ভারতের জাতীয় পতাকা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Xqbot (আলোচনা | অবদান)
Robot: en:Flag of India is a featured article; কসমেটিক পরিবর্তন
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১৪ নং লাইন:
আইনত, কেবলমাত্র [[খাদি|খাদিবস্ত্রেই]] জাতীয় পতাকা প্রস্তুত করার নিয়ম রয়েছে। [[ভারতীয় মানক ব্যুরো]] এই পতাকা উৎপাদনের পদ্ধতি ও নির্দিষ্ট নিয়মকানুন স্থির করে দেয়। উৎপাদনের অধিকার [[খাদি উন্নয়ন ও গ্রামীণ শিল্প কমিশন|খাদি উন্নয়ন ও গ্রামীণ শিল্প কমিশনের]] হাতে ন্যস্ত। এই কমিশন বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীকে উৎপাদনের অধিকার দিয়ে থাকে। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, [[কর্ণাটক খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সংঘ]] জাতীয় পতাকার একমাত্র উৎপাদক।
 
পতাকার ব্যবহারবিধি "[[ভারতীয় পতাকাবিধি]]" ও জাতীয় প্রতীকাদি সংক্রান্ত অন্যান্য আইন অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হয়। পুরনো বিধি অনুযায়ী, [[স্বাধীনতা দিবস (ভারত)|স্বাধীনতা দিবস]], [[সাধারণতন্ত্র দিবস (ভারত)|সাধারণতন্ত্র দিবস]] সহ অন্যান্য জাতীয় দিবস ছাড়া সাধারণ নাগরিকেরা পতাকা উত্তোলন করতে পারতেন না। ২০০২ সালে, এক নাগরিকের আপিলের ভিত্তিতে [[ভারতের সুপ্রিম কোর্ট|সুপ্রিম কোর্ট]] সাধারণ নাগরিকদের জাতীয় পতাকা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য [[ভারত সরকার|ভারত সরকারকে]] পতাকাবিধি সংস্কারের নির্দেশ দেন। সেই মতো [[কেন্দ্রীয় সচিবালয় (ভারত)|ভারতের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট]] পতাকাবিধি সংস্কার করে কয়েকটি সীমিত ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার ব্যবহার অনুমোদিত করে। ২০০৫ সালে পতাকাবিধি পুনরায় সংশোধন করে কয়েকটি বিশেষ ধরনের বস্ত্র ব্যবহারের অতিরিক্ত ব্যবস্থা করা হয়। পতাকা উড্ডীয়নের প্রথা ও অন্যান্য জাতীয় ও অ-জাতীয় পতাকাগুলির সঙ্গে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধিও পতাকাবিধিতে উল্লিখিত হয়েছে।
 
== ইতিহাস ==
২৩ নং লাইন:
[[চিত্র:AzadHindFlag.png|thumb|220px|right| [[আজাদ হিন্দ]] পতাকা, [[নাৎসি জার্মানি]]র [[ফ্রি ইন্ডিয়া লিজিয়ন|ফ্রি ইন্ডিয়া লিজিয়নে]] প্রথম উত্তোলিত]]
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারত ছিল [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ শাসনের]] অধীনে। [[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন]] শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের শাসকেরা ভিন্ন ভিন্ন নকশার একাধিক পতাকা ব্যবহার করতেন। ১৮৫৭ সালের [[সিপাহী বিদ্রোহ|মহাবিদ্রোহের]] পরে ভারত প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে এলে ভারতের তদনীন্তন ব্রিটিশ শাসকবর্গ একক ভারতীয় পতাকার ধারণাটি প্রথম উত্থাপন করেন। পাশ্চাত্য হেরাল্ডিক আদর্শে নির্মিত [[স্টার অফ ইন্ডিয়া (পতাকা)|স্টার অফ ইন্ডিয়া]] ছিল কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া সহ অন্যান্য ব্রিটিশ উপনিবেশের পতাকাগুলির সমরূপীয়। ব্লু ও রেড এনসাইন পতাকাদুটির ঊর্ধ্ব-বাম কোয়াড্র্যান্টে থাকত [[ইউনিয়ন ফ্ল্যাগ]] এবং দক্ষিণার্ধ্বের মধ্যভাগে রাজমুকুট-বেষ্টিত একটি "স্টার অফ ইন্ডিয়া"। স্টারটি যে "ভারতীয়ত্ব"-এর প্রকাশক, তা বোঝাতে [[রানি ভিক্টোরিয়া]] তাঁর ভারতীয় প্রজাবর্গের প্রতিনিধিস্বরূপ সাম্রাজ্যের সেবায় "[[নাইট কম্যান্ডার অফ দি অর্ডার অফ দ্য স্টার অফ ইন্ডিয়া]]" নামে একটি পদ সৃষ্টি করেছিলেন। এরপর সকল [[ব্রিটিশ রাজ#ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্য|দেশীয় রাজ্য]] বিকৃত রেড এনসাইন উড্ডীয়নের অধিকার সহ ইউরোপীয় হেরাল্ডিক মাপকাঠি-সম্মত প্রতীকসহ পতাকা লাভ করে।<ref name="Virmani172">{{Harvnb|Virmani|1999|p=172}}</ref><ref>{{Harvnb|Roy|2006|p=498}}</ref>
[[চিত্র:British Raj Red Ensign.svg|left|thumb|alt=A British Red Ensign (a red flag with the Union Jack placed at the top left corner) charged with the Star of India (five pointed star inside a circular band tied at the bottom)|ব্রিটিশ ইন্ডিয়া রেড এনসাইন]] [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের]] সময় রেড এনসাইন ব্রিটিশ ভারতের প্রতিনিধিরূপে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্ব অর্জন করেছিল। [[লিগসম্মিলিত অফ নেশনসজাতিপুঞ্জ]] এবং ১৯৪৫-৪৭ সময়পর্বে [[জাতিসংঘ|জাতিসংঘে]] এই পতাকাটিই ভারতের পতাকা হিসেবে ব্যবহৃত হত।<ref>http://www.crwflags.com/fotw/flags/in-colon.html</ref>
 
বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে [[ব্রিটিশ রাজ|ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের]] অধীনতাপাশ থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে [[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন]] তার গুরুত্ব অর্জন করতে শুরু করলে, একটি জাতীয় পতাকার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। ১৯০৪ সালে [[স্বামী বিবেকানন্দ|স্বামী বিবেকানন্দের]] [[আয়ারল্যান্ড|আইরিশ]] শিষ্যা [[ভগিনী নিবেদিতা]] ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকার রূপদান করেন। এই পতাকাটি ''ভগিনী নিবেদিতার পতাকা'' নামে অভিহিত হয়। লাল চতুষ্কোণাকার এই পতাকার কেন্দ্রে ছিল [[বজ্র (হিন্দুধর্ম)|বজ্র]] ও [[:en: Nelumbo nucifera|শ্বেতপদ্ম]] সম্বলিত একটি হলুদ ইনসেট। পতাকায় "বন্দে মাতরম" কথাটি [[বাংলা লিপি|বাংলায়]] লিখিত ছিল। লাল রং ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক, হলুদ বিজয়ের ও শ্বেতপদ্ম পবিত্রতার প্রতীক।<ref name="FOTW"/>
২৯ নং লাইন:
১৯০৬ সালের ৭ অগস্ট [[কলকাতা|কলকাতার]] পার্সিবাগান স্কোয়ারে [[বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫)|বঙ্গভঙ্গ]] বিরোধী এক সভায় প্রথম ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলিত হয়। এই পতাকা উত্তোলন করেন [[শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু]]। পতাকাটি ''[[কলকাতা পতাকা]]'' নামে পরিচিত হয়। এই পতাকায় উপরে, মধ্যে ও নিচে যথাক্রমে কমলা, হলুদ ও সবুজ রঙের তিনটি আনুভূমিক ডোরা ছিল। উপরের ডোরায় আটটি অর্ধ-প্রস্ফুটিত পদ্ম এবং নিচের ডোরায় সূর্য ও অর্ধচন্দ্র অঙ্কিত ছিল। মাঝে [[দেবনাগরী]] হরফে লিখিত ছিল "বন্দে মাতরম" কথাটি।<ref name="AICC">{{cite web|url=http://www.aicc.org.in/national-flag.htm|title=The National Flag|accessdate=2006-10-11|date=2004-06-16|publisher=Indian National Congress}}</ref>
 
১৯০৭ সালের ২২ জুলাই [[জার্মানি]]র [[স্টাটগার্টস্টুটগার্ট]] শহরে [[ভিখাজি কামা]] অন্য একটি ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন। এই পতাকার উপরে ছিল সবুজ, মধ্যে গেরুয়া ও নিচে লাল রং। সবুজ রং ছিল ইসলামের প্রতীক ও গেরুয়া হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের প্রতীক। সবুজ ডোরাটির উপর [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতের]] আটটি প্রদেশের প্রতীক হিসেবে আটটি পদ্মের সারি অঙ্কিত ছিল। মধ্যের ডোরায় দেবনাগরী হরফে "বন্দে মাতরম" কথাটি লিখিত ছিল এবং নিচের ডোরায় পতাকাদণ্ডের দিকে অর্ধচন্দ্র ও উড্ডয়নভাগের দিকে একটি সূর্য অঙ্কিত ছিল। [[ভিখাজি কামা]], [[বীর সাভারকর]] ও [[শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মা]] একযোগে এই পতাকাটির নকশা অঙ্কন করেছিলেন।<ref name="AICC"/> [[প্রথম বিশ্বযুদ্ধ]] ছড়িয়ে পড়লে [[বার্লিন কমিটি]]তে ভারতীয় বিপ্লবীরা এই পতাকাটি গ্রহণ করেন। সেই থেকে এটি '' বার্লিন কমিটি পতাকা'' নামে অভিহিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে [[মেসোপটেমিয়া]]য় সক্রিয়ভাবে এই পতাকাটি ব্যবহৃত হয়েছিল।<ref>{{cite book |title=Our national flag |last=Singh |first= K. V. |year=1991 |publisher=Ministry of Information & Broadcasting |location=New Delhi |isbn= |page=31}}</ref> [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র|মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে]] [[গদর পার্টি]] পতাকাটি কিছু সময়ের জন্য ভারতের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।<ref>{{cite book |title=The History and culture of the Indian people |last= Majumdar |first=Ramesh Chandra |authorlink= |coauthors= |year=1969 |publisher=G. Allen & Unwin|edition=11|location=|chapter=Struggle for Freedom |pages=207-215}}</ref>
 
১৯১৭ সালে [[বাল গঙ্গাধর তিলক]] ও [[অ্যানি বেসান্ত]] পরিচালিত [[হোমরুল আন্দোলন]] একটি নতুন পতাকার জন্ম দেয়। এই পতাকায় পাঁচটি লাল ও চারটি সবুজ আনুভূমিক ডোরা ছিল। উপরের বাঁদিকে আয়তাকার [[ইউনিয়ন পতাকা]] ছিল আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষিত [[ডোমিনিয়ন]] মর্যাদা লাভের প্রতীক। উপরের উড্ডয়নভাগে ছিল সাদা অর্ধচন্দ্র ও তারা। [[হিন্দু|হিন্দুদের]] পবিত্র [[সপ্তর্ষি মণ্ডল|সপ্তর্ষি মণ্ডলের]] প্রতীকরূপে সাতটি সাদা তারা পতাকায় খচিত ছিল। এই পতাকাটি অবশ্য সর্বসাধারণ্যে জনপ্রিয়তা অর্জনে ব্যর্থ হয়।<ref name="AICC"/>
৮৩ নং লাইন:
|}
 
সর্বোচ্চ ব্যান্ডের সরকারি (সিএমওয়াইকে) মূল্য হল (0,50,90,0) – এটি [[কমলা (রংরঙ)|কমলা]] রঙের অনুরূপ – যার সিএমওয়াইকে = (0,54,90,0)। প্রকৃত গাঢ় গেরুয়ার সিএমওয়াইকে মূল্য যথাক্রমে (4, 23, 81, 5)) ও (0, 24, 85, 15))।<ref name="FOTW"/> পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করেন [[পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া]]।<ref name="Funmunch">{{cite web |url=http://www.funmunch.com/events/india_independence_day/national_flag_of_india.shtml |title=National Flag of India |accessdate=2006-10-11 |publisher=Funmunch.com}}</ref>
 
== প্রতীক ==
১৮৭ নং লাইন:
কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকা অনুসারেই শোকের চিহ্ন হিসেবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার রীতি আছে; রাষ্ট্রপতি সেক্ষেত্রে শোককালীন সময়সীমাও নির্ধারিত করে দেন। অর্ধনমিত করার আগে পতাকাটি একবার পূর্ণ উত্তোলিত করা হয়। আবার সূর্যাস্তের সময় অবনমিত করার আগেও একবার পূর্ণ উত্তোলিত করে তারপর অবনমিত করা হয়। কেবলমাত্র জাতীয় পতাকাই অর্ধনমিত করা হয়; অন্যান্য পতাকা স্বাভাবিক উচ্চতায় থাকে।
 
রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। লোকসভার অধ্যক্ষ ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে দিল্লিতে এবং কোনো [[ভারতেরকেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটসচিবালয় (ভারত)|কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট]] মন্ত্রীর মৃত্যুতে দিল্লি ও রাজ্য রাজধানীতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। রাষ্ট্রমন্ত্রীদের মৃত্যুতে দিল্লিতে অর্ধনমিত রাখা হয়। রাজ্যপাল, লেফট্যানেন্ট গভর্নর ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মৃত্যুতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
 
অপরাহ্নে কোনো পদাধিকারীর মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছলে যদি পরদিন সূর্যোদয়ের আগে অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন না হয় তবে পরদিন থেকে জাতীয় পতাকা উপরে উল্লিখিত স্থানকাল অনুসারে অর্ধনমিত থাকে। অন্ত্যেষ্টি স্থলেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
 
[[ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস (ভারত)|প্রজাতন্ত্র দিবস]], [[ভারতের স্বাধীনতা দিবস (ভারত)|স্বাধীনতা দিবস]], [[গান্ধী জয়ন্তী]] ও জাতীয় সপ্তাহ (৬-১৩ এপ্রিল), রাজ্যের প্রতিষ্ঠাদিবস বা [[ভারত সরকার]] নির্ধারিত অন্য কোনো জাতীয় উৎসবের দিন কেবলমাত্র মৃতের শরীর যে ভবনে রক্ষিত থাকে সেই ভবন ছাড়া অন্য কোথাও অর্ধনমিত থাকে না। এই ক্ষেত্রে শরীর ভবন থেকে অপসৃত হলে পতাকা পূর্ণ উত্তোলিত করা হয়।
 
কোনো স্বতন্ত্র ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অনুসারে বিদেশি পদাধিকারীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা যেতে পারে। যদিও, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের মৃত্যুর পরে উপরে উল্লিখিত দিনগুলিতে ভারতীয় দূতাবাস জাতীয় পতাকা উত্তোলিত করতে পারে।