তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
বিষয়শ্রেণী:বরিশালের ব্যক্তিত্ব যোগ হটক্যাটের মাধ্যমে
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
৪৮ নং লাইন:
লেখক: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ
 
অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ১৯৪৭ সালের প্রথমদিকে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন। তিনি দেখলেন দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হবে। ভারত ভাগ হলে বাংলা ভাগ হবে। তখন মুসলিম লীগ হতে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, কংগ্রেসের শরত্চন্দ্র বসু, কিরণ শংকরশঙ্কর রায় স্বাধীন বাংলার রূপরেখা ইংরেজ সরকারের কাছে পেশ করেন। সোহ্রাওয়ার্দী প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকা স্বাধীন বাংলার পরিকল্পনা জনগণের নিকট পৌঁছে দেয়। পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ এবং পত্রিকার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। সোহ্রাওয়ার্দী স্বাধীন বাংলা আন্দোলনকালে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া তার বিশ্বস্ত সহকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কংগ্রেসের বিরোধিতা ও বৃটিশ সরকারের দেশ ভাগ নীতির কারণে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়। দেশ ভাগের সঙ্গে সঙ্গে পাঞ্জাব, সিন্ধু সীমান্তে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। মহাত্মা গান্ধী ও হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলকাতাকে কেন্দ্র করে শান্তি প্রতিষ্ঠার বাণী প্রচার শুরু করেন। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মূলত গান্ধী ও সোহ্রাওয়ার্দীর চেষ্টায় বাংলায় দাঙ্গা হয়নি। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান ও তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সোহ্রাওয়ার্দীর সঙ্গে ছিলেন। গান্ধী-সোহ্রাওয়ার্দীর আদর্শে মানিক মিয়া অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনায় প্রভাবিত হয়েছেন। সারা জীবন মানিক মিয়া অসাম্প্রদায়িক আদর্শ প্রচার করেছেন এবং লেখনীর মাধ্যমে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি অটুট রাখায় অবদান রেখেছেন। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ সরকার দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকা পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়। ১৯৪৯ সালের ৫ মার্চ হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী পাকিস্তানে স্থায়ীভাবে বাস ও রাজনীতি করার জন্য কলকাতা ত্যাগ করেন। একইসঙ্গে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন। মুসলিম লীগ সরকার সোহ্রাওয়ার্দীর বিরোধিতা করেছে। সোহ্রাওয়ার্দী মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে দল গঠনের প্রস্তুতি নেন। মূলত তার পরামর্শে মুসলিম লীগের বামপন্থী দল রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি নেয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান আসাম ত্যাগ করে টাঙ্গাইলে চলে আসেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকায় আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। দলের সভাপতি হলেন মওলানা ভাসানী, সম্পাদক হলেন টাঙ্গাইলের শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান দলের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সরাসরি রাজনীতিতে যোগ না দিলেও তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। নতুন দলের কর্মসূচি, পূর্ব বাংলার দাবি তুলে ধরার জন্য একটি পত্রিকা একান্ত দরকার। এমতাবস্থায় মানিক মিয়ার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ইত্তেফাক।
মানিক মিয়া ১৯৩৪ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে ডিস্টিংকশনসহ বিএ পাস করে পিরোজপুর দেওয়ানী আদালতে চাকরি করতেন। মুসলিম লীগ গঠনকালে সোহ্রাওয়ার্দী পিরোজপুর আগমন করেন। মানিক মিয়ার চাচা আফতাব উদ্দিন উকিল এবং ছোবহান মোক্তার তাকে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় করে দেন। মানিক মিয়া প্রথমে বরিশাল জেলার জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন। সোহ্রাওয়ার্দীর নির্দেশে তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করে কলকাতায় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ অফিসের দফতর সম্পাদক নিযুক্ত হন। তারপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানিক মিয়া সোহ্রাওয়ার্দীর একান্ত সান্নিধ্যে ছিলেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ সরকার নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার শুরু করে। ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ভাসানী, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। জননিরাপত্তা আইনে আওয়ামী লীগ ও কমিউনিস্ট নেতাদের গ্রেফতার করতে থাকে। ১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি সাঁওতাল আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ তার ওপর পাশবিক অত্যাচার করে। ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বরিশাল ও ঢাকায় দাঙ্গায় হিন্দুদের হত্যা-ঘরবাড়ি লুট করা হয়। সাপ্তাহিক ইত্তেফাক মুসলিম লীগ সরকারের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। পত্রিকা সরকারের খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা তুলে ধরে। এ সময় লবণের সের হয়েছিল ১৬ টাকা।
১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সাপ্তাহিক ইত্তেফাকের ভূমিকা ছিল অনন্য। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে ছাত্রহত্যার সংবাদ গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেয় ইত্তেফাক। মানিক মিয়ার লেখনী বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ শক্তিশালী হয়। ১৯৫২ সালে রক্তে ভেজা পথ দিয়ে মানিক মিয়া বাঙালি জাতিকে স্বাধিকার আন্দোলনের দিকে নিয়ে যান। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি হতে ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারাবন্দি ছিলেন। এ সময় ইত্তেফাক শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি এগিয়ে নিয়ে যায়।