সৈয়দ আবদুস সামাদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Hedayet shakil (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Hedayet shakil-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে Aftab1995-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
১ নং লাইন:
--[[User:Hedayet shakil|Hedayet shakil]] ([[User talk:Hedayet shakil|আলাপ]]) ০৩:০৮, ২৮ জুলাই ২০১৪ (ইউটিসি)'''''ইটালিক লেখা''''':''একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন [[আবদুস সামাদ]]।''
{{Infobox person
|name= সৈয়দ আবদুস সামাদ
৩৬ নং লাইন:
 
== খেলোয়াড় জীবন ==
[[১৯১৩]] সালে রংপুরের তাজ ক্লাবের হয়ে [[কলিকাতা|কলিকাতায়]] খেলতে গিয়ে ফুটবল সংগঠকদের নজরে পড়েন। [[১৯১৫]] সালে কলিকাতা দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব এরিয়ান্স সামাদ কে দলভুক্ত করে। সেবার অনেকটা সামাদের অসাধারণ নৈপুন্যে এরিয়ান্স ক্লাব প্রথম বিভাগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। [[১৯২০]] সালে সামাদ ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ক্লাবে যোগ দেন। [[১৯২৪]] সালে ভারতীয় জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে তিনি [[বার্মা]], [[যুক্তরাজ্য]] এবং [[চীন]] সফর করেন। [[১৯২৭]] সালে তিনি ঢাকার তৎকালীন শীর্ষ দল [[ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব]] এবং [[কলিকাতা মোহনবাগান ক্লাব|কলিকাতা মোহনবাগান ক্লাবে]] খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। [[১৯৩৩]] সালে তিনি কলিকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে যোগ দেন এবং এই ক্লাবে খেলেই তিনি ফুটবল থেকে অবসর নেন। বিভিন্ন সূত্রমতে তিনি [[১৯৪১]] সাল অর্থাৎ প্রায় ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত ফুটবল খেলেছেন। ১৯৫৭ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বেতনভুক্ত ফুটবল কোচ হিসেবে চাকরি শুরু করেন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদক দিয়ে সম্মানিত করে।<ref>http://www.prothom-alo.com/sports/article/237973</ref>
তিনি ১৯১২ সালে কলিকাতা মেইন টাউন ক্লাবে এবং ১৯৩৩ সালে মোহামেডান এ যোগদান করেন। সে সময় মোহামেডান পর পর পাঁচবার আই এফ এ শীল্ড ও লীগ জয় করে। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর প্রদর্শন করে ফুটবল জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ফুটবল যাদুকর সামাদকে বলা হয় কিংবদন্তি মহানায়ক, তাঁর এই যাদুকর উপাধি যাদুবিদ্যা জানার জন্য নয়, ফুটবল খেলার অপূর্ব দক্ষতা এবং উন্নতমানের ক্রীড়া কৌশল প্রদর্শনের জন্যই তাঁর এ যাদুকর উপাধি। ১৯১৫ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল এ ২৩ বছর ছিল সামাদের খেলোয়াড়ী জীবন। তিনি ছিলেন একজন রেল কর্মচারী। সে সময় ইবিআর নামে যে রেলওয়ে ফুটবল টিম ছিল সামাদ তাতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। সামাদের ২৩ বছর খেলোয়াড়ী জীবনে এমন সব বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে যা খেলার জগতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। যাদুকর সামাদের কালজয়ী ফুটবল প্রতিভা ও নেতৃত্বগুণ তৎকালীন সর্বভারতীয় ফুটবল দলকে গ্রেট বৃটেনের মতো বিশ্বসেরা ফুটবল দলের বিরুদ্ধেও জয় এনে দিয়েছিল (যেমন : ১৯৩৩ সালে সামাদের নেতৃত্বে সর্বভারতীয় দল গ্রেট বৃটেনকে ৪-১ গোলে এবং শক্তিশালী ইউরোপিয় টিমকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছিল)। ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে জীবনের শেষ খেলা খেলেছিলেন ইংল্যান্ডের সার্ভিসেস একাদশের বিরুদ্ধে ১৯৩৬ সালে। সামাদের অসাধারণ ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখে ইংল্যান্ডের তৎকালীন সেরা লেফট্ আউট কম্পটন চমকে উঠেছিলেন, ‘‘ধারণা ছিল না এমন খেলোয়াড় এদেশে দেখতে পাবো!’’ আর ইংল্যান্ডের কৃতি ফুটবলার এলেক হোসি একবার বলেছিলেন: ‘‘বিশ্বমানের যেকোনো ফুটবল দলে খেলবার যোগ্যতা সামাদের রয়েছে।’’ সামাদের অনুপস্থিতি দলকে পরিণত করতো সাধারণে। একবার আফ্রিকায় এক সফরের সময় ষড়যন্ত্র করে তাকে অধিনায়ক না-করায়, সামাদ অভিমানে দল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ইতিহাস সাক্ষী, সামাদবিহীন সর্বভারতীয় দলটি সেবার তেমন কোনো সাফল্যই দেখাতে পারেনি। ১৯৩৬ সালে তিনি খেলার সময় মাঠে গুরুতর আহত হবার পর তিনি আর তেমন করে খেলতে পারেননি কোনোদিনই। তাঁর আহত হবার ঘটনা তীব্রভাবে নাড়া দিয়েছিল তৎকালীন অবিভক্ত উপমহাদেশের ফুটবল-জগতকে।
 
খেলার মাঠে মাঝে মাঝে অবিশ্বাস্য সব ঘটনার জন্ম দিতেন সামাদ। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছিল একবার ইন্দোনেশিয়ায়। সর্বভারতীয় ফুটবল দল গিয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার জাভায়। খেলা চলাকালে ইন্দোনেশিয়ার বেশ ক’জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোলপোস্ট লক্ষ্য করে তীব্র শট করলেন সামাদ। বল গোলপোস্টের ক্রসবারে লেগে ফিরে এলো মাঠে। বিস্মিত হলেন তিনি। গোল হলো না কেন!? কিছুক্ষণ পর আবারো সামাদের তীব্র শটের বল ইন্দোনেশিয়ার গোলপোস্টের ক্রসবারে লেগে ফিরে এলো। এবার সামাদ রেফারিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন, ‘‘গোলপোস্টের উচ্চতা কম আছে। তা না-হলে, আমার দুটো শটেই গোল হতো।’’ ফিতে দিয়ে মেপে দেখা গেল সত্যসত্যই গোলপোস্টের উচ্চতা স্ট্যান্ডার্ড মাপের চেয়ে চার ইঞ্চি কম! আরেকবার মাঠের মধ্যস্থল থেকে বল নিয়ে সব খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে বল ড্রিবলিং করে নিক্ষেপ করলেন গোলে, বল গোলে প্রবেশ না করে গোলপোস্টের কয়েক ইঞ্চি উপর দিয়ে বাইরে চলে গেলে রেফারি বাঁশি বাজিয়ে বলকে আউট ঘোষণা করলেন; কিন্তু সামাদ তা গোল হয়েছে বলে চ্যালেঞ্জ করলেন। আমার শটে নিশ্চিত গোল হয়েছে। সামাদের শটের মেজারমেন্ট কোনোদিন ভুল হয়নি। গোলপোস্ট উচ্চতায় ছোট। মেপে দেখা গেল সত্যিই তাই। ফুটবল নিয়ে সেই কিশোর বয়স থেকে অনুশীলন করতে করতে সামাদ পরিণত হয়েছিলেন ফুটবলের এক মহান শিল্পীতে। একবার খেলার আগ মুহূর্তে মাঠের চারদিকে পায়চারী করে এসে সামাদ ক্রীড়া কমিটির কাছে অভিযোগ করলেন এ মাঠ আন্তর্জাতিক মাপ হিসেবে ছোট বিধায় এ মাঠে আমাদের টিম খেলতে পারে না। পরে মাঠ মাপার পর তার অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়। তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের এমন বহু ঘটনা আজো দেশ-বিদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অগণিত সামাদ ভক্তের মুখে মুখে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের বৃহৎ রেলওয়ে জংশন পার্বতীপুরে শেষজীবন কাটিয়েছেন ফুটবল যাদুকর। যদিও রেলওয়ের কোনো প্লাটফর্ম ইন্সপেক্টর পদ ছিল না তবুও যাদুকর সামাদের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ এই পদ সৃষ্টি করেছিলেন এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে পার্বতীপুর জংশনে প্লাটফর্ম ইন্সপেক্টর হিসেবে তিনি নিযুক্ত ছিলেন। তিনি রেলওয়ে সাহেবপাড়া কলোনিতে টি-১৪৭ নম্বর বাসায় থাকতেন এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি এই বাসাতেই ছিলেন। পার্বতীপুরেই চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন বিশ্ব ফুটবলের এই মুকুটহীন সম্রাট। তাঁর সমাধিগাত্রে শ্বেতপাথরে লেখা আছে, ‘‘চিরনিদ্রায় শায়িত ফুটবল জাদুকর সামাদ’’।
 
বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকের কথা। তখন ইংরেজ আমল। একদিন বিকেলে কোলকাতার ইডেন গার্ডেন-এর বিপরীত দিকের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন প্রায় ছয় ফুট লম্বা একজন লোক। হঠাৎ তাঁর পাশে গাড়ি থামিয়ে নেমে এলেন স্বয়ং তৎকালীন বাংলার গভর্ণর । সঙ্গে তাঁর কন্যাও। গভর্ণর সোজা এগিয়ে গিয়ে আঁকড়ে ধরলেন ঘটনার আকস্মিকতায় গভর্ণরের সঙ্গী-সাথীদের মতোই হতভম্ভ হয়ে যাওয়া ওই লম্বা লোকটির হাত, বিনিময় করলেন কুশল। তারপর, নিজ কন্যাকে ডেকে বললেন, ‘‘এসো, ফুটবলের জাদুকরের সঙ্গে পরিচিত হও (Meet the wizard of football)।’’ যাঁর ছিল এমন জনপ্রিয়তা, ফুটবলের সেই মহান শিল্পী, যাদুকর সামাদ তীব্র দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়ে, বিনাচিকিৎসায় ১৯৬৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে একবার তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি তো নিঃশেষ হয়ে গেছি। আমার প্রাপ্য মর্যাদা আমি পেলাম না। আমি ধুঁকে ধুঁকে মরে যাব-সে-ই ভালো। কারুর করুণা এবং অনুগ্রহের প্রত্যাশী আমি নই।’’
 
কথিত আছে, ফুটবল জাদুকর সামাদের সোনার মূর্তি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে। আমরা বিশ্বনন্দিত ফুটবল যাদুকর সামাদকে কতটুকু মূল্যায়ন করছি? মূল্যায়ন বলতে, পার্বতীপুর শহরের ইসলামপুর কবরস্থানে সমাহিত করার দীর্ঘ ২৫ বছর অবহেলিত ও অরক্ষিত থাকার পর ১৯৮৯ সালে ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিসৌধ। তাঁর স্মরণে একটি ডাক টিকেট। আর, পার্বতীপুরে রেলওয়ের নির্মিত একটি মিলনায়তন। যার নাম রাখা হয়েছে "সামাদ মিলনায়তন"।
 
 
আজ আমরা কতশত দেশী-বিদেশ‍ী খেলোয়াড়ের জন্মদিন, মৃত্যু দিবস প্রভৃতি কত আয়োজন, অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করছি। তাঁদের জীবনীও নিয়মিত বিভিন্ন পত্র-‍পত্রকায় ছাপা হচ্ছে। কিন্তু যিনি নিজের চেষ্টা ও অনুশীলনের মাধ্যমে ফুটবলে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তাঁর মূল্যায়র কতটুকু করছি? আমি মনে করি, তাঁর জীবনী পাঠ্য বইয়ে সং‍যোজন করা হলে নতুন প্রজন্ম জানবে ও চিনবে একজন ফুটবল যাদুকরকে। উৎসাহিত হবে ফুটবলের প্রতি। পাশাপাশি জাতীয়ভাবে তাঁর জন্মদিবস, মৃত্যু দিবস পালন তথা তাঁকে স্মরণ করা উচিত। আফসোস, ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারী ছিল "ফুটবলের যাদুকর সামাদ"-এর ৫০ তম মৃত্যু বার্ষিকী। আর সেটিও চলে গেছে নীরবেই)
<ref>http://www.prothom-alo.com/sports/article/237973</ref>
 
== বৈশিষ্ট্য ==