২৬ মার্চ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে, সমস্যা? এখানে জানান
১৮ নং লাইন:
== ছুটি ও অন্যান্য ==
* [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] স্বাধীনতা দিবস (১৯৭১)।
আজ ২৬ মার্চ: মহান স্বাধীনতা দিবস
 
প্রবীর বিশ্বাস:: “অবিনাশী আগুনে পোড়ে হায়রে শোকার্ত স্বদেশ/ দুখিনী মায়ের অশ্রু জমা হয় নিভৃত পাঁজরে/ যে যাবে যুদ্ধে এখনি সে উঠুক উঠুক ঝলসে/ যে যাবে যুদ্ধে সবকিছু ভাঙুক ভাঙুক সে...।” ...“পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত/ ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/ নতুন নিশান উড়িয়ে/ দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/
 
এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।”
 
ভয়াল ‘কালরাত্রি’র পোড়া কাঠ, লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। ভয়াল কালরাতের ধ্বংসস্তূপ আর লাশের ভেতরে দিয়ে রক্তরাঙা সেই নতুন সূর্য। ভীতবিহ্বল মানুষ দেখল লাশপোড়া ভোর। সারি সারি স্বজনের মৃতদেহ। আকাশে কুন্ডলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া।
 
পুড়ছে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র আঁকা লাল সবুজ পতাকা। জ্বলছে শাড়ি, খুকুর ফ্রক। চোখে জল। বুকে আগুন। জ্বলে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ, গড়ল প্রতিরোধ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয় বাংলা’ তীব্র স্লোগান তুলে ট্যাঙ্কের সামনে এগিয়ে দিল সাহসী বুক।
 
আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিল শুক্রবার। রাত ১২টায় মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণের মধ্যদিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম অনুযায়ী শুরু করেছে ইতিহাসের পৈশাচিকতম হত্যাকান্ড বাঙালি নিধনে গণহত্যা। এ নাম দিয়েই মৃত্যুক্ষুধা নিয়ে জলপাই রঙের ট্যাংক নেমে এলো। বিভীষিকা ছড়িয়ে দিকে দিকে ছুটে গেল সাঁজোয়া গাড়ির বহর। রাতের স্তব্ধতা গুঁড়িয়ে গর্জে উঠল বন্দুক, কামান আর ট্যাংক। নিরীহ মানুষের আর্তনাদে ভারী হলো রাতের বাতাস। মানব ইতিহাসের পাতায় রচিত হলো কালিমালিপ্ত আরেকটি অধ্যায়। নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হলো বিশ্ববিবেক। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগমুহূর্তে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ এদেশের বড় শহরগুলোতে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে নারী-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে কমপক্ষে ৫০ হাজার ঘুমন্ত মানুষের রক্তের প্লাবন বইয়ে দেয় শুধু রাজধানী ঢাকাতেই।
 
কিন্তু আজ ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালি জাতির জীবনে সূচনা ঘটবে আরও একটি ঝলমল উৎসব দিনের। রক্ত, অশ্র“স্নাত বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন ২৬ মার্চ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহার্ঘ স্বাধীনতার ৪৩তম বার্ষিকী। এ ভূ-ভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন, বাঙালির সহস্র বছরের জীবন কাঁপানো ইতিহাস মহান স্বাধীনতা। অসংখ্য শহীদের রক্তে ভেজা, জাতির বীরসেনানীদের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনা দিন। বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিন। গৌরব ও স্বজন হারানোর বেদনার এই দিনে বীর বাঙালি সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল। তাই আজ গৌরব ও অহঙ্কারের দিন।
 
শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাঙালির হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞে। তবে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় দিকনির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালির হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ছবি।
 
মার্চের ২৬ তারিখ প্রথম প্রহরেই সারা দেশসহ ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। এ অবস্থার মধ্যে রাতেই খবর আসে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে আজ ইয়াহিয়া খান তাঁর ভাষণে সারা দেশে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “সপ্তাহ খানেক আগেই আমার উচিত ছিল শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেননা কয়েকটি শর্ত দিয়ে সে আমাকে ট্র্যাপে ফেলতে চেয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সে আক্রমণ করেছেÑএই অপরাধ বিনা শাস্তিতে যেতে দেয়া হবে না।” এদিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে দফায় দফায় প্রচারিত এমএ হান্নান বলেন, “কে বলে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে? তিনি আমাদের মধ্যেই আছেন।” পরদিন সকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে হান্নান সাহেব আবার ঘোষণা দিতে থাকলেন, “বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে প্রিয় মাতৃভূমিকে শত্র“মুক্ত করতে আমাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।” এরপর সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারিত হয়।
 
মুলত ২৫ মার্চ জিরো আওয়ারে গণহত্যা শুরুর অর্ধ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বলেন, “আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন!’’ ১৯৭১-এর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ ১২-৩০ মিনিটে স্বাধীনতার এই অমোঘ মন্ত্র উচ্চারিত হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠ থেকে। ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করে বলেন, “এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্র“দের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ- দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোস নেই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শক্রকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।” আর তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষিত এই ঘোষণাটিই ১৯৭১ এর এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ৬নং প্যারায় অনুমোদিত হয়ে সাংবিধানিক বৈধতা অর্জন করেছে। স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পরিস্থিতির শুরুটা হয়েছিল মূলত ৬ দফা দেয়ার মধ্যদিয়েই। ৬ দফাই ছিল স্বাধীনতার বীজমন্ত্র। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলতেন, “সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।” ৬ দফাকে প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বহু ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু ৬ দফার প্রতি বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় স্থির-প্রতিজ্ঞাবোধ তাঁকে জনমনে জনগণমন অধিনায়কের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
 
ইতিহাস মতে তৎকালীন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা ১৯৬৯ -এর জানুয়ারির ৪ তারিখে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ৬ দফাকে দাড়ি, কমা, সেমিকোলনসমেত ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করে সারা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলশ্র“তিতে ১১ দফা আন্দোলনের সপক্ষে সারা দেশে যে গণজোয়ার তৈরি হয় তাতে দেশে বৈপ্লবিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধু ’৭০-এর নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও সকল রাজবন্দীর মুক্তির পর ফেব্র“য়ারির ২৩ তারিখে যেদিন রেসকোর্সে জাতির জনককে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘সংখ্যাসাম্য নয়, জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব চাই, প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকার চাই আর সার্বভৌম পার্লামেন্ট চাই।’ গোলটেবিল বৈঠকের পর যখন মার্চের ২৫ তারিখে আইয়ুব খান পদত্যাগ করলেন এবং ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা নিলেন তখন তিনি বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু কর্তৃক উত্থাপিত দাবিসমূহ মেনে নেয়ার অঙ্গীকার করেন।
 
এবং ১৯৭০-এর ৩০ মার্চে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-২ অনুযায়ী লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার বা সংক্ষেপে এলএফও জারি করেন। সর্বমোট ৪৮টি অনুচ্ছেদ সংবলিত এই এলএফও-তে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব মেনে নেয়া হয়। জাতীয় পরিষদে ৩১৩টি আসনের মধ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে আওয়ামীলীগ পেল ১৬৯টি। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ভবিষ্যতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও যাতে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে না পারেন সেজন্য এলএফও-তে বিতর্কিত ২৫ ও ২৭ নং দু’টি অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করেন।
 
২৫নং অনুচ্ছেদের শিরোনাম ছিল, “শাসনতন্ত্রের প্রমাণীকরণ।” যাতে বলা হয়েছিল, “জাতীয় পরিষদে গৃহীত শাসনতন্ত্র বিল, প্রমাণীকরণের জন্য প্রেসিডেন্টের নিকট উপস্থাপিত হবে। এ পর্বে প্রমাণীকরণে প্রত্যাখ্যাত হলে জাতীয় পরিষদের অবস্থান লুপ্ত হবে।” আর ২৭নং অনুচ্ছেদের শিরোনাম ছিল, “আদেশের সংশোধন এবং ব্যাখ্যা, ইত্যাদি”, এর ক-ধারায় ছিল, “এই আদেশে কোন আইনের ধারা সম্পর্কে কোন ধারণা, কোন ব্যাখ্যা বা কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হলে সে সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং এ ব্যাপারে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।” এবং একই অনুচ্ছেদের খ-ধারায় ছিল, “জাতীয় পরিষদ নয় বরং রাষ্ট্রপতিই এই আদেশের সংশোধনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী।” অর্থাৎ এলএফও-তে সন্নিবেশিত দু’টি ধারাই ছিল আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী দলকে ঠেকানোর অপপ্রয়াস।
 
এরপর যথাসময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলার মানুষ তাদের রায় জানিয়ে দিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করল। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। এলএফও-তে সন্নিবেশিত চাতুর্যপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলো মুখথুবড়ে পড়ল। নির্বাচনের ফলাফলে বিজয়ী বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের জনগণ এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছে। তারা এক অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের এই রায় প্রদানের অধিকার অর্জন করেছে। আর সেই অবিরাম সংগ্রামে হাজার হাজার মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে এবং অগণিত মানুষ বছরের পর বছর নিপীড়ন সহ্য করেছে। এরপর ১৯৭১- এর জানুয়ারির ৩ তারিখে ঐতিহাসিক রেসকোর্সে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নব-নির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। শপথ গ্রহণ করাবেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। সেদিন বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, “৬ দফা ও ১১ দফা আজ আমার নয়, আমার দলেরও নয়। এ আজ বাংলার জনগণের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। কেহ যদি এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে বাংলার মানুষ তাঁকে জ্যান্ত সমাধিস্থ করবে। এমনকি আমি যদি করি আমাকেও।”
 
এরপর জেনারেল ইয়াহিয়া ’৭১ -এর ১১ জানুয়ারি ঢাকা আগমন করেন। ১২ ও ১৩ জানুয়ারি এই দুই দিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দু’দফা আলোচনায় মিলিত হন। অপরদিকে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে তেজগাঁ বিমানবন্দরে ইয়াহিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “দেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব তাঁর সঙ্গে আলোচনা সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন তা পুরোপুরি সঠিক।” অথচ ঢাকা থেকে ফিরে ইয়াহিয়া খান লারকানায় ভুট্টোর বাসভবনে যান এবং সেখানে জেনারেলদের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। মূলত লারকানা বৈঠকেই নির্বাচনী ফলাফল বানচালের নীল-নকশা প্রণীত হয়। এরপর ফেব্র“য়ারির ১৩ তারিখে এক সরকারী ঘোষণায় জানানো হয় যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় প্রাদেশিক পরিষদ ভবনে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনার জন্য ৩ মার্চ বুধবার ৯টায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেছেন।
 
এরপর আসে মহান একুশে ফেব্র“য়ারি। ’৭১এর শহীদ দিবস ছিল সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এ দিনটিতে মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মশালের আগুনে উদ্দীপ্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “এই বাংলার স্বাধিকার-বাংলার ন্যায্য দাবিকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র চলছে। এখনও চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। কিন্তু বাংলার সাত কোটি মানুষ আর বঞ্চিত হতে রাজি নয়।
 
আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেব। আর শহীদ নয়, এবার গাজী হয়ে ঘরে ফিরব। বাংলার ঘরে ঘরে আজ দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে হবে আমাদের সংগ্রাম। মানুষ জন্ম নেয় মৃত্যুর জন্য; আমি আপনাদের কাছে বলছি এই বাংলার মানুষ রক্ত দিয়ে আমাকে আগরতলা মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছে, আমিও আপনাদের জন্য নিজের রক্ত দিতে দ্বিধা করব না। বাংলার সম্পদ আর লুট হতে দেব না।”
 
তারপর স্বধীনতার জন্য যুদ্ধ। এই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালি জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে এক সাগর রক্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে পুরো বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন।
 
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি। ১৯৪৮, ’৫২ পেরিয়ে ’৫৪, ’৬২, ’৬৬-এর পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে জেনারেল আইয়ুবের শাসন। বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী বাংলার মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। পরিশেষে নয় মাসের মধ্যে ৩০ লাখ প্রাণ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করি প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা।
 
== বহি:সংযোগ ==