মারিয়ানা খাত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে; কোনো সমস্যা?
Hafez ahmad (আলোচনা | অবদান)
→‎তথ্যসূত্র: 1:http://en.m.wikipedia.org/wiki/Mariana_Trench 2:http://www.marianatrench.com/mariana_trench-o ceanography.htm 3:http://geology.com/records/deepest-part-of-the -ocean.shtml 4:htt
১৯ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:মহাসাগরীয় খাত]]
[[বিষয়শ্রেণী:প্রশান্ত মহাসাগর]]
মানুষের অজানাকে জানার আগ্রহ থেকে জানতে সাহায্য করে, আবিষ্কারের নেশা থেকে মানুষের যান এখন, মঙ্গলে,আন্ত:নক্ষত্রিক জগতে। কিন্তু পৃথিবীতে যে রহস্য আছে তা ঠিক পুরাপুরি আবিষ্কার হয়নি, এই সমুদ্র। কত রহস্য! কত রূপ! কত বৈচিত্র্যময়! কত সুন্দর! কত জটিল! সবই সমুদ্র। আজ আমি এই রকম একটি রহস্য নিয়ে (মারিয়ানা ট্রেঞ্চ) বলব।এটি সমুদ্রের গভীরতম খাদ। সমুদ্রে আরও খাদ আছে। এটি পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব দিবে অবস্থান করছে। নাক্ষত্রিক ১১”২১’ উত্তর অক্ষাংশ আর ১৪২”১২’পূর্ব অক্ষাংশ। এটির র্দৈঘ্য প্রায় ২৫৫০ কিলোমিটার, প্রস্থ প্রায় ৬৯ কিলোমিটার।
। এবার আসুন নামকরণ কিভাবে হল।নাম নিয়ে তেমন গন্ডগুল নাই। মারিয়ানা হলেন সতের শতকের স্পেনের রানী, স্পেনের রাজা চতুর্থ ফি-লিপের বিধবা পত্নী । ১৬৬৭ সালে স্পেনিয়ার্ডরা প্রশান্ত মহাসাগরের যে দ্বীপগুলো দখল করে কলোনি প্রতিষ্ঠা করেন, রানীর সম্মানার্থে তার অফিসিয়াল নামকরণ করেন “লা মারিয়ানাস” । আর এ ট্রেঞ্চটি মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের একদম কাছে বলে এর নামটিও হয়ে যায় “মারিয়ানা ট্রেঞ্চ” । মারিয়ানা ট্রেঞ্চের জন্ম হয়েছে মাটির পৃথিবীর অভ্যন্তরে সচল “টেকটোনিক প্লেট”গুলোর সংর্ঘষের ফলে । প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে রয়েছে এরকম দু’দুটো সচল প্লেট । এর একটি “প্যাসিফিক প্লেট” (Pacific Plate )। দৈত্যাকৃতির এই প্যাসিফিক প্লেটটি পশ্চিমে সরতে সরতে ইউরেশিয়ান প্লেটের (Eurasian Plate) সাথে সংঘর্ষে জাপানের পূর্বদিকে তৈরি করেছে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি সহ ডুবন্ত পাহাড়শ্রেণির । আর দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে যে নবীন ফিলিপিন প্লেট (Philippine Plate) তার সাথে সংঘর্ষে গিয়ে নিচে দিক দিয়ে চলে গেছে (subduct) ফিলিপিন প্লেটের অপেক্ষাকৃত তরুণ ফিলিপিন প্লেটের সাথে (আনুমানিক ১৭০ মিলিয়ন বছর পুরনো ) আর এই ডুব(subduct) দিতে গিয়েই জন্ম হয়েছে বিশাল গভীর মারিয়ানা ট্রেঞ্চের।
এখানকার সবচেয়ে গভীর অংশটির নাম চ্যালেঞ্জার ডিপ। গভীরতা নিয়ে যে গবেষণা করা হয়েছিল তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :১৮৭৫ সালে প্রথম শব্দ ব্যবহার করে ট্রেঞ্চের গভীরতা নির্ণেয়েরর চেষ্টা করা হয় তখন গভীরতা ৮.১৮৪কিলোমিটার।১৮৯৯সালে ইউ এস এস নিরো" করেছিল গভীরতা ৯.৬৩৬কিমি।চ্যালেঞ্জার ২: ইকোসাউন্ডার ব্যবহারে পায় ১০.৯০০কিমি।১৯৫৭সালে সোভিয়েত জাহাজ "ভিটয়েজ" পায় ১১.০৩৪কিমি ।১জুন ২০০৯সালে পর থেকে "সিমরাট ইএম১২০সোনার মাল্টিবিম ব্যাথিম্যাট্রি সিস্টেম ও সনার ম্যাপিং ব্যবহার করা হয়েছিল ।পরে ২০১১সালের পর থেকে "আমেরিকান জিওফ্যাজিক্যাল ইউনিয়ন, ইউএস ন্যাভি হাইড্রগ্রাফি জাহাজ, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, ডাব্লিউ এইচ ও আই সমন্বিত গবেষণায়, সিসমোমিটার, হাইড্রফোন, স্যাটেলাইট ম্যাপিং, জিওসেন্সর ব্যবহারে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের সমগ্র পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সক্ষম হয় যা দ্বারা ভুপৃষ্টের ৯৭কিলোমিটার পযন্ত গবেষনা করা যায়। এখন বলতে পারি এটি প্রায় ১১.০৩ কিলোমিটার গভীর।সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এভারেস্টকে তুলে এখানে ঢুকায় দেয়া যাবে (এভা: ৮.৮৪কিমি) আরও ২:১৯কিমি পানি স্তর বাকি থেকে যাবে। ‘এইচএমএস চ্যালেঞ্জার-২ নামক’ একটি জাহাজের নাবিকরা ১৯৪৮ সালে পৃথিবীর গভীরতম এই বিন্দু আবিষ্কার করে। তাই সেই জাহাজের নামানুসারেই রাখা হয়েছে চ্যালেঞ্জার নাম। চ্যালেঞ্জার ডিপ মারিয়ানা ট্রেঞ্চের দক্ষিণ দিকে রয়েছে। এখানে পানির চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ১ হাজার গুণ চেয়েও বেশি । সে কারণেই পানির ঘনত্ব বেশি(প্রায় ৪.৯৬গুন বেশি)। এই অংশটিতে পানির তাপমাত্রা ১-৪ ডিগ্রিসেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। পানির অতিরিক্ত চাপের কারণে এখানে সাধারণত সাবমেরিন চলতে পারে না। সমুদ্রের নিচে হওয়ায় এবং পানির চাপ বেশি থাকায় কোনো মানুষের পক্ষে এখানে যাওয়াটা অত্যন্ত কঠিন। মাউন্ট এভারেস্ট এখন পর্যন্ত অনেকেই জয় করেছেন, কিন্তু চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতম বিন্দুতে এখন পর্যন্ত চারবার অবতরণ করেছে মানুষ। ১৯৬০ সালে ইউএস ‘নেভির লেফটেন্যান্ট ডন ওয়ালশ’ ও ‘জ্যাকুস পিকার্ড’ প্রথম মারিয়ানা ট্রেঞ্চের তলায় অবতরণ করেন। এরপর ১৯৬৬ ও ২০০৯ সালে দু’বার মানুষ এই ভয়ংকর স্থানে অবতরণ করেছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে কানাডার চলচ্চিত্র পরিচালক জেমস ক্যামেরন সেখানে অবতরণ করেন। এবার দেখি প্রাণির কি অবস্থা? তারা কেউ কেউ কেমোসিনতিকের করে বেচে থাকে ।অন্য হবে? তারা বিস্ময়করভাবে বেচে আছে। অনেকে চমৎকারভাবে অভিযোজিত হয়েছে ।গভীরতার কারণে এটি যেমন একাধারে হিমশীতল তেমনি টেকটোনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষে উৎপন্ন “হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট” এর কারণে এর আশেপাশের জলীয় পরিবেশের তাপমাত্রা ৩০০ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যেতে পারে ।এতে পানির বাষ্প হয়ে যাওয়ার কথা । হচ্ছেনা, কারণ চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা বিপুল হিমশীতল পানির জন্যে । সমুদ্রপৃষ্ঠের বাতাসের চাপের চেয়ে এখানে পানির চাপ ১০০০গুন বেশী ।এই সব বৈরী পরিবেশে টিকে থাকতে পারে কেবল “ব্যারোফিলিক” ব্যাকটেরিয়া আর বিশেষভাবে অভিযোজিত প্রাণীরা ।( ব্যাকটেরিয়া সবোর্চ্চ তাপ সহ্য করতে পারে তা ১১৩ডিগ্রী সেলসিয়াস । আর প্রাণীরা পারে ৫০ডিগ্রী) সেলসিয়াস ।১৯৬০ সালের র্পযবেক্ষণে ফ্লাটফিশ ও একপ্রজাতির চিংড়ি , ২০১১ সালের জুন মাসে জিনোফায়োফোর , ২০১৪ সালের দিকে কিছু ক্রাসটাশিয়া পাওয়া গিয়েছিল ।হাইড্রোথার্মাল ভেন্টের গরম পানির ফোয়ারা থেকে ছড়িয়ে পড়ে হাইড্রোজেন সালফাইড আর অন্যান্য মিনারেলস । ব্যারোফিলিক ব্যাকটেরিয়ারা এগুলো খেয়েই বেঁচে থাকে , অণুজীবদের খায় অন্যরা ।এই ভীষণ বৈরী পরিবেশে বেঁচে থাকতে হলে তাদের শরীর গঠিত হতে হয় বিশেষ ধরনের প্রোটিন দ্বারা । এদের চরিত্রের আর একটি চমকের দিক হল এরা বেঁচে থাকে লম্বা সময় ধরে ।একশো বছরেরও বেশী এরা এই পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্যে বিবর্তিত এবং অভিযোজিত হয়েছে। এখানকার পানির রং সে জন্যই খানিকটা হলুদ। অতলজলের অন্ধকারের প্রাণীদের উপর গবেষণা চালিয়ে পৃথিবীতে জীবনের উদ্ভব সম্পর্কে আরও কিছু শেখার আমাদের আছে । এ্যাঙলার ফিসের মতো মারিয়ানা ট্রেঞ্চও তার সব ভূ- প্রাকৃতিক রহস্য নিয়ে মানুষকে টেনে নিতে থাকবে বারংবার।
sources: