কান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা
119.30.32.54-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে Najmul rahman-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
৫ নং লাইন:
এটি মানদেহের একটি অঙ্গ, যা মাথার দুই সাইটে অবস্থিত। এর দ্বারা মানুষ শ্রবণ করে।
[[বিষয়শ্রেণী:অঙ্গ]]
 
কানের অসুখ:
 
নাক কান ও গলা শরীরের এই তিনটি অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে। সাধারণ হাঁচি-সর্দি থেকে শুরু করে গলার ক্যান্সার সবই রয়েছে এই তালিকায়। স্বল্পপরিসরে সেইসব রোগের কয়েকটি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হল।
কানপাকা রোগঃ  কানের রোগগুলোর অন্যতম। কান পাকা রোগ দুই ধরনের। একটি হচ্ছে নিরাপদ ধরনের, অন্যটি মারাত্মক ধরনের। নিরাপদ ধরনের কানপাকা রোগে কান থেকে কানের পর্দা ছিদ্র থাকে। কান দিয়ে পুঁজ পড়ে। কানেব্যথা হয়, কান চুলকায়, কানে কম শোনা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ওষুধ ব্যবহার করে ও উপদেশ মেনে চলে রোগ নিরাময় করা যায়। তবে এতে কানের পর্দা জোড়া লাগেনা। তবে অপারেশন করে কানের পর্দা জোড়া লাগানো যায়। মারাত্মক ধরনের কানপাকা রোগে কান দিয়ে সবসময়েই একটু করে কষের মত ঝরে। কানের এই কষ পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা এই দুর্গন্ধ থেকেই রোগটির ধরন বুঝতে পারেন। মারাত্মক ধরনের কানপাকা রোগে অপারেশনই হচ্ছে প্রকৃত চিকিৎসা। উভয় ধরনের কানপাকা রোগ জটিল হয়ে কানের পুঁজ মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। এ ধরনের জটিলতায় কানে অপারেশন লাগে। অনেক ক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য এই অপারেশন করতে হয়। কান পাকা রোগ নিয়ে কখনোই হেলা ফেলা করা উচিত নয়।
মধ্যকর্ণে প্রদাহঃ এই সমস্যা শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। তবে বড়দেরও হয়ে থাকে। সাধারণত উর্ধ্বশ্বাসনালীর প্রদাহ, টনসিলের ইনফেকশন, এডিনয়েড নামক গুচ্ছ লসিকা গ্রন্থির বৃদ্ধি ইত্যাদি থেকে এই ইনফেকশন হয়ে থাকে। এই রোগে কানে বেশ ব্যথা হয়, কান বন্ধ মনে হয়। সঠিক সময়ে এই রোগের চিকিৎসা না করলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে রোগটি কান পাকা রোগে রূপ নিতে পারে। এন্টিবায়োটিক ও নাকের ড্রপসহ অন্যান্য ওষুধ হচ্ছে এই রোগের চিকিৎসা।
মধ্যকর্ণে পানির মতো তরল জমাঃ  এই রোগের কারণও উপসর্গ অনেকটা মধ্যকর্ণে প্রদাহের মতই । তবে উপসর্গসমূহের তীব্রতা অনেক কম থাকে। সাধারণ ওষুধেই এ রোগ সারে। অনেক সময় ছোট্ট অপারেশন করে মধ্যকর্ণে জমে থাকা পানি বের করে দিতে হয়।
কানে ফাঙ্গাস ও কানে ক্ষতঃ কানের মধ্যে অনেক সময় ফাঙ্গাস এবং ক্ষত হয়। সাধারণত কান খোঁচানোর জন্য কানের মধ্যে ফাঙ্গাস হয়ে থাকে। কান পরিষ্কার করা কিংবা কান খোঁচানো অনেক সময় একই বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এসব কাজে ব্যবহার করা হয় কটনবাড থেকে মুরগির পালক, কলমের মুখ, চুলের ক্লিপ ইত্যাদি। এসব কিছুই কানের এই রোগটির জন্য দায়ী। কানে ফাঙ্গাস হলে কান মূলত চুলকায়। সাথে ইনফেকশন বেড়ে প্রদাহ হলে ব্যথা হয়, কষ ঝরে ও কান বন্ধ হয়ে থাকে। অনেক সময় কানের ভিতরে ক্ষত হয়ে ফাঙ্গাসের সাথে কানের বাইরের পথটিতে ক্ষত সৃষ্টি হলে ব্যথা মারাত্মক আকার ধারন করে। তবে চিকিৎসায় পুরো সেরে যায়। তবে ওষুধের চিকিৎসা শুরুর আগে ইএনটি বিশেষজ্ঞ দিয়ে কান পরিষ্কার করিয়ে নিতে হবে।
কানে ওয়াক্স বা খোলঃ কানে ওয়াক্স বা খোল অতি পরিচিত সমস্যা। এই খোল অনেকেই পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। নিজে এটি পরিষ্কার করা ঠিক নয। নিজে পরিষ্কার করতে গেলে জমে থাকা খোলের বেশিরভাগই ভিতরে চলে যায়। ফলে বিপত্তি আরো বাড়ে। কানে খোল আটকে গেলে কানে ব্যথা হয়, কানে কম শোনা যায় কান বন্ধ থাকার কারণে। ইএনটি স্পেশালিস্ট কান দেখে এটি পরিষ্কার করে দিতে পারেন। তাবে পরিষ্কার করা সম্ভব না হলে খোল গলানোর ওষুধ রয়েছে। তাতেও কাজ না হলে কিংবা অবস্থা বেশি খারাপ হলে অজ্ঞান করে কান পরিষ্কার করে দিতে হয়। যাদের কানে খোল হওয়ার প্রবনতা রয়েছে তারা নিয়মিত কানে ৪/৫ ফোঁটা করে অলিভ অয়েল দিতে পারেন।
 
কানে পানি ঢুকলে কি কান পাকে?
 
কানপাকা রোগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর রোগের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারণ হিসেবে অতীতে কোনো একসময়ে কানে পানি যাওয়াকে দায়ী বলে মনে করেন রোগীরা। অনেক রোগীই মনে করেন, কানে পানি গেলে কান পাকে। তাদের ধারণা, কোনো একসময়ে গোসল করতে গিয়ে ঢুকে যাওয়া পানিই কানপাকার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। কোনো কোনো সময় রোগীরা সাম্প্রতিককালে কানে পানি ঢোকার ইতিহাস না বলে পাঁচ-সাত বছর আগের ঘটনাও বলে থাকেন।
 
কানপাকা সম্পর্কে সাধারণের এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। আসল কথা হচ্ছে, কানের পর্দায় যদি কোনো ধরনের ফুটো না থাকে তখন বহিঃকর্ণের পথে পানি ঢুকলেও তা পর্দা ফুটো করে মধ্যকর্ণে ঢুকতে পারে না এবং কানপাকা রোগ সৃষ্টিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। সাধারণের কাছে কানপাকা বলে পরিচিত রোগটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয়, ক্রনিক সাপোরেটিভ ওটাইটিস মিডিয়া বা সিএসওএম। কানপাকা রোগের পেছনে দায়ী বিষয়গুলো হচ্ছে­ ঘন ঘন মধ্যকর্ণে ইনফেকশন, শৈশবে হাম, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডিপথেরিয়ার মতো সংক্রামক রোগ হওয়া, কানের পর্দার পেছন দিকে উপরের অংশে, মধ্যকর্ণের ভেন্টিলেসন বা বায়ু চলনে সৃষ্ট সমস্যার জন্য সংহরণ পকেট তৈরি হওয়া (সংহরণ পকেট হচ্ছে কানে পর্দার কোনো অংশে ভেতরের দিকে ঢুকে গিয়ে গর্তের মতো হয়ে যাওয়া) এবং কোলেস্টিয়েটমা নামক ধ্বংসাত্মক পদার্থ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চালু থাকা; নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার জন্য মধ্যকর্ণে বারবার পানি জমে যাওয়া; মধ্যকর্ণের সাথে নাস-গলবিল বা ন্যাসোফ্যারিংসের যোগাযোগ রক্ষাকারী ইউস্ট্যাশিয়ান টিউব সঠিকভাবে কাজ করতে না পারা ইত্যাদি। এসব কারণ ছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে কানপাকার। তবে উল্লিখিত কারণগুলো থেকে কানপাকা রোগ সৃষ্টির পেছনে ঊর্ধ্বশ্বাসনালীর ইনফেকশন, টনসিলাইটিস ও এডিনয়েড বেড়ে যাওয়া (নাকের পেছন দিক বরাবর নাস-গলবিল অঞ্চলে এডিনয়েড নামক লসিকাগ্রন্থির বৃদ্ধি) বিশেষ ভূমিকা রেখে থাকে। প্রকৃতভাবে এসব সমস্যা থেকেই প্রকারান্তরে মধ্যকর্ণে তীব্র সংক্রমণ দেখা দেয়, যা পরে স্থায়ী রূপ নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সংক্রমণের মূল অনুঘটক হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাস। কানপাকা রোগ সৃষ্টির পেছনে কোনোভাবেই কানে পানি ঢোকা দায়ী নয়। বরং কানপাকা রোগ থাকলে কোনোক্রমেই যাতে কানে পানি ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ কানপাকা রোগ থাকা অবস্থায় কানে পানি ঢুকলেই কানপাকা রোগ আরো খারাপ হওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কানপাকা রোগ সেরে যাওয়ার পরও কানের পর্দা ছিদ্র থাকা রয়েই যায় কিংবা কারো কারো ক্ষেত্রে একেবারেই পর্দা থাকে না। উভয় ক্ষেত্রেই কানে যাতে পানি না ঢোকে সে ব্যবস্থা নিয়মিতভাবে মেনে চলতে হয়। সেই সাথে যাতে ঘন ঘন সর্দিকাশি না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হয়। কাজেই যাদের কানপাকা রোগ রয়েছে তাদের কানে পানি ঢুকলে সেই কানে বারবার কানপাকা রোগ দেখা দেবে।
 
তবে যাদের কান ভালো রয়েছে অর্থাৎ যাদের কানের পর্দা ছিদ্র নয় কিংবা যাদের কানের পর্দা অক্ষত আছে তাদের বহিঃকর্ণে পানি ঢুকলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কখনো কখনো বহিঃকর্ণে পানি ঢুকে আটকে গেলে তা সাময়িক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলেও শরীরের তাপেই সেই সামান্য পরিমাণ পানি অল্প সময়ের মধ্যেই বাষ্পীভূত হতে বাধ্য। কিন্তু কোনো কারণে কানে নোংরা ময়লা পানি ঢুকলে বহিঃকর্ণে ইনফেকশন হতে পারে। তাই সুস্থ কানে বহিঃকর্ণ অংশে পানি ঢোকা সমস্যা নয়, এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করলেও চলবে।
'https://bn.wikipedia.org/wiki/কান' থেকে আনীত