন্ডন ডেনিশ কনসুলেটের লিখিত ছাড়পত্র। প্রথমে তাঁরা সকলে 'মায়ার্স' হোটেলে ওঠেন। পরে ডেনিশ গভর্ণর কর্নেল ওলি বি-র শরণাপন্ন হলে তাঁর বদান্যতায় শ্রীরামপুরে নিরাপদ আশ্রয় লাভের আশ্বাস পেয়ে, একটা বড় বাড়ি ভাড়া করে উঠে যান সেখানে। কর্নেলের পরামর্শ মতো ওয়ার্ড উত্তর বঙ্গে অবস্থানরত ১৭৯৩ সালের শেষদিকে বাংলায় আগত '''উইলিয়াম কেরী'''র সাথে যোগাযোগ করেন। তাঁদের মধ্যে আলোচনার পর ঠিক হয় শ্রীরামপুরেই মিশন গঠন যুক্তিযুক্ত। '''উডনী''' সাহেবের উপহার একটা কাঠের মুদ্রণযন্ত্র সমেত কেরী পরিবারসহ ১৮০০ সালের ১০ জানুয়ারি ওয়ার্ডের সাথে '''শ্রীরামপুর''' চলে আসেন। অভিজ্ঞ কেরীর নেতৃত্বে সেইদিনই '''বাংলার প্রথম ব্যাপটিস্ট মিশন''' সংগঠিত হয়। আর মিশন প্রেস থেকে সুদক্ষ ওয়ার্ডের তত্ত্বাবধানে ছাপার কাজ শুরু হওয়ায় শ্রীরামপুরের ইতিহাসের ধারা নতুন পথে বইতে থাকে। শ্রীরামপুরে কেরীর নেতৃত্বে মিশনের কর্মযজ্ঞের বিস্তারির বিবরণ না দিয়ে কেবলমাত্র উল্লেখযোগ্য প্রধান কয়েকটা বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করাটাই সমীচীন বোধ হয়। প্রথমত ডেনিশ নগরীতে ইংল্যান্ডীয় মিশনারিদের স্থানীয় গভর্ণরের বদান্যতায় নিরাপদ আশ্রয় লাভ হওয়ার, প্রাচ্যে খ্রিস্টধর্মতত্ত্ব শিক্ষার ব্যাপক প্রসারলাভ করার জন্যেই '''শ্রীরামপুর কলেজ''' প্রতিষ্ঠা সার্থক পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য বাইবেলের নানা ভাষায় অনুবাদ মুদ্রণের মাধ্যমে এদেশে ধর্মপ্রচার পঞ্চানন-মনোহরের মিশনে যোগদানে নানা ভাষার হরফ ঢালাই, কালি ও কাগজ তৈরি, সাধারণের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের মানসে শিক্ষাব্যবস্থার নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনার ক্ষেত্রে তাঁর চিন্তাশীলতার মধ্যে মিশনের শতাধিক বিদ্যালয় ও কলেজে মাতৃভাষায় শিক্ষাদান, প্রাচ্যের সাহিত্য ও দর্শনের সাথে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান সংবলিত পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, কোনো রকম সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতার উর্দ্ধে থাকা প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মিশনের কর্মৎপরতা আরও প্রাণ পায় যখন ১৮০১ সালে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে নবাগত সিভিলিয়ানদের দেশীয় ভাষা শেখানোর কাজে কেরীর যোগদান, আর সেই সুযোগে বিভিন্ন ভষা পন্ডিতদের সহায়তায় আরও প্রাচ্য ভাষা শেখা ও ধর্মপুস্তকের অনুবাদ মুদ্রণ করে প্রকাশিত হয়। তার সঙ্গে নিজের পাঠ্যপুস্তক রচনা, ৭ টা ভাষায় ব্যাকরণ ও ৩ টে ভাষার অভিধান প্রণয়ন, আরও অন্যান্য পন্ডিতদের পুস্তক প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করায় বিশেষভাবে বাংলা গদ্যসাহিত্যের সূচনা হয়। কেরীর বাংলা ভাষায় '''কথোপকথন''' ও '''ইতিহাসমালা''' প্রকাশ পাঠ্যপুস্তকের অভাব মেটানো ও বাংলা কথ্যগদ্য সাহিত্যের প্রচলনে তাঁর বিবেচনা ও বিচক্ষনতার পরিচয় দেয়। '''রামায়ণ মহাভারতের''' মতো সুপ্রাচীন মহাকাব্যের প্রচার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ এবং মূল সংস্কৃত ভাষাসহ ইংরাজীতে রামায়ণের অনুবাদ প্রকাশ করে ভারতীয় দর্শন ও সাহিত্যের প্রতি স্বদেশীয় পণ্ডিতদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা সত্যই প্রণিধানযোগ্য। অন্যতম জনপ্রিয় অধ্যাপকরূপে কেরীর ৩০ বছর ধরে যুক্ত থেকে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মর্যাদা ও গৌরববৃদ্ধি করার কৃতিত্ব অপরিসীম। মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত ৪৫ টি প্রাচ্যভাষায় বাইবেলের অনুবাদ ছেপে প্রকাশের মধ্যে কেরীর ৩৫ টা গ্রন্থ তাঁকে সে যুগে বিশিষ্ট বিরল ভাষাবিদের আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। ১৮১২ সালে মিশন ছাপাখানার প্রভূত দ্রব্যাদি অগ্নিকাণ্ড ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও দেশ-বিদেশের আর্থিক সাহায্যে প্রেসের পণ্ডিত শিল্পীদের সহযোগিতায় তার পুণর্গঠন করে বহুগুণ উৎসাহে হরফ, কালি, কাগজসহ ছাপাশিল্পের উন্নতিসাধন কেরীর দৃঢ়চেতনা মনের পরিচয় দেয়। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে ভাষা শিক্ষণ আর শ্রীরামপুর কলেজে ধর্মতত্ত্বের সাথে উদ্ভিদবিদ্যা, জীববিদ্যা, কৃষিবিদ্যা প্রভৃতি বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকতায় কেরী বেশ সুনাম অর্জন করেন। উদ্ভিদ ও কৃষি বিজ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগী কেরী শ্রীরামপুরে বহু বিচিত্র বৃক্ষলতাদি পূর্ণ ৫ একর জমিতে বোটানিক্যাল গার্ডেন রচনা করে এই বিষয়ে গবেষণার পথ প্রশস্ত করেন। হাওড়ার শিবপুরে কোম্পানি-উদ্যানের প্রধান রক্সবার্গ, ওয়ালিচ প্রমুখ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে বীজ ও চারাগাছ বিনিময়ের মাধ্যমে উদ্ভিদবিদ্যা চর্চার সুযোগ তৈরি করেন। এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য কেরী তাঁর বক্তৃতা ও প্রতিষ্ঠানের পত্রিকায় শোচনীয় কৃষিব্যবস্থার উন্নয়নপন্থার আলোচনা প্রকাশ, আর কলকাতার এগ্রিহর্টিকালচারাল সোসাইটি সংগঠনের মাধ্যমে দরিদ্র কৃষকেরা দুঃখ দুর্দশা দূর করার চেষ্টা করেন।