পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে, কোনো সমস্যা?
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে, সমস্যা? এখানে জানান
১ নং লাইন:
'''পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা''' [[ভারত|ভারতের]] [[পশ্চিমবঙ্গ]] রাজ্যের গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। ‘পঞ্চায়েত’ শব্দটির উৎপত্তি পঞ্চ বা পাঁচ থেকে। [[প্রাচীন ভারত|প্রাচীন ভারতে]] পাঁচজন সদস্য নিয়ে যে স্বশাসিত স্বনির্ভর গ্রামীণ পরিষদ গঠিত হত, তাকেই বলা হত পঞ্চায়েত। আধুনিককালে এই শব্দটির সঙ্গে যুক্ত হয় এক সমষ্টিগত চেতনা। ‘পঞ্চায়েত’ শব্দটির লোকপ্রচলিত অর্থ হয়ে দাঁড়ায় ‘পাঁচ জনের জন্য’। সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর বর্তমানে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের তৃতীয় স্তরের সরকার। বর্তমানে গ্রামবাংলাকে কেন্দ্র করে যে প্রশাসনিক, জনকল্যাণমূলক, বিচারবিভাগীয় ও প্রতিনিধিত্বমূলক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত, তাকেই '''পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা''' নামে অভিহিত করা হয়। [[১৮৭০]] সালে প্রথম বঙ্গীয় গ্রাম চৌকিদারি আইনের মাধ্যমে আধুনিক গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর গণতান্ত্রিক [[ভারত|ভারতে]] এই ব্যবস্থা তৃণমূলস্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন পাস হয় ও সংবিধান সংশোধন করা হয়। [[১৯৫৭]] সালে সর্বপ্রথম পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত আইন বিধিবদ্ধ হয়। ১৯৫৭ ও [[১৯৬৩]] সালের আইন অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে চার-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর [[১৯৭৩]] সালে নতুন আইনের মাধ্যমে চালু হয় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। [[১৯৯১]] সালে [[ভারতীয় সংবিধান|ভারতীয় সংবিধানের]] ৭২তম সংশোধনী অনুসারে [[১৯৯২]] সালে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত আইনটিকেও পুনরায় সংশোধিত করা হয়।
 
== ইতিহাস ==
৬ নং লাইন:
 
=== ব্রিটিশ যুগ ===
[[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]] [[১৭৬৫]] সালে [[বঙ্গ|বাংলা]], [[বিহার]] ও [[ওড়িশা|উড়িষ্যার]] দেওয়ানি লাভ করে। এর ১০৫ বছর পর [[১৮৭০]] সালে বঙ্গীয় গ্রাম চৌকিদারি আইন বা বেঙ্গল ভিলেজ চৌকিদারি অ্যাক্ট পাস হয়। এই আইন অনুসারে গ্রামাঞ্চলের অপরাধ দমনের লক্ষ্যে বাংলার গ্রামাঞ্চলে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসাবে চৌকিদারি পঞ্চায়েত নামে একটি কৃত্রিম সংস্থা চালু হয়। জেলাশাসক এই সংস্থার সদস্যদের নিয়োগ করতেন আর গ্রামবাসীদের কাছ থেকে আদায় করা করে এর কাজকর্ম সম্পাদিত হত। বৃহত্তর গ্রামোন্নয়নের সঙ্গে এর প্রত্যক্ষ কোনও যোগাযোগ ছিল না।
 
[[লর্ড রিপন]] (দপ্তরকাল [[১৮৮০]]-[[১৮৮৪|৮৪]]) প্রথম ভাইসরয় যিনি ভারতে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগ্রহী হন। এই ব্যবস্থাকে ‘রাজনৈতিক ও জনশিক্ষার হাতিয়ার’ আখ্যা দিয়ে তিনি এর একটি বিস্তারিত রূপরেখা রচনা করেন। [[১৮৮২]] সালে এই ব্যাপারে রিপনের প্রস্তাব গৃহীতও হয়। [[১৮৮৫]] সালে ব্রিটিশ সরকার দেশে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপটি গ্রহণ করেন। পাস হয় বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন বা বেঙ্গল সেল্ফ-গভর্নমেন্ট অ্যাক্ট। এই আইনবলে গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের তিনটি সংস্থা কার্যকর হয় – গ্রাম স্তরে ইউনিয়ন কমিটি, মহকুমা স্তরে স্থানীয় পরিষদ এবং জেলা স্তরে জেলা বোর্ড।
 
এক বা একাধিক গ্রামের জন্য ইউনিয়ন কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির হাতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিদ্যালয়, পুকুর ও রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অর্পিত হয়। অর্থের জন্য এই কমিটিগুলি জেলাবোর্ডের উপর নির্ভরশীল থাকত ও বোর্ডের অধীনেই নিজের কাজ সম্পাদনা করত। এই ব্যবস্থার ফলে গ্রাম স্তরে দুটি প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে – চৌকিদারি পঞ্চায়েত ও ইউনিয়ন কমিটি।
 
মহকুমা স্তরে গঠিত স্থানীয় পরিষদেরও কোনও স্বতন্ত্র ক্ষমতা বা আয় ছিল না এবং এই সংস্থাও সর্ব ব্যাপারে জেলা বোর্ডের উপরেই নির্ভরশীল থাকত। জেলা বোর্ড এদের হাতে কোনও ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব অর্পণ করলে, তবেই তারা তা প্রয়োগ করতে সমর্থ হত। তাই বলা যেতে পারে এই পরিষদগুলি জেলা বোর্ডের কমিটি হিসাবেও কাজ করত। <ref> পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত, অসিতকুমার বসু, [[পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি]], [[কলকাতা]], [[১৯৯৮]], পৃ. ১৭</ref> [[১৯৩৬]] সালে একটি আইন সংশোধনী বলে স্থানীয় পরিষদ বিলুপ্ত করা হয়।
 
প্রতিটি জেলায় একটি করে জেলা বোর্ড গঠিত হয়। বোর্ডের কার্যক্ষেত্র হয় জেলার সমগ্র গ্রামাঞ্চল। চার বছরের মেয়াদকালযুক্ত এই বোর্ডগুলি নয় থেকে ছত্রিশ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হত এবং এর সদস্যরা সকলেই নির্বাচিত হতেন। সদস্যদের মধ্য থেকে একজন সভাপতি ও একজন সহসভাপতি নির্বাচিত হতেন। এই জেলা বোর্ডগুলির হাতে বহু দায়িত্ব ন্যস্ত থাকত। এদের প্রধান কাজ ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যাতায়াত ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ। জেলা বোর্ডগুলির আয়ের উৎসও ছিল বিভিন্ন। আয়ের প্রধান উৎস ছিল পথ, সেতু, খেয়াঘাট, ডাকবাংলো, খোঁয়াড় প্রভৃতি থেকে প্রাপ্ত কর। সরকারি অনুদানও বোর্ডগুলি পেত। এছাড়া সাধারণের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষমতাও তাদের দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনোত্তর কালে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার প্রবর্তনের আগে অবধি এই বোর্ডগুলি কাজ করে গিয়েছে।
 
[[১৮৯৯]] সালে [[লর্ড কার্জন]] ভারতের ভাইসরয় পদে অভিষিক্ত হলে তিনি শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণ ঘটান। কার্জন ভারতবাসীর স্বাধিকারের তীব্র বিরোধী ছিলেন এবং ভারতবাসীকে তিনি আদৌ গণতন্ত্রের উপযুক্ত বলে মনে করতেন না; তা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের মতো যত সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রেই হোক না কেন। তাঁর প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণ রোধ করার জন্য [[লর্ড মর্লি]] [[১৯০৭]] সালে রাজকীয় বিকেন্দ্রীকরণ কমিশন বা রয়্যাল কমিশন অন ডিসেন্ট্রালাইজেশন গঠন করেন। [[১৯০৯]] সালে এই কমিশন তার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে চৌকিদারি ও অন্যান্য স্থানীয় কাজের দায়িত্ব একটি একক গ্রামীণ সংস্থার হাতে অর্পণ করার প্রস্তাব রাখা হয় এবং বলা হয় এক-একটি গ্রামকে গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তি করতে না পারলে এই শাসনব্যবস্থায় গ্রামবাসীদের আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না।
 
এরপর [[১৯১৪]] সালে তদনীন্তন বাংলা সরকার একটি জেলা প্রশাসন কমিটি বা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি সুপারিশ করেন গ্রামাঞ্চলে এমন এক শাসন কর্তৃপক্ষ গড়ে তুলতে যার মধ্যে একাধারে ইউনিয়ন কমিটি ও চৌকিদারি পঞ্চায়েতের কাজ করবে এবং একটি গ্রামীণ বিচারব্যবস্থাও তার অন্তর্ভুক্ত হবে। মূলত এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে [[১৯১৯]] সালে পাস হয় বঙ্গীয় গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আইন বা বেঙ্গল ভিলেজ সেল্ফ-গভর্নমেন্ট অ্যাক্ট। এই আইনবলে চৌকিদারি পঞ্চায়েত ও ইউনিয়ন কমিটি অবলুপ্ত করা হয় এবং উভয়ের ক্ষমতা একাধিক গ্রাম নিয়ে গঠিত ইউনিয়ন বোর্ডের হাতে ন্যস্ত করা হয়। এই বোর্ডগুলি গ্রামবাসীদের প্রয়োজনে নিজ নিজ এলাকায় কর ধার্য করার ক্ষমতা রাখত। এছাড়া এই আইনের ছোটোখাটো দেওয়ানি মামলা বিচারের জন্য ইউনিয়ন কোর্ট ও ছোটোখাটো ফৌজদারি মামলা বিচারের জন্য ইউনিয়ন বেঞ্চও গঠন করা হয়। এই বিচারব্যবস্থার বিচারকগণও ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্যদের মধ্য থেকেই নিযুক্ত হতেন।
 
তবে এইসব ইউনিয়ন ও জেলা বোর্ডের কাজকর্ম প্রাথমিক শিক্ষা, জল সরবরাহ, সড়ক ও সেতু নির্মান এবং জনস্বাস্থ্যরক্ষা মতো কাজেই সীমাবদ্ধ ছিল। অর্থ ও কর্মীর অভাবে এগুলির দ্বারা গ্রামীণ জীবনের ন্যূনতম চাহিদাগুলি পূরণ করা সম্ভব হত না। যদিও গ্রামবাংলার জনসাধারণকে ভাবী গণতন্ত্রের পথে অনেকটাই শিক্ষিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছিল এগুলি।
২৪ নং লাইন:
=== স্বাধীনোত্তর কাল - 'প্রথম প্রজন্ম' (১৯৪৭-১৯৭৭) ===
 
[[১৯৪৭]] সালে [[ভারত]] স্বাধীন হয় ও [[ভারতীয় সংবিধান|দেশের সংবিধান]] রচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু খসড়া সংবিধানে গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি যথোচিত গুরুত্ব না পাওয়ায় গান্ধীজি মনোক্ষুণ্ণ হন। তিনি চেয়েছিলেন, ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা হবে গ্রামকেন্দ্রিক আর তাই গ্রাম ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্জন করবে। বস্তুত, আধুনিক পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মূল ধারণাটি তিনিই প্রথম ভারতবাসীর সামনে তুলে ধরেছিলেন। এরপর সংবিধানের ৪০ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়ঃ রাজ্য গ্রাম পঞ্চায়েত গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং পঞ্চায়েতগুলি যাতে স্বায়ত্তশাসনের ইউনিট হিসাবে কাজ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তাদের হাতে অর্পণ করবে। <ref> ভারতীয় সংবিধান, ধারা ৪০ </ref> কিন্তু এখানে মনে রাখা দরকার, ভারতের সংবিধান প্রণেতাগণ পঞ্চায়েত ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোটি গড়ে তোলেননি। তাই পঞ্চায়েতের সাংবিধানিক স্বীকৃতি মিললেও এই ধারাটি নির্দেশমূলক নীতির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এর বাস্তবায়নে রাজ্য বা কেন্দ্র কেউই বাধ্য ছিল না।
 
তবে এই নির্দেশ অনুসরণ করে ভারতের কোনও কোনও রাজ্যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গেও পরীক্ষামূলকভাবে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয় [[বারুইপুর]], মহম্মদবাজার, [[সাঁইথিয়া]], নলহাটি, শক্তিগড়, গুসকরা, [[ঝাড়গ্রাম]] ও [[ফুলিয়া]] ব্লক এলাকায়। পরীক্ষামূলক পঞ্চায়েতে কোনও আইনগত সংস্থা না থাকায় এগুলির কাজ চলতে থাকে ইউনিয়ন বোর্ডের অধীনেই। গ্রামবাসীরা এক জায়গায় মিলিত হয়ে হাত তুলে ভোট দিয়ে সদস্য নির্বাচন করতেন ও কার্যালয়ের ব্যয় ও গ্রামোন্নয়ন বাবদ পঞ্চায়েতগুলিকে ১০০ টাকা করে দেওয়া হত। কাজ হত গ্রামবাসীদের দান আর কায়িক শ্রমে।
৪১ নং লাইন:
 
=== বামফ্রন্ট আমল - 'দ্বিতীয় প্রজন্ম' (১৯৭৭-বর্তমানকাল) ===
[[১৯৭৭]] সালে বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন ক্ষেত্রে বিপ্লব সূচিত হয়। ১৯৭৩ সালের পর থেকে বেশ কয়েকবার পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন সংশোধিত করা হয়। এই আইন অনুসারে [[১৯৭৮]] সালের জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গের নবগঠিত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভারতে এই প্রথমবার দলীয় প্রতীকের ভিত্তিতে একই দিনে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনের ফলে ১৫টি জেলা পরিষদ, ৩২৪টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ৩২৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হয়। [[১৯৮৮]] সালে [[দার্জিলিং জেলা|দার্জিলিং জেলার]] পার্বত্য মহকুমাগুলিতে [[দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল]] হওয়ায় ওই জেলার জেলা পরিষদ অবলুপ্ত হয়। তার পরিবর্তে [[শিলিগুড়ি মহকুমা|শিলিগুড়ি মহকুমায়]] একটি মহকুমা পরিষদ গঠিত হয়, যা একটি স্বতন্ত্র জেলা পরিষদের ক্ষমতা ও মর্যাদা ভোগ করে। ১৯৭৮ সাল থেকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নিয়ম করে পঞ্চায়েতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে [[২০০৮]] সালে।
 
অধ্যাপক প্রভাত দত্ত পশ্চিমবঙ্গের এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে ‘দ্বিতীয় প্রজন্মের পঞ্চায়েত’ আখ্যা দিয়েছেন। <ref>The Second Generation Panchayets in India, Prabhat Dutta, Calcutta Book House Pvt Ltd, preface</ref> এই পঞ্চায়েত সংস্কার ও নিয়মিত নির্বাচন ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের ধারণাটিকে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করে তোলে। এর ফলে ব্যাপক হারে জনসাধারণ সরকারি কাজে অংশগ্রহণের সুবিধা অর্জন করে। ফলে তাদের মধ্যে উৎসাহ ও সাহস অনেক বৃদ্ধি পায়। অধ্যাপক অমলকুমার মুখোপাধ্যায়ের মূল্যায়নে, “সাধারণ গ্রামবাসীরা আর সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে দাক্ষিণ্য প্রার্থনা করতে যান না, বরং যান যা তাঁদের প্রাপ্য তার দাবি নিয়ে। নয়া গণতন্ত্রে মানুষের রাজনৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি কম গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব নয়।” <ref>The Panchayet Administration in West Bengal, Ashok Kumar Mukhopadhyay, The World Press Pvt Ltd, Third Edition, Calcutta, 1991, p.152 </ref>
 
== গঠন ==
৭৪ নং লাইন:
 
=== কমিটি ব্যবস্থা ===
পঞ্চায়েত সংস্থাগুলির সঙ্গে জড়িত সদস্যদের সময়ের স্বল্পতা, পঞ্চায়েত প্রশাসনের কাজকর্মের ধারাকে অব্যাহত রাখা, মুষ্টিমেয় ব্যক্তির হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন রোধ ও গণতন্ত্রের বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় কমিটি ব্যবস্থার বিধান রাখা হয়েছে। মুখ্যত পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ স্তরে কমিটি ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি এককভাবে বা যৌথভাবে কমিটি গঠনের অধিকারী হলেও, গ্রাম পঞ্চায়েত ক্ষেত্রে অবশ্য কমিটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
 
জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতিতে এই সকল উদ্দেশ্য রূপায়ণে মোট দশটি স্থায়ী সমিতি বা স্ট্যান্ডিং কমিটি রয়েছে। তবে প্রয়োজনবোধে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে আরও কমিটি এঁরা গঠন করতে পারেন। বর্তমানে কার্যকর কমিটিগুলি হলঃ (১)অর্থ, সংস্থা, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা স্থায়ী সমিতি; (২)জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতি; (৩)পুর্তকার্য ও পরিবহন স্থায়ী সমিতি; (৪)কৃষি, সেচ ও সমবায় স্থায়ী সমিতি;(৫)শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্য ও ক্রীড়া স্থায়ী সমিতি; (৬)ক্ষুদ্রশিল্প, ত্রাণ ও জনকল্যাণ স্থায়ী সমিতি; (৭)বন ও ভূমি সংস্কার স্থায়ী সমিতি; (৮)মৎস্য ও প্রাণীসম্পন বিকাশ স্থায়ী সমিতি; (৯)খাদ্য ও সরবরাহ স্থায়ী সমিতি; এবং (১০)বিদ্যুত ও অচিরাচরিত শক্তি স্থায়ী সমিতি।
৮২ নং লাইন:
* জেলা পরিষদ/পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত ৩ থেকে ৫ জন সদস্য
* রাজ্য সরকার বা কোনও বিধিবদ্ধ সংস্থা বা নিগমের আধিকারিক বা প্রখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে রাজ্য সরকার কর্তৃক মনোনীত কয়েকজন ব্যক্তি।
সদস্যদের সকলেই কোনও না কোনও কমিটির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। তবে সভাধিপতি/সভাপতি ও সহকারী সভাধিপতি/ সহকারী সভাপতি ছাড়া কেউই দুটি (জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে) বা তিনটির (পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে) বেশি কমিটির সদস্য হতে পারেন না। প্রত্যেক সমিতি নিজেদের মধ্যে থেকে একজনকে কর্মাধ্যক্ষ বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। তবে এই নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার মনোনীত ব্যক্তিগণ অংশগ্রহণ বা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা করতে পারেন না। এই পদগুলির ক্ষেত্রেও তফসিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলাদের আসন সংরক্ষণের ব্যাপারে অপরাপর পঞ্চায়েত সংস্থাগুলির নীতিই অনুসৃত হয়। তবে সভাপতি বা সভাধিপতিই নিজ নিজ সংস্থার অর্থ, সংস্থা, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হয়ে থাকেন।
 
প্রত্যেক কমিটি নিজ নিজ সংস্থাগুলি দ্বারা অর্পিত ক্ষমতার প্রয়োগ ও কার্য সম্পাদনা করে থাকে। এদের এক্তিয়ার নিয়মানুযায়ী বিধিবদ্ধ এবং এই এক্তিয়ারের কর্মসূচি, প্রকল্প সম্পাদন ও আর্থিক প্রশাসনের জন্য কর্মাধ্যক্ষ দায়ী থাকেন।
 
প্রত্যেক কমিটিতে একজন সচিব থাকেন। পঞ্চায়েত সমিতিতে পঞ্চায়েত সম্প্রসারণ আধিকারিক এই পদটি অলংকৃত করেন। অন্যত্র সদস্যদের মধ্যে থেকেই সচিব নির্বাচিত হন। সরকার মনোনীত সদস্যগণ এই পদে যোগ দিতে পারেন না। জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে পরিষদ সচিব সকল স্থায়ী কমিটির সচিব হিসাবে কাজ করেন। এখানে উল্লেখ্য, কর্মাধ্যক্ষ সর্বক্ষণের কর্মী হন। তিনি অন্য কোথাও বেতনভোগী কর্মীরূপে কাজ করতে পারেন না।
 
এছাড়া দশটি সমিতির কাজকর্মের সমন্বয়ের জটিল দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য একটি সমন্বয় সমিতিও কাজ করে থাকে। এই কমিটির কাজ কতকটা মন্ত্রিসভার ক্যাবিনেটের মতো। এই সমিতিগুলি গঠিত হয় সভাধিপতি/সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষগণ এবং পরিষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিক ও অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক/ পঞ্চায়েত সমিতির কার্যনির্বাহী আধিকারিককে নিয়ে। নিজ সংস্থার সচিবগণ জেলা পরিষদ/পঞ্চায়েত সমিত্র সমন্বয় কমিটির সচিব হন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি/ জেলা পরিষদের সভাধিপতি সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন।
 
=== নির্বাচন ব্যবস্থা ===
[[ভারতের সংবিধান|সংবিধান]] অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতের সমস্ত নির্বাচন পরিচালনা, তত্ত্বাবধান, নির্দেশদান ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তবে এই নির্বাচন পঞ্চায়েত আইন অনুসারেই নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
 
গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। আইন অনুসারে পাঁচ বছর শেষ হবার আগেই এই তিন সংস্থায় নির্বাচন করতে হয়। তাছাড়া কোনও পঞ্চায়েত সংস্থা ভেঙে দিলে ছয় মাসের মধ্যে ভোটের আয়োজন করাও বাধ্যতামূলক।
 
নির্বাচনের সুবিধার জন্য প্রত্যেক পঞ্চায়েত সংস্থাকে কয়েকটি নির্বাচন ক্ষেত্রে ভাগ করা হয়েছে। এই এলাকার ভোটদাতারা অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোটাররাই। গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটার সংখ্যার নিরিখে কোনও কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনি এলাকা একাধিক সদস্যবিশিষ্ট। অন্যান্য ক্ষেত্রে অবশ্য এই এলাকা এক সদস্যবিশিষ্টই। প্রত্যেক পঞ্চায়েত সংস্থার মেয়াদ পাঁচ বছরের জন্য। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই রাজ্য সরকার যে-কোনও পঞ্চায়েত সংস্থা ভেঙে দিতে পারেন। এছাড়া কোনও সদস্য পদত্যাগ করলে বা পদচ্যূত হলে বা মারা গেলে তাঁর নির্বাচনি এলাকায় পুনরায় নির্বাচন করা যায়।
১২২ নং লাইন:
* '''পঞ্চায়েত অধিকার''' – পঞ্চায়েত অধিকার পঞ্চায়েত বিভাগের নীতিগুলি রূপায়িত করে থাকে। এর ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হলেন পঞ্চায়েত অধিকর্তা। তাঁকে সাহায্য করার জন্য দুজন যুগ্ম-অধিকর্তা, তিনজন সহ-অধিকর্তা এবং অন্যান্য আধিকারিক ও কর্মীরাও রয়েছেন।
 
এছাড়া পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরের জন্য তিন জন আঞ্চলিক সহ-অধিকর্তা, প্রত্যেক জেলায় একজন জেলা পঞ্চায়েত আধিকারিক বা ডিস্ট্রিক্ট পঞ্চায়েত অফিসার (ডিপিও) এবং পঞ্চায়েতের সর্বনিম্ন যোগসূত্র হিসাবে একজন পঞ্চায়েত সম্প্রসারণ আধিকারিক (ইওপি) রয়েছেন। ডিপিও গ্রাম পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধান করেন ও তাঁদের পরামর্শ দেন; ইওপি ব্লক স্তরে সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের অধীনে কাজ করেন।
 
প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ এক-একটি ‘আবদ্ধ ইউনিট’। <ref> পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত, অসিতকুমার বসু, [[পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি]], [[কলকাতা]], [[১৯৯৮]], পৃ.৪২</ref> সেজন্য পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরে নিযুক্ত কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ ভিন্ন ভিন্ন রকমের
 
=== গ্রাম পঞ্চায়েত প্রশাসন ===
গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রশাসনিক ব্যবস্থার শীর্ষে আছেন প্রধান ও উপ-প্রধান। এছাড়া প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে একজন করে সচিব থাকেন যিনি পঞ্চায়েতের দৈনিক কাজকর্ম পরিচালনা করেন। তাঁকে নিয়োগ করেন পঞ্চায়েত অধিকর্তা। এছাড়া থাকেন একজন কর্মসহায়ক বা জব অ্যাসিস্টেন্স। তাঁকে নিয়োগ করেন প্রধান। তিনি মূখ্যত প্রকল্প সংক্রান্ত কাজকর্ম দেখাশোনা করেন।
 
এছাড়া পূর্বে প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে যে একজন করে দফাদার ও কয়েকজন চৌকিদার থাকতেন, তাঁদের বদলে পঞ্চায়েতের সর্বক্ষণের জন্য কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে। এঁদের নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মী’।
১৩৪ নং লাইন:
 
=== পঞ্চায়েত সমিতি প্রশাসন ===
পঞ্চায়েত সমিতি প্রশাসনের শীর্ষে থাকেন সভাপতি ও সহকারী সভাপতি। এছাড়া প্রত্যেক কর্মাধ্যক্ষের হাতেও কিছু কিছু প্রশাসনিক দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে। এঁরা প্রত্যেকেই নির্বাচিত প্রশাসক।
 
এছাড়া পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাহী আধিকারিক হিসাবে কাজ করেন সংশ্লিষ্ট সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও)। পঞ্চায়েত সম্প্রসারণ আধিকারিক পঞ্চায়েত সমিতি এবং অর্থ কমিটির সচিব। এছাড়া অপরাপর কমিটিগুলিতেও একজন করে সচিব থাকেন। সংশ্লিষ্ট ব্লকের আধিকারিক ও কর্মীবর্গকে পঞ্চায়েত সমিতির হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও রাজ্য সরকার প্রয়োজনে অন্যান্য আধিকারিক ও কর্মচারী দিয়ে পঞ্চায়েত সমিতিকে সাহায্য করে থাকেন।
 
=== জেলা পরিষদ প্রশাসন ===
জেলা পরিষদের নীতিপ্রণয়ন ও কার্যসম্পাদনের জন্য জেলা পরিষদের সভাধিপতি বা তাঁর অনুপস্থিতিতে সহকারী সভাধিপতি নেতৃত্বে একটি প্রশাসন যন্ত্র কাজ করে। সভাধিপতি পরিষদের আর্থিক ও কার্যনির্বাহী প্রশাসনের সাধারণ দায়িত্বে বহাল থাকেন ও পরিষদের দলিলপত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়ী থাকেন। পরিষদের কাজকর্ম কয়েকটি কমিটির দ্বারা সম্পাদিত হয়ে থাকে। এই কমিটিগুলির অধ্যক্ষগণ জেলা পরিষদ প্রশাসনে নির্দিষ্ট দায়িত্ব বহন করে থাকেন।
 
প্রত্যেক জেলার জেলা-শাসক জেলা পরিষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিকের পদে আসীন থাকেন। তাঁকে সহায়তা করেন একজন অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক; তিনি অতিরিক্ত জেলা-শাসকের মর্যাদাসম্পন্ন আধিকারিক। এছাড়াও অপর একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক পরিষদের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এঁরা সকলেই [[পশ্চিমবঙ্গ সরকার|রাজ্য সরকার]] কর্তৃক নিযুক্ত হন।
 
এঁরা ছাড়াও প্রত্যেক জেলা পরিষদে একজন করে জেলা প্রযুক্তিবিদ বা ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার, মেডিক্যাল অফিসার, উচ্চপদস্থ কারিগরি কর্মী এবং করণিক ও আরদালি থাকেন। রাজ্য সরকারও কিছু কর্মচারীকে পরিষদে ন্যস্ত করে থাকেন।
 
== তহবিল ও সম্পত্তি ==
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত সংস্থাগুলির পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান পঞ্চায়েত আইন, নিয়মাবলি ও সরকারি আদেশনামা অনুসারে হয়ে থাকে। এই সংস্থাগুলির আয়ের উৎস দুভাগে বিভক্ত – অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। অভ্যন্তরীন উৎসগুলির মধ্যে আছে কর (ট্যাক্স), অভিকর (রেট), মাশুল (ফি), উপশুল্ক (টোল), জরিমানা ও এগুলির নিজস্ব লগ্নি ও লাভজনক উদ্যোগ থেকে আয়। বাহ্যিক উৎসের মধ্যে পড়ে [[পশ্চিমবঙ্গ সরকার|রাজ্য]] ও [[ভারত সরকার|কেন্দ্রীয় সরকার]], জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি কর্তৃক দত্ত অনুদান বা ন্যস্ত অর্থ, সরকার আরোপিত করের অংশ, স্থানান্তরিত রাজস্ব, সরকারি আর্থিক সাহায্য ইত্যাদি।
 
=== গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব আয় ===
১৭২ নং লাইন:
 
=== পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের নিজস্ব আয় ===
পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের নিজস্ব আয়ের উৎসগুলি মোটামুটি একই রকমের। রাজ্য সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ হারে এরা কর, অভিকর, মাশুল ও উপশুল্ক বসাতে পারে। উভয় সংস্থাই নিজ পরিচালনাধীনে থাকা সড়ক ও সেতুর উপর চলাচলকারী মানুষ, যানবাহন ও মালিকানাধীন পশুর উপর উপশুল্ক; খেয়াঘাটে উপশুল্ক; যানবাহন নিবন্ধীকরণ, তীর্থ ও মেলায় স্বাস্থ্যসম্পর্কিত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য, মেলার লাইসেন্স বাবদ মাশুল; জল সরবরাহ, সর্বজনীন স্থানে আলোর উপর অভিকর বসাতে পারে। পঞ্চায়েত সমিতি হাট ও বাজারের লাইসেন্স বাবদ মাশুল ও জেলা পরিষদ নৌকা নিবন্ধীকরণের জন্য মাশুল আদায় করতে পারে। নির্দিষ্ট আইন বা বিধিভঙ্গ করলে এরা জরিমানাও আদায় করতে পারে। তবে একটি বিষয়ের উপর একটি পঞ্চায়েত সংস্থাই কর বা মাশুল ধার্য করতে পারে।
 
এছাড়াও জেলা পরিষদের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হল পুর্ত ও সড়ক উপকর। এই কর রাজ্য সরকার নির্ধারিত হারে জেলা পরিষদ আদায় করে ও তারাই ভোগ করে। এছাড়াও জেলা পরিষদের হাতে রাজ্য সরকার দ্বারা ন্যস্ত ডাক-বাংলো, হাসপাতাল, খাস জমি ও পুকুর-দিঘি থেকে প্রাপ্ত আয়ও পরিষদের আয়ের অন্যতম উৎস।
 
এছাড়াও পরিষদ নিজ উদ্যোগে আয় বাড়াতে পারে বা সরকার, ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থা থেকে ঋণ তুলতে পারে।
 
=== সরকারি অনুদান ===
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত সংস্থাগুলির আয়ের উৎস যথেষ্ট নয়। সেই কারণে এদের সরকারি অনুদানের উপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। এই সরকারি অনুদানই গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আয়ের প্রধান উৎস। এই অনুদান প্রধানত দুই ধরনের – সাধারণ অনুদান ও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প রূপায়নে বরাদ্দ বিভাগীয় অর্থ।
 
গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কর্মচারী, প্রধান ও উপ-প্রধানের বেতন, সদস্যদের রাহাখরচ ও দৈনিক ভাতা বাবদ সরকারি অনুদান; ম্যাচিং গ্রান্ট ও প্রকল্প রূপায়নের জন্য বরাদ্দ অর্থ পেয়ে থাকে।
 
পঞ্চায়েত সমিতিগুলিকেও রাজ্য সরকার বিভিন খাতে অনুদান ও কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা বাবদ অর্থ; প্রশাসনিক ব্যয়বরাদ্দ ও প্রকল্প রূপায়নের অর্থ দিয়ে থাকে।
 
জেলা পরিষদ [[ভারত সরকার|কেন্দ্র]] ও [[পশ্চিমবঙ্গ সরকার|রাজ্য সরকারের]] কাছ থেকে অনুদান পেয়ে থাকে। এই অনুদানে কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা প্রদান; প্রশাসনিক ব্যয় ও প্রকল্প রূপায়নের ব্যয় নির্বাহিত হয়।
১৮৯ নং লাইন:
 
=== নিরীক্ষা বা অডিট ===
পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন অনুসারে পঞ্চায়েত সংস্থাগুলি আয়ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির আয়ব্যয়ের বার্ষিক হিসাব সরকারি সংস্থা একজামিনার অব লোকাল অ্যাকাউন্টস দ্বারা নিরীক্ষিত হয়। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে এই কাজ করেন পঞ্চায়েত সম্প্রসারণ আধিকারিক।
 
পঞ্চায়েত সংস্থাগুলির নিরীক্ষক সংস্থার কর্মচারীরা হলেন –
* গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে ব্লক স্তরে পঞ্চায়েত অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড অডিট অফিসার;
* পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে জেলা স্তরে সমিতি অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড অডিট অফিসার;
* জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে জেলা স্তরে পরিষদ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড অডিট অফিসার।
 
এঁদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য প্রত্যেক বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে একজন করে রিজিওনাল অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড অডিট অফিসার আছেন। রাজ্য স্তরে পঞ্চায়েত ও সমষ্টি উন্নয়ন বিভাগের অধীনে একজন বিশেষ আধিকারিকও আছেন। এঁদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি পঞ্চায়েত আইন অনুসারে বিধিবদ্ধ।
 
আয়ব্যয় নিরীক্ষার ক্ষেত্রে এরা চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। দুর্নীতিরোধে এদের হাতে বিশেষ দায়িত্ব ও ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি আইনবিরুদ্ধভাবে অর্থব্যয় করলে সংস্থার কোনও সদস্যকে অপসারিতও করা যাবে।
 
অডিট রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট সংস্থার অধিবেশনে আলোচিত হয়ে থাকে। এই রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছেও জমা করতে হয়।
 
এছাড়াও দূর্নীতিরোধে জেলা কাউন্সিলের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। জেলা বা মহকুমা পরিষদে বিরোধী দলনেতা এই কাউন্সিলের অধ্যক্ষ হয়ে থাকেন।
 
== পঞ্চায়েত ও বিকেন্দ্রীকরণ ==
[[ভারত]] বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই সুবৃহৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটির সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সেই কারণে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এছাড়াও এই ব্যবস্থা ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোর পক্ষে আদর্শগতভাবেও অত্যন্ত জরুরি।
 
পঞ্চায়েত ভারত অথা পশ্চিমবঙ্গে দায়িত্বশীল স্থানীয় সরকারের কাজ সম্পাদনা করে থাকে। এরা অবশ্যই সার্বভৌম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হয় না; নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যেই কার্যকরী স্বাধিকার বা ফাংশনাল অটোনমি হিসাবে কাজ করে থাকে। এই উপায়ে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও দাবিগুলির নিরূপণ সম্ভব। স্থানীয় সমস্যার সমাধান যা কেন্দ্র বা রাজ্য রাজধানী থেকে করা সম্ভব নয় – তার সমাধানও পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমেই সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব।
২১৫ নং লাইন:
* কেন্দ্র, রাজ্য সরকার ও স্বগৃহীত বিভিন্ন মানবসম্পদ উন্নয়নগত পরিকল্পনা রূপায়ন।
* বিশেষ এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা (যেমন দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল উন্নয়ন কর্মসূচি)।
* সম্পদ সংগ্রহ (যেমন খেয়াঘাট ও হাটবাজার পরিকল্পনা ও ন্যস্ত পুকুরগুলিতে মৎসচাষ করে সম্পদ সংগ্রহ করা)। <ref> পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত, অসিতকুমার বসু, [[পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি]], [[কলকাতা]], [[১৯৯৮]], পৃ.৫৫</ref>
 
 
 
== তথ্যসূত্র ==