মেঘনা বিভাগ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
→★★★কুমিল্লা★★★ ★ ★★★কুমিল্লা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্
৫২ নং লাইন:
* [[লক্ষীপুর জেলা]]
== তথ্যসূত্র ==
{{Reflist}}
{{Reflist}}→★★★কুমিল্লা★★★
 
{{Geographic location
 
★★★কুমিল্লা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।
 
 
★★★অবস্থান ও আয়তনঃ★★★
 
 
ভৌগেলিকভাবে এই জেলাটি ২৩°১” উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৪°১১” উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৪” পূর্ব দ্রাঘিমাংশ হতে ৯১°২২” পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দক্ষিণে নোয়াখালী ও ফেনী, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা এবং পশ্চিমে মুন্সীগঞ্জ , চাঁদপুর জেলা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা। এই জেলাটির আয়তনঃ ৩০৮৭.৩৩ বর্গ কিলোমিটার। ভারতের সাথে এই জেলার ১০৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
 
 
★★★ইতিহাসঃ★★★
 
 
শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য- সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে এ উপমহাদেশে সুপরিচিত। কুমিল্লার খাদি শিল্প, তাঁত শিল্প, কুটির শিল্প, মৃৎ ও কারু শিল্প, রসমালাই, মিষ্টি, ময়নামতির শীতল পাটি ইত্যাদি স্ব-স্ব ঐতিহ্যে স্বকীয়তা আজও বজায় রেখেছে। কালের বিবর্তনের ধারায় এসেছে অনেক কিছু, অনেক কিছু গেছে হারিয়ে, হারায়নি এখানকার মানুষের আন্তরিকতাপূর্ণ আতিথেয়তা ও সামাজিক সম্প্রীতি।
 
 
কুমিল্লা একসময় বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল এবং সেই সময় নোয়াখালীও এর অংশ ছিল। ১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব শুজাউদ্দিন ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এর সমতল অংশ সুবে বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কুমিল্লা দখল করে। ১৭৮১ সালে নোয়াখালীকে কুমিল্লা থেকে পৃথক করা হয়। ১৭৯০ সালে কোম্পানী শাসনামলে ত্রিপুরা নামের জেলার সৃষ্টি। ১৯৬০ সালে জেলার নাম করা হয় কুমিল্লা।
 
 
কুমিল্লা জেলা ২৩°-১’’ থেকে ২৪°-১১’’ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৯০°-৩৪’’ থেকে ৯১°-২২’’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বিস্তৃত। কর্কটক্রান্তি রেখা কুমিল্লা জেলা অতিক্রম করেছে। এই জেলার কিছু অংশ গঠিত হয়েছে প্লাবন ভূমি দ্বারা এবং কিছু অংশ পাহাড়ি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। বাকিটা মূলত সমতলভূমি।
 
 
বর্তমান কুমিল্লা জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনস্থ একটি জেলা। শুরুর দিকে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত হলেও পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়েছিল। কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত মত রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযাগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত থেকে। তার বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শন‍াদি থেকে জানা যায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল।
 
 
১৭৬৫ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে আসার পূর্বে মধ্যবর্তী সময়ে মোঘলদের দ্বারা শাসিত হয়েছে কুমিল্লা। ১৭৬৯ সালে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে কোম্পানী একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। তখন ঢাকা প্রদেশের অন্তর্গত ছিলো কুমিল্লা । কুমিল্লাকে ১৭৭৬ সালে কালেক্টরের অধীনস্থ করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা এবং তখন থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর পদটির নামকরণ জেলা প্রশাসক করা হয় । ১৯৮৪ সালে কুমিল্লার দু'টি মহকুমা চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পৃথক জেলা হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়।
 
 
★★★প্রশাসনিক কাঠামোঃ★★★
 
 
কুমিল্লা জেলায় ১টি সিটি কর্পোরেশন ও ১৪ টি উপজেলা রয়েছে।
 
 
সেগুলো হলঃ
 
সিটি কর্পোরেশনঃ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন;
 
উপজেলাঃ বরুরা, চান্দিনা, দাউদকান্দি, লাকসাম, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, চৌদ্দগ্রাম,দেবীদ্বার, হোমনা, মুরাদনগর, লাঙ্গলকোট, মেঘনা, তিতাস ও মনোহরগঞ্জ
 
 
এছাড়াও কুমিল্লা জেলা নিচে উল্লেখিত প্রশাসনে বিভক্তঃ
 
থানা - ১৬টি;
 
পৌরসভা - ৮টি;
 
ইউনিয়ন - ১৭৮টি;
 
গ্রাম - ৩,৬৮৭টি;
 
জোত - ৫,৩৪,৩০৭টি;
 
মৌজা - ২,৬০৩টি;
 
ইউনিয়ন ভূমি অফিস - ১৭২টি;
 
হাট-বাজার - ৫৫৫টি।
 
 
★★★ভৌগোলিক উপাত্ত---★★★
 
 
নদীঃ
 
 
গোমতী নদী, কাপ্তান বাজার, কুমিল্লা।
 
এখানকার প্রধান নদ-নদীগুলো হলোঃ মেঘনা, গোমতী নদী, তিতাস নদী, ডাকাতিয়া নদী, কাঁকড়ী নদী।
 
 
★★★জনসংখ্যা উপাত্তঃ★★★
 
 
২০০১ সালের আদমশুমারী অনুয়ায়ী মোট জনসংখ্যা ৪৫,৯১,৩৪০ জন। পুরুষ ২৩,১০,৯৪০, মহিলা : ২২,৮০,৪০০। জনসংখ্যার ঘনত্ব ( প্রতি বর্গ কি:মিঃ ) ১৪৮৭ জন (প্রায়), জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার : ১.৮% (প্রায়)।
 
 
★★★শিক্ষাঃ★★★
 
 
কুমিল্লায় ২০০১ সালের শিক্ষা জরীপ অনুযায়ী শিক্ষার হার ৬০.৩%।
 
 
কুমিল্লায় রয়েছেঃ
 
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় - ১টি,
 
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় - ১টি,
 
সরকারী মেডিক্যাল কলেজ - ১টি,
 
বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ - ২টি,
 
মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ৫১৮টি,
 
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ৯০টি,
 
মাদ্রাসা - ৩৫৯টি,
 
ক্যাডেট কলেজ - ১টি,
 
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১,৩৩৩টি,
 
রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৪৪৯টি,
 
আনরেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১০টি,
 
কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় - ২২৬টি,
 
প্রাথমিক বিদ্যালয় কেজি - ৩৩৭টি,
 
উচ্চ মাধ্যমিক সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১৬টি,
 
পি টি আই সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১টি,
 
এন.জি.ও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৫৪৩টি,
 
সংযুক্ত ইবতেদায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১৭১টি,
 
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৭১টি,
 
আনন্দ স্কুল - ৪৭৬টি।
 
 
★★★স্বাস্থ্যঃ★★★
 
 
এই জেলায় জম্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হারঃ ৬৭.১৫%।
 
 
এখানে রয়েছেঃ
 
৫০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল - ১টি,
 
১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালঃ - ১টি,
 
পুলিশ হাসপাতাল - ১টি,
 
জেল হাসপাতাল - ১টি,
 
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল - ১টি,
 
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কমপ্লেক্স - ১১টি,
 
পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র - ১টি,
 
টি,বি, ক্লিনিক - ১টি,
 
স্কুল হেলথ ক্লিনিক - ১টি,
 
উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র - ৪৮টি,
 
ডায়াবেটিক সেন্টার - ১টি,
 
ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র - ১২৩টি।
 
 
★★★যাতায়াত ব্যবস্থাঃ★★★
 
 
মহাসড়কঃ ১৩২.০০ কি:মি:, রেলপথঃ ২১২.০০ কি:মি:, ফেরীঘাট ৩৪ টি, নদীবন্দর ০১ টি। কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন ও লাকসাম জংশন রেলওয়ে স্টেশন এই জেলার দুটি প্রধান যাত্রাবিরতি রেলওয়ে স্টেশন; তা ছাড়াও আরো অনেক স্টেশন রয়েছে।
 
 
★★★অর্থনীতিঃ★★★
 
 
কুমিল্লা'র অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। এই জেলার অর্থনীতি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের খাদি কাপড়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কুমিল্লার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য, কুমিল্লায় গড়ে উঠেছে " কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্ছল" । এটি পুরাতন এয়ারপোর্ট এলাকায় অবস্থিত প্রায় ২৫৮ একর আয়তনের ১ টি প্রকল্প। কুমিল্লার প্রায় ১১‚৬% মানুষ ব্যবসার সাথে জড়িত । এখানে বৃহৎ শিল্পের মধ্যে বস্ত্রকল রয়েছে ০৭ টি, পাটকল ০৪ টি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও স্টীল : ৪৯৯টি। এখানে ২টি শিল্প নগরী রয়েছে। কুমিল্লায় রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিঃ এর মূল স্থাপনা এবং গ্যাস ফিল্ড। এখানে মোট ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প রয়েছে ১২৫৭০ টি।
 
 
★★★চিত্তাকর্ষক স্থানঃ★★★
 
 
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি,
 
শালবন বিহার,
 
আনন্দ বিহার,
 
ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও যাদুঘর,
 
ময়নামতি ওয়ার সেমেট্রি
 
বোটানিক্যাল গার্ডেন,
 
চিড়িয়াখানা,
 
কুমিল্লা পৌর উদ্যান,
 
শাহ সুজা মসজিদ,
 
ধর্মসাগর দীঘি,
 
বলেশ্বর দীঘি,
 
রূপবানমুড়া,
 
চন্ডীমুড়া,
 
লালমাই বৌদ্ধ বিহার,
 
লালমাই পাহাড়,
 
ময়নামতি পাহাড়
 
কুটিলা মুড়া,
 
ইটাখোলা মুড়া,
 
সতের রত্নমুড়া,
 
রাণীর বাংলার পাহাড়,
 
আনন্দ বাজার প্রাসাদ,
 
ভোজ রাজদের প্রাসাদ,
 
রাজশেপুর ইকোপার্ক,
 
বিরাহিমপুর শাল বন,
 
রানির কুঠির।
 
 
★★★উল্লেখযোগ্য পণ্যঃ★★★
 
 
রসমালাই নামক বিখ্যাত মিষ্টি কুমিল্লায় তৈরি করা হয়্। কুমিল্লার রসমলাই সারাদেশে এক নামে পরিচিত। দুধ, ছানা ও চিনি সমন্বয়ে তৈরি এ মিস্টান্ন। যার প্রচলন কুমিল্লাতেই শুরু হয়। এছাড়াও অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি প্রস্ত্ততের জন্য কুমিল্লা বিখ্যাত। এছাড়াও কুমিল্লার বিখ্যাত খদ্দর (খাদি) শিল্পের জন্য। ১৯২১ সাল থেকে খদ্দর এ অঞ্চলে প্রচলিত। কুমিল্লার খদ্দর শিল্পগত উৎর্কষে প্রচুর খ্যাতি লাভ করেছিল। এখান থেকে খদ্দর কাপড় কলকাতা ও বোম্বে পাঠানো হত।
 
 
★★★কৃতি ব্যক্তিত্বঃ★★★
 
 
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ
 
আব্দুল মতিন খসরু
 
আহমদ রফিক
 
মুজিবুল হক মুজিব
 
শচীন দেব বর্মন
 
আলী আশরাফ
 
ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত
 
গোলাম কিবরিয়া মিয়া
 
সুবিদ আলী ভূঞা
 
রাজা রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়
 
মোহাম্মদ রেদোয়ান
 
প্রাণগোপাল দত্ত
 
আলম অারা মিনু
 
আজিজুল হাকিম
 
রাবেয়া চৌধুরী
 
এনামুল হক মনি
 
 
আ হ ম মোস্তফা কামাল লোটাস - রাজনীতিবিদ ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব;
 
সুফিয়া কামাল - কবি ও নারী নেত্রী।
 
নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী লেখিকা সমাজ কর্মী জমিদার
 
বুদ্ধদেব বসু কবি উপন্যাসিক প্রাবন্ধিক গল্পকার নাট্যকার
 
খন্দকার মোস্তাক আহমেদ - বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদীয় মন্ত্রী এবং বিতর্কিত রাজনীতিবিদ;
 
ফেরদৌস আহমেদ - চলচ্চিত্র অভিনেতা ও প্রযোজক;
 
আসিফ আকবর - সঙ্গীত শিল্পী;
 
কাজী জাফর আহমেদ - রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের ৮ ম প্রধানমন্ত্রী;
 
মাহমুদুর রহমান - সাংবাদিক।
 
★★★★★★★★★ ★ ★★★★★★★★{{Geographic location
|Centre = কুমিল্লা বিভাগ
|North = [[সিলেট বিভাগ]]
৩৮৫ ⟶ ৬৭ নং লাইন:
 
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের বিভাগ]]
 
→★★★কুমিল্লা★★★
★★★কুমিল্লা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।
★★★অবস্থান ও আয়তনঃ★★★
ভৌগেলিকভাবে এই জেলাটি ২৩°১” উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৪°১১” উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৪” পূর্ব দ্রাঘিমাংশ হতে ৯১°২২” পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দক্ষিণে নোয়াখালী ও ফেনী, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা এবং পশ্চিমে মুন্সীগঞ্জ , চাঁদপুর জেলা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা। এই জেলাটির আয়তনঃ ৩০৮৭.৩৩ বর্গ কিলোমিটার। ভারতের সাথে এই জেলার ১০৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
★★★ইতিহাসঃ★★★
শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য- সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে এ উপমহাদেশে সুপরিচিত। কুমিল্লার খাদি শিল্প, তাঁত শিল্প, কুটির শিল্প, মৃৎ ও কারু শিল্প, রসমালাই, মিষ্টি, ময়নামতির শীতল পাটি ইত্যাদি স্ব-স্ব ঐতিহ্যে স্বকীয়তা আজও বজায় রেখেছে। কালের বিবর্তনের ধারায় এসেছে অনেক কিছু, অনেক কিছু গেছে হারিয়ে, হারায়নি এখানকার মানুষের আন্তরিকতাপূর্ণ আতিথেয়তা ও সামাজিক সম্প্রীতি।
কুমিল্লা একসময় বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল এবং সেই সময় নোয়াখালীও এর অংশ ছিল। ১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব শুজাউদ্দিন ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এর সমতল অংশ সুবে বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কুমিল্লা দখল করে। ১৭৮১ সালে নোয়াখালীকে কুমিল্লা থেকে পৃথক করা হয়। ১৭৯০ সালে কোম্পানী শাসনামলে ত্রিপুরা নামের জেলার সৃষ্টি। ১৯৬০ সালে জেলার নাম করা হয় কুমিল্লা।
কুমিল্লা জেলা ২৩°-১’’ থেকে ২৪°-১১’’ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৯০°-৩৪’’ থেকে ৯১°-২২’’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বিস্তৃত। কর্কটক্রান্তি রেখা কুমিল্লা জেলা অতিক্রম করেছে। এই জেলার কিছু অংশ গঠিত হয়েছে প্লাবন ভূমি দ্বারা এবং কিছু অংশ পাহাড়ি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। বাকিটা মূলত সমতলভূমি।
বর্তমান কুমিল্লা জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনস্থ একটি জেলা। শুরুর দিকে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত হলেও পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়েছিল। কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত মত রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযাগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত থেকে। তার বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শন‍াদি থেকে জানা যায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল।
১৭৬৫ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে আসার পূর্বে মধ্যবর্তী সময়ে মোঘলদের দ্বারা শাসিত হয়েছে কুমিল্লা। ১৭৬৯ সালে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে কোম্পানী একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। তখন ঢাকা প্রদেশের অন্তর্গত ছিলো কুমিল্লা । কুমিল্লাকে ১৭৭৬ সালে কালেক্টরের অধীনস্থ করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা এবং তখন থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর পদটির নামকরণ জেলা প্রশাসক করা হয় । ১৯৮৪ সালে কুমিল্লার দু'টি মহকুমা চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পৃথক জেলা হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়।
★★★প্রশাসনিক কাঠামোঃ★★★
কুমিল্লা জেলায় ১টি সিটি কর্পোরেশন ও ১৪ টি উপজেলা রয়েছে।
সেগুলো হলঃ
সিটি কর্পোরেশনঃ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন;
উপজেলাঃ বরুরা, চান্দিনা, দাউদকান্দি, লাকসাম, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, চৌদ্দগ্রাম,দেবীদ্বার, হোমনা, মুরাদনগর, লাঙ্গলকোট, মেঘনা, তিতাস ও মনোহরগঞ্জ
এছাড়াও কুমিল্লা জেলা নিচে উল্লেখিত প্রশাসনে বিভক্তঃ
থানা - ১৬টি;
পৌরসভা - ৮টি;
ইউনিয়ন - ১৭৮টি;
গ্রাম - ৩,৬৮৭টি;
জোত - ৫,৩৪,৩০৭টি;
মৌজা - ২,৬০৩টি;
ইউনিয়ন ভূমি অফিস - ১৭২টি;
হাট-বাজার - ৫৫৫টি।
★★★ভৌগোলিক উপাত্ত---★★★
নদীঃ
গোমতী নদী, কাপ্তান বাজার, কুমিল্লা।
এখানকার প্রধান নদ-নদীগুলো হলোঃ মেঘনা, গোমতী নদী, তিতাস নদী, ডাকাতিয়া নদী, কাঁকড়ী নদী।
★★★জনসংখ্যা উপাত্তঃ★★★
২০০১ সালের আদমশুমারী অনুয়ায়ী মোট জনসংখ্যা ৪৫,৯১,৩৪০ জন। পুরুষ ২৩,১০,৯৪০, মহিলা : ২২,৮০,৪০০। জনসংখ্যার ঘনত্ব ( প্রতি বর্গ কি:মিঃ ) ১৪৮৭ জন (প্রায়), জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার : ১.৮% (প্রায়)।
★★★শিক্ষাঃ★★★
কুমিল্লায় ২০০১ সালের শিক্ষা জরীপ অনুযায়ী শিক্ষার হার ৬০.৩%।
কুমিল্লায় রয়েছেঃ
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় - ১টি,
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় - ১টি,
সরকারী মেডিক্যাল কলেজ - ১টি,
বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ - ২টি,
মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ৫১৮টি,
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ৯০টি,
মাদ্রাসা - ৩৫৯টি,
ক্যাডেট কলেজ - ১টি,
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১,৩৩৩টি,
রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৪৪৯টি,
আনরেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১০টি,
কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় - ২২৬টি,
প্রাথমিক বিদ্যালয় কেজি - ৩৩৭টি,
উচ্চ মাধ্যমিক সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১৬টি,
পি টি আই সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১টি,
এন.জি.ও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৫৪৩টি,
সংযুক্ত ইবতেদায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১৭১টি,
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৭১টি,
আনন্দ স্কুল - ৪৭৬টি।
★★★স্বাস্থ্যঃ★★★
এই জেলায় জম্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হারঃ ৬৭.১৫%।
এখানে রয়েছেঃ
৫০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল - ১টি,
১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালঃ - ১টি,
পুলিশ হাসপাতাল - ১টি,
জেল হাসপাতাল - ১টি,
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল - ১টি,
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কমপ্লেক্স - ১১টি,
পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র - ১টি,
টি,বি, ক্লিনিক - ১টি,
স্কুল হেলথ ক্লিনিক - ১টি,
উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র - ৪৮টি,
ডায়াবেটিক সেন্টার - ১টি,
ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র - ১২৩টি।
★★★যাতায়াত ব্যবস্থাঃ★★★
মহাসড়কঃ ১৩২.০০ কি:মি:, রেলপথঃ ২১২.০০ কি:মি:, ফেরীঘাট ৩৪ টি, নদীবন্দর ০১ টি। কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন ও লাকসাম জংশন রেলওয়ে স্টেশন এই জেলার দুটি প্রধান যাত্রাবিরতি রেলওয়ে স্টেশন; তা ছাড়াও আরো অনেক স্টেশন রয়েছে।
★★★অর্থনীতিঃ★★★
কুমিল্লা'র অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। এই জেলার অর্থনীতি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের খাদি কাপড়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কুমিল্লার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য, কুমিল্লায় গড়ে উঠেছে " কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্ছল" । এটি পুরাতন এয়ারপোর্ট এলাকায় অবস্থিত প্রায় ২৫৮ একর আয়তনের ১ টি প্রকল্প। কুমিল্লার প্রায় ১১‚৬% মানুষ ব্যবসার সাথে জড়িত । এখানে বৃহৎ শিল্পের মধ্যে বস্ত্রকল রয়েছে ০৭ টি, পাটকল ০৪ টি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও স্টীল : ৪৯৯টি। এখানে ২টি শিল্প নগরী রয়েছে। কুমিল্লায় রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিঃ এর মূল স্থাপনা এবং গ্যাস ফিল্ড। এখানে মোট ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প রয়েছে ১২৫৭০ টি।
★★★চিত্তাকর্ষক স্থানঃ★★★
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি,
শালবন বিহার,
আনন্দ বিহার,
ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও যাদুঘর,
ময়নামতি ওয়ার সেমেট্রি
বোটানিক্যাল গার্ডেন,
চিড়িয়াখানা,
কুমিল্লা পৌর উদ্যান,
শাহ সুজা মসজিদ,
ধর্মসাগর দীঘি,
বলেশ্বর দীঘি,
রূপবানমুড়া,
চন্ডীমুড়া,
লালমাই বৌদ্ধ বিহার,
লালমাই পাহাড়,
ময়নামতি পাহাড়
কুটিলা মুড়া,
ইটাখোলা মুড়া,
সতের রত্নমুড়া,
রাণীর বাংলার পাহাড়,
আনন্দ বাজার প্রাসাদ,
ভোজ রাজদের প্রাসাদ,
রাজশেপুর ইকোপার্ক,
বিরাহিমপুর শাল বন,
রানির কুঠির।
★★★উল্লেখযোগ্য পণ্যঃ★★★
রসমালাই নামক বিখ্যাত মিষ্টি কুমিল্লায় তৈরি করা হয়্। কুমিল্লার রসমলাই সারাদেশে এক নামে পরিচিত। দুধ, ছানা ও চিনি সমন্বয়ে তৈরি এ মিস্টান্ন। যার প্রচলন কুমিল্লাতেই শুরু হয়। এছাড়াও অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি প্রস্ত্ততের জন্য কুমিল্লা বিখ্যাত। এছাড়াও কুমিল্লার বিখ্যাত খদ্দর (খাদি) শিল্পের জন্য। ১৯২১ সাল থেকে খদ্দর এ অঞ্চলে প্রচলিত। কুমিল্লার খদ্দর শিল্পগত উৎর্কষে প্রচুর খ্যাতি লাভ করেছিল। এখান থেকে খদ্দর কাপড় কলকাতা ও বোম্বে পাঠানো হত।
★★★কৃতি ব্যক্তিত্বঃ★★★
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ
আব্দুল মতিন খসরু
আহমদ রফিক
মুজিবুল হক মুজিব
শচীন দেব বর্মন
আলী আশরাফ
ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত
গোলাম কিবরিয়া মিয়া
সুবিদ আলী ভূঞা
রাজা রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়
মোহাম্মদ রেদোয়ান
প্রাণগোপাল দত্ত
আলম অারা মিনু
আজিজুল হাকিম
রাবেয়া চৌধুরী
এনামুল হক মনি
আ হ ম মোস্তফা কামাল লোটাস - রাজনীতিবিদ ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব;
সুফিয়া কামাল - কবি ও নারী নেত্রী।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী লেখিকা সমাজ কর্মী জমিদার
বুদ্ধদেব বসু কবি উপন্যাসিক প্রাবন্ধিক গল্পকার নাট্যকার
খন্দকার মোস্তাক আহমেদ - বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদীয় মন্ত্রী এবং বিতর্কিত রাজনীতিবিদ;
ফেরদৌস আহমেদ - চলচ্চিত্র অভিনেতা ও প্রযোজক;
আসিফ আকবর - সঙ্গীত শিল্পী;
কাজী জাফর আহমেদ - রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের ৮ ম প্রধানমন্ত্রী;
মাহমুদুর রহমান - সাংবাদিক।
★★★★★★★★★ ★ ★★★★★★★★