পুলিনবিহারী দাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Bodhisattwa ব্যবহারকারী পুলীনবিহারী দাশ পাতাটিকে পুলিন বিহারী দাশ শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন
Picture +
১ নং লাইন:
 
{{Infobox person
| name = পুলীনবিহারীপুলিন বিহারী দাশ
| image = Pulin Behari Das.jpg
| image_size = 200
| caption = পুলিন বিহারী দাশ
| birth_date = {{Birth date|১৮৭৭|১|২৪}}
| birth_place = [[ফরিদপুর সদর উপজেলা|ফারিদপুরফরিদপুর]], [[অবিভক্ত বঙ্গ]], [[ব্রিটিশ ভারত]]
| death_date = ১৭ আগস্ট ১৯৪৯ (বয়স ৭২ বৎসর)
| death_place = [[কলকাতা]], [[পশ্চিমবঙ্গ]], [[ভারত]]
১৩ ⟶ ১৫ নং লাইন:
}}
 
'''পুলীনবিহারীপুলিন বিহারী দাশ''' (১৮৭৭-১৯৪৯) ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক।বিখ্যাত ব্রিটিশবিপ্লবী উপনিবেশ ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য যারা জান কবুল করে সংগ্রাম করেছেনছিলেন। তিনি তাদের অন্যতম। তিনি "বিপ্লবী পুলীনবিহারী" নামে সমধিক খ্যাত। তিনিছিলেন [[ঢাকা অনুশলিন সমিতি|ঢাকা অনুশলিন সমিতির]] প্রতিষ্ঠাতা।
 
== প্রারম্ভিক জীবন ==
১৮৭৭ সালে [[শারিয়তপুর]] জেলার লনসিং গ্রামের শিক্ষিত স্বছল মধ্যবিত্ত দাস পরিবারে নব কুমার দাসের পুত্ররূপে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন পুলীনবিহারীপুলিন বিহারী দাশ<ref name="samsad">সেনগুপ্ত, এস. (ed.) (১৯৮৮). ''সমসদ বাংলা চরিতাভিধান'' (বাংলা), কলকাতা: সাহিত্য সমসদ, পৃষ্ঠা.২৮৮</ref>। পারিবারিক বেশ কিছু জমি জমা থাকা সত্ত্বেও ওনাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা চাকুরীজীবী ছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন [[মাদারীপুরে]]র সাব ডিভিসনাল কোর্টের উকিল এবং তাঁর খুল্লতাতরা ছিলেন যথাক্রমে একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও মুন্সেফ। ১৮৯৪ সালে ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়ার হওয়ার পর [[ঢাকা কলেজ]]এ ভর্তি হন এবং সেইখানে শিক্ষাগ্রহণ কালেই তিনি ঐ কলেজের গবেষণাগারের সাহায্যকারী তথা ব্যবহারিক শিক্ষক হিসাবে কাজ করতে থাকেন। বাল্যকাল থেকেই পুলীনবিহারির শরীরচর্চার দিকে ছিল প্রবল ঝোঁক এবং বাস্তবিক তিনি একজন দক্ষ [[লাঠিয়াল]]ও ছিলেন। [[কলকাতা]]য় [[সরলা দেবী]]র আখড়ার সাফল্য দেখে তিনি টিকাটুলিতে ১৯০৩ সালে একটি নিজস্ব [[আখড়া]] চালু করেন। ১৯০৫ সালে তৎকালীন বিখ্যাত লাঠিয়াল মুর্তাজার কাছ থেকে লাঠিখেলা ও অসিক্রীড়ার কৌশলও রপ্ত করেছিলেন তিনি।
 
== কর্মজীবন ==
নতুন সৃষ্ট দুই রাজ্য, পূর্ববঙ্গ ও আসামে ১৯০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে [[বিপিন চন্দ্র পাল]] ও প্রমথ নাথ মিত্রের সফর পুলিনবিহারিরপুলিন বিহারির ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। বিদেশী শাসন শৃঙ্খল থেকে ভারতমাতার মুক্তির জন্য প্রমথ নাথের উদাত্ত আহ্বানে<ref name="agit">{{cite book|title=Political Agitators in India|url=http://www.archive.org/details/politicalagitato00slsnuoft|page=67}}</ref> সাড়া দিয়ে পুলীনবিহারী দাস এগিয়ে আসেন এবং তাঁর উপর [[ঢাকা]]য় [[অনুশীলন সমিতি]]র প্রতিষ্ঠার ভার বর্তায়<ref name="agit"/>। অবশেষে সেই বছরেরই অক্টোবর মাসে<ref>{{cite book|title=From Plassey to Partition:A History of Modern India|last=Sekhar Bandyopadhyay|publisher=Orient Blackswan|url=http://books.google.co.in/books?id=-EpNz0U8VEQC|isbn=81-250-2596-0|page=260}}</ref> ৮০ জন যুবকবৃন্দ নিয়ে অধুনা বাংলাদেশের ঢাকায় তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন অনুশীলন সমিতির। তিনি খুব ভালো সংগঠক ছিলেন আর তাই ওনার সাংগঠনিক দক্ষতার গুণে ঐ রাজ্যে অনুশীলন সমিতির পাঁচ শতাধিক শাখাও স্থাপিত হয়। এরপর তিনি সেই ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করলেন ‘ন্যাশানাল স্কুল’ কিন্তু আদতে ওটি ছিল সশস্ত্র বিপ্লবী দল তৈরির একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এইখানে প্রথমে ছাত্রদের লাঠি খেলা এবং কাঠের তরোয়ালের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। তারপর তাদের ছোরা ও একদম শেষে পিস্তল ও রিভলভারের সাহায্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য তিরী করা হতো।
এরপর তিনি সেই ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করলেন ‘ন্যাশানাল স্কুল’ কিন্তু আদতে ওটি ছিল সশস্ত্র বিপ্লবী দল তৈরির একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এইখানে প্রথমে ছাত্রদের লাঠি খেলা এবং কাঠের তরোয়ালের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। তারপর তাদের ছোরা ও একদম শেষে পিস্তল ও রিভলভারের সাহায্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য তিরী করা হতো।
 
ঢাকার পূর্বতন ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট বাসিল কপ্লেস্টন অ্যালেনকে সরানোর এক জবরদস্ত পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। ১৯০৭ সালের ২৩শে ডিসেম্বর অ্যালেন যখন ইংল্যান্ডে ফেরার উদ্দেশে গোয়ালন্দ স্টেশনে পৌঁছলেন ,তখন তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হলে তিনি একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন। এর <ref>{{cite book|title=ঢাকা|last=বাসিল কপ্লেস্টোন আলেন|publisher=দ্য পাইওনিয়ার প্রেস|url=http://www.archive.org/details/daccaallen00alle|page=53}}</ref>কিছু দিন পরেই চারশত জন দাঙ্গাবাজ মুসলিম হিন্দু বিরোধী ধ্বনি দিতে দিতে পুলীনবিহারিরপুলিন বিহারীর বাড়িতে আক্রমণ করলে তিনি মাত্র কয়েকজন সঙ্গীদের নিয়ে সাহসিকতার সাথে ঐ দাঙ্গাবাজদের মোকাবিলা করেন।
১৯০৮এর গোড়ার দিকে পুলীনপুলিন বিহারি দাসবিহারী দাশ বরা ডাকাতি সংগঠিত করেন। দিনের আলোতে [[ঢাকা]] জেলার অধীনস্থ [[নবাবগঞ্জ]] থানার অন্তর্গত বরার জমিদার বাড়িতে একদল বিপ্লবীদের সাথে নিয়ে এক রোমাঞ্চকর ডাকাতি করেন এবং সেই লুণ্ঠিত অর্থ অস্ত্র শস্ত্র, গোলা বারুদ কেনার কাজে ব্যয়িত করেন।
সেই বছরেই ওনাকে ভূপেশ চন্দ্র নাগ, শ্যাম সুন্দর চক্রবর্তী, কৃষ্ণ কুমার মিত্র, সুবোধ মল্লিক, অশ্বিনী দত্ত সহযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং [[মন্টোগোমারি]] কারাগারে নিক্ষিপ্ত করা হয় কিন্তু শত অত্যাচার, শত নিষ্পেষণ তাঁর বিপ্লবী সত্তাকে অবদমিত করে রাখতে পারেনি। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে জেলের অন্ধকার কুঠুরি থেকে বেরিয়ে আসার পর আবার তাঁর বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। এই সময়েই অনুশীলন সমিতির ঢাকা দল [[কলকাতা]] শাখাটিকে পরিচালনা করতে থাকে। যদিও প্রমথনাথ মিত্রের মৃত্যুর পর এই দুটি দল পৃথক হয়ে যায়।
 
১৯১০ সালের জুলাই মাসে ৪৬জন বিপ্লবী সহযোগে পুলীনপুলিন বিহারিবিহারী দাসকেদাশকে ঢাকা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আরও ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিচারে পুলীনবাবুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া এবং [[সেলুলার জেল]]এ স্থানান্তর করা হয় যেখানে হেমচন্দ্র দাস, [[বারীন্দ্র কুমার ঘোষ]], [[বিনায়ক সাভারকর]]এর মত বিখ্যাত বিপ্লবীদের সান্নিধ্যে তিনি আসেন।
১৯১৮ সালে পুলিনের সাজা কিছুটা কমে এবং তাঁকে বাড়িতে নজরবন্দী করে রাখা হয় এবং ১৯১৯ সালে তাঁকে পুরিপুরিভাবে মুক্তি দেওয়া হয় এবং মুক্তি পাওয়ার পর সমিতির কাজে আত্মনিয়োগ করার চেষ্টা করেন কিন্তু তখন তাঁর সেই সংগঠনকে সরকার নিষিদ্ধ করার ফলে তার সদস্যরা এখানে ওখানে ছড়িয়ে পড়েন। এরপর [[নাগপুর]] ও পরে [[কলকাতা]]য় কংগ্রেস অধিবেশনে অবশিষ্ট বিপ্লবীরা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন কিন্তু পুলীন বিহারি দাস কখনও মোহনদাসের আদর্শের সাথে আপোস করতে চাননি এবং তাঁকে তাঁর নেতা বলে মানতে পারেন নি। সেই সময় তাঁর সমিতির নিষিদ্ধকরণ হওয়ার ফলে ১৯২০ সালে ভারত সেবক সঙ্ঘ নামে আর একটি দল গঠন করেন। এরপর ব্যারিস্টার এস.আর.দাসের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘হক কথা’ এবং ‘স্বরাজ’ নামে দুটি সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং সেখানে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের সমালোচনা করেন। সমিতির কাজ গোপনে চললেও সমিতির সাথে তাঁর বিরোধ এরপর প্রকাশ্যে চলে আসে। এরপর সমিতির সাথে তিনি সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন এবং ভারত সেবক সঙ্ঘকে ভেঙ্গে দিয়ে ১৯২২ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন।
১৯১৮ সালে পুলিনের সাজা কিছুটা কমে এবং তাঁকে বাড়িতে নজরবন্দী করে রাখা হয় এবং ১৯১৯ সালে তাঁকে পুরিপুরিভাবে মুক্তি দেওয়া হয় এবং মুক্তি পাওয়ার পর সমিতির কাজে আত্মনিয়োগ করার চেষ্টা করেন কিন্তু তখন তাঁর সেই সংগঠনকে সরকার নিষিদ্ধ করার ফলে তার সদস্যরা এখানে ওখানে ছড়িয়ে পড়েন। এরপর [[নাগপুর]] ও পরে [[কলকাতা]]য় কংগ্রেস অধিবেশনে অবশিষ্ট বিপ্লবীরা [[মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীরগান্ধী]]র আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন কিন্তু পুলীনপুলিন বিহারিবিহারী দাসদাশ কখনও মোহনদাসের আদর্শের সাথে আপোস করতে চাননি এবং তাঁকে তাঁর নেতা বলে মানতে পারেন নি।পারেননি। সেই সময় তাঁর সমিতির নিষিদ্ধকরণ হওয়ার ফলে ১৯২০ সালে ভারত সেবক সঙ্ঘ নামে আর একটি দল গঠন করেন। এরপর ব্যারিস্টার এস.আর.দাসের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘হক কথা’ এবং ‘স্বরাজ’ নামে দুটি সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং সেখানে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের সমালোচনা করেন। সমিতির কাজ গোপনে চললেও সমিতির সাথে তাঁর বিরোধ এরপর প্রকাশ্যে চলে আসে। এরপর সমিতির সাথে তিনি সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন এবং ভারত সেবক সঙ্ঘকে ভেঙ্গে দিয়ে ১৯২২ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৯২৮ সালে কলকাতার মেছুয়া বাজারে বঙ্গীয় ব্যয়াম সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এটা ছিল শারীরিক প্রশিক্ষণের একটি কেন্দ্র এবং কার্যত: একটি আখড়া যেখানে যুবকদের লাঠি চালনা, তলোয়ার চালনা ও কুস্তি শেখানো হত।
১৯২৮ সালে কলকাতার মেছুয়া বাজারে বঙ্গীয় ব্যয়াম সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এটা ছিল শারীরিক প্রশিক্ষণের একটি কেন্দ্র এবং কার্যত: একটি আখড়া যেখানে যুবকদের লাঠি চালনা, তলোয়ার চালনা ও কুস্তি শেখানো হত।
== শেষ জীবন ==
৩৮ ⟶ ৩৭ নং লাইন:
== সম্মাননা ==
[[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] ওনার সম্মানে পুলীনপুলিন বিহারিবিহারী দাসদাশ স্মৃতি পদক নামে একটি পদক প্রচলন করেছে।
 
== তথ্যসূত্র ==