চতুরঙ্গ (চলচ্চিত্র): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Addbot (আলোচনা | অবদান)
বট: আন্তঃউইকি সংযোগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা এখন উইকিউপাত্ত ...
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে, কোন সমস্যা?
৮ নং লাইন:
| writer = [[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]]
| screenplay = [[সুমন মুখোপাধ্যায়]]
| starring = [[ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত]] (দামিনী),</br /> [[ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়]] (জ্যাঠামশাই),</br /> [[কবীর সুমন]] (লীলানন্দ স্বামী),</br /> সুব্রত দত্ত (শচীশ),<br /> জয় সেনগুপ্ত (শ্রীবিলাস)
| original_music =
| music = [[দেবজ্যোতি মিশ্র]]
২৬ নং লাইন:
| imdb_id = 1264880
}}
'''চতুরঙ্গ''' (ইংরেজি: ''Four Chapters'') [[ভারতীয়]] [[বাঙালি]] চিত্র-পরিচালক [[সুমন মুখোপাধ্যায়]] পরিচালিত একটি [[বাংলা]] [[চলচ্চিত্র]]। [[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের]] প্রসিদ্ধ উপন্যাস ''[[চতুরঙ্গ (উপন্যাস)|চতুরঙ্গ]]'' অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটির মুক্তির তারিখ [[২১ নভেম্বর]] [[২০০৮]]। মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন [[ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত]], [[ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়]], [[কবীর সুমন]], সুব্রত দত্ত ও জয় সেনগুপ্ত। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র। প্রযোজক ক্যাম্পফায়ার ফিল্ম প্রোডাকশন।
 
নরনারীর জটিল যৌনমনস্তত্ত্ব ও আদর্শের সংঘাত এই ছবির মূল উপজীব্য বিষয়। ছবিটি ভারত ও ভারতের বাইরে একাধিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয়েছে।
 
== কাহিনী-সারাংশ ==
{{spoiler}}
‘জ্যাঠামশাই’, ‘শচীশ’, ‘দামিনী’ ও ‘শ্রীবিলাস’ – এই চার ‘অঙ্গ’ বা পর্বে বিভক্ত চতুরঙ্গ উপন্যাসটির প্রকাশকাল [[১৯১৬]]। ছবিতে উপন্যাসের এই সময়কাল ও পর্ববিভাজনটি সানুপূর্বিক বজায় আছে। খুব অল্প ক্ষেত্রেই চলচ্চিত্রকার গ্রন্থকারকে ছাপিয়ে নিজস্বতা প্রতিপাদনে সচেষ্ট হয়েছেন। ফলত উপন্যাসের মতো ছবিতেও গল্পকথনে নতুনত্ব পরিলক্ষিত হয়েছে।
 
‘জ্যাঠামশাই’ অংশটি ছবির একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অংশ। শচীশের জ্যাঠামশাই জগমোহন যুক্তিবাদী, নাস্তিক ও মানবপ্রেমিক। একবার নিজগৃহে প্রায় শ’তিনেক প্রতিবেশী চর্মকার মুসলমানকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ান। সেই নিয়ে রক্ষণশীল ছোটোভাই হরমোহনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। হরমোহন আদালতের দ্বারস্থ হন এবং জগমোহন আচারভ্রষ্ট – এই অভিযোগে পৈত্রিক বাড়ি ও সম্পত্তি বিভাজন করিয়ে নেন। হরমোহনের কনিষ্ঠ পুত্র শচীশ বাড়ি ভাগাভাগির সময় তার জ্যাঠামশায়ের আশ্রয় নেয়। সে ছিল জগমোহনের স্নেহপাত্র ও শিষ্য। কিন্তু হরমোহন যখন এই কারণে জগমোহনকেই দোষারোপ করে অভিযোগ করেন যে শচীশের মাধ্যমে তিনি হরমোহনের সম্পত্তি গ্রাসে উদ্যত, তখন জগমোহন শচীশকে বিদায় দেন। শচীশ অবশ্য বাড়ি ফিরে যায় না। সে বন্ধু শ্রীবিলাসের আশ্রয়ে তার মেসবাড়িতে গিয়ে ওঠে। জগমোহন স্কুলে শিক্ষকতা করতে থাকেন ও শচীশ গৃহশিক্ষকতার বৃত্তি গ্রহণ করে।
 
এই সময় ঘটনাচক্রে ননীবালার সঙ্গে শচীশের সাক্ষাৎ ঘটে। ননীবালা হরমোহনের জ্যৈষ্ঠ পুত্র পুরন্দরের রক্ষিতা। ননীবালা অন্তঃসত্ত্বা হলে পুরন্দর তাকে অসতী অপবাদে বিতাড়িত করেছিল। শচীশ ননীবালাকে জ্যাঠামশায়ের কাছে নিয়ে আসে। জগমোহন তাকে কন্যাস্নেহে পালন করতে থাকেন। তার গর্ভের সন্তানটি নষ্ট হয়। এদিকে ননীবালা জগমোহনের আশ্রয়ে জেনে পুরন্দরের উপদ্রবও বৃদ্ধি পায়। ননীবালাকে রক্ষা করতে শচীশ তাকে বিবাহের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বিবাহের দিনই সমাজভীরু ধর্মভীরু ননীবালা আত্মহত্যা করে।
 
এরপর শহরে প্লেগ মহামারীর আবির্ভাব ঘটলে জগমোহন বাড়িতে একটি দরিদ্র মুসলমান রোগীদের জন্য প্রাইভেট হাসপাতাল খোলেন। কিন্তু তিনি স্বয়ং রোগাক্রান্ত হন ও মারা যান। জ্যাঠামশায়ের মৃত্যুর পর শচীশ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এক বছর তার কোনও সন্ধান পাওয়া যায় না।
 
‘শচীশ’, ‘দামিনী’ ও ‘শ্রীবিলাস’ – এই তিনটি পর্ব পরস্পর সংলগ্ন। শ্রীবিলাস শচীশের সন্ধান করতে করতে লীলানন্দ স্বামীর আখড়ায় তাকে খুঁজে যায়। প্রবল যুক্তিবাদী জ্যাঠামশায়ের ‘চেলা’ শচীশের তখন আশ্চর্য ভাবান্তর। সে তখন বৈষ্ণবীয় রসতত্ত্ব সাধনার নেশায়। লীলানন্দ স্বামীর শিষ্য। শচীশের এই ‘আইডিয়ার নেশা’র কি পরিণতি তা প্রত্যক্ষ করার জন্য ধর্মবিষয়ে বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ না থাকা সত্ত্বেও শ্রীবিলাস ভিড়ে যায় লীলানন্দ স্বামীর দলে।
 
এই সময়ে লীলানন্দের কোনও এক শিষ্য মৃত্যুকালে তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি ও যুবতী স্ত্রী দামিনীর ভার তুলে দিয়ে যায় তার গুরুর হাতে। লীলানন্দ সেই শিষ্যের বাড়িতেই নিজ আখড়া স্থাপন করেন। কিন্তু দামিনী তার এই হস্তান্তর অপমান হিসাবেই গ্রহণ করে। সে জীবনরসের রসিক। নাটক-নভেল পড়ে সময় কাটায়। ধর্ম নিয়ে বড় মাথা ঘামায় না। লীলানন্দকে সে সর্বসমক্ষেই উপেক্ষা ও অবহেলা করতে থাকে। কিন্তু গোপনে শচীশের সঙ্গে তার হৃদয় বিনিময় হয়ে যায়।
 
শচীশ দামিনীর আবেদনকে অগ্রাহ্য করতে থাকে নানা উপায়ে। লীলানন্দের সাংবাৎসরিক তীর্থভ্রমণ কালে এক অন্ধকার গুহায় নির্জনে সে নিদ্রিত শচীশের দেহসঙ্গ লিপ্সা করে। কিন্তু শচীশের দৃঢ় পদাঘাতে তাকে দূর করে দেয়। এরপর থেকে এক তীব্র দৈহিক ক্ষুধা পেয়ে বসে শচীশকে। দামিনীও বিদ্রোহিনী হয়ে ওঠে। প্রতিশোধকল্পে সে অন্তরঙ্গ করে নেয় শ্রীবিলাসকে।
 
এই সময়ে লীলানন্দ স্বামীর কীর্তন দলের গায়ক নবীনের বউ স্বামীর দুশ্চরিত্রতায় আত্মহননের পথ নেয়। কামনার কুটিল রূপটি প্রত্যক্ষ করে দামিনীর দৃষ্টি উন্মোচিত হয়। সে বুঝতে পারে কোন বিপদসংকুল পথের পথিক হয়েছে সে। শচীশকে সে গুরু বলে স্বীকার করতে চায়। শচীশের আইডিয়ার নেশা ঘুচে যায়। লীলানন্দ স্বামীর দলও ভেঙে যায়। শচীশ, দামিনী ও শ্রীবিলাস দলত্যাগ করে।
 
তিনজনে একটি নির্জন পোড়ো বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করে। শচীশ দামিনীর ভালবাসার বন্ধন কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে থাকে। প্রাণপণে দূরে সরিয়ে দেয় দামিনীকে। দামিনী ততই সেবার মাধ্যমে তাকে বাঁধার চেষ্টা করে। কিন্তু তার সমস্ত উদযোগ ব্যর্থ হলে, হতাশ্বাস হতোদ্যম দামিনী অনন্যোপায় ফিরে যেতে চায় লীলানন্দের আখড়ায়। তখনই শ্রীবিলাস তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়।
 
দামিনী আবিষ্কার করে তার অজ্ঞাতেই কখন শ্রীবিলাসে তার মন আকৃষ্ট হয়েছে। শচীশ দামিনী ও শ্রীবিলাসের বিবাহ সম্পাদনা করে। এরপর সে শ্রীবিলাসকে জ্যাঠামশায়ের উইলের সূত্রে পাওয়া তার যাবতীয় সম্পত্তি ভোগদখলের অধিকার দিয়ে আবার নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আর তার খোঁজ পাওয়া যায় না।
 
স্নেহবিধুর দীর্ঘ দাম্পত্যও দামিনীর ভাগ্যে সয় না। অবহেলায় অযত্নে তার দেহও ভঙ্গুর হয়ে এসেছিল। শেষে ভালবাসার অতৃপ্তি বুকে নিয়ে সেও এই পৃথিবীর রসলোক ত্যাগ করে।