লং আইল্যান্ড: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Addbot (আলোচনা | অবদান)
বট: আন্তঃউইকি সংযোগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা এখন উইকিউপাত্ত ...
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে, কোন সমস্যা?
৩৩ নং লাইন:
| additional info =
}}
'''লং আইল্যান্ড''' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় নিউ ইয়র্ক শহরের উপকূলবর্তী একটি দ্বীপ। দ্বীপটি হাডসন নদীর মোহনা তথা নিউ ইয়র্ক উপসাগর থেকে শুরু হয়ে পূর্বে ও উত্তর-পূর্বে কানেটিকাট ও রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের সীমানা কিছু ছাড়িয়ে বিস্তৃত। এটি মূল ভূখন্ডে অবস্থিত নিউ ইয়র্ক শহরের ম্যানহাটান ও ব্রংক্স বারো থেকে ইস্ট রিভার নদীর মাধ্যমে, আপার ও লোয়ার নিউ ইয়র্ক উপসাগর দুইটির মধ্যবর্তী সংকীর্ণ ন্যারোজ প্রণালীর মাধ্যমে স্ট্যাটেন আইল্যান্ড থেকে, এবং উত্তরে লং আইল্যান্ড সাউন্ড নামের আটলান্টিক মহাসাগরের জলভাগ দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি অঙ্গরাজ্য কানেটিকাট থেকে বিচ্ছিন্ন। এর পূর্বে ও দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগর।
 
লং আইল্যান্ড দ্বীপটির আয়তন ৩,৬২৭ বর্গকিলোমিটার, দৈর্ঘ্য ১৯৩ কিমি এবং প্রস্থ ৪৮ কিমি (দ্বীপটির নাম 'লং' আইল্যান্ডের সাথে যা মানানসই)। এটি মহাদেশীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম দ্বীপ এবং বিশ্বের ১৪৯তম বৃহত্তম দ্বীপ। পেকনিক উপসাগর দ্বীপটির পূর্ব প্রান্তকে দ্বিধাবিভক্ত করেছে। উত্তর ভাগটি ৪৩ কিমি দীর্ঘ এবং ওরিয়েন্ট পয়েন্ট-এ গিয়ে শেষ হয়েছে। দক্ষিণের ভাগটি ৬৮ কিমি দীর্ঘ এবং মনটাউক পয়েন্ট-এ গিয়ে শেষ হয়েছে। এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ৭৫ লক্ষ। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপ।
 
লং আইল্যান্ড নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণতম ও পূর্বতম কোনায় অবস্থিত এবং চারটি কাউন্টিতে বিভক্ত --- কিংস (বা ব্রুকলিন বারো), কুইন্‌স, ন্যাস' (Nassau) এবং সাফক। কিংস কাউন্টি বা ব্রুকলিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে ও কুইন্স দ্বীপের পশ্চিম অংশে অবস্থিত এবং এগুলি নিউ ইয়র্ক শহরের অংশ বা বারো। এই দুইটি কাউন্টিতে দ্বীপের অর্ধেকের বেশি লোক বাস করেন। ন্যাস' ও সাফক হল নিউ ইয়র্কের শহরতলি। ন্যাস' কাউন্টি ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহরতলি এলাকা। সাফক কাউন্টি দ্বীপের পূর্ব দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে বিস্তৃত এবং দ্বীপের সবচেয়ে বড় কাউন্টি। সাফক নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল কৃষি এলাকা। এখানে আলুর বিরাট বিরাট খামার আছে। সাফক কাউন্টি থেকে কানেটিকাটে ফেরি যোগাযোগ আছে। লং আইল্যান্ডে হাঁসের বিরাট খামার শিল্প আছে এবং এখানে মৎস্যশিল্প, বিশেষ করে অয়স্টার এবং ক্ল্যাম-জাতীয় ঝিনুক ধরার শিল্প গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প।
 
দ্বীপটি একটি বড় শিল্পকেন্দ্র। এখানে পরিবহনের বিভিন্ন সরঞ্জাম, বিশেষ করে বিমানের বিভিন্ন সরঞ্জামের বড় শিল্প কারখানা আছে। দ্বীপের পূর্বাংশে পারমাণবিক শক্তি কমিশনের ব্রুকহ্যাভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি অবস্থিত। এখানে স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক অ্যাট স্টোনি ব্রুক অবস্থিত।
 
একটি হিমবাহের ক্রিয়ার ফলে দ্বীপটির উৎপত্তি। হিমবাহটি গলতে এবং অপসৃত হতে শুরু করলে মোরেন (moraine) নামের অবশেষ রেখে যায়। লং আইল্যান্ডের সমগ্র দৈর্ঘ্য জুড়ে এরকম দুইটি মোরেন আছে। দ্বীপের বেশির ভাগ অংশে মোরেন দুইটিকে একে অপর থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়, তবে দ্বীপের পূর্ব প্রান্তে গিয়ে পেকনিক উপসাগরের মাধ্যমে মোরেন দুইটি উত্তর-দক্ষিণে আলাদা হয়ে গেছে।
 
লং আইল্যান্ড দ্বীপের উত্তর তীর পাহাড়ি এবং উপকূল অত্যন্ত ভগ্ন। দক্ষিণ তীরে সরু একটি বালিয়াড়ি আটলান্টিক সাগরকে বাধা দিচ্ছে এবং গ্রেট সাউথ বে, মরিশেস বে এবং শিনকক বে নামের উপসাগরগুলির সৃষ্টি করেছে। এই উপসাগরগুলি সুরক্ষাকারী বালিয়াড়ির মধ্য দিয়ে সরু সরু চ্যানেলের মাধ্যমে আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত। বালিয়াড়িটি স্থানে স্থানে বিস্তার লাভ করে দ্বীপের মত রূপ ধারণ করেছে। বালিয়াড়ির উপরের এই আপাত দ্বীপগুলিতে অনেক সমুদ্রস্নানের সৈকত ও গ্রীষ্মকালীন কলোনি গড়ে উঠেছে, যাদের মধ্যে ফায়ার আইল্যান্ড ন্যাশনাল সিশোর উল্লেখযোগ্য।
 
১৬৩৬ সালে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়দের আগমনের আগে এখানে আদিবাসী আমেরিকানরা বাস করত। দ্বীপটিতে আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত দুইটি এলাকাও আছে। এখানে অতীতে আলু, শাকসব্জি ও হাঁস-মুরগীর খামার ছিল এবং এটি তিমি ও মাছ শিকারের কেন্দ্র ছিল। নিউ ইয়র্ক মহানগরীর উন্নতির সাথে সাথে এখানে লোকসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অরণ্যময় উত্তর ও দক্ষিণ তীরে এখনও অনেক পর্যটন কেন্দ্র বিদ্যমান। এখানে অসংখ্য রাজ্য উদ্যান, সৈকত, গলফ কোর্স, মৎস্য শিকারের জায়গা, ইয়ট ক্লাব, ইত্যাদি রয়েছে। উত্তর তীর ধরে ও সাউথহ্যাম্পটনে বহু সুন্দর এস্টেট রয়েছে।
 
দ্বীপটিতে একটি সুবিস্তৃত মহাসড়ক ও রেলব্যবস্থা বিদ্যমান। লং আইল্যান্ড রেল রোড গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম কমিউটার রেলপথ। দ্বীপটি স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের সাথে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সাসপেনশন সেতু ভেরাজোনা-ন্যারোজ সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত। সেতুটি ঊর্ধ্ব ও নিম্ন নিউ ইয়র্ক উপসাগরকে সংযুক্তকারী ন্যারোজ প্রণালীর উপরে অবস্থিত। ম্যানহাটান ও কুইন্‌সের সাথেও দ্বীপটি কিছু সেতু ও সুড়ঙ্গের মাধ্যমে সংযুক্ত। লং আইল্যান্ড দ্বীপে দুইটি বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর --- লা গুয়ার্ডিয়াফিল্ড বিমানবন্দর এবং জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর অবস্থিত। দুইটি বিমানবন্দরই কুইন্‌স কাউন্টিতে অবস্থিত।
 
ইংরেজ নাবিক হেনরি হাডসন প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে দ্বীপটি আবিষ্কার করেন। তিনি ১৬০৯ সালে কোনি আইল্যান্ডে অবতরণ করেন। এখানে আলগোংকিয়ান জাতির বিভিন্ন গোত্র বাস করত। বর্তমানে দ্বীপটির বহু গ্রাম, সড়ক ও উপসাগরের নাম এই আলগোংকিয়ানদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ১৬২০ সালে প্লিমাথ উপনিবেশকে দ্বীপটি অনুদান দেওয়া হয় এবং ১৬৩৫ সালে আর্ল অভ স্টার্লিং উইলিয়াম আলেকজান্ডারকে এটি দেওয়া হয়। ১৬৩৬ সাল নাগাদ ওলন্দাজেরা দ্বীপের পশ্চিম অংশে বসতি স্থাপন করে। শীঘ্রই উত্তর তীরে কানেটিকাট ও ম্যাসাচুসেটস থেকে আগত নিউ ইংল্যান্ডবাসীরা বসতি স্থাপন করা শুরু করে।
 
ইংরেজ এবং ওলন্দাজদের মধ্যে শীঘ্রই বিরোধের সৃষ্টি হয়। ১৬৫০ সালে একটি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে বিরোধিতগা নিরসনের চেষ্টা করা হয়। এতে অয়স্টার বে-র পশ্চিমের অংশ ওলন্দাজদেরকে এবং পূর্ব অংশ ইংরেজদেরকে দেওয়া হয়। কিন্তু ১৬৬৪ সালে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস সমগ্র দ্বীপটিকে ব্রিটিশ প্রদেশ নিউ ইয়র্কের একটি অংশ হিসেবে দাবী করেন। এরপর প্রায় এক শতাব্দী যাবৎ দ্বীপটিতে বহির্বিশ্বের তেমন প্রভাব পড়েনি।
 
মার্কিন বিপ্লবের সময় ১৭৭৬ সালের ২৭শে আগস্ট বর্তমান ব্রুকলিন এলাকায় লং আইল্যান্ডের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। জেনারেল জর্জ ওয়াশিংটনের অধীনে উপনিবেশের সৈন্যরা হাডসন নদী ধরে উত্তরে ব্রিটিশ সেনাদের অগ্রগমন প্রতিহত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে বাধ্য হন। ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশেরা দ্বীপটি ধরে রাখে।
 
১৮৪৪ সালে দ্বীপের পূর্ব প্রান্তে গ্রিনপোর্ট শহর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ সমাপ্ত হলে দ্বীপটিতে প্রথমবারের মত ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটে। রেলপথের কারণে দ্বীপের কৃষি সম্পদের ব্যাপক উন্নতি ঘটে। ১৯৪০-এর দশকে নিউ ইয়র্ক শহরের লোকজন পূর্ব দিকে আগ্রসর হতে থাকলে ন্যাস' এবং সাফোক কাউন্টিতে শহরতলী এলাকা গড়ে ওঠে। ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। তবে দ্বীপের পূর্ব প্রান্ত এখনও তার গ্রামীণ চরিত্র ধরে রেখেছে।