থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
+
১৩ নং লাইন:
[[দলাই লামা]] হিসেবে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোর সময়কালের শুরুর দিনগুলো থেকে [[তিব্বত|তিব্বতে]] ব্রিটিশ অভিযানের সম্ভাবনা তৈরী হয়ে ছিল। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে [[চিং রাজবংশ|চিং সরকারের] নিকট হতে ব্রিটিশরা [[লাসা]] শহরে প্রতিনিধিদল পাঠানোর অনুমতি লাভ করেন। কোলম্যান ম্যাকুলের নেতৃত্বে একটি ব্রিটিশ সামরিক প্রতিনিধিদল [[সিক্কিম]] ও [[তিব্বত|তিব্বতের]] সীমান্তে উপস্তিত হলে তিব্বতীরা তাঁদের [[তিব্বত]] প্রবেশে অনুমতি দিতে অস্বীকার করলে তাঁরা ফিরে যান। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশদের সামরিক অভিযানের সম্ভাবনায় সন্দিগ্ধ হয়ে তিব্বত সরকার তাঁদের সীমান্ত প্রতিরক্ষার জন্য [[তিব্বত]]-[[সিক্কিম]] সীমান্তে সেনা পাঠালে ব্রিটিশদের সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধ শুরু হয় এবং এই যুদ্ধে সামরিক ভাবে উন্নত ব্রিটিশ বাহিনীর নিকট তাঁদের পরাজয় ঘটে। এই যুদ্ধের ফলশ্রুতি হিসেবে [[দার্জিলিং]] শহরেব্রিটিশ সরকার]] ও [[চিং রাজবংশ|চিং সরকারের]] মধ্যে [[তিব্বত]] ও [[সিক্কিম]] বিষয়ক ইঙ্গ-চীনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে ব্রিটিশরা [[তিব্বত|তিব্বতে]] ব্যবসা করার অধিকার লাভ করে এবং [[তিব্বত]] ও [[সিক্কিম|সিক্কিমের]] মধ্যে সীমান্ত নির্দিষ্ট করা হয়।<ref>{{cite book|last=Paget|first=William Henry|title=Frontier and overseas expeditions from India|url=http://www.archive.org/details/frontieroverseas04indi|year=1907}}</ref>{{rp|৫০-৬১}} তিব্বতীদের বাদ দিয়ে চীনা ও ব্রিটিশদের মধ্যেকার এই চুক্তি হওয়ায় তিব্বতীরা তা মেনে নেননি।
 
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে সিক্কিম ও তিব্বতের ব্যবসায়ীদের নিকট হতে ব্রিটিশরা জানতে পারেন যে [[লাসা]] শহরে বেশ কয়েকজন রুশ সামরিক উপদেষ্টা রয়েছেন এবং [[ত্রয়োদশ দলাই লামা]] ও জারের মধ্যে একটি গোপণ আঁতাত তৈরী হয়েছে। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা রুশ পত্রিকাগুলি থেকে জানতে পারে যে [[লাসা]] শহরে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে যাওয়া [[আগভান দোর্জিয়েভ]] নামক রুশ বৌদ্ধ ভিক্ষু [[ত্রয়োদশ দলাই লামা|ত্রয়োদশ দলাই লামার]] বার্তা নিয়ে [[জার]] [[দ্বিতীয় নিকোলাস|দ্বিতীয় নিকোলাসের]] সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এই বার্তায় তিব্বত সরকারের পক্ষ থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুশদের সমর্থনের অনুরোধ জানানো হয়। এই সমস্ত ঘটনা তৎকালীন [[ভারতের গভর্নর-জেনারেল]] [[লর্ড কার্জন]] [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতের]] সুরক্ষার ক্ষেত্রে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করেন। যদিও রুশদের পক্ষ থেকে জানান হয় যে, তাঁরা [[তিব্বত|তিব্বতের]] ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না, কিন্তু ব্রিটিশরা এই ব্যাপারে সন্দিগ্ধ থাকেন। প্রথমে ব্রিটিশরা [[চিং রাজবংশ|চিং সম্রাটদের]] নিকট [[তিব্বত|তিব্বতকে]] ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবী জানায়, কিন্তু [[ত্রয়োদশ দলাই লামা]] সরাসরি তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে অস্বীকার করলে তাঁরা বুঝতে পারেন যে, তিব্বতীদের ওপর চীনাদের কোন রকম কর্তৃত্বের অস্তিত্ব নেই। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে [[লর্ড কার্জন]] [[তিব্বত|তিব্বতে]] সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।<ref>[[John Powers]] (2004) ''History as Propaganda: Tibetan exiles versus the People's Republic of China''. Oxford University Press, ISBN 978-0-19-517426-7, p. 80</ref> ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে কর্ণেল [[ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ড|ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ডের]] নেতৃত্বে আট হাজার সেনার একটি বাহিনী [[সিক্কিম]] সীমান্ত থেকে [[তিব্বত]] আক্রমণ করে এবং লড়াইয়ে প্রায় এক হাজার তিব্বতী সেনা মৃত্যুবরণ করেন। এই বছর জুলাই মাসে ব্রিটিশ সেনা [[লাসা]] শহর থেকে একদিনের দুরত্বে অবস্থিত ল্চাগস-জাম ({{bo|w=lcags zam}}) নামক স্থানে পৌছলে [[ব্লো-ব্জাং-র্গ্যাল-ম্ত্শান]] নামক ছিয়াশিতম [[দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পা|দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পাকে]] [[তিব্বতের রাজপ্রতিনিধি]] নিযুক্ত করে বিশ্বস্ত কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে [[লাসা]] থেকে পলায়ন করেন। তারা [[র্বা-স্গ্রেং বৌদ্ধবিহার]] পৌছলে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো একজন ধনী [[মঙ্গোল]] ব্যবসায়ীর বেশে উত্তর তিব্বত হয়ে [[মঙ্গোলিয়া]] যাত্রা করে রাজধানী [[উলানবাটর|উর্গা]] নগরীতে পৌঁছন। [[দলাই লামা]] [[তিব্বত]] ছেড়ে পালিয়ে গেলে [[চিং রাজবংশ]] সমগ্র [[তিব্বত]], [[নেপাল]] ও [[ভূটান|ভূটানের]] ওপর নিজের অধিকারের দাবী জানায়।<ref name="Chapman, Spencer 1940 p. 137">Chapman, F. Spencer (1940). ''Lhasa: The Holy City'', p. 137. Readers Union, London. {{OCLC|10266665}}</ref> ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই সেপ্টেম্বর ব্রিটিশদের সঙ্গে তিব্বতীদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়<ref>Richardson, Hugh E.: ''Tibet & its History'', Shambala, Boulder and London, 1984, p.268-270. The full English version of the convention is reproduced by Richardson.</ref> এবং ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ও চীনাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে ব্রিটিশরা [[চিং রাজবংশ|চিং রাজসভা]] থেকে বাৎসরিক অর্থের বিনিময়ে [[তিব্বত]] অধিগ্রহণ না করার এবং তিব্বতের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। অপর পক্ষে চীন [[তিব্বত|তিব্বতের]] প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অন্য কোন বিদেশী শক্তির হস্তক্ষপের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।<ref name="treaty1906">{{cite web|title=Convention Between Great Britain and China Respecting Tibet (1906)|url=http://tibetjustice.org/materials/treaties/treaties11.html|work=|archiveurl=http://www.webcitation.org/5iwEyckUo|archivedate=10 August 2009|deadurl=no|accessdate=8 August 2009}}</ref><ref>Bell, Charles (1924) ''Tibet: Past and Present''. Oxford: Clarendon Press; p. 288.</ref>
 
[[উলানবাটর|উর্গা]] শহরে পৌঁছে [[ত্রয়োদশ দলাই লামা]] [[আগভান দোর্জিয়েভ|আগভান দোর্জিয়েভকে]] [[দ্বিতীয় নিকোলাস|দ্বিতীয় নিকোলাসের]] নিকট প্রেরণ করেন ও [[উলানবাটর|উর্গা]] নগরীর রুশ প্রতিনিধি শিশমার‍্যোভের নিকট [[চীন]] ও ইংরেজদের হাত থেকে [[তিব্বত|তিব্বতকে]] রক্ষা করার দাবী জানান। এই নগরীতে বসবাস কালে [[মঙ্গোলিয়া|মঙ্গোলিয়ার]] ধর্মীয় প্রধান [[ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-ছোস-ক্যি-ন্যি-মা-বস্তান-'দ্জিন-দ্বাং-ফ্যুগ]] ({{bo|w=ngag dbang blo bzang chos kyi nyi ma bstan 'dzin dbang phyug}}) নামক অষ্টম [[র্জে-ব্ত্সুন-দাম-পা-হো-থোগ-থু]] ({{bo|w=rje btsun dam pa ho thog thu}}) উপাধিধারী লামার সঙ্গে তাঁর বিবাদের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যার ফলে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোর [[মঙ্গোলিয়া|মঙ্গোলিয়ায়]] বসবাস কষ্টকর হয়ে ওঠে। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে [[রাশিয়া]] ও ব্রিটিশরা একটি চুক্তির মাধ্যমে তিব্বতের ব্যাপারের হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্তে আসলে [[দলাই লামা]] [[মঙ্গোলিয়া]] থেকে তিব্বতের দিকে যাত্রা করে [[স্কু-'বুম বৌদ্ধবিহার|স্কু-'বুম বৌদ্ধবিহারে]] বসবাস শুরু করেন। এই সময় [[লাসা]] থেকে একটি প্রতিনিধিদল এই বিহারে তাঁকে [[লাসা]] ফিরে যেতে অনুরোধ করলে তিনি ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালে [[লাসা]] না গিয়ে [[বেজিং]] যাত্রা করেন।<ref name= Shakya/>
 
== চীন যাত্রা ==
[[বেজিং]] যাত্রার পথে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো [[উটাই শান]] নামক বৌদ্ধ তীর্থস্থানে পৌছলে চীনে মার্কিন প্রতিনিধি [[উইলিয়াম উডভিল রকহিল|উইলিয়াম উডভিল রকহিলের]] সঙ্গে সাক্ষাত করেন। [[উইলিয়াম উডভিল রকহিল|রকহিল]] তাঁকে একজন অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত, মুক্তমনা, দয়ালু, সদাহাস্য ও বন্ধুসুলভ যুবা বলে বর্ণনা করেন।{{#tag:ref|''is a man of undoubted intelligence and ability, of quick understanding and of force of character. He is broad-minded -- and of great natural dignity.........he is a quick tempered and impulsive, but cheerful and kindly ''<ref name=Rockhill>Rockhill, W.W. 1910. “The Dalai Lama of Lhasa and their relations with Manchu Emperors of China, 1644-1908” T'oung Pao, vol. 11, pp: 1-104.</ref>|group=n}} ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি [[বেজিং]] শহরে পৌছলে একজন স্বাধীন সার্বভৌম জাতির শাসক হিসেবে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়।{{#tag:ref|''[the Dalai Lama] had been treated with all the ceremony which could have been accorded to any independent sovereign, and nothing can be found in Chinese works to indicate that he was looked upon in any other light."<ref name=Rockhill/>|group=n}} [[বেজিং]] শহরে বসবাস কালে তিনি জাপানী সামরিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন, যার ফলশ্রুতি হিসেবে পরবর্তীকালে ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে জাপান তিব্বতী সেনাদের আধুনিকীকরণের উদ্দেশ্যে সামরিক উপদেষ্টা প্রেরণ করেন। থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো চীনের নিম্ন আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাতে অস্বীকার করেন ও একজন স্বাধীন জাতির শাসক হসেবে সরাসরি [[চিং রাজবংশ|চিং সাম্রাজ্ঞী]] [[চিজি|চিজির]] (慈禧) সঙ্গে সাক্ষাতের দাবী জানান। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই অক্টোবর তিনি [[চিং রাজবংশ|চিং সম্রাট]] [[জুয়ানটোং]] (宣統) এবং [[চিং রাজবংশ|সাম্রাজ্ঞী]] [[চিজি|চিজির]] সঙ্গে সাক্ষাত করেন। থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো সম্রাটের নি ঝুঁকে সম্মান জানাতে অস্বীকার করেন।<ref>Tamm, Eric Enno. "The Horse That Leaps Through Clouds: A Tale of Espionage, the Silk Road and the Rise of Modern China." Vancouver: Douglas & McIntyre, 2010, pp. 367. See http://horsethatleaps.com</ref>
 
== পাদটীকা ==
<references group=n/>
 
== তথ্যসূত্র ==
২৩ ⟶ ২৯ নং লাইন:
{{Commonscat|Thubten Gyatso, 13th Dalai Lama|থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো}}
*Bell, Charles (1946) ''Portrait of a Dalai Lama: the Life and Times of the Great Thirteenth'' by Charles Alfred Bell, Sir Charles Bell, Publisher: Wisdom Publications (MA), January 1987, ISBN 978-0-86171-055-3 (first published as ''Portrait of the Dalai Lama'': London: Collins, 1946).
*Bell, Charles (1924) ''Tibet: Past and Present''. Oxford: Clarendon Press
*Bell, Charles (1931) ''The Religion of Tibet''. Oxford: Clarendon Press
*Gelek, Surkhang Wangchen. 1982. "Tibet: The Critical Years (Part 1) "The Thirteenth Dalai Lama". ''The Tibet Journal''. Vol. VII, No. 4. Winter 1982, pp.&nbsp;11–19.
৩৪ ⟶ ৩৯ নং লাইন:
*Tsering Shakya (1999): ''The Dragon in the Land of Snows. A History of Modern Tibet since 1947''. London:Pimlico. ISBN 0-7126-6533-1
*''The Wonderful Rosary of Jewels''. An official biography compiled for the Tibetan Government, completed in February 1940
*Rockhill, W.W. 1910. “The Dalai Lama of Lhasa and their relations with Manchu Emperors of China, 1644-1908” T'oung Pao, vol. 11, pp: 1-104.
*Tsering Shakya. 2005. "The Thirteenth Dalai Lama, Thubten Gyatso."In Brauen, Martin, ed. The Dalai Lamas: A Visual History. London: Serindia, pp.&nbsp;137–161.
*Ya Hanzhang. 1991. The Biographies of the Dalai Lamas. Beijing: Foreign Languages Press.