বিষয়শ্রেণী:বাংলা কবিতা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Suvray (আলোচনা | অবদান)
কবিতা
 
Soukarsha Dutta (আলোচনা | অবদান)
নবদ্বীপের কবি সন্দীপ গোস্বামীর কবিতা
১ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:কবিতা]]
* কবি সন্দীপ গোস্বামীর বাংলা কবিতা
 
 
"একটি মৃত্যু রাত"
____সন্দীপ গোস্বামী
 
কংক্রিটের সেই রাত
আশঙ্কায় ছড়িয়ে যায় শৈশব স্মৃতি
ছাদে বেড়ে ওঠা ক্যাকটাসের মতো
সৃষ্টিকর্তাকে গ্রাস করে
অন্য গ্রহের শ্যাওলা
থেমে যায় সব লাইফ লাইন
কুঁকড়ে অণু হওয়া আমার দুনিয়া
আগুনের প্রেমে অশরীর
গঙ্গার বরফ জল কত তাপ কমায়
পরিতাপের থার্মোমিটার বুকে ঢেকে রাখি !
 
[কাব্যগ্রন্থ - কবিতায় পঁচিশ বছর]
 
 
রাতের কবিতা
- সন্দীপ গোস্বামী
 
এক
 
নীরবতার শব্দে বেশ কাটত আমার সময়
স্টিলের জানালায় চেয়ে থাকতাম কংক্রিটের রাস্তায়
ইমারতের বুক চিরে রোদ আলোয় ঝলমল করত
আমার পথ ।
 
নারকেল পাতায় অপরাহ্ণ হারিয়ে যেতে
কখন জড়িয়ে ধরত রাত
নিঃসঙ্গতার অলীক ঘোমটায় ঘুমিয়ে পড়ত
আমার পাড়া ।
 
শীতের কুয়াশা ভেদ করে মোড়ের ছোট্ট বালব
হাজার আলোয় মাখিয়ে দিত অনন্ত প্রত্যাশা
কেন জানি না ! এই রাতকে আমি
আমার মতোই ভালোবাসি ।
 
দুই
 
রোজ শেষরাতে আকাশ আমার বিছানায়
তারাগুলি বুক ভরা আলো নিয়ে...
অন্ধকার ঘোচাতে নিজেরা আলোহীন
সাতরঙা চাদরটি মুচকি হাসে
বৃদ্ধ বালিশটি বুঝতে চায় না
আধুনিকতা কাকে বলে !
টেবিলে কাঁচ গেলাসটিতে চাঁদ এসে ঢোকে
সূর্যের থেকে ও আমায় বেশি ভালোবাসে ।
 
কাব্যগ্রন্থ - কবিতায় পঁচিশ বছর
 
 
তুমি কেমন আছো
- সন্দীপ গোস্বামী
 
জানতে চেয়েছি আকাশের দিকে তাকিয়ে
জানতে চেয়েছি তারাদের সাথে কথা বলে
জানতে চেয়েছি জ্যোৎস্নাভরা এই ফাগুনে
তুমি কেমন আছো !
 
শুনতে চেয়েছি দখিন বাতাসের অলৌকিক হাসিতে
শুনতে চেয়েছি মানুষের মিছিলে কান পেতে
শুনতে চেয়েছি হৃদপিণ্ডের নির্মম ক্রন্দনে
তুমি কেমন আছো !
 
দেখতে চেয়েছি প্রকৃতির বিচিত্র লীলায় , কবিতায় , সভ্যতায়
দেখতে চেয়েছি সুন্দরে , অসুন্দরে , ভালোবাসায় , সর্বত্র
দেখতে চেয়েছি তোমায় শুধু তোমায়
তুমি কেমন আছো !
 
নিশ্চয় আমার মতো ভালো নেই !
 
ফিরে এসো ভালোবাসা
- সন্দীপ গোস্বামী
 
আমি তোমায় কষ্ট দিইনি
মিথ্যা বলিনি অজান্তে
চমক দেখানোর কোনও ক্ষমতা আমার নেই
কেন চমকে ওঠো তুমি !
 
প্রত্যাশা ছিল না কোনদিন
রাতের তারারা সব জানে
জ্যোৎস্না বোঝে আমায়
কেন অবুঝ হও তুমি !
 
ঐ যে ছোটনদী
বটগাছ , রেল লাইন , নিস্তব্ধ পথ , মা
সবাই দেখেছে আমার খুশি
কেন খুশি হলে না তুমি !
 
একদিন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা থেমে যাবে
গোলাপ , বেলি , টগর , রজনীগন্ধায় ভরে যাবে মাটি
বৃষ্টির প্রতি ফোঁটায় ঝরে পড়বে তুমি
 
ফিরে এসো ভালোবাসা ...
 
 
প্রথম দেখা
- সন্দীপ গোস্বামী
 
সময়চক্রের উৎসারিত ধ্বনির মূর্ছনায়
দৈববাণী হোল সে এসেছে
জন্মান্তরে বিরহকাতর ব্যক্তিত্ব
শব্দহীন , দৃশ্যহীন , অলৌকিক...
সে কী শুধুই মানবী !
জনকলরবে অচেনাদের মিছিলে খোঁজা
অবিরাম সভ্য আলোয়
আর দূরত্বহীন শব্দে ।
 
মনশ্চক্ষের নীল আলোয় ভেসে ওঠে
সেই মুখ -
দীপ্তিময় , অসীম ক্লান্তির বলিরেখা
ঠোঁট জুড়ে ঐতিহাসিক হাসি
দীর্ঘ আড়ষ্টতার পর্দা খুলে
পদ্মকুঁড়ির মতো ছড়িয়ে পড়ে
যুগ-যুগান্তরের দৃষ্টি
সে চেয়ে আছে নিষ্পলক , অবিশ্রাম
আরও কতক্ষণ , কতকাল , সময়হীন...
অশান্ত লক্ষ মুহূর্তের প্রতিবিম্ব !
 
 
একটি প্রেম কাহিনী
- সন্দীপ গোস্বামী
 
মেয়েটি উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের আধুনিকা বিদুষী
দেখতে খুব সুন্দর , স্মার্ট , হঠাৎ রেগে যায়
সে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরাজিতে এম.এ পড়ছে
শেক্সপিয়র , শেলি , কিটস , নেরুদা , বায়রন আত্মস্থ করে
অনর্গল ইংরেজি বলে , ক্রিকেট ভালোবাসে
কাঁধ ঝাঁকিয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে
সে একা একা কাঁদে , সবার সাথে হাসে
মেয়েটি খুব ভালো ।
 
ছেলেটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের উত্তর-আধুনিক শিক্ষিত পুত্র
দীর্ঘ দেহ , মিষ্টি হাসি , শান্ত মনের মানুষ
সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় এম.এ পড়ছে
পদাবলি , ভারতচন্দ্র , রবীন্দ্রনাথ , নজরুল , জীবনানন্দ আত্মস্থ করে
কবিতা লেখে , গান করে , ফুটবল ভালোবাসে
রাজপথে হাঁটতে হাঁটতে মানুষ দেখে
সে একা একা হাসে , সবার কথা শোনে
ছেলেটি খুব ভালো ।
 
বিপরীত ব্যক্তিত্বে আকর্ষণ হয় !
মেয়েটি চায় ছেলেটি আধুনিক হয়ে উঠুক
ছেলেটি ভাবে মেয়েটি তার মনের মতো হোক
 
নীরবে দু'জনে পরিবর্তিত হতে থাকে
হারায় নিজস্বতা
 
সময় বয়ে যায়
ভালোবাসা অন্য ঠিকানায়...
 
 
অব্যক্ত
- সন্দীপ গোস্বামী
 
কত কলেজ গেলাম একসাথে
পায়ে পায়ে হাঁটলাম কত সভ্যতা
চোখে চোখ রেখে নীল আকাশের সাথে বন্ধুত্ব
সম্পর্ক নিয়ে প্রচার
হাসলাম , দেখলাম , ভাবলাম ।
 
একটু একটু করে বড় হচ্ছি
আমরা কুড়ি
সামনে কলেজ ছাড়ার ডাক
আধমরা পৃথিবীর নিরুৎসাহ হাসি ডাকে
তবু এঁকে যাই পাগলামি !
 
সরস্বতী পূজা গেল , ভ্যালেন্টাইন'স ডে হারালাম
আজও আমরা মূক
জীবন ফিরে ফিরে তাকায়...
লাজুক কোথাকার !
 
 
তুমি দেখেছ কী !
- সন্দীপ গোস্বামী
 
একদিন ভালোবাসাকে বলেছিলাম
তুই বৃষ্টি হবি
ও নীরব !
 
পরদিন ভালোবাসাকে বলেছিলাম
তুই রৌদ্র হবি
ও নীরব !
 
দিনের পর দিন ভালোবাসাকে বলতে থাকি
তুই আকাশ হবি
তুই পাখি হবি
তুই আমার খুশী হবি
ও নিশ্চুপ !
 
একদিন ভালোবাসা আমায় বলল
তুই মাটি হবি
আমি হব ফুল
 
সেইদিন থেকে মাটিতে যে ফুল মুখ রাখে
সেখানে গড়ে ওঠে ভালোবাসার তাজমহল
 
তুমি দেখেছ কী !
 
 
জন্মান্তর
- সন্দীপ গোস্বামী
 
জানি মৃত্যু কেমন !
মৃত্যুভয়ে ফ্যাকাসে নীলকণ্ঠ
শঙ্খে বাজে না ধ্বনি , নৈঃশব্দ্যে কেমন আছেন
দুঃসময়ের বুদ্ধদেব !
মৃত্যুভয়ে যখন খোঁজ আরও জীবন , ভোগ
বনপলাশীর পদাবলী , তখন হাসি
আর ভাবি কত ক্ষীণ স্মৃতিশক্তি , মৃত্যুর অনুভূতি
 
একবার বৃক্ষ হয়ে জন্মেছিলাম গার্ডেনে
হৃদপিণ্ড খোদাই করতে করতে ...
নিঃস্তব্ধ করেছিলে আমার হৃদপিণ্ড
তারপর বৈজ্ঞানিক হয়ে বাঁচিয়েছিলাম সন্তানদের
লিখেছিলাম ' ডোন্ট টাচ মী ' ; আমায় স্পর্শ কোর না
 
একবার পাখি হয়ে উড়ে বসেছিলাম
কবির জানালায় , বাঙালি কবি নয়
তিনি ঐশ্বরিক দৃষ্টিতে বলেছিলেন
' ইউ আর সো সুইট লাইক মী '
তুই আমার মতো মধুর !
 
তাই এ'জন্মে কবি হওয়ার ইচ্ছা ছিল
এরপর তো আর জন্ম নেই , চিরআকাঙ্ক্ষিত আত্মমুক্তি
কবিমন বারবার সেই আলোর উদ্দেশে ...
 
ট্রেন ছেড়ে দিলেও রয়ে যায় স্টেশনের ধ্বনি ।
 
( কাব্যগ্রন্থ - আহত আগুনের কবিতা )
 
 
‘‘ভালবাসলে’’
___সন্দীপ গোস্বামী
 
 
তুমি আমায় একটু ভালবাসলে
তোমায় দেব নতুন কলম
 
তুমি আমায় আরও একটু ভালবাসলে
তোমায় দেব রবীন্দ্রনাথ
 
এরপরও আমায় ভালবাসলে
তোমায় দেব আমার সংস্কার
 
জানি, তুমি আমায় ভালোবাস
তোমায় দিলাম কবিতা
 
তারপরও আমায় ভালোবাসলে
তোমায় দেব দু'ফোঁটা অশ্রু
 
এরবেশি দেওয়ার ক্ষমতা
আমারও নেই...
 
 
 
আগন্তুক
- সন্দীপ গোস্বামী
 
জানি না ! হঠাৎ এক আগন্তুক নাড়িয়ে দিল
আমার সমস্ত সংস্কার
বৃষ্টি ভেজা বিকালে তাকিয়ে আছি
নিস্তব্ধ রাস্তার বুকে জমা ক্ষত
এতকাল লুকিয়ে রাখা অন্ধকার সরিয়ে
সেই আগন্তুক দৃশ্য ।
 
কোন কথাই সে বলে না
শুধু চেয়ে থাকে ধুলোজমা আমাতে
আমি প্রশ্ন করি , তুমি কে ? কী তোমার পরিচয় ?
সে শুধুই চেয়ে থাকে - বোবা দৃষ্টি !
বুঝতে পারি না এত পর্যবেক্ষণ কেন !
তার চোখ থেকে ঝরে অশ্রু
তবু আমি অবাক ! প্রশ্নের উত্তর নেই ।
 
আমি যখন একা থাকি
সে আসে , আমি একা একাই কথা বলি
কত শব্দ নিয়ে খেলা করি ...
সে এখন আমার সাথেই থাকে ।
 
( কাব্যগ্রন্থ - কবিতায় পঁচিশ বছর )
 
 
সুতপা আমি আছি
- সন্দীপ গোস্বামী
 
সুতপা আমি আছি
গোটা বিশ্বের অন্তিম বিন্দুতে
ছোট্ট এক হলুদ শস্য দানায়
আতশিকাঁচে একটু বড় দেখায়
ঝাপসা দৃষ্টিতে আরও ছোট
কাঞ্চনজঙ্ঘার নীচে চা-বাগানে
তেনজিং-র উত্তরসূরিদের সাথেও
আমি আছি ।
 
সেই দিনটি এখনও মনে আছে
' সাগরবেলা'র কেবিনে
আন্দামান যেতে যেতে
সামান্য ভুল
তুমি ক্ষমা করতে পারনি
ছুঁড়ে দিয়েছিলে কালাপানিতে ।
 
তারপর কত যুগ কেটে গেছে
তোমার কবিতা পড়া
নিশ্চয় হোয়ে ওঠে না
তবু...
এই কবিতা শুধু তোমার জন্য ।
 
( কাব্যগ্রন্থ - কবিতায় পঁচিশ বছর )