মহাভারত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

[অপরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Debjitpaul10 (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Debjitpaul10 (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১৯ নং লাইন:
=== গ্রন্থ প্রচার ===
[[File:Snakesacrifice.jpg|thumb|236x236px|মহারাজ [[জন্মেজয়|জন্মেজয়ের]] সর্পযজ্ঞ]]
মহাভারত রচনা সম্পূর্ণ হলে ব্যাসদেব এই কাব্য তাঁর পুত্র [[শুকদেব]]কে দিয়ে অধ্যয়ন করান, পরে শিষ্য পরম্পরায় গ্রন্থটি [[বৈশম্পায়ন]], পৈল, [[জৈমিনি]], অসিত-দেবল প্রভৃতি ঋষি দ্বারা পঠিত হয়। শুকদেব এই গ্রন্থটির কাহিনী গন্ধর্ব, যক্ষ ও [[অসুর|রাক্ষস]]দের মধ্যে, দেবর্ষি [[নারদ]] দেবতাদের মধ্যে ও অসিত-দেবল পিতৃদের মধ্যে প্রচারিত করেন।<ref>মহাভারত-গীতা প্রেস গোরখ্‌পুর, আদি পর্ব অধ্যায় ১, শ্লোক-১০৩-১০৭</ref> বৈশম্পায়ন এই কাহিনীটি প্রথম মনুষ্যদের মধ্যে 'ভারত' নামে প্রচার করেন। [[অর্জুন|অর্জুনের]] প্রপৌত্র মহারাজ [[জন্মেজয়|জন্মেজয়ে]]র মহাযজ্ঞে ঋষি বৈশম্পায়ন ঐ কাহিনী জন্মেজয় সহ সৌতি এবং উপস্থিত মুনি-ঋষিদের শোনান।<ref>মহাভারত-গীতা প্রেস গোরখ্‌পুর, আদি পর্ব অধ্যায় ১, শ্লোক-১০৩-১০৭</ref>
 
একদা সম্রাট [[পরীক্ষিৎ]] তক্ষক নাগের দংশনে মারা গেলে ক্রোধের বশে পরীক্ষিৎপুত্র [[জনমেজয়]] বিশ্বের সমস্ত সাপেদের ধ্বংস করবার পণ নিয়ে সর্পযজ্ঞের আয়োজন করেন। কিন্তু তক্ষকের অনুরোধে আস্তিক মুনি এই যজ্ঞ পণ্ড করে দেন। জনমেজয়ের অনুতাপ হয় ও পাপ খণ্ডন করতে [[অশ্বমেধ যজ্ঞ|অশ্বমেধ যজ্ঞের]] আয়োজন করেন। কিন্তু, কলিযুগে অশ্বমেধ যজ্ঞ করা অনর্থের কারণ মনে করে [[ইন্দ্র|দেবরাজ ইন্দ্র]] ছল করে এই যজ্ঞও নষ্ট করেন ও জনমেজয়ের ওপর ব্রাহ্মণহত্যার পাপ পড়ে। এই মহাপাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে তিনি [[ব্যাসদেব|ব্যাসদেবের]] পরামর্শ মতো ঋষি বৈশম্পায়নের কাছ থেকে পবিত্র মহাভারতের কাহিনি শ্রবণ করে পাপমুক্ত হন। পরে ঐ যজ্ঞে উপস্থিত গল্পকথক [[সৌতি|উগ্রশ্রবা সৌতি]] কাহিনিটি শুনে তা নৈমিষারণ্যে যজ্ঞরত শৌনক ও অন্যান্য মুনিদের শোনান। এইরূপে মনুষ্যসমাজে মহাভারতের কাহিনী প্রচারিত হয়।<ref>'''কাশীদাসী মহাভারত''', দেব সাহিত্য কুটীর।</ref>
 
=== বিশালতা ===
মহাভারতের বিশালতা তথা দার্শনিক গূঢ়তা কেবল [[ভারত মহাসাগর|ভারতের]] [[পুরাণ|পৌরাণিক আখ্যান]]ই নয়, বরং এটিকে সমগ্র [[হিন্দু ধর্ম]] এবং [[বেদ|বৈদিক দর্শন]] ও সাহিত্যের সারসংক্ষেপ বলা যেতে পারে। 'মহাভারত' নামটির উৎপত্তি প্রসঙ্গে একটি আখ্যান প্রচলিত যে, [[দেবতা]]রা তুলাযন্ত্রের একদিকে চারটি [[বেদ]] রাখেন ও অন্যদিকে বৈশম্পায়ন প্রচারিত ভারত গ্রন্থটি রাখলে দেখা যায় ভারত গ্রন্থটির ভার চারটি বেদের চেয়েও অনেক বেশি। সেকারণে ভারত গ্রন্থের বিশালতা দেখে দেবগণ ও ঋষিগণ এর নামকরণ করলেন 'মহাভারত'। আবার একে ''''পঞ্চম বেদ'''<nowiki/>'ও বলা হয়। জগতের তাবৎ শ্রেষ্ঠ বস্তুর সঙ্গে একে তুলনা করে বলা হয়েছে: "'''মহত্ত্বাদ্ ভারতবত্ত্বাচ্চ মহাভারতমুচ্যতে।'''"<ref>'''কাশীদাসী মহাভারত''', দেব সাহিত্য কুটীর, পৃষ্ঠা-১২১৮, পরিশিষ্ট-মহাভারত পরিচয়।</ref>
 
[[বাংলা ভাষা|বাংলাতেও]] মহাভারতের বিশালতা সম্পর্কিত একটি সুপ্রচলিত প্রবাদ রয়েছে: {{cquote2|'''যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে।''' }}
১৬০ নং লাইন:
 
(মহাভারত আদিপর্ব ৮১/১৩)
</ref> এই রূপে সমগ্র [[বেদ|বৈদিক সাহিত্য]] তথাকথিত গুরু-শিষ্য পরম্পরায় মৌখিক রূপে সংরক্ষিত থাকত। এরপর সময়ের সাথে সাথে বৈদিক যুগের পতন হয় এবং সেই প্রাচীন গুরু-শিষ্য পরম্পরায় স্মরণ করার রীতি লুপ্ত হয়, তখন সেই সমস্ত সাহিত্যগুলিকে লিখিত রূপে সংরক্ষণের রীতি প্রচলিত হল। বর্তমান পণ্ডিতগণের ধারণা যে, মহাভারত প্রাচীন অবস্থা থেকে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছানো কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। গবেষকদের মতে, মহাভারতের রচনাকাল ৩টি প্রারম্ভিক স্তরে বিভক্ত।<ref name=":0">'''রামায়ণ-মহাভারত: কাল, ইতিহাস, সিদ্ধান্ত''' -লেখক বাসুদেব পোদ্দার</ref> এই ৩ স্তরের সময়কাল নিম্নরূপ:
* '''৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ'''<ref name=":1">ওমিলোস মেলিটন কালচারাল ইন্সটিটিউট</ref>
ক. সর্বপ্রথমে [[ব্যাসদেব]] ১০০ পর্ব ও এক লাখ শ্লোক সমন্বিত 'জয়' গ্রন্থ রচনা করেন, যা পরবর্তী কালে মহাভারত নামে প্রসিদ্ধ হয়।
 
খ. পরে ব্যাস প্রচারিত ঐ কাহিনীটিকে তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়ন [[ জনমেজয়|জনমেজয়ের]] মহা যজ্ঞে জনমেজয় সহ [[সৌতি]] অন্যান্য মুনিদের শোনান। এই সময় গ্রন্থটির নাম হয় 'ভারত'।
 
* '''২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ'''<ref name=":1" />
 
তৃতীয় বার বৈশম্পায়ন কথিত ভারত কাহিনীটিকে [[সৌতি]] ১৮টি খণ্ডে বিভক্ত করেন ও নৈমিষারণ্যে স্থিত [[শৌনক]] ও অন্যান্য মুনিদের গল্পের আকারে শোনান। সৌতির এই গল্পটিই 'মহাভারত' নামে সমগ্র বিশ্বে প্রচারিত হয়।<ref name=":2">'''রামায়ণ-মহাভারত: কাল, ইতিহাস, সিদ্ধান্ত''' -লেখক বাসুদেব পোদ্দার, পৃষ্ঠা ১৯৭</ref>
 
* '''১২০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ'''<ref name=":1" />
 
পরে লিখন পদ্ধতির উন্নতি হলে সৌতি প্রচারিত এই প্রসিদ্ধ মহাভারতের কাহিনী [[পাণ্ডুলিপি]] বা পুঁথিতে [[ব্রাহ্মী]] ([[ব্রাহ্মী লিপি পরিবার]]) কিংবা [[সংস্কৃত|সংস্কৃতে]] লিখিত হয়। এর পরও নানা মুনি ও পণ্ডিতরা নিজস্ব শৈলীতে মহাভারতের মূল কাহিনীর সাথে আরও অনেক সমসাময়িক কাহিনীর সংযোজন করেন।
১৭৮ নং লাইন:
* '''১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ'''
 
মহাভারতে [[গুপ্ত সাম্রাজ্য|গুপ্ত]] কিংবা [[মৌর্য রাজবংশ|মৌর্য]] সাম্রাজ্য (১০০০-৭০০ খ্রিঃপূঃ) অথবা [[জৈন ধর্ম|জৈন]] বা [[বৌদ্ধ ধর্ম|বৌদ্ধ]] ধর্মের (৭০০-২০০ খ্রিঃপূঃ) কোনো উল্লেখ নেই। তাছাড়া শতপথ ব্রাহ্মণ<ref>দ্য মহাভারত-ই ক্রিটিজ়্ম, সি.ভি. বেদ্যা, পৃষ্ঠা ৭১</ref> (১১০০ খ্রিঃপূঃ) ও ছান্দোগ্য [[উপনিষদ্‌|উপনিষদে]] (১০০০ খ্রিঃপূঃ) মহাভারতের কিছু প্রসঙ্গ পাওয়া যায়। অর্থাৎ মহাভারত ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের অনেক আগেই লেখা হয়েছিল।<ref name=":3">महाभारत और सरस्वती सिंधु सभ्यता লেখক সুভাষ কক</ref>
 
* '''৬০০-৪০০খ্রিস্টপূর্বাব্দ'''
 
[[পাণিনি]] রচিত '''[[অষ্টাধ্যায়ী|অষ্টাধ্যায়ীতে]]''' (৬০০-৪০০ খ্রিঃপূঃ) মহাভারতের কাহিনী ও কৃষ্ণার্জুনের কিছু প্রসঙ্গ রয়েছে। অতএব মহাভারত যে পাণিনির যুগের অনেক আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।<ref name=":0" /><ref name=":3" />
 
* '''১ম শতাব্দী'''
 
প্রথম শতাব্দীতে [[ইউনানি|ইউনানের]] রাজদূত ডিও ক্রাইসোস্টমেরক্রাইজ়োস্টমের (''Dio Chrysostom'') বর্ণনায় জানা যায়, তৎকালীন [[দক্ষিণ এশিয়া|দক্ষিণ এশীয়]] লোকেদের কাছে এক লক্ষ শ্লোক যুক্ত একটি মহাগ্রন্থ ছিল, অর্থাৎ সেই সময়ও মহাভারতে এক লক্ষ শ্লোকই ছিল।<ref name=":2" />
 
[[সংস্কৃত|সংস্কৃতের]] সর্বাপেক্ষা প্রাচীন একটি [[পাণ্ডুলিপি|পাণ্ডুলিপিতে]] (১ম শতাব্দী) মহাভারতের ১৮টি পর্বের একটি অনুক্রমণিকা পাওয়া গিয়েছে, অর্থাৎ সেই কালে ১৮ পর্ব যুক্ত মহাভারতের কাহিনীই প্রচলিত ছিল, যদিও ব্যাসদেব ১০০টি পর্ব যুক্ত আদি মহাভারত রচনা করেন, যা পরে ১৮টি পর্বে বিবর্তিত হয়।
১৯২ নং লাইন:
=== পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ ===
* '''সরস্বতী নদী'''
মহাভারতে বৈদিক যুগের পশ্চিমবাহিনী সরস্বতী নদীর বর্ণনা বহু জায়গায় করা হয়েছে, যথা – সরস্বতী নদীর তীর বরাবর [[প্লক্ষ]] বৃক্ষ (প্লক্ষ প্রস্রবণ, [[যমুনোত্রী]]র নিকট) থেকে প্রভাস তীর্থ (কচ্ছের রণ অঞ্চল, [[গুজরাত]]) পর্যন্ত [[বলরাম|বলরামের]] তীর্থযাত্রার কথাও মহাভারতে রয়েছে।<ref>মহাভারত-গীতা প্রেস গোরখ্‌পুর, শল্য পর্ব, অধ্যায় ৩৪-৫৪</ref>
 
কিছু ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, বর্তমানের শুষ্ক ঘগ্গর-হাকরা নদীই বাস্তবে বৈদিক যুগের সরস্বতী নদী, যেটি ৫০০০-৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পশ্চিম ভারতে বইত এবং আনুমানিক ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভূ-আলোড়ন জনিত কারণে শুকিয়ে যায়। বৈদিক যুগে লিখিত [[ঋগ্বেদ|ঋগ্বেদে]] সরস্বতী নদীকে ‘নদীতমা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। অর্থাৎ ঋগ্বৈদিক সভ্যতায় সরস্বতী নদীই ছিল সর্বপ্রধান নদী, [[গঙ্গা নদী|গঙ্গা]] নয়।
 
ভূ-আলোড়নে সরস্বতী নদীর মূল প্রবাহ যমুনার সাথে মিশে যায়, যেমন ‘[[ত্রিবেণী সংগম]]’কে [[গঙ্গা নদী|গঙ্গা]], [[যমুনা]] ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থল বলা হয়।<ref>জ়ি নিউজ়-राजस्थान की कहानी</ref> পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে ও [[পুরাণ|পুরাণে]] এও বলা হয়েছে, পরীক্ষিতের ২৮ প্রজন্মের রাজত্বের সময় গঙ্গার বিধ্বংসী বন্যায় [[হস্তিনাপুর]] নগরী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং পরবর্তী রাজারা কৌশাম্বী নগরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
 
মহাভারতে বর্ণিত হয়েছে, সরস্বতী নদী বিনাশ্ন নামক তীর্থে শুকিয়ে যায়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ম্লেচ্ছদের সাথে বিদ্বেষের কারণে সরস্বতী নদী ম্লেচ্ছ প্রদেশে যাত্রা বন্ধ করে দেন।
২০৭ নং লাইন:
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
মহাভারতের মূল বৃত্তান্ত হল চন্দ্রবংশীয় দুই পরিবার [[পাণ্ডব]] ও [[কৌরব]] তথা [[ধর্ম]] ও অধর্ম পক্ষের মধ্যে মহাসংঘর্ষ। পঞ্চপাণ্ডব ও শতকৌরবের মধ্যে ভূমির অধিকার সম্পর্কিত যে যুদ্ধ হয়, তা [[কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ]] নামে পরিচিত। এই মহাযুদ্ধের সময়কাল সম্পর্কে বিভিন্ন ভারতীয় ও পশ্চিমী গবেষকদের মত বিভিন্ন। যথা –
* বিশ্বখ্যাত ভারতীয় গণিতজ্ঞ ও মহাকাশবিদ [[বরাহমিহির|বরাহমিহিরের]] সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাভারতের যুদ্ধ ২৪৪৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সংঘটিত হয়।<ref>এ.ডি. পুশলকর, পৃ.272</ref>
* বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় গণিতজ্ঞ [[আর্যভট্ট|আর্যভট্টের]] অনুসারে এই যুদ্ধের তিথি হল ১৮ই ফেব্রুয়ারী, ৩১০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।<ref>এজ অফ ভারত ওয়ার, জি সি অগ্রবাল ও কে এল বর্মা, পৃ-81</ref>
* [[চালুক্য সাম্রাজ্য|চালুক্য]] রাজবংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট [[২য় পুলকেশী|২য় পুলকেশীর]] [[আইহোল প্রশস্তি|আইহোল প্রশস্তিতে]] উল্লিখিত হয়েছে, এই যুদ্ধের পর ৩৬৩৫ বর্ষ কেটে গেছে, সেই সাপেক্ষে এই যুদ্ধ ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সংঘটিত হয়।
* পুরাণের বিভিন্ন রাজবংশের সাথে [[চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য|চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের]] তুলনা করলে সময়কালটি দাঁড়ায় ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ, যদিও কিছু বিজ্ঞানীদের মতে যুদ্ধ হয়েছিল ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, কারণ ইউনানের রাজদূত [[মেগাস্থিনিস|মেগাস্থিনিসের]] লেখা ‘[[ইন্ডিকা]]’য় উল্লিখিত রাজা ‘চন্দ্রগুপ্ত’ [[গুপ্ত সাম্রাজ্য|গুপ্ত বংশের]] সম্রাট [[চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য|চন্দ্রগুপ্ত]]ও হতে পারে।
৩৬১ নং লাইন:
[[বাংলা ভাষা|বাংলা ভাষায়]] মহাভারত সর্বপ্রথম কে অনুবাদ করেন, তা বলা জটিল। তবে, বাংলাতে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও সুপ্রচলিত যে অনুবাদটি রয়েছে, তা সপ্তদশ শতকে ‘[[কাশীরাম দাস|''কাশীরাম দাস'']]’ নামক এক কবি ‘পয়ার কাব্য ছন্দে’ রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়।
 
১৬শ শতকের শেষার্ধে কাশীরাম দাস বর্তমান [[বর্ধমান জেলা|বর্ধমান জেলার]] কাটোয়া মহকুমার অধীনে ইন্দ্রাণী পরগনার অন্তর্গত সিঙ্গী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।<ref>'''কাশীদাসী মহাভারত''', দেব সাহিত্য কুটীর, পৃষ্ঠা-১২২৪, পরিশিষ্ট-কাশীরাম দাসের পরিচয়।</ref> তাঁর পিতার নাম ছিল কমলাকান্ত। কাব্য রচনায় তাঁর পরিবারের সুনাম ছিল। তাঁর জ্যেষ্ঠভ্রাতা কৃষ্ণদাস ‘[[শ্রীকৃষ্ণবিলাস]]’ কাব্য রচনা করেন ও কনিষ্ঠ ভ্রাতা গদাধর ‘[[জগন্নাথমঙ্গল]]’ কাব্য রচনা করেন। কাশীরাম ছিলেন দেব-উপাধিধারী কায়স্থ। সম্ভবত তিনি সপ্তদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা মহাভারত রচনা শুরু করেন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কাহিনির বিরাট পর্ব অবধি লিখবার পর তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র নন্দরাম সম্ভবত কাব্যের বাকি অংশ সম্পূর্ণ করেন। কাশীরাম মেদিনীপুর জেলার আওয়াসগড়ের রাজার শাসনাধীন স্থানে এক পাঠশালায় শিক্ষকতা করতেন। কাশীরাম [[সংস্কৃত ভাষা|সংস্কৃত]] ও কাব্যশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন, কিন্তু তিনি মূল সংস্কৃত মহাভারতের যথাযথ অনুবাদ না করে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা মূল কাহিনিকে কিছুটা বদলে রচনা করেছেন। [[চৈতন্য মহাপ্রভু|চৈতন্য]]-পরবর্তী যুগে রচিত এই গ্রন্থে বৈষ্ণব কাশীরামের ভক্তিবাদের প্রাধান্য স্থানে স্থানে পরিলক্ষিত হয়েছে। সম্পূর্ণ গ্রন্থটি পয়ার চতুর্দশপদী ও ত্রিপদী ছন্দে লিখিত হয়েছে।<ref>'''কাশীদাসী মহাভারত''', দেব সাহিত্য কুটীর, পৃষ্ঠা ১২২৪-১২২৯, পরিশিষ্ট-কাশীরাম দাসের পরিচয়-কাশীরামের কাব্য বৈশিষ্ট্য।</ref> গ্রন্থটিতে কাশীরামের একটি জনপ্রিয় ভণিতা (পদের শেষে কবির নামযুক্ত পঙ্‌ক্তি) পাওয়া যায়: {{cquote2|'''মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।'''<br />'''কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান্॥'''}}
 
কাশীরাম রচিত এই মহাভারকটি ‘কাশীদাসী‘[[কাশীদাসী মহাভারত’মহাভারত]]’ নামে বাঙালীর ঘরে ঘরে সমাদৃত। এছাড়াও [[কালীপ্রসন্ন সিংহ|কালীপ্রসন্ন সিংহের]] লেখা মহাভারতও বাংলায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
* '''অন্যান্য অনুবাদ'''
[[ইংরেজি ভাষা|ইংরেজি ভাষায়]] মহাভারত প্রথম অনুবাদ করেন কিশোরীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, মুনশিরাম মনোহরলাল প্রকাশনীতে ১৮৮৩ থেকে ১৮৯৬ সালের মধ্যে। গীতা প্রেসের পক্ষ থেকে পণ্ডিত রামনারায়ণদত্ত শাস্ত্রী পাণ্ডে রাম [[হিন্দি ভাষা|হিন্দী ভাষায়]] মহাভারতের অনুবাদ করেছেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সম্রাট [[আকবর|আকবরের]] পৃষ্ঠপোষকতায় ফয়জ়ি ও অব্দ্ অল-কাদীর বদাউনি [[ফার্সি ভাষা|ফারসি ভাষায়]] মহাভারত অনুবাদ করেন, যার নামকরণ করা হয় ‘রজ়্‌ম্নামেহ্’। [[তামিল ভাষা|তামিল ভাষায়]] মহাভারতের অনুবাদ করেছেন মানালুর রঙ্গচরিয়ার।
৩৭৩ নং লাইন:
 
=== চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন ===
ভারতে ১৯২০ সালের আগেও মহাভারত নিয়ে প্রচুর চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ১৯৭৭ সালে দানবীর সূর কর্ণ নামে এক তেলুগু ছবি তৈরী করেন এন. টি. রাম রাও। ১৯৮০ সালে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত কলিযুগ ছবিটিও মহাভারতের কাহিনির ভিত্তিতে নির্মিত হয়। ২০১০ সালে প্রকাশ ঝাঁ মহাভারতের কাহিনির ওপর আংশিক ভিত্তিতে তৈরী করেন রাজনীতি ছবিটি। ২০১৩ সালের অ্যানিমেটেড ফিল্‌মফিল্ম ‘মহাভারত’ ভারতের সর্বাপেক্ষা ব্যয়বহুল অ্যানিমেটেড ছবি হিসেবে উৎকর্ষ লাভ করেছে।
 
১৯৮০ সালে রবি চোপড়ার পরিচালনায় মহাভারত ধারাবাহিক ভারতের দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হয়।
 
বিনোদন জগতে মহাভারতের কিছু অসম্পূর্ণ প্রকল্প রয়ে গেছে রাজকুমার সন্তোষীর ছবিতে ও সত্যজিৎ রায়ের পরিকল্পনায়।
 
== সামাজিক প্রভাব ==
[[ভগবদ্গীতা|ভগবদ্গীতায়]] শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এক ক্ষত্রিয় ও যোদ্ধার পালনীয় কর্তব্যগুলি ব্যাখ্যা করেছেন, বেদান্ত দর্শন, কর্ম-জ্ঞান-ভক্তি ইত্যাদি নানা যোগের স্বরূপ উদাহরণ সহ বিবৃত করেছেন। এই কারণেই গীতাকে [[হিন্দু দর্শন|হিন্দু দর্শনের]] সংক্ষিপ্তসার ও জীবনে চলার এক স্বয়ংসম্পূর্ণ নির্দেশিকা হিসেবে সমাদৃত করা হয়। আধুনিক কালে [[মহাত্মা গাঁধী]], [[স্বামী বিবেকানন্দ]], [[বাল গঙ্গাধর তিলক]] ইত্যাদি মহান ব্যক্তিরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জনগণকে জাগরিত করতে বহুবার গীতার শ্লোকগুলিকে উদ্ধৃত করে মানব আদর্শ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
 
== পাদটীকা ==