শামসুল হক (রাজনীতিবিদ): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে, কোন সমস্যা?
সামসুল হক পাতা থেকে আনীত হলো
১ নং লাইন:
{{Infobox person
|name= শামসুল হক
| image = Shamsul Haque.jpg
| office =
| order =
| term_start =
| term_end =
| succeeding =
| successor =
| birth_date = [[ফেব্রুয়ারি ১|১ ফেব্রুয়ারি]], [[১৯১৮]]
| birth_place = [[দেলদুয়ার]], [[টাঙ্গাইল]], [[ব্রিটিশ ভারত]] (এখন [[বাংলাদেশ]])
| birth_place =
|death_date = [[১৯৬৫]]
|death_place =
| known = রাজনীতিবিদ
| occupation = =
| birth name =
| party = [[পাকিস্তান মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগ]] পরবর্তীতে [[আওয়ামী লীগ]]
| party =
| spouse =
| children =
| residence = =
| citizenship = {{BAN}}
| nationality = বাংলাদেশী =
| ethnicity = [[বাঙালি জাতি|বাঙালি]]
| profession =
| religion = [[মুসলিমইসলাম]]
| signature =
| website =
| footnotes =
}}
:''একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন [[শামসুল হক]]।''
 
'''শামসুল হক''' (জন্ম: [[১ ফেব্রুয়ারি]], [[১৯১৮]] - মৃত্যু: ১৯৬৫) একজন [[১৯৬৫বাঙালি জাতি|বাঙালি]]) একজন রাজনীতবিদ যাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল বিভাগ-পূর্ব ভারতবর্ষে এবং যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল [[বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ|আওয়ামী লীগের]] প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের পূর্বসূরী [[আওয়ামী মুসলিম লীগরে]]লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। <ref name=amardesh>দৈনিক আমার দেশ; ২৩ জুন, ২০০৭; প্রথম পাতা</ref> তিনি [[Constituent Assembly of Pakistan|পাকিস্তানের গণ পরিষদের]] সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৫০ সালের [[বাংলা ভাষা আন্দোলন|বাংলা ভাষা আন্দোলনের]] সময় [[বাংলা ভাষা|বাংলা ভাষার]] পক্ষে সংগ্রাম করেছেন। তিনি আওয়ামীলীগের প্রথম এবং তৃতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।<ref>{{cite web|url=http://www.albd.org/autoalbd/index.php?option=com_content&task=view&id=569&Itemid=1|title=Bangladesh Awami League, a pioneer in practicing democracy within party|date=July 23, 2009|publisher=Bangladesh Awami League|accessdate=31 October 2010}}</ref> পূর্ব পাকিস্থানের সরকার বিরোধী রাজনীতিতে তিনি ছিলেন প্রথম সারির নেতা। তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে কারামুক্তির পর ঘরোয়া ষড়যন্ত্রের পরিণতিতে আওয়ামী লীগ তাঁকে বহিষ্কার করে ; যার ফলশ্রুতিতে তিনি চিরকালের জন্য মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এই বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতার নাম ক্রমশ: বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার, তাঁর মস্তিস্ক বিকৃতি, নিখৌঁজ হওয়া এবং অকাল মৃত্যুর রহস্য অধ্যাবধিদীর্ঘকাল ধরে উন্মোচিত হয় নি। ১৯৬৪ সালে শামছুল হক হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন এবং ১৯৬৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ইন্তেকাল করেন। শামসুল হক গবেষণা পরিষদ অনেক খুঁজে মৃত্যুর ৪২ বছর পর ২০০৭ সালে [[কালিহাতি উপজেলা|কালিহাতি উপজেলার]] কদিম হামজানিতে মরহুমের কবর আবিস্কার করে।
 
১৯৫০ এবং ১৯৬০-এ বাংলা জাতীয়তাবাদ আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। সেই সময় ভারতের মধ্যে তিনি প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি মধ্যবৃত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও সাধারণ নির্বাচনে বিখ্যাত এবং উচু পরিবারের প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন। তিনি টাঙ্গাইলের জমিদার কুরুম খান পন্নীকে নির্বাচনে পরাজিত করতে সমগ্র ভারতে তার নাম ছড়িতে পড়ে। এই সময় রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারনা ছিল যে রাজনীতি কেবলমাত্র উচ্চ বংশ মর্যাদার কারও জন্যই প্রযোজ্য। এই জয়ের মধ্য দিতে এই ধারনার অবসান হয়, এবং এরই ক্রমধারায় সাধারণের অংশগ্রহনে "পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ" নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। এখানে আওয়ামী শব্দের অর্থ জনতা বা সাধারণ জনগণ। তাই বলা হয়ে থাকে যে তরুন নেতা সামসুল হকের প্রেরণ এবং জনপ্রিয়তা থেকেই আওয়ামী লীগ নামের রাজনৈতিক দলটি গঠিন করা হয়েছিল।
 
== জন্ম ==
[[টাঙ্গাইল]] জেলার [[দেলদুয়ার উপজেলা|দেলদুয়ার উপজেলায়]] এক নিভৃত গ্রাম মাইঠানে [[১৯১৮]] খ্রিস্টাব্দের [[ফেব্রুয়ারি ১|পহেলা ফেব্রুয়ারী]] শামসুল হক তার মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি একই উপজেলার টেউরিয়া গ্রামে।
 
== পাক-ভারত স্বাধীনতা পূর্ব রাজনীতি ==
[[১৯৪৩]] খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে [[আবুল হাশিম]] সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আবুল হাশিমের সাংগঠনিক শক্তির বলে [[১৯৪৪]] খ্রিস্টাব্দের আগস্টের মধ্যে পূর্ব বঙ্গে মুসলীম লীগের সভ্য সংখ্যা দাঁড়ায় দশ লক্ষে। [[১৯৪৪]] খ্রিস্টাব্দে আবুল হাশিম ঢাকায় চলে আসেন এবং ১৫০ নং মোগলটুলীতে [[এপ্রিল ৯|৯ এপ্রিল]] মুসলিম লীগ কর্মী-শিবির স্থাপন করেনকরেন।<ref name=Islam>ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছর- [[রফিকুল ইসলাম (অধ্যাপক)|রফিকুল ইসলাম]]</ref> এই কর্মী শিবিরের নেতৃত্বে ছিলেন শামসুল হক<ref name="Islam পৃ- ১২৮"/>। এই কর্মী শিবির হতেই পরবর্তীতে [[ছাত্রলীগ]] ও আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরে আওয়ামী লীগ) জন্ম লাভ করে।
 
শামসুল হকের নেতৃত্বেই এই কর্মী শিবির [[১৯৪৫]]-[[১৯৪৬|৪৬]] খ্রিস্টাব্দে পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগকে জনসাধারণের গণসংগঠনে পরিণত করে। মুসলিম লীগ [[১৯৪৫]] খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের নির্বাচনে পূর্ববঙ্গের মুসলিম লীগ মনোনীত প্রার্থীরা প্রায় সকলেই জয় লাভ করে। [[১৯৪৬]] খ্রিস্টাব্দের প্রাদেশিক আইন সভার নির্বাচনে মুসলিম লীগ শতকরা ৯৭ ভাগ আসনেই জয়লাভ করে<ref name="Islam পৃ- ১২৮"/>। তখন একমাত্র বাংলা ছাড়া ভারতের আর কোথাও কোন প্রদেশে মুসলিম লীগের একক সরকার ছিল না। বাংলায় মুসলিম লীগের মন্ত্রীসভা না থাকলে জিন্নাহ মুসলিম লীগকে ভারতের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন না এবং কংগ্রেসও ভারত বিভাগ মেনে নিতে পারত না<ref name="Islam পৃ- ১৩০"/>। এদিক দিয়ে বিবেচনায় পাকিস্তান সৃষ্টিতে শামসুল হকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান অনস্বীকার্য। এছাড়া ভারত বিভাগের সময় সিলেটে গণভোটে জামায়াতে উলামায়ে হিন্দের প্রবল বিরোধীতার মুখে ঐ কর্মী শিবিরের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই সিলেট পাকিস্তানভুক্ত হতে পেরেছিল<ref name="Islam পৃ- ১০১"/>।
 
== পূর্ব-পাকিস্তানের রাজনীতি ==
৪৪ ⟶ ৪৬ নং লাইন:
=== আওয়ামী মুসলিম লীগ ===
{{মূল নিবন্ধ|আওয়ামী লীগ}}
নতুন রাষ্ট্র [[পাকিস্তান|পাকিস্তানে]] পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী হন [[খাজা নাজিমুদ্দিন]] আর প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাংগঠনিক কমিটির দুই প্রধান সদস্য হলেন [[নুরুল আমীন]] ও [[ইউসুফ আলি চৌধুরী]] (ওরফে মোহন মিঞা) । তারা মুসলিম লীগকে তাদের পকেট প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেন। এর প্রতিবিধানের জন্যে [[১৯৪৮]] সালের জানুয়ারি মাসে ১৫০ নং মোগলটুলির অফিসে শামসুল হক, কামরুদ্দীন আহমদ, [[শেখ মুজিবুর রহমান]] ও [[খন্দকার মোশতাক আহমেদ]] এক কর্মী সম্মেলন আহ্ববান করেন। পরে আতাউর রহমান খান, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, মিসেস আনোয়ারা খাতুন, [[খন্দকার মোশতাক আহমেদ]] এর সমবায়ে গঠিত এক প্রতিনিধি দল মাওলানা আকরম খানের সাথে দেখা করেন মুসলিম লীগে সভ্য হবার রশিদ বই পাবার জন্যে; কিন্তু কোন লাভ হয় না। আতাউর রহমান খান ও আনোয়ারা খাতুন একই উদ্দেশ্যে [[করাচী]] গিয়ে মুসলিম লীগ সংগঠক [[চৌধুরী খালেকুজ্জামান|চৌধুরী খালেকুজ্জামানের]] সাথেও দেখা করেন কিন্তু কোন লাভ হয় না<ref name="Islam পৃ- ১৩১"/>। ফলে কর্মীরা নতুন সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করেন। [[১৯৪৯]] সালের [[জুন ২৩|২৩ জুন]] হতে [[জুন ২৪|২৪ জুন]] ঢাকা [[রোজ গার্ডেন|রোজ গার্ডেনে]] মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের বিরোধী রাজনৈতিক দল পূর্ব-পাকিস্তান [[আওয়ামী মুসলিম লীগ]] গঠিত হয়। [[আবদুল হামিদ খান ভাসানী|মাওলানা ভাসানী]] ছিলেন এই দলের সভাপতি। শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, [[শেখ মুজিবুর রহমান]] ও [[খন্দকার মোশতাক আহমেদ]] যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তিতে "আওয়ামী মুসলিম লীগ" নামটি থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশ [[আওয়ামী লীগ]] আত্মপ্রকাশ করে<ref name=amardesh/>।
 
=== উনপঞ্চাশের কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক উপনির্বাচন ===
[[১৯৪৯]] সালের মার্চ মাসে [[টাঙ্গাইল|টাঙ্গাইলের]] দক্ষিণ মুসলিম কেন্দ্র থেকে [[আবদুল হামিদ খান ভাসানী|মাওলানা ভাসানীর]] সদস্যপদ বাতিল ঘোষণা এবং উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। এই উপনির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী ছিলেন করটিয়ার জমিদার খুররম খান পন্নী। শামসুল হক তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করেন এবং বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনে শামসুল হকের পক্ষে নির্বাচনী অভিযান পরিচালনায় ছিলেন কামরুদ্দীন আহমদ, শওকত আলী, আজিজ আহমদ, শামসুদ্দোহা, মুহম্মদ আলমাস, মুহাম্মদ আউয়াল, হযরত আলী প্রমুখ। এদের অধিকাংশই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা। এই নির্বাচনেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগন প্রথম মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। এর পরে [[১৯৫৪]] সালের আগে [[নুরুল আমীন]] সরকার আর কোন নির্বাচন বা উপনির্বাচন দেয়নি<ref name="Islam পৃ- ১৩৮-১৩৯"/>।
 
=== ভাষা আন্দোলন ===
{{মূল নিবন্ধ|বাংলা ভাষা আন্দোলন}}
==== আটচল্লিশের রাষ্ট্রভাষার দাবি ====
[[১৯৪৮]] সালের [[মার্চ ১১|১১ মার্চ]] ছাত্ররা সারা প্রদেশে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়। সেদিন সচিবালয়, নীলক্ষেত ও হাইকোর্টের সামনে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ ঘটে। বহু ছাত্র আহত এবং গ্রেফতার হয়। যে সব নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সেদিন গ্রেফতার হন তাদের মাঝে ছিলেন শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ প্রমুখ। এই দিনের সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের সাথে চুক্তি করেন। চুক্তিপত্রটি সাক্ষরিত হবার আগে সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে শামসুল হক সহ বন্দি ছাত্রনেতাদের চুক্তিপত্রটি দেখিয়ে তাদের সম্মতি নিয়ে আসেন<ref name="Islam পৃ- ১৩২"/>।
 
==== বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি ====
[[১৯৫২]] সালের [[ফেব্রুয়ারি ২০|২০ ফেব্রুয়ারি]] ঢাকার নবাবপুরে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে [[ফেব্রুয়ারি ২১|২১ ফেব্রুয়ারি]] ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়<ref name="Islam পৃ- ১৪১"/>। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে ছিলেন না। [[ফেব্রুয়ারি ২১|২১ ফেব্রুয়ারি]] সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক আমতলায় ছাত্রদের সভার শুরুতে শামসুল হক সেখানে উপস্থিত হন। তিনি ছাত্রদের বোঝাতে চেষ্টা করেন, ঐ মুহূর্তে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে যাবার পরিণতি, যা ভবিষ্যত আন্দোলন ও অন্যান্য কাজের জন্য সুফল বয়ে আনবে না, আনতে পারে না। তাকে সমর্থন দেন খালেক নেওয়াজ খান, কাজী গোলাম মাহবুব ও সলিমুল্লাহ হলের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ছাত্র। কিন্তু ছাত্ররা শামসুল হকের কথা শোনেনি। এরপর গাজীউল হকের সভাপতিত্বে শুরু হয় আমতলার সভা। শামসুল হক তখনও চেষ্টা করেন ; কিন্তু ছাত্ররা সবাই ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে থাকায় শামসুল হকের কথা সেদিন কেউ শোনেনি।<ref name=Rafiq>একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস; আহমেদ রফিক</ref>। [[ফেব্রুয়ারি ২১|২১ ফেব্রুয়ারির]] পর সরকার মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, আবুল হাশিম, মনোরঞ্জন ধর, শামসুল হক সহ কয়েকজনকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে<ref name="Rafiq পৃ-৬৪"/>।
 
== নিখোঁজ জীবন ও মৃত্যু ==
[[১৯৫২]] সালে [[ভাষা আন্দোলন|ভাষা আন্দোলনে]] অংশগ্রহণের অভিযোগে শামসুল হক গ্রেফতার হন এবং কারাবরণ করেন। [[১৯৫৩]] সালে অত্যন্ত অসুস্থ শরীর ও মানসিক ব্যাধি নিয়ে কারামুক্তি লাভ করেন। আর সে সময়ই তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্ফ্কার করা হয়। তারপরের ইতিহাস খুবই করুণ ও বেদনাদায়ক। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মানসিক ভারসাম্যহীন শামসুল হককে পথে পথে ঘুরতে দেখেছেন অনেকেই। নতুন দল গঠনের জন্য পরিচিত অনেকের কাছে চাঁদাও চেয়েছেন। তারপর হঠাৎ তিনি নিখোঁজ হন। এই নেতার নিখোঁজ নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে রহস্যের সৃষ্টি হয়<ref name=amardesh/>।
 
মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় ১০ বছর পথে পথে ঘুরে বেরিয়েছেন তিনি। ১৯৬৫ সালে শামসুল হক হঠাৎ নিখোঁজ হন।১৯৬৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে জোকারচর গ্রামের মহিউদ্দিন আনসারী (তৎকালীন নামকরা কংগ্রেস নেতা) কলকাতা থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে বাড়ি ফেরার পথে কোনো এক স্থান থেকে শামসুল হককে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তখন শামসুল হক শারীরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ অসুস্থ ছিলেন। সে সময় গ্রামের হাতেগোনা কয়েকজন সচেতন ও শিক্ষিত লোক ছাড়া শামসুল হককে কেউ চিনতেন না। অসুস্থ শামসুল হক মহিউদ্দিন আনসারীর বাড়িতে ৭ দিন থাকার পর তার হঠাৎ খুব জ্বর হয়। স্থানীয় হোমিও চিকিৎসক শুকলাল দাস শামসুল হকের চিকিৎসা করেন। প্রচণ্ড জ্বরে শামসুল হক কোন এক শনিবার (মাসের নাম অজানা) দুপুর ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে মারা যান। সে দিন ছিল হাটের দিন। হাটে গইজা খলিফার দোকান থেকে ডা. আনসার আলী ও কংগ্রেস নেতা মহিউদ্দিন আনসারীর মেঝো ছেলে রইসউদ্দিন আনসারী কাফনের কাপড় কিনে আনেন। মহিউদ্দিন আনসারীর বাড়ির সামনের ছোট মাঠে (বর্তমানে পুকুর) জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শামসুল হককে কদিমহামজানি কবরস্থানে দাফন করা হয়<ref name=amardesh/>।
 
== মৃত্যু রহস্য উম্মোচন ==
কদিমহামজানি গ্রামের মৃত বাহাদুল্লা তালুকদারের ছেলে ডা. আনসার আলী তালুকদার (৭৫) [[২০০৭]] সালে টাঙ্গাইল শহরের বেপারী পাড়ায় তার মেয়ের বাসায় বেড়াতে যান। সেখানে রঙিন একটি ক্যালেন্ডারে শামসুল হকের ছবি দেখতে পান তিনি। ক্যালেন্ডারে শামসুল হকের ছবির পাশে বাংলা হরফে লেখা রয়েছে ‘আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা আন্দোলনের রহৃপকার’। ক্যালেন্ডারের ছবিটি মনোযোগ দিয়ে দেখার পর ডা. আনসার আলীর ৪২ বছর আগের কথা মনে পড়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে এলাকার প্রবীণ লোকদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। ডা. আনসার আলী তালুকদার নিজে তৎকালীন মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। রাজনীতি করার সুবাদে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন ও জানতেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে শামসুল হকের ভাষণও শুনেছেন। এরপর ঐ গ্রামের লোকজন সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়ট জানান। এর মাধ্যমেই প্রায় ৪২ বছর পর, বাংলাদেশের সবথেকে পুরাতন রাজনৈতিক দলটির প্রথম সাধারণ সম্পাদকের খবর মানুষ জানতে পারে<ref name=amardesh/>। ডা. আনসার আলী বলেন, মহিউদ্দিন আনসারী ছিলেন নামকরা একজন কংগ্রেস নেতা। অপরদিকে শামসুল হক ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সমঙাদক। সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী রাজনীতি করলেও তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ছিল। একজন কংগ্রেস নেতার বাড়িতে শামসুল হক মারা যাওয়ার ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক কলহ ও দ্বন্দের সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা করেই শামসুল হকের মৃত্যুর ঘটনা গোপন রাখা হয়। এরপর এক সময় বিষয়টি সবাই ভুলে যায়<ref name=amardesh/>। বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই রাজনীতিবিদের কথা পাওয়া যায় আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘আত্মস্মৃতি : সংগ্রাম ও জয়' বইতে। আবু জাফর শামসুদ্দীন লিখেছেন,
{{cquote|
<i>১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তাকে (শামসুল হককে) আটক করা হয়। তখন তিনি বিবাহিত, একটি কন্যা সন্তানের পিতা। স্ত্রী নরসিংদির সেকান্দার মাস্টার সাহেবের কন্যা আফিয়া খাতুন এম.এ কলেজের লেকচারার। জেলখানায় শামসুল হকের মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটে। নিজ পরিবারের প্রতি তাঁর মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। আফিয়া খাতুন তাঁকে ত্যাগ করেন। আফিয়া এখন পাকিস্তানে মিসেস আফিয়া দিল। শামসুল হক সম্পূর্ণ বিকৃতমসিত্মষ্ক অবস্থায় জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শামসুল হকের চিকিৎসায় আওয়ামী মুসলিম লীগ কোনো উদ্যোগ নিয়েছিল বলেও মনে পড়ে না। শামসুল হক ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন- কখনও বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে টাকা ধার চাইতেন, কেউ সমাদর করলে আহার করতেন। টাঙ্গাইলের ওয়ার্টারলু বিজয়ী শামসুল হকের মৃত্যু কোথায় কি অবস্থায় হলো তার কোনো বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে দেখিনি। শোকসভাও করেনি কোনো রাজনৈতিক দল বা অন্যরা। অথচ এই শামসুল হক একদিন ছিলেন বাংলার তরুণ মুসলিম ছাত্রসমাজের প্রিয় নেতা- ১৯৫২ সালেও ভাষাসংগ্রামী এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।<ref>সংগ্রাম ও জয়: আবু জাফর শামসুদ্দীন, পৃ : ২৬৩-২৬৪</ref>}}
 
== তথ্যসূত্র ==
== সূত্র ==
{{reflist}}
<references/>
 
{{অসম্পূর্ণ}}
 
== বহিঃসংযোগ ==
{{AwamiGS}}
{{Persondata <!-- Metadata: see [[Wikipedia:Persondata]]. -->
| party NAME =Huq, Shamsul
| ALTERNATIVE NAMES =
| SHORT DESCRIPTION =
| DATE OF BIRTH =
| PLACE OF BIRTH =
| DATE OF DEATH =
| PLACE OF DEATH =
}}
{{DEFAULTSORT:Huq, Shamsul}}
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি রাজনীতিবিদ]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ]]