খোটান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সন্দীপ সরকার (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
''' খোটান''' [[মধ্য এশিয়া|মধ্য এশিয়ার]] একটি উল্লেখযোগ্য শহর। পুর্বতুর্কীস্তানের [[কুয়েনলুন পর্বত|কুয়েনলুন পর্বতের]] উত্তর পাদদেশে এবং [[তারিম বেসিন|তারিম বেসিনের]] [[তাকলা মাকান মরুভূমি|তাকলামাকান]] মরুভূমির দক্ষিণ প্রান্তের মাঝে এর অবস্থান। খ্রিস্টীয় অব্দের প্রথম চার শতকের বা তারও কিছু আগে থেকে এটি একটি সমৃদ্ধ রাজ্যের রাজধানী ছিল। প্রসিদ্ধ [[রেশম পথ|রেশমপথের]] উপর অবস্থিত এই শহরটি প্রাচীন [[বৌদ্ধ]] সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল।<ref>Stein, M. Aurel (1907). Ancient Khotan. Oxford: Clarendon Press.</ref> স্থানীয় প্রবাদ অনুসারে মৌর্য সম্রাট [[অশোক|অশোকের]] পুত্র কুন্তন (অথবা কুণাল) এখানে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তাঁর নামানুসারেই রাজ্যটি কুন্তন (বর্তমানে খোটান)বা নামে[[হোটান]] নামেও পরিচিত ।
 
==ভৌগোলিক অবস্থান==
[[File:Portrait of a Khotan king.JPG|thumb|right|খোটান রাজা,, দানহুয়াং মোগাও গুহাতে প্রাপ্ত, খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দী]]
 
খোটান শহরটির অবস্থান ৩৭°৪' উত্তর অক্ষরেখায় এবং ৮০°২' পুর্ব দ্রাঘিমায়। একদিকে [[তাকলা মাকান মরুভূমি|তাকলামাকান]] [[মরুভূমি]] অন্যদিকে কুয়েনলুনের পাদদেশ, এই দুয়ের মাঝের খোটান প্রকৃত অর্থে শুষ্ক, জলহীন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের বসতি কম। [[য়ুরুংকাস]][[কারাকাস]] নামের দুটি [[নদী]] খোটানকে জলের যোগান দেয় আর এদের উর্বর পলিমাটির গুণে খোটান ফল ও অন্যান্য দানাশস্য উৎপাদনে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।<ref>Charles Higham (2004). Encyclopedia of Ancient Asian Civilizations. Facts on File. p. 143. ISBN 0-8160-4640-9.</ref>
 
==বৌদ্ধ সংস্কৃতি==
১০ নং লাইন:
 
খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে খোটানে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটে এবং তা একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিপুল প্রসারের সঙ্গে স্থায়ী ছিলো; যেকারণে খোটানের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম [[বৌদ্ধ]] ।<ref>Ehsan Yar-Shater, William Bayne Fisher, ''The Cambridge history of Iran: The Seleucid, Parthian and Sasanian periods.'' Cambridge University Press, 1983, page 963.</ref> একটি খরোষ্ঠী লিপিতে খোটানের মহারাজ রাজাতিরাজ দেব বিজিতদেববিজিত সিংহ-এই নামটি পাওয়া যায়। কাঠের ফলক,চামড়া, [[কাগজ]] ও রেশমের ভারতীয় অক্ষরে ও ভারতীয় ভাষায় লিখিত [[লিপি|লিপিগুলি]] থেকে বেশ বোঝা যায় যে একসময় এখানে ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রসার ঘটেছিলো। খোটানে অনেক বড়ো বড়ো বৌদ্ধ [[মন্দির]] ও বিহার ছিলো-এদের মধ্যে গোমতী [[বৌদ্ধ বিহার|বিহার]] এককালে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলো। চিনদেশীয় [[পর্যটক|পরিব্রাজক]] [[ফা-হিয়েন]] চতুর্থ শতাব্দীর শেষে এবং [[হিউয়েন সাঙ]] সপ্তম শতকের মধ্যভাগে এই বিহারের ও খোটানের সমৃদ্ধির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। এখানে ভারতীয় সভ্যতার পাশাপাশি একশত [[বৌদ্ধ বিহার|বিহার]] (সংঘারাম) ও পাঁচ হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু ছিলো। অনেক [[ভারত|ভারতীয়]] বৌদ্ধ পণ্ডিত ও ভিক্ষু এখানে বাস করতেন। [[চিন|চিনদেশীয়]] অনেক পণ্ডিত বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র পাঠের জন্য ভারতে না গিয়ে এখানেই শিক্ষা লাভ করতেন। গোমতী বিহারে রচিত অনেক গ্রন্থ প্রায় বৌদ্ধ [[ত্রিপিটক|ত্রিপিটকের]] ন্যায় মর্যাদা লাভ করেছিলো।<ref>R.C> Majumder, ed., The History and Culture of the Indian People, vol.II. Bombay, 1951.</ref>
==সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন==
[[File:Bronze coin of Kanishka found in Khotan.jpg|thumb|খোটানে প্রাপ্ত সম্রাট [[কণিষ্ক|কণিষ্কের]] সময়কার ব্রোঞ্জমূদ্রা]]
 
সপ্তম শতাব্দীর চিনা [[পর্যটক]] [[হিউয়েন সাঙ|হিউয়েন সাঙের]] বিবরণী থেকে জানা যায় যে খোটানে চাষযোগ্য জমির পরিমানপরিমাণ ছিলো অত্যন্ত কম ,কিন্তু সেগুলি ছিলো খুবই উর্বর। এইসব উর্বর জমিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য ও ফল উৎপন্ন হতো। তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন যে, এ স্থান কার্পেট আর [[রেশম]] উৎপাদনে সুপরিচিত ছিল।<ref name="Hsüan-Tsang 1985">Hsüan-Tsang (1985). "Chapter 12". In Ji Xianlin. Records of the Western Regions. peking.</ref> এছাড়াও [[জেডপাথর|জেড]] নামে সাদা কালো [[সিলিকেট]] ঘটিত এক ধরণের [[রূপান্তরিত শিলা]] দিয়ে খোটানীরা সুদৃশ্য অলংকার তৈরি করতো।<ref>https://en.wikipedia.org/wiki/Jade</ref>
[[File:chinese jadeite buttons.jpg|thumb|চৈনিক জেড শিল্পের সংগ্রহে কিছু জেডেলাইট বোতাম]] এক কথায় বলতে গেলে, খোটানের প্রধান [[অর্থনীতি|অর্থনৈতিক]] ভিত্তি ছিলো নদীর জলসেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসল এবং উল্লিখিত কুটিরশিল্প। [[হিউয়েন সাঙ]] খোটানের মানুষের সংস্কৃতির কথাও উল্লেখ করেছেন। সাহিত্যের প্রতি এদের অনুরাগ যেমন ছিলো তেমনি [[সংগীত]] ও [[নৃত্য|নৃত্যকলায়]] এরা পারদর্শী ছিলো। শহরের মানুষেরা হাল্কা ও সাদা রঙের রেশমের পোশাক পরিধান করতেন।<ref name="Hsüan-Tsang 1985"/> চিনদেশে প্রথম রেশম চাষ শুরু হয়েছিলো একথা যেমন সত্য তেমনি একথাও সমভাবে সত্য যে [[চিন|চিনদেশের]] বাইরে প্রথম রেশমের প্রচলন হয়েছিলো খোটানে। মতভেদ থাকলেও খোটানে [[রেশম]] চাষ বিষয়ে জনশ্রুতি আছে যে, জনৈক চৈনিক রাজকুমারী খোটানী রাজাকে বিয়ের সময়ে তাঁর কবরীর মধ্যে লুকিয়ে রেশম কীট নিয়ে আসেন। সেখান থেকেই খোটানে রেশমের প্রচলন হয় এবং কালক্রমে [[রেশম|রেশমশিল্প]] খোটানের অর্থনীতির অঙ্গীভূত হয়ে পড়ে।<ref>Hill (2009). "Appendix A: Introduction of Silk Cultivation to Khotan in the 1st Century CE", pp. 466-467.</ref>