বাংলা উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের নতুনতম অঙ্গঅঙ্গ। এর সূত্রপাত ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়েসময়ে। প্যারিদাস মিত্রের ‘’আলালের ঘরে দুলাল’’ প্রকাশিত হয় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দেখ্রিস্টাব্দে। এর আখ্যানভাগে এবং রচনাশৈলীতে উপন্যাসের মেজাজ পরিলক্ষিত হয়হয়। বাযঙলা উপন্যাসের একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায়চট্টপাধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শুরু করে দীর্ঘ কাল বাঙলা উপন্যাসে ইয়োরোপীয় উপন্যাসের ধাঁচ ছায়া ফেলেছেফেলেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি বাঙলা সাহিত্যের সকল শাখাকে ঋদ্ধ করেছেন তাঁর হাতেও উপন্যাস নতুন মাত্রা লাভ করেছে যদিও সমালোচকরা রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসকে রসোত্তীর্ণ মনে করেন নানা। শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায় ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর আরেকজন প্রভাবশালী ঔপন্যাসিকঔপন্যাসিক। তবে এরা সবাই মানুষের ওপর তলের ওপর দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রেখেছেনরেখেছেন।
বাঙলা উপন্যাস নতুন মাত্রা লাভ করে মানিক বন্দ্যেপাধ্যায়, জগদীশ গুপ্ত ও কমলকুমার মজুমদারের হাতেহাতে। এদের হাতে উপন্যাস বড় মাপের পরিবর্তে মানবিক অস্তিত্বের নানা দিকের ওপর আলোকপাত করে বিকশিত হয়হয়। বস্তুত: রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে মানিক বন্দ্যেপাধ্যায় সম্ভবত সবচেয়ে কুশলী উপন্যাস শিল্পীশিল্পী। তারই পদরেখায় আমরা দেখতে পাই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় কেকে। এরা উপন্যাসকে মানবিক অস্তিতেব্র মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক জটিলতার ওপর নিবিড় আলোপাত করেছেন, লেখনীশৈলীর জোরে উপন্যাসকে সাধারণ পাঠকের কাছকাছি নিয়ে গেছেন এবং একই সঙ্গে উপন্যাসের শেল্পশৈলীতে এনছেন দৃঢ় গদ্যের সক্ষমতা সক্ষমতা।
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাঙলা উপন্যাসে সম্পূর্ণ নতুন করণকৌশল নিয়ে আবির্ভূত হলেন বাংলাদেশের হুমায়ূন আহমেদআহমেদ। তিনি বাঙলা উপন্যাসকে নুতন খাতে প্রবাহিত করলেনকরলেন। বাঙলা উপন্যাস দীর্ঘকাল পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্যিকদের হাতে পরিপুষ্ট হয়েছিলহয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদ একাই শত বর্ষের খামতি পূরণ করে দিলেনদিলেন। তাঁর উপন্যাসের অবয়ব হলো সবজান্তা লেখকের বর্ণনার পরিবর্তে পাত্র-পাত্রীদের মিথস্ক্রিয়া অর্থাৎ সংলাপকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি ছোট এবং স্বল্প পরিসরে অনেক কথা বলার পদ্ধতি প্রবর্তন করলেন তিনিতিনি। হুমায়ূন আহমেদ দেখালেন যে ইয়োরোপীয় আদলের বাইরেও সফল, রসময় এবং শিল্পোত্তীর্ণ উপন্যাস লেখা সম্ভব সম্ভব।
১৯৮০’র দশকে হুমায়ূন আহসমদের সবল উপস্থিতি অনুভব করার আগে বাংলা উপন্যাস মূলত পশ্চিমবঙ্গের ঔপন্যাসিকদের হাতে গড়ে উঠেছিলউঠেছিল। বাংলাদেশের অবদান ছিল তুলনামূলক ভাবে কম, গুণগত মানও প্রশ্নাতীত ছিল নানা। এ সময়কার কয়েকজন প্রধান লেখক হলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, সুনীল, শীর্ষেন্দু প্রমুখপ্রমুখ।
একবিংশ শতাব্দী শুরু হয়েছে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগের উত্তরাধিকার বহন করেকরে। এ সময় কিছু কিছু নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাসের স্বাক্ষর রেখেছেনি কতিপয় লেখকলেখক। উত্তরআধুনক ধ্যানধানা অবলম্বন করেও লিখেছেন কেউ কেউকেউ। তবে নতুন কোন ধারা প্রবল বেগে ধাবিত করার মতো নতুন কারো আবির্ভাব এখনো হয় নিনি। তবে বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকটি আখতারুজ্জামন ইলিয়াস, নাসরিন জাহান, হুমায়ুন আজাদ, শহিদুল জহির প্রমুখ শক্তিশালী ঔপন্যাসিকের সবল উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছেকরেছে। পশ্চিমবঙ্গেও অনকে নতুন নতুন ঔপন্যাসিকের আবির্ভাব লক্ষ্য করা গেছে যদিও প্রচলিত রীতির বাইরে যাওয়ার শক্তিশালী হাতের দেখা পাওয়া যায় নিন।