ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
তথ্যসূত্র প্রদান করা হলো
৩ নং লাইন:
 
== প্রথম জীবন ও পরিবার ==
ভূপেন্দ্রনাথ কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন । তাঁর পিতা ছিলেন অ্যাটর্নী বিশ্বনাথ দত্ত এবং মা ছিলেন ভুবনেশ্বরী দেবী । তাঁর দুই দাদা ছিলেন নরেন্দ্রনাথ বা [[স্বামী বিবেকানন্দ]] এবং সাধক মহেন্দ্র । তাঁর দুই ভ্রাতা এবং মাতা ভুবনেশ্বরী তাঁকে শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়তা করেন। ভূপেন্দ্রনাথ কলকাতা মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউট থেকে এন্ট্রান্স পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাবার আগে তিনি ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং [[শিবনাথ শাস্ত্রী|শিবনাথ শাস্ত্রীর]] সাথে পরিচিত হয়ে হিন্দুসমাজের ভেদবুদ্ধির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন ।<ref name="সংসদ">সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, ''সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান'', প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, সংশোধিত ও পরিমার্জিত পঞ্চম সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৫২৪-৫২৫, ISBN 978-81-7955-135-6</ref>
 
ভূপেন্দ্রনাথ কলকাতা মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউট থেকে এন্ট্রান্স পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাবার আগে তিনি ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং [[শিবনাথ শাস্ত্রী|শিবনাথ শাস্ত্রীর]] সাথে পরিচিত হয়ে হিন্দুসমাজের ভেদবুদ্ধির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন ।
 
== বৈপ্লবিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ==
বৈপ্লবিক ধারায় ইংরেজকে ভারত থেকে তাড়ানোর জন্য তিনি [[১৯০২]] খ্রিস্টাব্দে ব্যারিস্টার [[প্রমথনাথ মিত্র|পি মিত্রের]] নিখিল বঙ্গ বৈপ্লবিক সমিতিতে যোগ দেন । এখানে তিনি যতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, [[ভগিনী নিবেদিতা]], [[অরবিন্দ ঘোষ]] প্রমুখের সাহচর্য পান । মাৎসিনী এবং গ্যারিবল্ডির আদর্শ তাঁর প্রাথমিক বৈপ্লবিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল । তাঁর দাদা বিবেকানন্দের রচনাও তাঁকে প্রভাবিত করেছিল ।
 
অরবিন্দ ঘোষের সহায়তায় [[১৯০৬]] খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবীদের পত্রিকা সাপ্তাহিক [[যুগান্তর পত্রিকা|যুগান্তরের]] সম্পাদক হন । দেশের বৈপ্লবিক চেতনা বাড়ানোর জন্য এই পত্রিকাটি ছাড়াও সোনার বাঙলা নামে একটি বেআইনী ইস্তাহার প্রকাশের জন্য [[১৯০৭]] খ্রিস্টাব্দে তাঁর এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয় । মুক্তির পর তিনি সহকর্মীদের পরামর্শে ছদ্মবেশে আমেরিকা যাত্রা করেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়া হাউসে আশ্রয় পান । এরপর তিনি [[১৯১২]] খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন এবং দুই বছর পর ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন
 
এরপর তিনি [[১৯১২]] খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন এবং দুই বছর পর ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন ।
 
তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গদর পার্টি এবং সোশ্যালিস্ট ক্লাবের সংস্পর্শে এসে সমাজতন্ত্রবাদে বিশেষ জ্ঞানলাভ করেন । আমেরিকায় থাকাকলে শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে তাঁকে অর্থকষ্টে দিন কাটাতে হয়েছিল ।
 
তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গদর পার্টি এবং সোশ্যালিস্ট ক্লাবের সংস্পর্শে এসে সমাজতন্ত্রবাদে বিশেষ জ্ঞানলাভ করেন । আমেরিকায় থাকাকলে শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে তাঁকে অর্থকষ্টে দিন কাটাতে হয়েছিল । [[১৯১৪]] খ্রিস্টাব্দে [[প্রথম বিশ্বযুদ্ধ]] শুরু হবার পর বিপ্লবী আন্দোলনকে জোরদার করতে তিনিও অন্যান্য ভারতীয় বিপ্লবীদের মত [[বার্লিন|বার্লিনে]] আসেন । [[১৯১৬]] থেকে [[১৯১৮]] খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ঐতিহাসিক বার্লিন কমিটির সম্পাদক ছিলেন । [[১৯১৫]] খ্রিস্টাব্দে তিনি ছদ্মবেশে দক্ষিণ ইউরোপ পৌছান । বার্লিন কমিটির অনুরোধে জার্মান সরকার তাঁকে [[গ্রিস]] থেকে বার্লিনে আনেন । তাঁর নেতৃত্বে বার্লিন কমিটি তাঁদের কর্মক্ষেত্র পশ্চিম এশিয়ায় বিস্তৃত করে । এই সমস্ত অঞ্চলে অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল কাজে যেসব বীর ভারতবাসী প্রাণ দিয়েছেন বা লিপ্ত ছিলেন তাঁদের তথ্যাদির প্রামানিক চিত্র তিনি তাঁর বইতে বর্ণনা করেছেন ।
 
বৈপ্লবিক আন্দোলনের সাথে সাথে তিনি সমাজতত্ত্ব এবং নৃতত্বের গবেষণা চালিয়ে [[১৯২৩]] খ্রিস্টাব্দ থেকে হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি পান । [[১৯২০]] খ্রিস্টাব্দে জার্মান অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সোসাইটি এবং [[১৯২৪]] খ্রিস্টাব্দে জার্মান এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য ছিলেন । [[১৯২১]] খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের আহ্বানে বীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে তিনি মস্কোতে আসেন । এই অধিবেশনে [[মানবেন্দ্রনাথ রায়]] এবং [[বীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত]] উপস্থিত ছিলেন । তিনি সোভিয়েট নেতা [[লেনিন|লেনিনের]] কাছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রদান করেন ।
 
[[১৯২২]] খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে ভারতের শ্রমিক কৃষক আন্দোলনের একটি কর্মসূচী পাঠান । ১৯২৭-২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির এবং [[১৯২৯]] খ্রিস্টাব্দে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্য হন । [[১৯৩০]] খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসর করাচী অধিবেশনে শ্রমিক এবং কৃষকদের মৌলিক অধিকার নিয়ে একটি প্রস্তাব [[জওহরলাল নেহেরু|নেহেরুকে]] দিয়ে গ্রহণ করান । এছাড়াও তিনি বহু শ্রমিক এবং কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । [[১৯৩৬]] খ্রিস্টাব্দ থেকে ভারতের কৃষক আন্দোলনে যুক্ত থেকে বঙ্গীয় কৃষক সভার অন্যতম সভাপতি এবং দুবার অখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতি হন । আইন অমান্য আন্দোলনে কারাবরণ করেন ।<ref name="সংসদ"/>
 
== সাহিত্য প্রতিভা ==
[[সমাজবিজ্ঞান]], [[নৃতত্ব]], [[ইতিহাস]], সাহিত্য, বৈষ্ণবশাস্ত্র, হিন্দু আর্যশাস্ত্র, মার্কসীয় দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল । [[বাংলা]], [[ইংরেজি]], [[জার্মান ভাষা|জার্মান]], [[হিন্দি]], [[ইরানী]] প্রভৃতি ভাষায় তাঁর অনেক রচনা প্রকাশিত হয়েছে ।
 
তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ:
* ''অপ্রকাশিত রাজনীতিক ইতিহাস''
* ''যুগসমস্যা''
* ''তরুণের অভিযান''
* ''জাতিসংগঠন''
* ''যৌবনের সাধনা''
* ''সাহিত্যে প্রগতি''
* ''ভারতীয় সমাজপদ্ধতি'' (৩ খণ্ড)
* ''আমার আমেরিকার অভিজ্ঞতা'' (৩ খণ্ড)
* ''বৈষ্ণব সাহিত্যে সমাজতন্ত্র''
* ''বাংলার ইতিহাস''
* ''ডায়ালেক্টস অফ হিন্দু রিচুয়ালিজম''
* ''ডায়ালেক্টস অফ ল্যান্ড ইকোনমিকস অফ ইন্ডিয়া''
* ''বিবেকানন্দ দ্য সোসালিস্ট''।<ref name="সংসদ"/>
 
== তথ্যসূত্র ==
{{Reflist}}
* সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান - প্রথম খণ্ড - সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান
 
[[বিষয়শ্রেণী:ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন]]