শামসুল হক (রাজনীতিবিদ): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
৩০ নং লাইন:
:''একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন [[শামসুল হক]]।''
 
'''শামসুল হক''' (জন্ম: ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৮ - মৃত্যু: ১৯৬৫) একজন [[বাঙালি জাতি|বাঙালি]] রাজনীতবিদ যাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল বিভাগ-পূর্ব ভারতবর্ষে এবং যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল [[বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ|আওয়ামী লীগের]] প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের পূর্বসূরী আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।<ref name=amardesh>দৈনিক আমার দেশ; ২৩ জুন, ২০০৭; প্রথম পাতা</ref> তিনি [[Constituent Assembly of Pakistan|পাকিস্তানের গণ পরিষদের]] সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৫০ সালের [[বাংলা ভাষা আন্দোলন|বাংলা ভাষা আন্দোলনের]] সময় [[বাংলা ভাষা|বাংলা ভাষার]] পক্ষে সংগ্রাম করেছেন। তিনি আওয়ামীলীগের প্রথম এবং তৃতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।<ref>{{cite web|url=http://www.albd.org/autoalbd/index.php?option=com_content&task=view&id=569&Itemid=1|title=Bangladesh Awami League, a pioneer in practicing democracy within party|date=July 23, 2009|publisher=Bangladesh Awami League|accessdate=31 October 2010}}</ref> পূর্ব পাকিস্থানের সরকার বিরোধী রাজনীতিতে তিনি ছিলেন প্রথম সারির নেতা। তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে কারামুক্তির পর ঘরোয়া ষড়যন্ত্রের পরিণতিতে আওয়ামী লীগ তাঁকে বহিষ্কার করে ; যার ফলশ্রুতিতে তিনি চিরকালের জন্য মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এই বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতার নাম ক্রমশ: বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার, তাঁর মস্তিস্কমস্তিষ্ক বিকৃতি, নিখৌঁজ হওয়া এবং অকাল মৃত্যুর রহস্য দীর্ঘকাল ধরে উন্মোচিত হয় নি। ১৯৬৪ সালে শামছুল হক হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন এবং ১৯৬৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ইন্তেকাল করেন। শামসুল হক গবেষণা পরিষদ অনেক খুঁজে মৃত্যুর ৪২ বছর পর ২০০৭ সালে [[কালিহাতি উপজেলা|কালিহাতি উপজেলার]] কদিম হামজানিতে মরহুমের কবর আবিস্কার করে।
 
১৯৫০ এবং ১৯৬০-এ বাংলা জাতীয়তাবাদ আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। সেই সময় ভারতের মধ্যে তিনি প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি মধ্যবৃত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও সাধারণ নির্বাচনে বিখ্যাত এবং উচু পরিবারের প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন। তিনি টাঙ্গাইলের জমিদার কুরুম খান পন্নীকে নির্বাচনে পরাজিত করতে সমগ্র ভারতে তার নাম ছড়িতে পড়ে। এই সময় রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারনাধারণা ছিল যে রাজনীতি কেবলমাত্র উচ্চ বংশ মর্যাদার কারও জন্যই প্রযোজ্য। এই জয়ের মধ্য দিতে এই ধারনার অবসান হয়, এবং এরই ক্রমধারায় সাধারণের অংশগ্রহনে "পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ" নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। এখানে আওয়ামী শব্দের অর্থ জনতা বা সাধারণ জনগণ। তাই বলা হয়ে থাকে যে তরুন নেতা সামসুল হকের প্রেরণ এবং জনপ্রিয়তা থেকেই আওয়ামী লীগ নামের রাজনৈতিক দলটি গঠিন করা হয়েছিল।
 
== জন্ম ==
৫৭ নং লাইন:
 
==== বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি ====
১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নবাবপুরে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গৃহিতগৃহীত হয়<ref name="Islam"/>। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে ছিলেন না। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক আমতলায় ছাত্রদের সভার শুরুতে শামসুল হক সেখানে উপস্থিত হন। তিনি ছাত্রদের বোঝাতে চেষ্টা করেন, ঐ মুহূর্তে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে যাবার পরিণতি, যা ভবিষ্যত আন্দোলন ও অন্যান্য কাজের জন্য সুফল বয়ে আনবে না, আনতে পারে না। তাকে সমর্থন দেন খালেক নেওয়াজ খান, কাজী গোলাম মাহবুব ও সলিমুল্লাহ হলের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ছাত্র। কিন্তু ছাত্ররা শামসুল হকের কথা শোনেনি। এরপর গাজীউল হকের সভাপতিত্বে শুরু হয় আমতলার সভা। শামসুল হক তখনও চেষ্টা করেন ; কিন্তু ছাত্ররা সবাই ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে থাকায় শামসুল হকের কথা সেদিন কেউ শোনেনি।<ref name=Rafiq>একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস; আহমেদ রফিক</ref>। ২১ ফেব্রুয়ারির পর সরকার মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, আবুল হাশিম, মনোরঞ্জন ধর, শামসুল হক সহ কয়েকজনকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে<ref name="Rafiq"/>।
 
== নিখোঁজ জীবন ও মৃত্যু ==
৬৭ নং লাইন:
কদিমহামজানি গ্রামের মৃত বাহাদুল্লা তালুকদারের ছেলে ডা. আনসার আলী তালুকদার (৭৫) ২০০৭ সালে টাঙ্গাইল শহরের বেপারী পাড়ায় তার মেয়ের বাসায় বেড়াতে যান। সেখানে রঙিন একটি ক্যালেন্ডারে শামসুল হকের ছবি দেখতে পান তিনি। ক্যালেন্ডারে শামসুল হকের ছবির পাশে বাংলা হরফে লেখা রয়েছে ‘আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা আন্দোলনের রহৃপকার’। ক্যালেন্ডারের ছবিটি মনোযোগ দিয়ে দেখার পর ডা. আনসার আলীর ৪২ বছর আগের কথা মনে পড়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে এলাকার প্রবীণ লোকদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। ডা. আনসার আলী তালুকদার নিজে তৎকালীন মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। রাজনীতি করার সুবাদে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন ও জানতেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে শামসুল হকের ভাষণও শুনেছেন। এরপর ঐ গ্রামের লোকজন সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়ট জানান। এর মাধ্যমেই প্রায় ৪২ বছর পর, বাংলাদেশের সবথেকে পুরাতন রাজনৈতিক দলটির প্রথম সাধারণ সম্পাদকের খবর মানুষ জানতে পারে<ref name=amardesh/>। ডা. আনসার আলী বলেন, মহিউদ্দিন আনসারী ছিলেন নামকরা একজন কংগ্রেস নেতা। অপরদিকে শামসুল হক ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সমঙাদক। সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী রাজনীতি করলেও তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ছিল। একজন কংগ্রেস নেতার বাড়িতে শামসুল হক মারা যাওয়ার ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক কলহ ও দ্বন্দের সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা করেই শামসুল হকের মৃত্যুর ঘটনা গোপন রাখা হয়। এরপর এক সময় বিষয়টি সবাই ভুলে যায়<ref name=amardesh/>। বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই রাজনীতিবিদের কথা পাওয়া যায় আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘আত্মস্মৃতি : সংগ্রাম ও জয়' বইতে। আবু জাফর শামসুদ্দীন লিখেছেন,
{{cquote|
<i>১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তাকে (শামসুল হককে) আটক করা হয়। তখন তিনি বিবাহিত, একটি কন্যা সন্তানের পিতা। স্ত্রী নরসিংদির সেকান্দার মাস্টার সাহেবের কন্যা আফিয়া খাতুন এম.এ কলেজের লেকচারার। জেলখানায় শামসুল হকের মস্তিস্কমস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। নিজ পরিবারের প্রতি তাঁর মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। আফিয়া খাতুন তাঁকে ত্যাগ করেন। আফিয়া এখন পাকিস্তানে মিসেস আফিয়া দিল। শামসুল হক সম্পূর্ণ বিকৃতমসিত্মষ্ক অবস্থায় জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শামসুল হকের চিকিৎসায় আওয়ামী মুসলিম লীগ কোনো উদ্যোগ নিয়েছিল বলেও মনে পড়ে না। শামসুল হক ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন- কখনও বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে টাকা ধার চাইতেন, কেউ সমাদর করলে আহার করতেন। টাঙ্গাইলের ওয়ার্টারলু বিজয়ী শামসুল হকের মৃত্যু কোথায় কি অবস্থায় হলো তার কোনো বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে দেখিনি। শোকসভাও করেনি কোনো রাজনৈতিক দল বা অন্যরা। অথচ এই শামসুল হক একদিন ছিলেন বাংলার তরুণ মুসলিম ছাত্রসমাজের প্রিয় নেতা- ১৯৫২ সালেও ভাষাসংগ্রামী এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।<ref>সংগ্রাম ও জয়: আবু জাফর শামসুদ্দীন, পৃ : ২৬৩-২৬৪</ref>}}
 
== তথ্যসূত্র ==