চণ্ডীমঙ্গল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
'''চণ্ডীমঙ্গল''' বা '''অভয়ামঙ্গল''' মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের [[মঙ্গলকাব্য]] ধারার অন্যতম প্রধান কাব্য। এই ধারার অন্য দুই উল্লেখনীয় কাব্য [[মনসামঙ্গল]] ও ধর্মমঙ্গল। জনশ্রুতি অনুসারে চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি-কবি [[মানিক দত্ত]]। এই কাব্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি "কবিকঙ্কণ" [[মুকুন্দরাম চক্রবর্তী]]। অন্যান্য কবিদের মধ্যে [[দ্বিজ মাধব]] বিশেষ উল্লেখনীয়।<ref name="sen">সুকুমার সেন ''বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস'', প্রথম খণ্ড, আনন্দ, কলকাতা, ১৯৯১, আইএসবিএন 81-7066-966-9, পৃ. ৪১২-৬৩</ref>
 
চণ্ডীমঙ্গল দেবী চণ্ডীর মহিমা গীত। কিন্ত প্রাচীন চণ্ডীমঙ্গলের কবিদের বর্ণনায় অভয়া নামে উল্লিখিত এই দেবী আদিতে পুরাণে বর্ণিত দেবী মহিষাসুরমর্দিনী [[চণ্ডী]] ছিলেন না। অবশ্য চণ্ডীমঙ্গল রচনার কয়েক শতাব্দী পূর্বেই তিনি পৌরাণিক চণ্ডীর সঙ্গে মিলে গিয়েছেন। অভয়া মুখ্যত বনদেবী যা ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের অরণ্যানী স্তবের সাথে সম্পৃক্ত। চন্ডীমঙ্গলের কালকেতু-আখ্যানে তিনি দ্বিভূজা, তাঁর প্রতীক মঙ্গলঘট, পূজার উপচার মাঙ্গল্য ধানদূর্বা।তিনি পশুমাতারূপে পূজিতা।
<br/>অভয়া মুখ্যত বনদেবী যা ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের অরণ্যানী স্তবের সাথে সম্পৃক্ত। চন্ডীমঙ্গলের কালকেতু-আখ্যানে তিনি দ্বিভূজা, তাঁর প্রতীক মঙ্গলঘট, পূজার উপচার মাঙ্গল্য ধানদূর্বা।তিনি পশুমাতারূপে পূজিতা।
<ref name="sen"/>
 
১০ ⟶ ৯ নং লাইন:
=== আখেটিক খণ্ড ===
আখেটিকখণ্ড বা আক্ষটিখণ্ড ব্যাধ কালকেতু ও তাঁর পত্নী ফুল্লরার প্রতি দেবীর অনুগ্রহের কাহিনী। দেবীর অনুরোধে শিব তাঁর ভক্ত নীলাম্বরকে শাপ দিয়ে মর্ত্যলোকে পাঠান। নীলাম্বর কালকেতু হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। কালকেতুর যৌবনপ্রাপ্তির পর তাঁর পিতা ধর্মকেতু ফুল্লরার সঙ্গে তাঁর বিবাহ দেন। কালকেতুর অতি দরিদ্র কিন্ত সুখী সংসার। এদিকে কালকেতুর শিকারে প্রায় নির্মূলিত কলিঙ্গের বনের পশুদের আবেদনে কাতর হয়ে দেবী স্বর্ণগোধিকা রূপে কালকেতুর শিকারে যাবার পথে প্রকট হলেন। কালকেতুর শিকারে যাবার সময় অমঙ্গলজনক গোধিকা দেখার পর কোন শিকার না পেয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে গোধিকাটিকে ধনুকের ছিলায় বেঁধে ঘরে নিয়ে আসেন। কালকেতু গোধিকাকে ঘরে বেঁধে পত্নীর উদ্দেশে হাটে রওনা হন। হাটে ফুল্লরার সঙ্গে দেখা হলে তাঁকে গোধিকার ছাল ছাড়িয়ে শিক পোড়া করতে নির্দেশ দেন।
<blockquote><poem>
আছয়ে তোমার সই বিমলার মাতা
 
লইয়া সাজারু ভেট যাহ তুমি তথা।
 
খুদ কিছু ধার লহ সখীর ভবনে
 
কাঁচড়া খুদের জাউ রান্ধিও যতনে।
 
রান্ধিও নালিতা শাক হাঁড়ি দুই তিন
 
লবণের তরে চারি কড়া কর ঋণ।
 
সখীর উপরে দেহ তন্ডুলের ভার
 
তোমার বদলে আমি করিব পসার।
 
গোধিকা রাখ্যাছি বান্ধি দিয়া জাল-দড়া
 
ছাল উতারিয়া প্রিয়ে কর শিক-পোড়া।<poem></blockquote>
ফুল্লরা ঘরে ফিরলে, দেবী এক সুন্দরী যুবতীর রূপে ফুল্লরাকে দেখা দিলেন। ফুল্লরার প্রশ্নের উত্তরে দেবী জানালেন ফুল্লরার স্বামীই তাঁকে এখানে এনেছেন এবং তিনি এই গৃহেই কিছুদিন বসবাস করতে চান।<blockquote<poem>
<poem></blockquote>
ইলাবৃত দেশে ঘর জাতিতে ব্রাহ্মণী
 
শিশুকাল হৈতে আমি ভ্রমি একাকিনী।
 
বন্দ্যবংশে জন্ম স্বামী বাপেরা ঘোষাল
 
সতা সাথে গৃহে বাস বিষম জঞ্জাল।
 
তুমি গো ফুল্লরা যদি দেহ অনুমতি
 
এই স্থানে কথ দিন করিব বসতি।
 
হেন বাক্য হৈল যদি অভয়ার তুন্ডে
 
পর্বত ভাঙিয়া পড়ে ফুল্লরার মুন্ডে
 
হৃদে বিষ মুখে মধু জিজ্ঞাসে ফুল্লরা
 
ক্ষুধা তৃষ্ণা দূরে গেল রন্ধনের ত্বরা।</blockquote>
<poem></blockquote>
দেবীকে তাড়াতে ফুল্লরা নিজের বারমাসের দুঃখকাহিনী বিবৃত করলেন, তবু দেবী অটল। শেষ পর্যন্ত ফুল্লরা ছুটলেন হাটে, স্বামীর সন্ধানে। উভয়ে গৃহে ফেরার পর দেবীর অনুগ্রহে কালকেতু ধনী হয়ে পশু শিকার ত্যাগ করলেন। বনের পশুরাও নিশ্চিন্ত হল। দেবীর আশীর্বাদে ধনলাভ করে কালকেতু বন কেটে গুজরাট নগর পত্তন করলেন। গুজরাট নগরে নবাগতদের মধ্যে ছিল এক প্রতারক, ভাঁড়ু দত্ত। প্রথমে কালকেতু তাকে বিশ্বাস করলেও, প্রজাদের প্রতি অত্যাচার করায় তাকে তাড়িয়ে দেন। ভাঁড়ু দত্ত কলিঙ্গের রাজার কাছে গিয়ে তাঁকে কালকেতুর বিরুদ্ধে প্র্ররোচিত করে। কলিঙ্গের সেনাপতি গুজরাট আক্রমণ করে কালকেতুকে বন্দী করেন। কিন্তু দেবীর কৃপায় কালকেতু শীঘ্রই মুক্ত হন। কাল পূর্ণ হলে কালকেতু ও ফুল্লরা স্বর্গে ফিরে যান।<ref name="sen"/>
 
৪০ ⟶ ৫৭ নং লাইন:
== মুকুন্দের চণ্ডীমঙ্গলের সমালোচনা==
১৪৬৬ [[শকাব্দ|শকাব্দে]] (১৫৪৪ সালে) লেখা মুকুন্দের চণ্ডীমঙ্গলের অধিকাংশ ভনিতায় ''অভয়ামঙ্গল'' নামে কাব্যটির উল্লেখ পাওয়া যায়। গ্রন্থের ছত্রসংখ্যা প্রায় বিশ হাজার। মুকুন্দের গ্রন্থের এই গ্রন্থের তিনটি খণ্ডঃ দেবখণ্ড, আখেটিকখণ্ড ও বণিকখণ্ড। গ্রন্থটিতে মুকুন্দের "কবিত্বের বিবরণ" অর্থাত আত্মকথা অংশটির দুটি পৃথক রূপ বিভিন্ন পুঁথিতে পাওয়া যায়।
 
<br/>যদি এমন কোন গ্রন্থের নাম করতে হয় যাতে আধুনিক কালের, উপন্যাসের,রস কিছু পরিমাণে মেলে যেমন- নিপুণ পর্যবক্ষেণ, সহৃদয়তা, জীবনে আস্থা, ব্যাপক অভিজ্ঞতা সবই এতে যথোচিত পরিমাণে বর্তমান।
যদি এমন কোন গ্রন্থের নাম করতে হয় যাতে আধুনিক কালের, উপন্যাসের,রস কিছু পরিমাণে মেলে যেমন- নিপুণ পর্যবক্ষেণ, সহৃদয়তা, জীবনে আস্থা, ব্যাপক অভিজ্ঞতা সবই এতে যথোচিত পরিমাণে বর্তমান। মুকুন্দরাম শুদ্ধাচারী বামুন-পন্ডিতঘরের ছেলে, আজন্ম দেববিগ্রহ সেবক।কিন্তুসেবক। কিন্তু তাঁর সহানুভূতি থেকে কেউই বঞ্চিত হয়নি - না বনের তুচ্ছতম পশু না জনপদের দুর্গততম মানুষ।সংস্কৃত অলঙ্কার প্রয়োগের পাশাপাশি লোক-ব্যবহার, ছেলেভোলানো, ছেলেখেলা, মেয়েলি ক্রিয়াকান্ড, ঘরকন্নার ব্যবস্থা, রান্নাবাড়া ইত্যাদি অনপেক্ষিত সামাজিক ও সাংসারিক ব্যাপারেও বিস্ময়কর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।<ref name="sen"/>
== পাদটীকা ==
{{reflist}}