জাবির ইবনে হায়য়ান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
S.h.raiyan21-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে Addbot-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
+
১ নং লাইন:
{{Infobox Muslim scholar
{{Infobox Muslim scholars <!--Beginning of the [[Template:Infobox Muslim scholars]]-->
| era = [[ইসলামেরইসলামী স্বর্ণযুগ]]
| notability = মুসলিম বিজ্ঞানী
| era = [[ইসলামের স্বর্ণযুগ]]
| color = #cef2e0
| image = Jabir ibn Hayyan.jpg
| caption = "জেবার" এর ১৫তম শতাব্দীতে ইউরোপীয় প্রতিকৃতি, কোডিচি আশবুরনহামিয়ানি ১১৬৬, বিবলেওটেকা মেডিচেয়া লাউরেন্টিয়ান, ফ্লোরেন্স
| image_caption = জাবিরের ১৫ শতকের ইউরোপীয় পোর্ট্রেটFlorence
| name = ''জাবির ইবন হাইয়ান''
| signature =
| name title = ''আবু মুসা জাবির ইবন হাইয়ান''
| birth_date = ৭২২ খ্রিস্টাব্দ [[তুস, ইরান|তুস]], [[ইরান|পারস্য]]
| title = ''জেবার''
| death_date = প্রায় ৮০৪ খ্রিস্টাব্দ
| birth = [[৭২১]]
| death Religion = [[৮১৫শিয়া]] মুসলিম
| ethnicity = [[আরব জাতি|আরব]]<ref name="EI2">{{Cite encyclopedia | edition = 2nd| publisher = Brill Academic Publishers| volume = 2| pages = 357–359| last = Kraus| first = P.| title = Djābir B. Ḥayyān| encyclopedia = Encyclopaedia of Islam| year = 1962 |quote=As for Djābir's historic personality, Holmyard has suggested that his father was "a certain Azdī called Hayyan, druggist of Kufa...mentioned...in connection with the political machinations that were used by many people, in the eighth century, finally resulted in the overthrow of the Umayyad dynasty.}}</ref><ref>Holmyard, Eric John, "Introduction" to ''The Works of Geber'', Englished by Richard Russell (London: Dent, 1928), p. vii: "Abu Musa Jabir ibn Hayyan, generally known merely as Jabir, was the son of a druggist belonging to the famous South Arabian tribe of Al-Azd. Members of this tribe had settled at the town of Kufa, in Iraq, shortly after the Muhammadan conquest in the seventh century A.D., and it was in Kufa that Hayyan the druggist lived."</ref> বা [[পারস্য জাতি|পারস্য]]<ref name="SourcesP">
| Maddhab = [[শিয়া]] [[জাফরি]]
*William R. Newman, Gehennical Fire: The Lives of George Starkey, an American Alchemist in the Scientific Revolution, Harvard University Press, 1994. p.94: "According to traditional bio-bibliography of Muslims, Jabir ibn Hayyan was a Persian alchemist who lived at some time in the eighth century and wrote a wealth of books on virtually every aspect of natural philosophy"
| school tradition =
*William R. Newman, "The Occult and Manifest Among the Alchemists", in F. J. Ragep, Sally P Ragep, Steven John Livesey, Tradition, Transmission, Transformation: Proceedings of Two Conferences on pre-Modern science held at University of Oklahoma, Brill, 1996/1997, p.178: "This language of extracting the hidden nature formed an important lemma for the extensive corpus associated with the Persian alchemist Jabir ibn Hayyan"
| ethnicity =
*[[Henry Corbin]], "The Voyage and the Messenger: Iran and Philosophy", Translated by Joseph H. Rowe, North Atlantic Books, 1998. p.45: "The Nisba al-Azdin certainly does not necessarily indicate Arab origin. Geber seems to have been a client (''[[mawali|mawla]]'') of the Azd tribe established in Kufa"
| region =
*Tamara M. Green, "The City of the Moon God: Religious Traditions of Harran (Religions in the Graeco-Roman World)", Brill, 1992. p.177: "His most famous student was the Persian *Jabir ibn Hayyan (b. circa 721 C.E.), under whose name the vast corpus of alchemical writing circulated in the medieval period in both the east and west, although many of the works attributed to Jabir have been demonstrated to be likely product of later Ismaili' tradition."
| notable idea =
*David Gordon White, "The Alchemical Body: Siddha Traditions in Medieval India", University of Chicago Press, 1996. p.447
| main interests = [[আলকেমি]], [[রসায়ন]], [[জ্যোতিষ শাস্ত্র]], [[জ্যোতির্বিজ্ঞান]], [[পদার্থবিজ্ঞান]], [[চিকিৎসাবিজ্ঞান]], [[ঔষধ]], [[দর্শন]]
*William R. Newman, Promethean Ambitions: Alchemy and the Quest to Perfect Nature, University of Chicago Press, 2004. p.181: "The corpus ascribed to the eighth-century Persian sage Jabir ibn Hayyan.."
| influences = [[জাফর আল-সাদিক]]
*Wilbur Applebaum, The Scientific revolution and the foundation of modern science, Greenwood Press, 1995. p.44: "The chief source of Arabic alchemy was associated with the name, in its Latinized form, of Geber, an eighth-century Persian."
| influenced = [[রসায়ন]]
*Neil Kamil, Fortress of the Soul: Violence, Metaphysics, and Material Life in the Huguenots New World, 1517–1751 (Early America: History, Context, Culture), JHU Press, 2005. p.182: "The ninth-century Persian alchemist Jabir ibn Hayyan, also known as Geber, is accurately called pseudo-Geber since most of the works published under this name in the West were forgeries"
| works = [[কিতাব আল-কিমিয়া]], [[কিতাব আল-সাবিন]]
*Aleksandr Sergeevich Povarennykh, Crystal Chemical Classification of Minerals, Plenum Press, 1972, v.1, ISBN 0-306-30348-5, p.4: "The first to give separate consideration to minerals and other inorganic substances were the following: The Persian alchemist Jabir (721–815)..."
*George Sarton, Introduction to the History of Science, Pub. for the Carnegie Institution of Washington, by the Williams & Wilkins Company, 1931, vol.2 pt.1, page 1044: "Was Geber, as the name would imply, the Persian alchemist Jabir ibn Haiyan?"
*Dan Merkur, in The psychoanalytic study of society (eds. Bryce Boyer, et al.), vol. 18, Routledge, ISBN 0-88163-161-2, page 352: "I would note that the Persian alchemist Jabir ibn Hayyan developed the theory that all metals consist of different 'balances' ..."
*Anthony Gross, The Dissolution of the Lancastrian Kingship: Sir John Fortescue and the Crisis of Monarchy in Fifteenth-century England, Paul Watkins, 1996, ISBN 1-871615-90-9, p.19: "Ever since the Seventy Books attributed to the Persian alchemist Jabir Ibn Hayyan had been translated into Latin ...."</ref>
| signature region =
| main_interests = <small>[[Alchemy and chemistry in Islam|আলকেমি ও রসায়ন]], [[Islamic astronomy|জ্যোতির্বিজ্ঞান]], [[Islamic astrology|জ্যোতিষশাস্ত্র]], [[Islamic medicine|মেডিসিন ও ফার্মাসি]], [[Islamic philosophy|দর্শন]], [[Islamic physics|পদার্থবিজ্ঞান]], বিশ্বপ্রেমিক</small>
| notable_ideas =
| works = <small>''[[কিতাব আল-কিমিয়া]]'', ''[[কিতাব আল-সাবিন]]'', ''[[Book of the Kingdom|বুক অফ দ্য কিংডম]]'', ''[[Book of the Balances|বুক অফ দ্য ব্যালেন্স]]'' , ''[[Book of Eastern Mercury|বুক অফ ইস্টার্ন মার্কারি]]'', ইত্যাদি।</small>
| influences = [[জাফর আল-সাদিক]], [[Alchemy|আলকেমি]], [[Harbi al-Himyari|হারবি আল-হিমইয়ারি]]
| influenced = [[Zu al-Nun al-Misri|যু আল-নুন আল-মিস্রি]], [[Al-Kindi|আল-কিন্দি]], [[Alchemy|আলকেমি]], [[রসায়ন]]
}}
'''আবু মুসা জাবির ইবন হাইয়ান''' ([[bareg (tribe)|আল-বারিজি]] / আল-আযদি / আল-কুফি / আল-তুসি / আল-[[সুফিবাদ|সুফি]], {{lang-ar|جابر ابنبن حيانحیان}}, [[ফার্সি বর্ণমালা|ফার্সি]]: جابرحیان) (জন্ম:[[৭২১]] - মৃত্যু:[[৮১৫]] খ্রিস্টাব্দ)<ref name="britannica.com">{{cite web|url=http://www.britannica.com/eb/article-9043128/Abu-Musa-Jabir-ibn-Hayyan|title= Abu Musa Jabir ibn Hayyan|publisher=Encyclopædia Britannica Online|accessdate=11 February 2008}}</ref> বিখ্যাত [[শিয়া]] [[মুসলিম]] বহুশাস্ত্রজ্ঞ। পাশ্চাত্য বিশ্বে তিনি "জেবার" (Geber) নামে পরিচিত যা তার নামের ল্যাটিন[[লাতিন ভাষা|লাতিন]] সংস্করণ। তিনি ছিলেন একাধারে রসায়নবিদ ও আলকেমিবিদ, [[জ্যোতির্বিজ্ঞানী]][[জ্যোতিষী]], [[প্রকৌশলী]], [[দার্শনিক]], [[পদার্থবিজ্ঞানী]] এবং ঔষধ বিশারদ ও চিকিৎসক।[[চিকিৎসক]]। অনেকে তাকে "রসায়নের জনক" হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তার প্রকৃত জাতীয়তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। অনেকে বলেন তিনি আরব, অনেকে আবার বলেন তিনি পারস্যের নাগরিক ছিলেন।
 
জাবির ইবন হাইয়ান আলকেমিতে পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির গোড়াপত্তন করেছিলেন। এছাড়া তিনি রসায়নের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছিলেন যার অনেকগুলো এখনও ব্যবহৃত হয়। যেমন: হাইড্রোক্লোরিক ও নাইট্রিক এসিড সংশ্লেষণ, পাতন এবং কেলাসীকরণ। তার অধিকাংশ রচনায় দুর্বোধ্য এবং বিভিন্নভাবে সংকেতায়িত। বিশেষজ্ঞ ছাড়া তার রচনা কেউ খুব একটা বোঝেন না, বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও কেউ জানেন না ঠিক কি সংকেতের মাধ্যমে লিখেছিলেন তিনি। তাক্বিনের ধারণা এবং সে সময় আরবে প্রচলিত বিভিন্ন পদার্থের নামের মাধ্যমে তিনি বিস্তৃত রাসায়নিক সংখ্যায়ন পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। তার আলকেমি ক্যারিয়ার এই পদ্ধতিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। তাক্বিন বলতে আলকেমি গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে জীবন সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে বোঝায়। বর্তমানে প্রমাণিত হয়েছে যে, জাবিরের প্রাথমিক গবেষণামূলক রচনাগুলো পারস্যের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির পটভূমিতে রচিত হয়েছে। কৌশলগত শব্দভাণ্ডারে ব্যবহৃত ফার্সি ভাষা এবং মধ্য পারস্য দেশীয় শব্দের মাধ্যমে তার অভিসন্দর্ভগুলো পড়া যায়।
 
== জীবনী ==
জাবির ইবন হাইয়ান ৭২২ খ্রিস্টাব্দে [[তুস, ইরান|তুস]], [[ইরান|পারস্যে]] জন্ম গ্রহন করেন।<ref name="britannica.com"/> ধ্রুপদী সূত্রের অনিযায়ী জাবির ভিন্নভাবে আল-আযদি বা আল-বারিজি বা আল-কুফি বা আল-তুসি বা আল-সুফী হিসেবে অধিকারী হয়েছ।<ref name="Nasr">S.N. Nasr, "Life Sciences, Alchemy and Medicine", The Cambridge History of Iran, Cambridge, Volume 4, 1975, p. 412: "Jabir is entitled in the traditional sources as al-Azdi, al-Kufi, al-Tusi, al-Sufi. There is a debate as to whether he was a Persian from Khorasan who later went to Kufa or whether he was, as some have suggested, of Syrian origin and later lived in Iran".</ref> তার জন্ম স্থান নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে, কারো মতে তিনি ছিলেন একজন খোরাসান, পারস্য যিনি পরে কুফাতে যায়, অন্যদের মতে তিনি ছিলেন সিরিয়া আদিবাসি পরে তিনি পারস্য ও ইরাকে বসবাস করে।<ref name="Nasr"/> তার পুরুষগনের পটভূমি স্পষ্ট নয়, কিন্তু অধিকাংশ সূত্র তাকে একজন ফার্সি হিসেবে উল্লেখ করে।<ref name="SourcesP"/> কিছু সূত্র জানা যায় যে, তার পিতা ছিলেন হাইয়ান আল-আযদি। তিনি ছিলেন [[আরব জাতি|আরব]] [[Azd|আযদ]] উপজাতির একজন ফার্মাসিস্ট যিনি [[উমাইয়া খিলাফত|উমাইয়া খিলাফতের]] সময় [[ইয়েমেন]] থেকে [[Kufa|কুফা]]তে প্রবসিত হন।<ref name="Holmyard1931">{{cite book|last=Holmyard|first=Eric John|title=Makers of chemistry|url=http://books.google.com/?id=NZcaAAAAIAAJ|accessdate=19 June 2010|year=1931|publisher=The Clarendon press}}</ref><ref name=Holmyard1997>{{cite book| editor = Holmyard, E.J. | author = Richard Russell | year = 1928 | title = The Works of Geber | isbn = 0-7661-0015-4}}</ref>
 
<!-- জানা যায় , উমাইয়া বংশীয় খলিফাগনের নিষ্ঠুর ও অমানবিক কার্যকালাপের দরুন হাইয়ান উমাইয়া বংশের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করতেন । সেহেতু তিনি পারস্যের কয়েকটি প্রভাবশালী বংশের সঙ্গে পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করবার জন্য আব্বাসীয়দের দূত হিসাবে কুফা ত্যাগ করে তুস নগরে গমন করেন । এ তুস নগরেই জাবিরের জন্ম হয় । হাইয়ানের ষড়যন্ত্রের কথা অতি শীঘ্রই তৎকালীন খলিফার দৃষ্টিগোচর হয় । খলিফা তাঁকে গ্রেফতার করে মৃত্যুদন্ড দেন । হাইয়ানের পরিবার পরিজনদের পুনরায় দক্ষিণ আরবে প্রেরণ করেন ।
 
দক্ষিন আরবেই জাবির ইবনে হাইয়ানের শিক্ষা লাভ শুরু । শিক্ষা লাভের প্রতি তার ছিল পরম আগ্রহ। যে কোন বিষয়ে বই পেলে তিনি তা পড়ে শেষ করে ফেলতেন এবং এর উপর গবেষনা চালাতেন । খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি এখানে গণিতের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ পারদর্শী বলে খ্যাত হয়ে উঠেন । শিক্ষা সমাপ্তির পর জাবির ইবনে হাইয়ান পিতার কর্মস্থান কুফা নগরীতে গিয়ে বসবাস শুরু করেন । সেখানে তিনি প্রথমে চিকিৎসা ব্যবসা আরম্ভ করেন এবং এ সূত্রেই তৎকালীন বিখ্যাত পন্ডিত ইমাম জাফর সাদিকের অনুপ্রেরণায় তিনি রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষনা শুরু করেন । কারো মতে জাবির ইবনে হাইয়ান খলিফা খালিদ বিন ইয়াজিদের নিকট রসায়ন বিদ্যা শিক্ষা লাভ করেছিলেন । কিন্তু এই কথার কোন সত্যতা খুজে পাওয়া যায়নি । কারন জাবির ইবনে হাইয়ানের কার্যাবলীর সময় কাল ছিল কলিফা হারুন অর রশীদের রাজত্বকালে । অথচ কলিফা খালিদ বিন ইয়াজিদ , হারুন ওর রশীদের বহু পূর্বেই ইন্তেকাল করেন । যতদূর জানা যায়, জাবির ছিলেন ইমাম জাফর সাদিকেরই শিষ্য । খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসাবে তাঁর সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে । এ সময় ছিলো আব্বাসীয় খলিফা হারুন অর রশীদের রাজত্বকাল । কিন্তু খলিফা হারুণ অর রশীদের সাথে তাঁর তেমন কোণ পরিচয় ও সাক্ষাৎ হয়নি । কিন্তু খলিফা বারমাক বংশীয় কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো । ইমাম জাফর সাকিকই জাবিরকে বারমাক বংশীয় কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন ।
 
একবার ইয়াহিয়া বিন খালিদ নামক জনৈক বারমাক মন্ত্রীর এক সুন্দরী দাসী মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে । তৎকালীন দেশের সুপ্রসিদ্ধ চিকিৎসকগণ তাঁর চিকিৎসা করে ব্যর্থ হন । এ সময় মন্ত্রী প্রাসাদে চিকিৎসার জন্য ডাক পড়ে জাবির ইবনে হাইয়ানের । জাবির মাত্র কয়েকদিনের চিকিতসার মাধ্যমে তাঁকে সুস্থ করে তোলেন । এতে ইয়াহিয়া বিন খালিদ খুব সন্তুষ্ট এবং জাবিরের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । বারমাক বংশীয় কয়েকজন মন্ত্রীর মধ্যস্থতায় তিনি রাষ্ট্রীয় কিছু সুযোগ সুবিধা লাভ করেন । এর ফলে তিনি রসায়ন বিজ্ঞান সম্পর্কে ব্যাপক গবেষনা করার সুযোগ পান । মন্ত্রী ইয়াহিয়া এবং তাঁর পুত্র জাবিরের নিকট রসায়ন বিজ্ঞান শিক্ষা শুরু করেন । তিনি বিভিন্ন বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য ও বিভিন্ন পদার্থ আবিষ্কার করতে আরম্ভ করেন । খুব অল্প দিনের মধ্যেই তিনি শ্রেষ্ঠ রসায়ন বিজ্ঞানী হিসাবে পরিচিত হন । জাবির ইবনে হাইয়ান প্রতিটি বিষয়ই যুক্তির সাহায্যে বুঝবার ও অনুধাবন করার চেষ্টা করেছেন । আধ্যাত্মিকতার দোহাই দিয়ে তিনি কোন কাজে অগ্রসর হননি । তিনি সর্বদা হাতে কলমে কাজে করতেন । প্রতিটি বিষয়ে পুঙ্খানমুঙ্খ রূপে পর্যবেক্ষণ করে তার ফলাফল লিখে রাখতেন । তিনি তাঁর 'কিতাবুত তাজে' পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন , " রাসায়নিকের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কাজ হলো হাতে কলমে পরীক্ষা চালানো । যে হাতে কলমে কিংবা পরীক্ষামূলক কাজ করে না , তার পক্ষে সামান্যতম পারদর্শীতা লাভ করাও সম্ভবপর নয় । "
 
জাবির তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময়ই বাগদাদে কাটিয়েছেন । কিতাবুল খাওয়াসের ঘটনাবলী থেকে বুঝা যায় যে অষ্টম শতাব্দীর শেষ দিকে বাগদাদেই তিনি রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর গবেষণা চালিয়েছিলেন । বাগদাদেই তাঁর রসাওয়নাগার স্থাপিত ছিল । উল্লেখ্য যে , জাবিরের মৃত্যুর ১০০ বছর পরে কুফায় অবস্থিত দামাস্কাস গেটের নিকট রাস্তা নতুন করে তৈরী করতে কতকগুলো ঘর ভেঙ্গে ফেলার সময় একটি ঘরে ২০০ পাউন্ডের একটি সোনার থাল ও একটি খল পাওয়া যায় । ফিহরিস্তের মতে এটি ছিল জাবিরের বাসস্থান ও ল্যবরেটরী । ঐতিহাসিক হিস্ট্রিও এ ঘটনার সত্যতা শিকার করেন ।
 
জাবির ইবনে হাইয়ানের অবদান মৌলিক । তিনি বস্তু জগতকে প্রধানতঃ তিন ভাগে বিভক্ত করেন । প্রথম ভাগে স্পিরিট , দ্বিতীয় ভাগে ধাতু এবং তৃতীয় ভাগে যৌগিক পদার্থ । তাঁর এ আবিষ্কারের উপর নির্ভর করেই পরবর্তী বিজ্ঞানীরা বস্তুজগৎকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন । যথা - বাষ্পীয়, পদার্থ ও পদার্থ বহির্ভূত । জাবির এমন সব বস্তু বিশ্ব সভ্যতার সামনে তুলে ধরেন , যেগুলোকে তাপ দিলে বাষ্পায়িত হয় । এ পর্যায়ে আছে কর্পূর , আর্সেনিক ও এমোনিয়া ক্লোরাইড । তিনি দেখান কিছু মিশ্র ও যৌগিক পদার্থ; যেগুলোকে অনায়েসে চূর্নে পরিনত করা যায় । নির্ভেজাল বস্তুর পর্যায়ে তিনি তুলে ধরেন । সনা রূপা , তামা , লোহা , দস্তা প্রভৃতি ।
 
জাবির ইবনে হাইয়ানই সর্ব প্রথম নাইট্রিক এসিড আবিষ্কার করেন । সালফিউরিক এসিডও তাঁর আবিষ্কার । তিনি 'কিতাবুল ইসতিতমাস' এ নাইট্রিক এসিড প্রস্তুত করার ফর্মুলা বর্ণনা করেন । নাইট্রিক এসিডে স্বর্ণ গলে না । নাইট্রিক এসিড ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মিশ্রনে স্বর্ণ গলানোর ফরমুলা তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন । নাইট্রিক এসিড ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মিশ্রনে স্বর্ণ গলানোর পদার্থটির নাম যে " একোয়া রিজিয়া " এ নামটিও তাঁর প্রদত্ত । জাবির ইবনে হাইয়ান নানাভাবেই তাঁর রাসায়নিক বিশ্লেষণ বা সংশ্লেষনের নামকরণ বা সজ্ঞা উল্লেখ করেছেন । পাতন , উর্ধ্বপাতন , পরিস্রাবণ , দ্রবণ , কেলাসন , ভস্মীকরণ , গলন , বাষ্পীভবন ইত্যাদি রাসায়নিক সংশ্লেষণ বা অনুশীলন গবেষণার কি কি রূপান্তর হয় এবং তাঁর ফল কি তিনি তাও বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছেন । তিনি চামড়া ও কাপড়ে রঙ করার প্রনালী , ইস্পাত প্রস্তুত করার পদ্ধতি , লোহা , ওয়াটার প্রুফ কাপড়ে বার্নিশ করার উপায় , সোনার জলে পুস্তকে নাম লাখার জন্য লৌহের ব্যবহার ইত্যাদি আবিষ্কার করেন ।
 
জাবির ইবনে হাইয়ান স্বর্ণ ও পরশ পাথর তৈরী করতে পারতেন । কিন্তু তিনি স্বর্ণ কিংবা পরশ পাথরের লোভী ছিলেন না । ধন সম্পদের লোভ লালসা তাঁকে সভ্যতা উন্নয়নে ও গবেষণার আদর্শ থেকে বিন্দু মাত্র্ব পদস্খলন ঘটাতে পারেনি । দুর্দান্ত সাহসী জাবির ইবনে হাইয়ান স্বর্ণ ও পরশ পাথর তৈরী করতে গিয়ে আজীবন যেখানেই গিয়েছেন দুর্যোগ , দুশ্চিন্তা ও মৃত্যুর সাথে লড়াই ছাড়া সুখ শান্তির মুখ দেখতে পারেননি । জাবিরের মতে সোনা , রূপা , লোহা প্রভৃতি যত প্রকার ধাতু আছে , কোন ধাতুরই মৌলিকতা নেই । এসব ধাতুই পারদ আর গন্ধকের সমন্বয়ে গঠিত । খনিজ ধাতু খনিতে যে নিয়মে গঠিত হয় সে নিয়মে মানুষও ঐ সব ধাতু তৈরী করতে পারে । অন্য ধাতুর সংগে মিশ্র স্বর্ণকে Cupellation পদ্ধতিতে অর্থাৎ মীগারের সংগে মিশিয়ে স্বর্ণ বিশুদ্ধ করার পদ্ধতি তিনিই আবিষ্কার করেন ।
 
জাবির এপোলিয়ানের আধ্যাত্মিকবাদ , প্লেটো , সক্রেটিস , এরিস্টটল , পিথাগোরাস , ডিমোক্রিটিস প্রমুখের গ্রন্থের সংগে পরিচিত এবং গ্রীক ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন । তিনি চিকিৎসা শাস্ত্র , ইউক্লিড ও আল মাজেস্টের ভাষ্য , দর্শন , যুদ্ধবিদ্যা , রসায়ন , জ্যামিতি , জ্যোতির্বিজ্ঞান ও কাব্য সম্পর্কে বিভিন্না গ্রন্থ প্রণয়ন করেন । তিনি দুই হাজারেরও বেশী গ্রন্থ রচনা করেন । তবে তাঁর অধিকাংশ গ্রন্থই মাত্র কয়েক পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ । তিনি বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যা পেয়েছেন , তাঁর ফলাফলই ছিল গ্রন্থের বিষয়বস্তু । বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর প্রণীত গ্রন্থাবলীর মধ্যে রসায়ন ২৬৭ টি , যুদ্ধাস্ত্রাদি ৩০০টি , চিকিৎসা ৫০০টি দর্শনে ৩০০ টি , কিতাবুত তাগিদের ৩০০টি , জ্যোতির্বিজ্ঞান ত০০ পৃষ্ঠার ১টি , দার্শনিক যুক্তি খন্ড ৫০০টি উল্লেখযোগ্য । এসব গ্রন্থ সংখ্যায় অধিক পৃষ্ঠা সংখ্যায় ছিল কম । বিশ্ব বিখ্যাত এ মনীষীর মৃত্যু তারিখ নিয়েও মতভেদ আছে । যতদূর জানা যায় তিনি ৮০৩ খ্রীষ্টাব্দে মৃত্যুবরন করেন । -->
 
== তথ্যসূত্র ==
{{Reflist}}
 
== বহিঃসংযোগ ==