সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে, কোন সমস্যা?
fixing copyvio & expanding......
৩ নং লাইন:
<!-- For administrator use only: {{Old AfD multi|page=পাবনা এডোয়ার্ড কলেজ|date=১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪|result='''রেখে দেওয়ার'''}} -->
<!-- End of AfD message, feel free to edit beyond this point -->
'''এডওয়ার্ড কলেজ''' বা '''সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ''', বাংলাদেশের পাবনা জেলায় অবস্থিত অবিভক্ত বৃটিশ বাংলায় প্রতিষ্ঠিত একটি ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮৯৮ সালে শ্রী গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন।
অবিভক্ত বৃটিশ বাংলায় উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আধুনিক শিক্ষা বিষয়ক ঐতিহাসিক নীতিমালা আশ্রয় করে কলেজ স্তরের শিক্ষা প্রসারের সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়। পাবনা জেলাবাসীর প্রতীক্ষার কাল খুব বেশি দীর্ঘ হয়নি, ঐ শতকেরই শেষে ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে এ জেলা শহরে কলেজ প্রতিষ্ঠার দীপ্তিময় ইতিহাস রচিত হয়। স্বাধীন বাংলার সীমানায় তখনও কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা বোর্ড গড়ে ওঠেনি, উত্তরাঞ্চলের বিশাল এলাকায় রাজশাহী কলেজটি ছাড়া আর কোনো কলেজ হয়নি। কলেজ প্রতিষ্ঠার এই প্রোজ্জ্বল প্রেক্ষাপটে একজন মানুষের নাম উচ্চারণ করতেই হয়, যে মানুষটির উৎসাহে ও দৃঢ় প্রত্যয়ে পাবনার নতুন প্রজন্মের সাথে আধুনিক শিক্ষার সময়োচিত সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়েছিল- তিনি হলেন শ্রী গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী।
 
==ইতিহাস==
পদ্মা-যমুনার বিধৌত পলিমাটিতে ইতোমধ্যে (১৮২৮ খ্রিঃ) জেলার ভৌগোলিক সীমানা চিহ্নিত হয়ে যাওয়া পাবনা নামের ভূখণ্ডের জেলা শহরে ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে শ্রী গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ‘পাবনা ইনস্টিটিউশন (১৮৯৪ খ্রিঃ)’ বিদ্যালয়ের (বর্তমানের গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউট) একটি কক্ষে একটি নতুন কলেজের দ্বারোদঘাটন করলেন এবং প্রধান শিক্ষকতার সাথে অধ্যক্ষের দায়িত্বেও সমাসীন হলেন। সে বছরেরই ডিসেম্বরে এফ.এ স্ট্যান্ডার্ড কলেজ হিসেবে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি লাভের মধ্য দিয়ে তাঁর স্বপ্নের বাস্তবায়ন হলো। তিনি ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ খ্রিস্টাব্দে কলেজটির নামকরণ হয় ‘পাবনা কলেজ’। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে প্রয়াত সম্রাট ৭ম এডওয়ার্ডের স্মৃতি রক্ষার্থে কলেজটির নামকরণ হলো ‘এডওয়ার্ড কলেজ’। প্রতিষ্ঠাতার অধ্যক্ষতাকালীন সময়ের সুযোগ্য সহকর্মী শ্রী গোপাল চন্দ্র মৈত্র, শ্রী আশুতোষ রায়, পণ্ডিত হরি নারায়ন কাব্যতীর্থ বিদ্যাবিনোদ, মোলভী সিরাজ-উল-হক অসাধারণ সুনামের সাথে অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন। পাঠদানের বিষয়গুলো ছিল- ইংরেজি, ইতিহাস, যুক্তিবিদ্যা, গণিত, বিজ্ঞান, সংস্কৃত, আরবী ও ফারসী। কলেজটিকে আশ্রয় করে নতুন শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে ওঠে, শিক্ষার প্রসার হয়, সংস্কৃতির বাহু বিস্তার ঘটে, জিজ্ঞাসার অসীমতা সৃষ্টি হয়। কলেজটিকে কেন্দ্র করে বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির দীপ্ত অঙ্গনে পাবনা জেলার স্থান স্বর্ণময় হয়।
১৮২৮ সালে পাবনা জেলার ভৌগোলিক সীমানা নির্ধারিত হওয়ার পর, এ অঞ্চলে শিক্ষা প্রসারের কথা চিন্তা করা হয়। উল্লেখ্য, সেসময় বাংলায় একমাত্র কলেজটি ছিল, রাজশাহী কলেজ। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ে শ্রী গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী পাবনায় প্রথমে “পাবনা ইনস্টিটিউশন” (বর্তমান গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউট) নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীতে ১৮৯৮ সালে এ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষেই গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী এডওয়ার্ড কলেজের কার্যক্রম শুরু করেন। একই বছর ডিসেম্বরে এফ.এ স্ট্যান্ডার্ড কলেজ নামে কলেজটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। প্রথমদিকে কলেজটি মাত্র ২৬ জন শিক্ষার্ত্রী নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী ১৯০৬ সাল পর্যন্ত কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন এবং সেসময় এর নাম পরিবর্তন করে পাবনা কলেজ নামকরণ করা হয়। ১৯১১ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে পুনরায় সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ডের নামানুসারে ''এডওয়ার্ড কলেজ'' করা হয়।
 
এডওয়ার্ড কলেজের নিজস্ব ভবন ও জায়গা-জমি হতে প্রায় ১৭/১৮ বছর লেগেছে। তবে ২৫ বছর পূর্তির আগেই নিজস্ব জায়গা-জমি অট্টালিকা আর পাঠদানের সুনাম দ্বারা বৃটিশ বাংলার একটি আদর্শ কলেজে উন্নীত হয়ে যায়। অসাধ্য সাধনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কিছু প্রোজ্জ্বল স্মারক হিসেবে স্মর্তব্য যে,- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে তাড়াশের জমিদার রায় বাহাদুর বনমালী রায় কলেজকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দানের ঘোষণাসহ কলেজ পরিদর্শনে আসা বাংলার গভর্নর লর্ড টমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেলকে স্বাগত সম্ভাষণ জানান। এ অনুষ্ঠানেই গভর্নরও সমপরিমান টাকা দানের প্রতিশ্রুতি দেন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কুষ্টিয়ার আমলা সদরপুরের জমিদার প্যারীসুন্দরী দাসীর উত্তরাধিকারী গোপী সুন্দরী দাসী ও দেবেন্দ্র নারায়ণ সিংহ সাড়ে ৪৬ বিঘা জমি দান করেন। এ সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন এলাকার বিদ্যানুরাগী জমিদারগণ কলেজের জন্য উদার হস্তে অর্থ দান করেন।
 
১৯১৫-১৬ সালের মাধ্যেই লক্ষাধিক টাকায় কলেজের অট্টালিকা নির্মাণের প্রাথমিক কাজ হয়ে যায়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে আপ টু ইন্টারমিডিয়েট সাইন্স স্ট্যান্ডার্ড কলেজ হিসেবে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি ও ৫টি বিষয়ে পাঠদানের অনুমতি পাওয়া যায়। আগে থেকেই ইন্টারমিডিয়েট আর্টস পড়ার জন্য ১০টি বিষয়ে পাঠদানের অনুমতি পেয়ে পাঠদান চলছিল।
 
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বি,এস-সি কোর্স চালু হয়। এর আগের বছরে বি,এস-সি ভবন নির্মিত হয়। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কলেজে সহ-শিক্ষা চালু হয়। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বি, এ কোর্স খোলা হয়। লক্ষ্যণীয় যে, ডিগ্রী পর্যায়ে আর্টস চালুর ১৫ বছর আগে সাইন্স চালু হয়। বিষয়টি পাবনার নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার সময়োচিত সিদ্ধান্ত হিসেবে দীর্ঘদিন আলোচিত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই কলা ভবন, ছাত্রাবাস, জিমনেসিয়াম নির্মানসহ বহু উন্নয়ন কাজ হয়ে যায়। ১৯৪৬ সালে কলেজে বায়োলজি বিভাগ খোলা হয়।
 
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় ও পরের বছর অর্থনীতিতে অনার্স চালু হয়। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে কলেজ সংলগ্ন জমি অধিগ্রহণের ফলে মোট জমির পরিমাণ হয় ৪৯ একর। এ বছরই পৃথক ডিগ্রী ভবনসহ ভৌত অবকাঠামো নির্মান কাজের ভিত্তি স্থাপিত হয় নতুন জমিতে। ১৯৬৮ সালের ১ মার্চ থেকে কলেজটিকে প্রাদেশিকীকরণের ফলে সরকারি হয়ে যায়। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত ও ব্যবস্থাপনায় অনার্স কোর্স চালু হয়। পরের বছর বাংলা ও অর্থনীতিতে এম, এ কোর্স শুরু হয়।
 
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে এ কলেজ ৩৫টি সরকারি কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পভুক্ত হয়। এ প্রকল্পাধীনে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে কলেজটি ‘আটটি বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়। এ প্রকল্পের ২৯৮.৮৪ লক্ষ টাকায় ১৯৮৭-৯০ সালের মধ্যে কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি, রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, হিসাববিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও ইতিহাস বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। এতে অনার্স কোর্স চালু বিষয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২টিতে। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে এই ১২টি বিষয়েই মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে পাঠদান শুরু হয়। এর পরের বছর প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স শুরু হয়। ২০১১ সালে ফিন্যান্স ও মার্কেটিং বিষয়ে অনার্স কোর্সে পাঠদান শুরু হয়েছে। বর্তমানে এ কলেজে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার।
 
বিশ শতকের গোধুলি বেলায় এডওয়ার্ড কলেজ শতবর্ষের গৌরবদীপ্ত পথ পরিক্রমা সম্পন্ন করে। বিগত ৬ মার্চ থেকে ১০ মার্চ ১৯৯৯ তারিখব্যাপী এডওয়ার্ড কলেজের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদ্‌যাপিত হয়। একুশ শতকের সুপ্রভাত কলেজটির জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে পুরস্কৃত হওয়ার শুভ বার্তা বয়ে এনেছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যে সারাদেশের সরকারি কলেজগুলোকে ৬টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ এএ ক্যাটাগরিভুক্ত হয়েছে এডওয়ার্ড কলেজ। ২০১০-১১ অর্থ বছরে জেলা শহরে অবস্থিত ৬৯টি সরকারি কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আরো একাডেমিক ভবন নির্মাণ সহ ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। ইতোমধ্যে কলেজের বিভিন্ন বিভাগে সর্বমোট ১৬০টি পদ সৃষ্টি হয়েছে এবং পরিসংখ্যান, ভূগোল ও মনোবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স প্রবর্তনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অনুমতিসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির জন্য যথানিয়মে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।