ঝরোখা দর্শন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
"Jharokha Darshan" পাতাটি অনুবাদ করে তৈরি করা হয়েছে |
(কোনও পার্থক্য নেই)
|
১২:৫৯, ১০ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
ঝরকা দর্শন মধ্যযুগের ভারতের রাজাদের বারান্দায়(ঝরকা) দাঁড়িয়ে প্রজাদের প্রাত্যাহিক দর্শন দেওয়াকে বোঝাতো। প্রজাদের সাথে রাজাদের মুখোমুখি সাক্ষাতের অন্যতম উপায় ছিলো। এই নিয়মটি মুঘল সম্রাটগন চালু করেন। ঝরকা দর্শন অথবা ঝরকা-ই-দর্শন নামটি প্রথম চালু করেন সম্রাট আকবর । যদিও তার বাবা সম্রাট হুমায়ুন ঝরকায় দাঁড়িয়ে প্রজাদের অভিযোগ শুনতেন।
ঝরকা দর্শন মুঘল সম্রাট প্রতিদিন সকালে সুর্যদয়ের সময় বারান্দায় এসে দাড়াতেন এবং এই ঐতিহ্যটি আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহ জাহান ধরে রাখেন। পরবর্তিতে সম্রাট আওরঙ্গজেব এটি অইসলামিক বলে বাতিল করে দেন। মুঘল সম্রাট গন যখন রাজধানির বাহিরে থাকতেন তখন তাদের ভ্রাম্যমান হাওদা থেকে ঝরকা দর্শন দিতেন যেটিকে বলা হতো দো-আশানিয়া মঞ্জিল।
কিং জর্জ পঞ্চম রানীকে নিয়ে ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বের দিল্লির লালকেল্লা্র বারান্দায় ৫ লাখ মানুষের সামনে ঝরকা দর্শন দেন।
বিভিন্ন শাসকদের সময় প্রথাটির চর্চা
হুমায়ুনের শাসনামলে
ঝরকা দর্শন রীতিটি প্রথম চালু করেন হুমায়ুন যদিও আকবর এটিকে প্রতাহিক রূটিন হিসেবে চালু করেছিলেন। হুমায়নের সময় কোন বিচার প্রার্থী যদি মনে করতো সে ন্যায় বিচার পায়নি তাহলে সে ঝরকার নিচে ড্রামে আঘাত করে সম্রাটের দৃষ্টি আকর্ষন করত।
আকবরের রাজত্বের সময়
আগ্রা ফোর্ট এ প্রতিদিন ভোরে সুর্যপুজার পর আকবর ঝরকা দর্শনের প্রস্তুতি নিতেন। আকবর সবসময় ধর্মীয় স্বাধিনতার নীতিকে উৎসাহিত করতেন। ঝরকার নিচে সমবেত প্রজাদের সাথে আকবর ১ ঘন্টার মত সময় অতিবাহিত করতেন। এসময় তিনি তার শসন ব্যবস্থার গ্রহন যোগ্যতা যাচাই করতেন। ঝরকা দর্শন শেষে আকবর চলে যেতেন দিওয়ানি-ই-আম এ। সেখানে তিনি দুই ঘন্টার মত প্রশাসনিক কাজ করতেন।
ঝরকার নিচে সাধারনত সৈন্য, কৃষক, কারুশিল্পী, ব্যাবসায়ি, মহিলা, এবং শিশু রা উপস্থিত হতো। তারা সচক্ষে দেখতো তাদের সম্রাট বহাল তবিয়তে বেচে আছেন এবং সম্যাজ্য তার নিয়ন্ত্রনে আছে। এসময় তারা আকবর কে সরাসরি অনুরোধ, অভিযোগ, এবং ন্যায়বিচার প্রার্থনা করতে পারতো।
জাহাংগিরের শাসনামলে
সম্রাট আকবরের ছেলে সম্রাট জাহাঙ্গীর ঝরকা দর্শন রীতিটি চালু রাখেন। তিনিও প্রতিদিন ঝরকা দর্শন দিতেন এবং সাধারন মানুষের অভিযোগ, অনুরোধ শ্রবন করতেন আগ্রা দুর্গে একটি আলাদা অংশ ছিলো ঝরকা বারান্দার জন্য, যেটিকে বলা হতো শাহ বুর্জ। এটি ছিলো মার্ভেল পাথরের তৈরি অষ্টভুজ আকৃতির। জাহাংগির এর স্ত্রী নূর জাহান ও ঝরকা দর্শন দিতেন এবং সাধারন মানুষের আবেদন শুনে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করতেন। ঝরকা দর্শনের ব্যাপারে জাহাংগির অনেক আনরিক ছিলেন, এবং তিনি যখন অসুস্থ থাকতেন তখনও বাদ দিতেন না।
শাহ জাহান এর শাসনামলে
সম্রাট শাহ জাহান তার ৩০ বছর শাসনামলে অত্যন্ত কঠোর নিয়মানুবর্তিতার সহিত ঝরকা দর্শ্ন প্রথা পালন করেছিলেন। আগ্রা বা দিল্লি যেখানেই থাকতেন, তিনি সুর্যোদয়ের ৪৫ মিনিট পর ঝরকার নিচে সমবেত মানুষের সহিত সাক্ষাত দিতেন এবং রাজকিয় অব্যর্থনা নিতেন। একবার ১৬৫৭ সালে সম্রাট শাহজাহান অসুস্থতার জন্য ঝরকা দর্শন দিতে পারেননি, তখন গুজব রটেছিলো সম্রাট ইন্তেকাল করেছেন।
আওরঙ্গজেব এর শসনামলে
সম্রাট আওরঙ্গজেব ও মুঘল রীতি ঝরকা দর্শন চালু রেখেছিলেন তার কিছু প্রমান পাওয়া যায়। ১৬৭০ সালে কিছু হিন্দু ধর্মানলম্বি ঝরকার নিচে সবেত হয়েছিলেন জীজিয়া করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। যদিও আরঙ্গজেব ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম ধর্ম কঠোর ভাবে মানতেন। তিনি মনে করতেন ঝরকা দর্শন হিন্দু সংস্কৃতিত অংশ, এ জন্য তার রাজত্বের ১১ তম বছর থেকে এই রীতি বাতিল করে দেন।
দো-আশিয়ানা মঞ্জিল
দো-আহিয়ানা মঞ্জিল ছিলো মুঘল সম্রাটদের ভ্রাম্যমান কাঠের বাড়ি, যখন তারা রাজধানীর বাহিরে থাকতেন। এটি ছিলো দোতলা বিশিষ্ট এবং ১৬ পিলারের উপর স্থাপিত। দোতলাটি ছিলো সম্রাতদের ঘুমানোর স্থান এবং ঝরকা দর্শনের জন্য ব্যবহৃত হতো।
দিল্লি দরবার
১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লি দরবার উপলক্ষ্যে কিং জর্জ(পঞ্চম) এবং রানী মেরি দিল্লির লালকেল্লার ঝরকায় ৫০০০০০ সাধারন মানুষের সামনে দর্শন দেন এবং তাদের অভিবাদন গ্রহন করেন।.[১]