উমাপতিধর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সন্দীপ সরকার (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা
১ নং লাইন:
'''উমাপতিধর''' (দ্বাদশ - ত্রয়োদশ শতক) লক্ষ্মণসেনের( আনুঃ-১১৭৮-১২০৬ খ্রিঃ) পঞ্চরত্নের অন্যতম। রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজসভাকে কেন্দ্র করে যেমন কালিদাস ও তাঁর সহযোগীদের নিয়ে নবরত্ন সভার সমাবেশ ঘটেছিল তেমনি এই বাংলার নবদ্বীপের রাজা লক্ষণসেনের রাজসভাতে পঞ্চরত্নের আবির্ভাব হয়- জয়দেব, উমাপতিধর, [[ধোয়ী]], [[শরণ]] ও [[গোবর্ধন আচার্য]] হলেন সেই পঞ্চরত্নের এক একটি রত্ন স্বরূপ।রত্নস্বরূপ। উল্লেখ্য জয়দেবই ছিলেন এই পঞ্চরত্নের মধ্যমণি। জয়দেবের এই চারজন কবিবন্ধুর নাম পরিচয় হয়তো চিরতরে হারিয়েই যেত যদি কিনানা কবি জয়দেব তাঁর 'গীতগোবিন্দ'-এ এঁদের নাম ও কাব্যবৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতেন। অবশ্য ইতিপূর্বেইতিপূর্বেই লক্ষ্মণসেনের সভাসদ, বটুদাসের পুত্র শ্রীধরদাস ''সদুক্তিকর্ণামৃতে'' এই চারজনের বহু শ্লোক অন্তর্ভূক্ত করে এঁদের কাব্যকবিতাকে বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। জয়দেবের মতে বাক্য পল্লবিত করা ছিল উমাপতিধরের রচনা বৈশিষ্ট্যরচনাবৈশিষ্ট্য । তাঁর রচনাগুলির মধ্যে ''[['দেওপাড়াপ্রশস্তি']]''''[['মাধাইনগরের তাম্রশাসন']]'' পাওয়া গেলে ওগেলেও তাঁর রচিত বলে উল্লিখিত ''[['চন্দ্রচূড়চরিত']]'' পাওয়া যায় না। অবশ্য ''[[পারিজাতহরণ]]'' নাটকের রচয়িতা হিসাবে উমাপতিধরের নাম পাওয়া গেলেও অনুমিত হয় ইনি উমাপতি বন্দ্যোপাধ্যায় - স্বতন্ত্র ব্যক্তি , তাঁর পৃষ্টপোষক ছিলেন রাজা হরিহরদেব হিন্দুপতি।
 
==আবির্ভাব কাল==
যেহেতু পঞ্চরত্নের পাঁচজনই রাজা লক্ষ্মণসেনের সভা অলংকৃত করেছিলেন তাই সহজেই অনুমান করা যায় এঁরা সকলেই সমসাময়িক। ''[['সুভাষিতাবলী']]'' শীর্ষক শ্লোক সংগ্রহে উল্লেখ পাওয়া যায় :
 
:'গোবর্ধনশ্চ শরণো জয়দেব উমাপতিঃ<br />
১০ নং লাইন:
 
==সাহিত্যকর্ম==
[[শ্রীধরদাস|শ্রীধরদাসকৃত]] ''সদুক্তিকর্ণামৃতে'' উমাপতিধরের নামে অন্তত ৯০টি শ্লোক গৃহীত হ'য়েছে। তাঁর অসাধারণ কবিত্বশক্তি থাকলেও অনুমিত হয় তিনি কোন পুরোমাপের কাব্য লেখেন নি।লেখেননি। গৌড়ীয় রীতির আদর্শে '[['অক্ষর ডম্বর']]''[['অলংকার ডম্বর']]-'এর সাহায্যে উমাপতির রচনাশৈলীর বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। কবিত্ব যতটুকু থাক, পল্লবিত বাক্য রচনার আসক্তিই তাঁকে বেশি আকৃষ্ট করত। ''দেওপাড়া প্রশস্তি'' ও ''মাধাইনগরের তাম্রশাসনে'' উমাপতির রচনাকৌশল লক্ষ্য করা যাবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন তাম্রশাসন বা লিপি লেখনে কবিদের রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্যই ছিল রচনার সহজ স্বাভাবিকতাকে উপেক্ষা করে অলংকার সজ্জার আতিশয্যকে বরণ করা। উমাপতি ছিলেন এই রীতির প্রধান হোতা।<br />
''সদুক্তিকর্ণামৃতে'' উমাপতিধর নামাঙ্কিত একটি অদ্ভুত শ্লোক গৃহীত হয়েছে যার থেকে সমসাময়িক ইতিহাসের কিছু প্রচ্ছন্ন ধারণা পাওয়া যায় :<br />
:'সাধু ম্লেচ্ছ নরেন্দ্র সাধু সাধু। ভবতো মাতৈব বীরপ্রসূর্নীচেনাপি<br />
:ভবদ্বিধেন বসুধা সুক্ষত্রিয়া বর্ততে।'<br />
অর্থাৎ, -হে ম্লেচ্ছরাজ! সাধু সাধু। আপনার জননী সত্যই বীরপ্রসবিনী। নীচ (সম্প্রদায়) হলেও আপনার মত বীরের জন্যই পৃথিবী এখনও সুক্ষত্রিয় আছে।<br />
উপরিউক্ত সূত্র থেকে অনুমান করা যেতেই পারে যে, আনুমানিক ১২০২-১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে [[ইফতিয়ারউদ্দিন-বিন-বখতিয়ার খলজী|ইফতিয়ারউদ্দিন-বিন-বখতিয়ারখলজীরবখতিয়ার খলজীর]] নেতৃত্বে বঙ্গে তুর্কি আক্রমণ সঙ্ঘটিত হয়েছিল এবং এর ফলে নবদ্বীপ ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল বিজাতীয় মুসলিম শাসকের অধীনস্ত হয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণে বহু হিন্দু ব্রাহ্মণপণ্ডিত আপন ধর্ম ও প্রাণরক্ষার তাগিদে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যান। পরাজিত লক্ষ্মণসেন সপরিবারে বর্তমান বাংলাদেশের [[সুবর্ণগ্রাম|সুবর্ণগ্রামে]] (সোনারগাঁ) পাড়ি দেন। স্বাভাবিকভাবে ব্রাহ্মণ ও অভিজাত বংশীয়রাও মুসলমান শাসকের স্পর্শ বাঁচাতে তৎপর হয়ে পড়েন। কবি জয়দেব স্ত্রী পদ্মাবতীকে নিয়ে পুরীধামে পৌঁছালেনপৌঁছান, আর যারাযাঁরা নিজভূমে রয়ে গেলেন তাদের মুসলিম চণ্ডশাসনকে মেনে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর রইল না। অনুমান করা হয় এই শেষোক্তদের মধ্যে উমাপতিধরও ছিলেন আর ঘনীভূত সংকটের সরলীকরণে মুসলিম শাসককে সেলাম বাজিয়ে এমনিভাবে জয়ধ্বনি দিয়েছিলেন।
 
==দেওপাড়া প্রশস্তি==
এটি প্রাচীন বাংলা লিপির উদ্ভবের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল বলা যায়। লিপিটিতে সেনরাজাদের বিশেষত বিজয়সেনের রাজত্বকালের অতি মূল্যবান ইতিহাস লিপিবদ্ধ। বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার দেওপাড়া নামক গ্রাম থেকে ১৮৬৫ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক [[সি . টি মেটকাফ]] এটি আবিষ্কার করেন এবং জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল (সংখ্যা-৩৪, পার্ট-১) পত্রিকায় লিপিটি প্রকাশ করেন। শিলালিপিটিতে রাজা বিজয়সেনের অতিমাহাত্ম্যপূর্ণ প্রশস্তিসহ সেন রাজাদের বংশতালিকার উল্লেখ আছে। ৫-৯ নং শ্লোকে দক্ষিণ ভারতের [[কর্ণাটক]] থেকে আগত সেনরাজাদের ব্রহ্মক্ষত্রিয় রূপে নির্দেশ করা হয়েছে । আবার ১৪-২২ নং শ্লোকে বিজয়সেনকে মহান ও পরাক্রমশালী রাজার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বিজয়সেন সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে যে, তিনি বীর, রাঘব, নান্য ও বর্ধন রাজাদের বন্দী করেন আর [[গৌড়]], [[কলিঙ্গ]] ও [[কামরূপরাজা|কামরূপরাজাকে]] পরাজিত করেন । পশ্চিমের রাজাদের পরাস্ত করবার জন্য তিনি গঙ্গার গতিপথ ধরে বিশাল একটি নৌ-অভিযানও চালিয়েছিলেন । বিজয়সেন অতি জাঁকজমকপূর্ণভাবে প্রদ্যুম্নেশ্বরের মন্দির নির্মাণ করান এবং তার কাছেই একটি দিঘি খনন করান , ( শ্লোক নং - ২২ -২৯ ) । এর পরের অংশের বর্ণনা মন্দিরের অভ্যন্তরে স্থাপিত একটি মূর্তিকে নিয়েনিয়ে। । এবং সবশেষেসর্বশেষে আছে লিপিকর্তা এবং খোদাইকারীর পরিচয় ।<ref>[http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%93%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF দেওপাড়া প্রশস্তি, বাংলাপিডিয়াবাংলাপিডিয়া। সংগৃহীত ০২ জানুয়ারি, ২০১৪।]</ref><br />
লিপিটিতে সর্বমোট ৩৬টি শ্লোক আছে। বিভিন্ন ধরণের ছন্দ বৈচিত্র্যে তা পরিপূর্ণ। মন্দাক্রান্তা, মালিনী, শিখরণী, বসন্ততিলক, পৃথ্বী, শার্দূলবিক্রীড়িত, ইন্দ্রবজ্রা প্রভৃতি ছন্দ পরিলক্ষিত। দেওপাড়া প্রশস্তি বিষয়ক গবেষক প্রখ্যাত [[ঐতিহাসিক]] [[রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়]] স্পষ্টতইঃ দেখিয়েছেন যে এই সময় বাংলা বর্ণমালার প্রায় ২২টি ক্ষেত্রেইক্ষেত্রে আকৃতিগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল ।হয়েছিল। এ কারণে , দেওপাড়া প্রশস্তিকে আধুনিক বাংলা বর্ণমালার পূর্বসুরী বলা যেতে পারে ।
 
 
৪৪ নং লাইন:
* R . C Majumdar, History Of Ancient Bengal, Calcutta, 1971
 
 
{{অসম্পূর্ণ}}
{{DEFAULTSORT:উমাপতিধর}}
[[বিষয়শ্রেণী:সংস্কৃত কবি]]