বাঘা যতীন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অ তথ্যসূত্র প্রদান ও পরিবর্ধন ও লাল লিংক অপসারণ করা হলো |
|||
২৩ নং লাইন:
[[ব্রিটিশ ভারত|ভারতে]] ব্রিটিশ-বিরোধী [[ভারতের স্বাধীনতার বিপ্লবী আন্দোলন|সশস্ত্র আন্দোলনে]] তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। বাঘা যতীন ছিলেন [[বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি|বাংলার]] প্রধান বিপ্লবী সংগঠন [[যুগান্তর দল|যুগান্তর দলের]] প্রধান নেতা। [[প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] অব্যবহিত পূর্বে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে [[যুগান্তর দল#জার্মান প্লট|জার্মান প্লট]] তাঁরই মস্তিস্কপ্রসূত।<ref>"Nixon Report", in ''Terrorism in Bengal'',[abbreviation ''Terrorism''] Edited and Compiled by A.K. Samanta, Government of West Bengal, Calcutta, 1995, Vol. II, p.625.</ref>
সশস্ত্র সংগ্রামের এক পর্যায়ে সম্মুখ যুদ্ধে [[উড়িষ্যা|উড়িষ্যার]] [[বালেশ্বর|বালেশ্বরে]] তিনি গুরুতর আহত হন এবং বালাসোর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
== প্রাথমিক জীবন ==
বাঘা যতীনের জন্ম হয় [[কুষ্টিয়া|কুষ্টিয়া জেলার]] কয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মাতার নাম শরৎশশী। [[ঝিনাইদহ জেলা|ঝিনাইদহ জেলায়]] পৈত্রিক বাড়িতে তাঁর ছেলেবেলা কাটে। ৫ বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। মা এবং বড় বোন বিনোদবালার সাথে তিনি মাতামহের বাড়ি কয়াগ্রামে চলে যান। যতীন শৈশব থেকেই শারীরিক শক্তির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। শুধুমাত্র একটি ছোরা নিয়ে তিনি একাই একটি বাঘকে হত্যা করতে সক্ষম হন বলে তাঁর নাম রটে যায় ''বাঘা যতীন''।
যতীনের মা বিধবা শরৎশশী দেবী ছিলেন স্বভাবকবি। সমসাময়িক [[
যতীনের বড় মামা [[বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়]] ছিলেন
[[১৮৯৫]] সালে এন্ট্রান্স পাস করে তিনি কলকাতা সেন্ট্রাল কলেজে (বর্তমানের [[ক্ষুদিরাম বোস সেন্ট্রাল কলেজ]]) ভর্তি হন। কলেজের পাশেই [[স্বামী বিবেকানন্দ]] বাস করতেন। বিবেকানন্দের সংস্পর্শে এসে যতীন দেশের স্বাধীনতার জন্য আধ্যাত্মিক বিকাশের কথা ভাবতে শুরু করেন। এসময়ে [[প্লেগ]] রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বিবেকানন্দের আহবানে যতীন তাঁর বন্ধুদের দল নিয়ে এই রোগে আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত হন।
[[স্বামী বিবেকানন্দ|বিবেকানন্দের]] পরামর্শে যতীন শরীরচর্চার জন্য অম্বু গুহের কুস্তির আখড়ায় যোগ দেন। সেখানে তাঁর সাথে সেসময়ের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের দেখা হয়। এদের একজন [[শচীন বন্দোপাধ্যায়|শচীন বন্দোপাধ্যায়ের]] সাথে পরিচয়ের সূত্রে তিনি শচীনের পিতা [[যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের]] সাক্ষাৎ পান। যোগেন্দ্রনাথ তখনকার ইউরোপের [[মাৎসিনি]], [[গারিবল্ডি]] প্রমুখ ইতালীয় বিপ্লবীদের জীবনের আলেখ্য রচনা করেছিলেন।
কলেজ পাঠের সঙ্গে সঙ্গে যতীন অ্যাটকিনসন সাহেবের স্টেনো টাইপিংয়ের ক্লাসে ভর্তি হন। সদ্য প্রচলিত টাইপরাইটার ব্যবহার করার এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মোটা মাইনের চাকুরি পাওয়া সম্ভব ছিলো। ঔপনিবেশিক মনোবৃত্তিতে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠে ইস্তফা দিয়ে যতীন ১৮৯৯ সালে মজঃফরপুর চলে যান। সেখানে তিনি ব্যারিস্টার কেনেডীর সেক্রেটারি হিসাবে কাজে যোগ দেন। ভারতের জন্য মজুদ অর্থ দিয়ে ইংরেজ সরকার
জননী শরৎশশীর অসুস্থতার সংবাদে যতীন কয়াগ্রামে এসে দেখেন এক কলেরা রোগীর সেবা করতে করতে তার সংক্রমণে যতীনের মা মৃত্যুবরণ করেছেন। দিদি বিনোদবালার কাছে যতীন জানতে পারেন, তাঁর প্রয়াত মা কুমারখালীর উমাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে ইন্দুবালার সাথে যতীনের বিয়ের সম্বন্ধ করেছিলেন। ১৯০০ সালে যতীন ইন্দুবালাকে বিয়ে করেন। তাঁদের ৪টি সন্তান হয় - অতীন্দ্র (১৯০৩-০৬), আশালতা (১৯০৭-৭৬), তেজেন্দ্র (১৯০৯-৮৯) এবং বীরেন্দ্র (১৯১৩-৯১)।
যতীন মজঃফরপুরে আর ফিরবেন না - এই খবর পেয়ে কেনেডি একটি সুপারিশ দেন তাঁর বন্ধু হেনরি হুইলারের নামে, যিনি তখন বাংলা সরকারের অর্থসচিব। যতীনকে হুইলার নিজের স্ট্যানোগ্রাফার হিসাবে নিয়োগ করেন। যতীনের পেশাগত নৈপুণ্যের সংগে তাঁর আত্মসম্মানবোধ ও দেশপ্রেম মুগ্ধ করে হুইলারকে। ভারতীয় প্রজাদের উপরে ইংরেজ অফিসারদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে তখন [[বিপিন চন্দ্র পাল]] ''New India'' পত্রিকায় প্রতিবাদ ছাপছেন; তারই প্রতিধ্বনি তুলে '
== সশস্ত্র আন্দোলনে ==
১৯০৩ সালে যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের বাড়িতে [[অরবিন্দ ঘোষ||শ্রী অরবিন্দের]] সাথে পরিচিত হয়ে যতীন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। সরকারী নথিপত্রে যতীন পরিচিত হন শ্রী অরবিন্দের দক্ষিণহস্ত হিসাবে।<ref name="gobwb">"Terrorism in Bengal", Government of West Bengal, 1995, Vol. V, p. 63 (Sealy's report)</ref>
== দেশপ্রেমিক, প্রতিবাদী ও কৌশলী দৃষ্টিভঙ্গী ==
[[১৯০০]] সাল থেকে মূল
[[১৯০৫]] সালে যুবরাজের ভারত সফরকালে [[কলকাতা|কলকাতায়]] বিরাট
যতীন জানতেন, নিয়মিত লণ্ডনে ভারত-সচিব মর্লি'র দফতরে অভিযোগ পুঞ্জীভূত হয় এইসব
== বারীণের সাথে মতবিরোধ ==
অতীন্দ্রের অকাল মৃত্যুর শোকে মুহ্যমান যতীন দিদি বিনোদবালা আর স্ত্রী ইন্দুবালাকে নিয়ে তীর্থভ্রমণে বের হন। হরিদ্বারে তাঁরা [[স্বামী ভোলানন্দ গিরি|স্বামী ভোলানন্দ গিরি'র]] কাছে দীক্ষা নিয়ে অন্তরের শান্তি ফিরে পেলেন। গিরিজি জানতে পারেন যতীনের দেশসেবার কথা এবং পূর্ণ সম্মতি জানান এই পন্থায় অগ্রসর হবার সপক্ষে।
১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বপরিবারে যতীন
== সামরিক অফিসারের সাথে মারামারি ==
[[১৯০৭]] সালে বিশেষ কর্ম-দায়িত্ব নিয়ে হুইলারের সচিবদের সংগে যতীন সপরিবারে [[দার্জিলিং|দার্জিলিংয়ে]] স্থানান্তরিত হলেন। সমস্ত উত্তর বাংলার মতো এখানেও যতীন "অনুশীলন"-এর সক্রিয় শাখা স্থাপন করেছিলেন। [[১৯০৮]] সালের এপ্রিল মাসে ক্যাপ্টেন
== দৃঢ়চেতা মনোভাবী ও সমাজ সংস্কারক ==
[[১৯০৬]] সাল থেকে [[স্যার ডেনিয়েল হ্যামিলটন|স্যার ডেনিয়েল হ্যামিলটনের]] সহযোগিতায় যতীন একাধিক মেধাবী ছাত্রকে [[বৃত্তি]] দিয়ে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। শুরু হয় [[তারকনাথ দাস|তারকনাথ দাসকে]] দিয়ে; পরপর তাঁর পিছু পিছু রওনা হন [[গুরনদিৎ কুমার]], [[শ্রীশ সেন]], [[অধর লস্কর]], [[সত্যেন সেন]], [[জিতেন লাহিড়ি]], [[শৈলেন ঘোষ]]। ...... এদের কাছে নির্দেশ ছিল, উচ্চশিক্ষার সংগে সংগে আধুনিক লড়াইয়ের কায়দা ও [[বিস্ফোরক]] প্রস্তুতের তালিম নিয়ে আসতে এবং বিদেশের সর্বত্র ভারতের [[স্বাধীনতা]] সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করতে। [[১৯০৮]] সালে বারীণ ঘোষের প্রথম প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে সবাই যখন হাল ছেড়ে দিয়েছে, তখন গোপনে [[শ্রীঅরবিন্দ|
== বিপ্লবীদেরকে অস্ত্র শিক্ষা ও ইংরেজ সরকার ==
জেলার সুবিদিত অস্ত্র-ব্যবসায়ী [[নূর খাঁ|নূর খাঁ'র]] কাছে [[আগ্নেয়াস্ত্র]] কিনে যতীন নিয়মিত
[[আলিপুর বোমা মামলা|আলিপুর বোমা মামলার]] অভিযুক্ত বিপ্লবীদের ব্যয়ভার বহন,
== একটিমাত্র অপরাধী ==
[[২৭ জানুয়ারি]], [[১৯১০]] তারিখে যতীনকে গ্রেপ্তার করা হল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগে। শুরু হল
'''"দুই বাংলাতেই আজ শাসনব্যবস্থা বিফল"''', মরিয়া হার্ডিঞ্জ অনুযোগ করে ক্ষাণ্ত নন; কারামুক্ত যতীনকে [[গৃহবন্দী]] রেখে সরকার তৎপর হল শাসন ব্যবস্থায় শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে। পুলিশী রিপোর্টে
== পুলিশের চোখে ধুলো ==
[[কোলকাতা|কলকাতার]] পুরো দায়িত্ব [[অতুলকৃষ্ণ ঘোষ|অতুলকৃষ্ণ ঘোষের]] হাতে অর্পণ করে
[[১৯১৩]] সালে বাংলা এবং বাংলার বাইরের বিভিন্ন শাখার কর্মী ও নেতারা মিলিত হলেন [[বর্ধমান|বর্ধমানে]] বন্যাত্রাণ উপলক্ষে। উত্তর ভারত থেকে [[রাসবিহারী বসু]] এসে যতীনের সংগে আলোচনা করে নূতন প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হলেনঃ [[অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের]] মাধ্যমে যতীনের সংগে একাধিক বৈঠকে রাসবিহারী সিদ্ধান্ত নিলেন [[ফোর্ট উইলিয়াম|ফোর্ট উইলিয়ামের]] সৈন্য-বহরের পরিচালকদের সহযোগিতায় কলকাতা থেকে [[পেশোয়ার]] অবধি বিদ্রোহের আগুন জ্বলবে [[১৮৫৭]] সালের দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে।<ref>Two Great ....., p. 119; also Jadugopal Mukharjee's Biplabi jivaner smriti, 2nd ed., p. 537</ref>
৯৩ নং লাইন:
জটিল এই পরিস্থিতিতে যতীনের আর কলকাতা থাকা সমীচীন নয়, বিবেচনা করে তাঁর শিষ্য ও সহকারীরা খুঁজে পেলেন [[বালেশ্বর]] (বালাসোর)-এর আশ্রয়। ওখানকার উপকূলেই জার্মান অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রধান জাহাজটি আসার কথা। তার প্রতীক্ষায় যতীন ওখানে চার-পাঁচজন কর্মীকে নিয়ে আস্তানা গাড়লেন। স্থানীয় অভিভাবকরূপে রইলেন [[মনীন্দ্র চক্রবর্তী]]। দীর্ঘ ছ'মাস তিনি বুকের পাঁজরের মতো আগলে থেকেছেন মহানায়কের এই অজ্ঞাতবাসের আস্তানা। যতীনকে বালেশ্বরে নিরাপদ দেখে [[নরেন ভট্টাচার্য]] (এম.এন. রায়) রওনা হলেন [[বাটাভিয়া]] অভিমুখে, বীরেন চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশমাফিক; সেখানে [[হেলফেরিষ্]] ভ্রাতাদের কাছে বিশদ অবগত হলেন জার্মান অস্ত্র নিয়ে জাহাজ আসার পাকা খবর; ফিরে এসে নাটকীয়ভাবে [[গুরু|গুরুর]] চরণে একথলে [[মোহর]] ঢেলে দিয়ে [[প্রণাম]] করে জানালেন, জার্মান সহযোগিতার দরুণ প্রাপ্য অর্থের এটি প্রথম কিস্তি। মনীন্দ্র সবই দেখেছেন। সবই জানতেন। বিশাল ঝুঁকি নিয়ে তবু তিনি এঁদের আশ্রয় দিয়েছেন। মুগ্ধ হয়ে এঁদের সান্নিধ্য উপভোগ করেছেন।<ref>মনীন্দ্র চক্রবর্তীর খাতা থেকে, নলীনিকান্ত করের লিখিত বিবৃতিও</ref> ইতিমধ্যে রাসবিহারী'র প্রচেষ্টা যেমন উত্তরাঞ্চলে ভেস্তে যায় কৃপাল সিং নামে [[বিশ্বাসঘাতক]] 'গদর' কর্মীর জন্য, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে [[চেকোস্লোভাকিয়া]] থেকে সমাগত বিপ্লবীরা ইন্দো-জার্মান সহযোগিতার সংবাদ ফাঁস করে দেয় মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকারের দপ্তরে-প্রতিদানে নিজেদের সংগ্রামের অনুকূল সহানুভূতি পাবার প্রত্যাশায়। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের উদ্যোগে জার্মান সরকারের সংগে জার্মান বিভিন্ন দূতাবাসের পত্র ও [[তারবার্তা]] হস্তগত করে ব্যাপক এই আন্তর্জাতিক সংগঠনের মূল উপড়ে ফেলতে উদ্যত হল সমবেত ব্রিটিশ ও মার্কিন সুরক্ষা বিভাগ।<ref>CSmagasin, Ross Hedvisek, Spren 2006</ref> পেনাং'এর একটি সংবাদপত্রের কাটিং থেকে যতীন খবর পেলেন যে, অস্ত্রশস্ত্রসমেত জাহাজ ধরা পড়ে গিয়েছে। মারাত্মক এই নিরাশায় তিনি ভেংগে পড়বেন ভয় ছিল সহকারীদের। পরিবর্তে তিনি হেসে উঠলেন, যেন কিছুই তেমন ঘটেনি: '''"দেশের সুরাহা বাইরে থেকে নয়, তা আসবে অভ্যন্তর থেকে!"''' রোজ বিকেলে বনভূমির নীরব আশ্রয়ে যতীন [[গীতা|গীতার]] ক্লাস নিতেন। [[শিষ্য]] [[নলিনীকান্ত কর]] তাঁর [[স্মৃতিকথা|স্মৃতিকথায়]] লিখেছেন, '''"মনে হত যেন [[গৌতম মুনি|গৌতম মুনির]] কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে [[বেদমন্ত্র]]"'''। ক্লাসের শেষে অস্তসূর্যের আলোকে একাকী যতীন কিছুক্ষণ ধ্যান করতেন। একদিন মনীন্দ্রও বসে রইলেন। হঠাৎ যতীন অদূরবর্তী মনীন্দ্রের হাত ছুঁয়ে বলে উঠলেন: "ওই দ্যাখ! [[কৃষ্ণ]] আমাদের দিকে হাসিমুখে চেয়ে আছেন!" মনীন্দ্র সেই দৃষ্টির অভাবে প্রত্যক্ষ করলেন-যতীনের স্পর্শে এক তীব্র পুলকের স্রোত।
== বুড়ি বালামের তীরে খণ্ডযুদ্ধ ও যতীনের আত্মদান ==
কলকাতা থেকে খবর এল, একের পর এক বিপ্লবীদের কেন্দ্রগুলিতে তল্লাস চালাচ্ছে পুলিশ। বালেশ্বরের সন্ধান পেতে দেরী নেই। দুর্গম [[ডুভিগর]] [[পর্বতশ্রেণী]] দিয়ে গা ঢাকা দেবার উপযোগিতা নিয়ে কেউ কেউ যখন জল্পনা-কল্পনা করছেন, যতীন দৃঢ়স্বরে জানালেন, '''"আর পালানো নয়। যুদ্ধ করে আমরা মরব। তাতেই দেশ জাগবে।"'''{{cn}} ৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাত্রে যতীন নিজের সাময়িক আস্তানা মহলডিহাতে ফিরে এলেন। সঙ্গে [[চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী]], [[জ্যোতিষচন্দ্র পাল]], [[মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত]] এবং [[নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত]]। ৮ সেপ্টেম্বর সারাদিন কেটে গেল গভীর জংগলে। সারারাত পায়ে হেঁটে ৯ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা পৌঁছলেন [[বালেশ্বর|বালেশ্বরের]] নদী বুড়ি বালামের উপকণ্ঠে। সাঁতার কেটে নদীর ওপারে গিয়ে যুদ্ধের পক্ষে মোটামুটি উপযুক্ত শুকনো এক ডোবার মধ্যে আশ্রয় নিলেন। বিপরীতপক্ষে চার্লস টেগার্ট, কমান্ডার রাদারফোর্ড, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কিলভি অসংখ্য সশস্ত্র পুলিস ও সামরিক বাহিনী নিয়ে হাজির হয়েছিল। পরীখার আড়ালে বাঘা যতীনের নেতৃত্বে মোট পাঁচজন, হাতে মাউজার পিস্তল। যুদ্ধ শুরু হলে পুলিসের গুলিতে ঘটনাস্থলে শহীদ হলেন চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী।<ref name="ত্রৈলোক্যনাথ">[[ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী]], ''জেলে ত্রিশ বছর, পাক-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম'', ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, ঢাকা, ঢাকা বইমেলা ২০০৪, পৃষ্ঠা ১৭৩।</ref><ref>শৈলেশ দে, ''মৃত্যুর চেয়ে বড়'', বিশ্ববাণী প্রকাশনী, কলিকাতা, প্রথম (বি) সংস্করণ অগ্রহায়ণ ১৩৯২, পৃষ্ঠা ১২১-১২৬।</ref> এই যুদ্ধের এমন নজির ইতিপূর্বে দেখেননি বলে মেনে নিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ইংরেজ কুশীলবেরা। [[৯ সেপ্টেম্বর]] [[১৯১৫]] সালে সূর্যাস্তের সংগে অবসান হল এই যুদ্ধের। পরদিন বালেশ্বর সরকারী হাসপাতালে যতীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তখনো রক্তবমি হচ্ছে। হেসে বললেন:
'''''"এত রক্ত ছিল শরীরে?'''''
|