উমাইয়া খিলাফত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১৬৭ নং লাইন:
 
প্রেভিট-অরটনের মতে উমাইয়াদের পতনের কারণ ছিল ইসলামের দ্রুত প্রসার। উমাইয়া শাসনামলে ব্যাপক মাত্রায় ধর্মান্তরের কারণে পারসিয়ান, বার্বার, কপ্ট ও আরামায়িকরা ইসলাম গ্রহণ করে। এই অনারবরা প্রায় সময় তাদের আরব শাসকদের চেয়ে অধিক শিক্ষিত ও মার্জিত হত। নতুন ধর্মান্তরিতদের প্রতি সব মুসলিমের জন্য সমতার নীতির কারণে রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে যায়। প্রেভিট-অরটনের এও বলেন যে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যকার জাতিবিদ্বেষের কারণে সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে।<ref>Previté-Orton (1971), vol. 1, pg. 239</ref>
 
==উমাইয়া প্রশাসন==
মুয়াবিয়ার প্রথম কাজ ছিল সাম্রাজ্যের জন্য একটি দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থার চালু করা। পূর্ববর্তী বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অংশ ছিল এমন প্রদেশে তিনি পূর্বতন নীতি চালু রাখেন। সরকারকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়, যথাক্রমে রাজনৈতিক ও সামরিক, কর সংগ্রহ এবং ধর্মীয় প্রশাসন। প্রত্যেকটি শাখা আরো বেশ কিছু শাখা, অফিস ও বিভাগে বিভক্ত ছিল।
 
===প্রদেশ===
সমগ্র সাম্রাজ্যে বেশ কিছু প্রদেশে বিভক্ত ছিল। উমাইয়া শাসনের সময় সীমান্ত বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয়। প্রত্যেক প্রদেশে একজন করে খলিফা কর্তৃক নিযুক্ত গভর্নর থাকত। প্রদেশের ধর্মীয়, সেনা, পুলিশ ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষ গভর্নরের অধীনে কাজ করত। স্থানীয় খরচ প্রদেশের সংগৃহীত কর থেকে মেটানো হত। অতিরিক্ত কর দামেস্কের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হত। পরবর্তী সময় কেন্দ্রীয় সরকারের শক্তিক্ষয় হলে গভর্নররা অতিরিক্ত কর পাঠাতে গড়িমসি করে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত ইচ্ছাপূরণে এগিয়ে যায়।<ref name="Ochsenwald 2004 57">{{cite book|last=Ochsenwald|first=William|title=The Middle East, A History|year=2004|publisher=McGraw Hill|isbn=0-07-244233-6|page=57}}</ref>
 
===সরকারি কর্মচারী===
সাম্রাজ্যের দ্রুত বৃদ্ধির সাথে সাথে দক্ষ আরব কর্মীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমে যায়। ফলে মুয়াবিয়া বিজিত অঞ্চলগুলোতে পূর্ববর্তী সরকারি কর্মীদের দায়িত্বে বহাল রাখেন। ফলে স্থানীয় সরকারের অধিকাংশ দলিল [[গ্রীক ভাষা|গ্রীক]], [[কপ্টিক ভাষা|কপ্টিক]] ও [[ফার্সি ভাষা|ফার্সিতে]] লিপিবদ্ধ হত। [[আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান|আবদুল মালিকের]] সময় নিয়মিতভাবে সমস্ত সরকারি দলিলপত্র আরবিতে লেখা শুরু হয়।<ref name="Ochsenwald 2004 57"/>
 
===মুদ্রা===
[[File:Umayyad calif Sassanian prototype 695 CE.jpg|thumb|সাসানীয় আদলে তৈরী উমাইয়া খিলাফতের মুদ্রা, ৬৯৫ খ্রিষ্টাব্দ।]]
[[File:Al-Walid ibn Abdul-Rahman - Inscribed Pound Weight - Walters 476 - Three Quarter Left.jpg|thumb|right|উমাইয়া রাজবংশের [[মুদ্রা বাটখারা]], কাচ দ্বারা নির্মিত, ৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দ। ইসলামের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন, বর্তমানে [[ওয়াল্টারস আর্ট মিউজিয়াম|ওয়াল্টারস আর্ট মিউজিয়ামে]] রয়েছে।]]
[[File:Sekeye bani omayye.png|thumb|right|উমাইয়া খিলাফতের স্বর্ণমুদ্রা, [[ইরান]]]]
 
বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় সাম্রাজ্যে পূর্ব থেকেই মুদ্রা ব্যবস্থা চালু ছিল। উমাইয়া আমলেও একই ব্যবস্থা বহাল থাকে। আগে থেকে চলা মুদ্রাগুলো চলতে থাকে। তবে এগুলোর উপর কুরআনের আয়াত অঙ্কিত করা হয়। পাশাপাশি উমাইয়া সরকার নিজস্ব মুদ্রা চালু করে। এগুলো পূর্বের মুদ্রাগুলোর মতই ছিল। ইতিহাসে এটিই মুসলিম শাসক কর্তৃক প্রথম নিজস্ব মুদ্রা চালুর ঘটনা। স্বর্ণমুদ্রাকে বলা হত দিনার ও রৌপ্যমুদ্রাকে বলা হত দিরহাম।<ref name="Ochsenwald 2004 57"/>
 
===কেন্দ্রীয় দিওয়ান===
প্রশাসনিক কাজে খলিফাকে সহায়তা করার জন্য কেন্দ্রে ছয়টি দপ্তর ছিল, দিওয়ান আল খারাজ, দিওয়ান আল রাসাইল, দিওয়ান আল খাতাম, দিওয়ান আল বারিদ, দিওয়ান আল কুদাত, দিওয়ান আল জুন্দ।
 
====দিওয়ান আল খারাজ====
এই বিভাগ সাম্রাজ্যের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা তদারক করত। সেসাথে নতুন করারোপ ও সংগ্রহ ব্যবস্থা করা এ বিভাগের কাজ ছিল।
 
====দিওয়ান আল রাসাইল====
এ বিভাগের কাজ ছিল কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক অফিসারদের কাছে আদেশ জারি করা। এটি সকল বিভাগের কাজকে সমন্বয় করত এবং প্রধান সচিবালয় হিসেবে কার্যনির্বাহ করত।
 
====দিওয়ান আল খাতাম====
রাষ্ট্রীয় দলিলপত্রের সংরক্ষণের জন্য মুয়াবিয়া এ বিভাগটি সৃষ্টি করেন। স্বাক্ষর ও গন্তব্যে পাঠানোর আগে প্রতিটি দাপ্তরিক নথিপত্রের একটি কপি সংরক্ষণ করে রাখা হত। এর ফলে আবদুল মালিকের সময় দামেস্কে একটি আর্কাইভ গড়ে উঠে। আব্বাসীয় শাসনের মধ্যভাগ পর্যন্ত এ বিভাগটি টিকে ছিল।
 
====দিওয়ান আল বারিদ====
মুয়াবিয়া একটি ডাক ব্যবস্থা চালু করেন। আবদুল মালিক এটিকে সাম্রাজ্যজুড়ে বিস্তৃত করেন এবং ওয়ালিদ এর পূর্ণ ব্যবহার করেন। আবদুল মালিক নিয়মিত ডাকবিভাগ গঠন করেন। উমর ইবনে আবদুল আজিজ খোরাসান মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ক্যারাভেনসরাই স্থাপন করে এর উন্নতি সাধন করেন। খলিফার কাছ থেকে প্রদেশের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছে সংবাদ পাঠানোর জন্য সময় ব্যবধানে ঘোড়া বদল করা হত। পুরো মহাসড়ক ১২ মাইল (১৯ কিমি) ব্যবধানের কয়েকটি ধাপে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেকটি ধাপেই ডাক পরিবহনের জন্য ঘোড়া, গাধা ও উট রাখা থাকত। প্রথমদিকে এটি সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য চালু করা হলেও পর্যটকরাও এ থেকে উপকৃত হয়। ডাক পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ঘোড়ার গাড়িগুলো দ্রুত সেনা পাঠানোর কাজেও ব্যবহৃত হত। এগুলো একই সময় ৫০ থেকে ১০০ জন সেনা পরিবহন করতে পারত। গভর্নর ইউসুফ বিন উমরের সময় ইরাকের ডাক বিভাগের জন্য বছরে ৪০,০০,০০০ দিরহাম খরচ হত।
 
====দিওয়ান আল কুদাত====
ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিচারের কাজ মুহাম্মদ (সা) ও খলিফারা ব্যক্তিগতভাবে তদারক করতেন। সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ব্যাপক হওয়ার পর খলিফা [[উমর ইবনুল খাত্তাব|উমর]] পৃথক বিচারবিভাগ চালু করেন এবং ২৩ হিজরি/৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মিশরে প্রথম কাজি নিযুক্ত করা হয়। ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দের পর উমাইয়া খলিফা হিশাম ও দ্বিতীয় ওয়ালিদের সময় মিশরের বেশ কিছু বিচারক একের পর একজন দায়িত্বপালন করেন।
 
====দিওয়ান আল জুন্দ====
উমরের সময় আরব ও অন্য জাতিগোষ্ঠীর মুসলিম সৈনিকদের ভাতা প্রদানের নীতি উমাইয়াদের সময় পরিবর্তন হয়। উমাইয়ারা সক্রিয় ভূমিকা না রাখলেও ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা রাখে। হিশাম এ ব্যবস্থার সংস্কার করেন এবং যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে শুধু তাদের ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। বাইজেন্টাইনদের আদলে সেনাবাহিনীকে সংস্কার করা হয় এবং পাঁচটি অংশে বিভক্ত করা হয়, যথাক্রমে, মধ্যভাগ, দুই প্রান্ত, সম্মুখভাগ ও পশ্চাতভাগ। কুচকাওয়াচ বা যুদ্ধক্ষেত্রে একই গঠনবিন্যাস অনুসরণ করা হত। দ্বিতীয় মারওয়ান পুরনো বিভাগ বাতিল করেন এবং নতুন প্রথায় কুরদুস নামক সুসংঘটিত দলের সৃষ্টি করেন। উমাইয়া সেনারা তিনটি ভাগে বিভক্ত থাকত, যথাক্রমে, পদাতিক, অশ্বারোহী ও গোলন্দাজ। আরব সেনারা গ্রীক কায়দায় পোষাক ও অস্ত্রে সজ্জিত থাকত। উমাইয়া অশ্বারোহীরা সমান ও গোলাকার সেডল ব্যবহার করত। গোলন্দাজরা আরাদাহ (বেলিস্টা), মেনজানিক (মানগোনাল) ও দাবাবাহ বা কাবশ (বেটারিং রেম) ব্যবহার করত। ভারি যন্ত্রপাতি ও মালামাল উটের পিঠে করে সেনাবাহিনীর পিছনে থাকত।
 
==সামাজিক সংগঠন==
[[File:Humeima ivory.jpg|thumb|200px|হুমিয়ায় ([[জর্দা‌ন|জর্ডান]]) আব্বাসীয়দের বাসস্থানে আবিষ্কৃত হাতির দাঁতের তৈরি বস্তু (আনুমানিক ৮ম শতক। গঠনশৈলী অনুযায়ী এটির উৎপত্তিস্থল উত্তর পূর্ব [[ইরান]] যা একসময় হাশিমিয়াদের সামরিক ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল।.<ref>R.M. Foote ''et al.'', Report on Humeima excavations, in V. Egan and P.M. Bikai, "Archaeology in Jordan", ''American Journal of Archaeology'' 103 (1999), p. 514.</ref>]]
 
উমাইয়া খিলাফতের সময় প্রধান চারটি সামাজিক শ্রেণী ছিলঃ
#মুসলিম আরব
#মুসলিম অনারব (মুসলিম আরবদের মিত্র)
#অমুসলিম স্বাধীন ব্যক্তি (খ্রিষ্টান, ইহুদি ও জরস্ট্রিয়ান)
#দাস
 
মুসলিম আরবরা সমাজের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করত। ইসলামে সকল মুসলিমের সমান অবস্থান থাকলেও আরব মুসলিমরা নিজেদের সমাজের উপরের অবস্থানে রাখে।
 
মুসলিমদের মধ্যে এ বিভাজন সাম্রাজ্যজুড়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। ইসলাম ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে মুসলিমদের মধ্যে অনারব জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আরব মুসলিমদের মত সমান অধিকার না থাকার ফলে নতুন ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরী হয়। সে সাথে ধর্মান্তরিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অমুসলিমদের কাছ থেকে সংগৃহিত করের পরিমাণ কমে আসে। ৭৪০ এর দশকে আব্বাসীয় বিপ্লবের আগ পর্যন্ত এ সমস্যা চলতে থাকে।<ref>{{cite book|last=Ochsenwald|first=William|title=The Middle East, A History|year=2004|publisher=McGraw Hill|isbn=0-07-244233-6|pages=55–56}}</ref>
 
===অমুসলিম===
অমুসলিমদের মধ্যে ছিল খ্রিষ্টান, ইহুদি, জরস্ট্রিয়ান ও পৌত্তলিক [[বার্বার জাতি|বার্বার]] যাদের [[জিম্মি]] বলা হত। মুসলিম শাসনের প্রতি অনুগত থাকার শর্তে তারা তাদের সামাজিক অধিকার ভোগ করত। তাদের নিজস্ব আদালত ছিল এবং সাম্রাজ্যজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা বহাল ছিল। সরকারি দপ্তরে সর্বোচ্চ পদ না পীও অনেক অমুসলিম প্রশাসনিক পদে আসীন ছিল। খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের মধ্যে এসময় অনেক বড় মাপের ধর্মতাত্ত্বিকের আবির্ভাব হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে ফলে অমুসলিমদের মধ্যে চিন্তাবিদের সংখ্যা কমে যায়।<ref>{{cite book|last=Ochsenwald|first=William|title=The Middle East, A History|year=2004|publisher=McGraw Hill|isbn=0-07-244233-6|page=56}}</ref>
 
==তথ্যসূত্র==