থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৯ নং লাইন:
কুড়ি বছর বয়স পর্যন্ত থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো ধর্মীয় শিক্ষালাভেই অধিক মনোযোগ দেন। ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় ফুর-ল্চোগ [[ব্যাম্স-পা-র্গ্যা-ম্ত্শো (ফুরচোক)|ব্যাম্স-পা-র্গ্যা-ম্ত্শো]] তাঁকে [[লাসা]] শহরের [[জোখাং]] মন্দিরে ভিক্ষুর শপথ প্রদান করেন। যদিও থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে চাইছিলেন না, তবুও এই বছরে ত্শোংস-'দু-র্গ্যাস-'দ্জোম ({{bo|w=tshongs 'du rgyas 'dzom}}) বা তিব্বত সরকারের জাতীয় সভা আহ্বান করে [[দলাই লামা|দলাই লামাকে]] [[তিব্বত|তিব্বতের]] রাজনৈতিক ক্ষমতাগ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। এর ফলশ্রুতি হিসেবে [[পোতালা প্রাসাদ|পোতালা প্রাসাদে]] এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোকে [[তিব্বত|তিব্বতের]] রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়। ক্ষমতালাভের প্রথম দুই বছর তাঁর শাসন শান্তিপূর্ণ ছিল, কিন্তু ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে লু চুয়ানলিন (鹿傳霖) নামক [[সিচুয়ান]] অঞ্চলের চীনা শাসক তিব্বতের শাসনাধীন ন্যাগ-রোং অঞ্চল অধিকারের উদ্দেশ্যে একটি সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন ও ঝৌ ওয়ানশুন (周萬順) নামক তাঁর এক সেনাপতি এই অঞ্চল অধিকার করে নেন। থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো [[চিং রাজবংশ|চিং সম্রাট]] [[গুয়াংজু|গুয়াংজুর]] নিকট শেস-রাব-ছোস-'ফেলের ({{bo|w=shes rab chos 'phel}}) নেতৃত্বে [[কলকাতা]] হয়ে সমুদ্রপথে একটি গোপণ প্রতিনিধিদল পাঠান। এই প্রতিনিধিদলের মধ্যস্থতায় [[গুয়াংজু]] ন্যাগ-রোং অঞ্চল থেকে চীনা সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন ও এই অঞ্চলের ওপর [[তিব্বত|তিব্বতের]] শাসন মেনে নেন। [[তিব্বত|তিব্বতের]] শাসনকর্তা হিসেবে এটি ছিল থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোর অন্যতম প্রধান কূটনৈতিক সাফল্য। ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে [[ব্যাম্স-পা-র্গ্যা-ম্ত্শো (ফুরচোক)|ব্যাম্স-পা-র্গ্যা-ম্ত্শোর]] নির্দেশে দ্গে-ব্শেস-ল্হা-রাম্স-পা ({{bo|w=dge bshes lha rams pa}}) উপাধি লাভের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন এবং [[তিব্বত|তিব্বতের]] ইতিহাসে প্রথম [[দলাই লামা]] হিসেবে এই উপাধি লাভ করেন।<ref name= Shakya/>
 
==ব্রিটিশ আক্রমণ ও পলায়ন==
==ব্রিটিশদের সঙ্গে সম্পর্ক ==
{{main|ব্রিটিশদের সিক্কিম অভিযান|ব্রিটিশদের তিব্বত অভিযান}}
[[দলাই লামা]] হিসেবে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোর সময়কালের শুরুর দিনগুলো থেকে [[তিব্বত|তিব্বতে]] ব্রিটিশ অভিযানের সম্ভাবনা তৈরী হয়ে ছিল। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে [[চিং রাজবংশ|চিং সরকারের] নিকট হতে ব্রিটিশরা [[লাসা]] শহরে প্রতিনিধিদল পাঠানোর অনুমতি লাভ করেন। কোলম্যান ম্যাকুলের নেতৃত্বে একটি ব্রিটিশ সামরিক প্রতিনিধিদল [[সিক্কিম]] ও [[তিব্বত|তিব্বতের]] সীমান্তে উপস্তিত হলে তিব্বতীরা তাঁদের [[তিব্বত]] প্রবেশে অনুমতি দিতে অস্বীকার করলে তাঁরা ফিরে যান। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশদের সামরিক অভিযানের সম্ভাবনায় সন্দিগ্ধ হয়ে তিব্বত সরকার তাঁদের সীমান্ত প্রতিরক্ষার জন্য [[তিব্বত]]-[[সিক্কিম]] সীমান্তে সেনা পাঠালে ব্রিটিশদের সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধ শুরু হয় এবং এই যুদ্ধে সামরিক ভাবে উন্নত ব্রিটিশ বাহিনীর নিকট তাঁদের পরাজয় ঘটে। এই যুদ্ধের ফলশ্রুতি হিসেবে [[দার্জিলিং]] শহরেব্রিটিশ সরকার]] ও [[চিং রাজবংশ|চিং সরকারের]] মধ্যে [[তিব্বত]] ও [[সিক্কিম]] বিষয়ক ইঙ্গ-চীনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে ব্রিটিশরা [[তিব্বত|তিব্বতে]] ব্যবসা করার অধিকার লাভ করে এবং [[তিব্বত]] ও [[সিক্কিম|সিক্কিমের]] মধ্যে সীমান্ত নির্দিষ্ট করা হয়।<ref>{{cite book|last=Paget|first=William Henry|title=Frontier and overseas expeditions from India|url=http://www.archive.org/details/frontieroverseas04indi|year=1907}}</ref>{{rp|৫০-৬১}} তিব্বতীদের বাদ দিয়ে চীনা ও ব্রিটিশদের মধ্যেকার এই চুক্তি হওয়ায় তিব্বতীরা তা মেনে নেননি।
 
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে সিক্কিম ও তিব্বতের ব্যবসায়ীদের নিকট হতে ব্রিটিশরা জানতে পারেন যে [[লাসা]] শহরে বেশ কয়েকজন রুশ সামরিক উপদেষ্টা রয়েছেন এবং [[ত্রয়োদশ দলাই লামা]] ও জারের মধ্যে একটি গোপণ আঁতাত তৈরী হয়েছে। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা রুশ পত্রিকাগুলি থেকে জানতে পারে যে [[লাসা]] শহরে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে যাওয়া [[আগভান দোর্জিয়েভ]] নামক রুশ বৌদ্ধ ভিক্ষু [[ত্রয়োদশ দলাই লামা|ত্রয়োদশ দলাই লামার]] বার্তা নিয়ে [[জার]] [[দ্বিতীয় নিকোলাস|দ্বিতীয় নিকোলাসের]] সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এই বার্তায় তিব্বত সরকারের পক্ষ থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুশদের সমর্থনের অনুরোধ জানানো হয়। এই সমস্ত ঘটনা তৎকালীন [[ভারতের গভর্নর-জেনারেল]] [[লর্ড কার্জন]] [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতের]] সুরক্ষার ক্ষেত্রে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করেন। যদিও রুশদের পক্ষ থেকে জানান হয় যে, তাঁরা [[তিব্বত|তিব্বতের]] ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না, কিন্তু ব্রিটিশরা এই ব্যাপারে সন্দিগ্ধ থাকেন। প্রথমে ব্রিটিশরা [[চিং রাজবংশ|চিং সম্রাটদের]] নিকট [[তিব্বত|তিব্বতকে]] ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবী জানায়, কিন্তু [[ত্রয়োদশ দলাই লামা]] সরাসরি তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে অস্বীকার করলে তাঁরা বুঝতে পারেন যে, তিব্বতীদের ওপর চীনাদের কোন রকম কর্তৃত্বের অস্তিত্ব নেই। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে [[লর্ড কার্জন]] [[তিব্বত|তিব্বতে]] সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।<ref>[[John Powers]] (2004) ''History as Propaganda: Tibetan exiles versus the People's Republic of China''. Oxford University Press, ISBN 978-0-19-517426-7, p. 80</ref> ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে কর্ণেল [[ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ড|ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ডের]] নেতৃত্বে আট হাজার সেনার একটি বাহিনী [[সিক্কিম]] সীমান্ত থেকে [[তিব্বত]] আক্রমণ করে এবং লড়াইয়ে প্রায় এক হাজার তিব্বতী সেনা মৃত্যুবরণ করেন। এই বছর জুলাই মাসে ব্রিটিশ সেনা [[লাসা]] শহর থেকে একদিনের দুরত্বে অবস্থিত ল্চাগস-জাম ({{bo|w=lcags zam}}) নামক স্থানে পৌছলে [[ব্লো-ব্জাং-র্গ্যাল-ম্ত্শান]] নামক ছিয়াশিতম [[দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পা|দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পাকে]] [[তিব্বতের রাজপ্রতিনিধি]] নিযুক্ত করে বিশ্বস্ত কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে [[লাসা]] থেকে পলায়ন করেন। তারা [[র্বা-স্গ্রেং বৌদ্ধবিহার]] পৌছলে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো একজন ধনী [[মঙ্গোল]] ব্যবসায়ীর বেশে উত্তর তিব্বত হয়ে [[মঙ্গোলিয়া]] যাত্রা করে রাজধানী [[উলানবাটর|উর্গা]] নগরীতে পৌঁছন। [[দলাই লামা]] [[তিব্বত]] ছেড়ে পালিয়ে গেলে [[চিং রাজবংশ]] সমগ্র [[তিব্বত]], [[নেপাল]] ও [[ভূটান|ভূটানের]] ওপর নিজের অধিকারের দাবী জানায়।<ref name="Chapman, Spencer 1940 p. 137">Chapman, F. Spencer (1940). ''Lhasa: The Holy City'', p. 137. Readers Union, London. {{OCLC|10266665}}</ref> ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই সেপ্টেম্বর ব্রিটিশদের সঙ্গে তিব্বতীদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়<ref>Richardson, Hugh E.: ''Tibet & its History'', Shambala, Boulder and London, 1984, p.268-270. The full English version of the convention is reproduced by Richardson.</ref> এবং ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ও চীনাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে ব্রিটিশরা [[চিং রাজবংশ|চিং রাজসভা]] থেকে বাৎসরিক অর্থের বিনিময়ে [[তিব্বত]] অধিগ্রহণ না করার এবং তিব্বতের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। অপর পক্ষে চীন [[তিব্বত|তিব্বতের]] প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অন্য কোন বিদেশী শক্তির হস্তক্ষপের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।<ref name="treaty1906">{{cite web|title=Convention Between Great Britain and China Respecting Tibet (1906)|url=http://tibetjustice.org/materials/treaties/treaties11.html|work=|archiveurl=http://www.webcitation.org/5iwEyckUo|archivedate=10 August 2009|deadurl=no|accessdate=8 August 2009}}</ref><ref>Bell, Charles (1924) ''Tibet: Past and Present''. Oxford: Clarendon Press; p. 288.</ref>
 
[[উলানবাটর|উর্গা]] শহরে পৌঁছে [[দলাই লামা]] [[আগভান দোর্জিয়েভ|আগভান দোর্জিয়েভকে]] [[দ্বিতীয় নিকোলাস|দ্বিতীয় নিকোলাসের]] নিকট প্রেরণ করেন ও [[উলানবাটর|উর্গা]] নগরীর রুশ প্রতিনিধি শিশমার‍্যোভের নিকট [[চীন]] ও ইংরেজদের হাত থেকে [[তিব্বত|তিব্বতকে]] রক্ষা করার দাবী জানান। এই নগরীতে বসবাস কালে [[মঙ্গোলিয়া|মঙ্গোলিয়ার]] ধর্মীয় প্রধান [[ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-ছোস-ক্যি-ন্যি-মা-বস্তান-'দ্জিন-দ্বাং-ফ্যুগ]] ({{bo|w=ngag dbang blo bzang chos kyi nyi ma bstan 'dzin dbang phyug}}) নামক অষ্টম [[র্জে-ব্ত্সুন-দাম-পা-হো-থোগ-থু]] ({{bo|w=rje btsun dam pa ho thog thu}}) উপাধিধারী লামার সঙ্গে তাঁর বিবাদের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যার ফলে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোর [[মঙ্গোলিয়া|মঙ্গোলিয়ায়]] বসবাস কষ্টকর হয়ে ওঠে। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে [[রাশিয়া]] ও ব্রিটিশরা একটি চুক্তির মাধ্যমে তিব্বতের ব্যাপারের হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্তে আসলে [[দলাই লামা]] [[মঙ্গোলিয়া]] থেকে তিব্বতের দিকে যাত্রা করেন।
 
== তথ্যসূত্র ==