মহাকাব্য: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Erik Wannee (আলোচনা | অবদান)
> wikidata check
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে; কোনো সমস্যা?
১ নং লাইন:
[[Fileচিত্র:GilgameshTablet.jpg|right|thumb|একটি পাথরের টুকরায় ধারণকারী ''[[গিলগামেশের মহাকাব্য]]'']]
{{সাহিত্য}}
'''মহাকাব্য''' হচ্ছে দীর্ঘ ও বিস্তৃত [[কবিতা]] বিশেষ। সাধারণতঃ দেশ কিংবা সংস্কৃতির বীরত্ব গাঁথা এবং ঘটনাক্রমের বিস্তৃত বিবরণ এতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরা হয়। সুপ্রাচীনকালে মুখে মুখে প্রচলিত কবিতাসমগ্রও মহাকাব্যের মর্যাদা পেয়েছে। মহাকাব্য নিয়ে ''আলবার্ট লর্ড'' এবং ''মিলম্যান প্যারী'' গবেষণা করেছেন। তাঁরা উভয়েই যুক্তিপ্রদর্শন সহকারে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন যে, আধুনিককালের মহাকাব্যগুলো প্রকৃত অর্থে প্রাচীনকালের মৌখিকভাবে প্রচলিত ও প্রচারিত কবিতাসমগ্রেরই শ্রেণীবিভাগ মাত্র।
 
== আবেদন ==
মহাকাব্য তন্ময় [[কাব্য]]। এটি ব্যক্তি-নিষ্ঠ নয়, বরঞ্চ বস্তু-নিষ্ঠ। লেখকের অন্তর অনুভূতির প্রকাশ নয়, বস্তু-প্রধান ঘটনা-বিন্যাসের প্রকাশ। গীতিকাব্যোচিত বাঁশির রাগিনী নয়, যুদ্ধসজ্জার তুর্য্য-নিনাদ। এছাড়াও, এটি মহাকায়, মহিমোজ্জ্বল, ব্যাপক হিমাদ্রি-কান্তির মত ধীর, গম্ভীর, প্রশান্ত, সমুন্নত ও মহত্ত্বব্যঞ্জক। এই কাব্যে কবির আত্মবাণী অপেক্ষা বিষয়বাণী ও বিষয় বিন্যাসই আমাদের অধিকতর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।<ref name = "L">"সাহিত্য-সন্দর্শন", শ্রীশচন্দ্র দাশ, বর্ণ বিচিত্রা, ঢাকা, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা-৬৮</ref>
 
== বিবরণ ==
মহাকাব্য শ্রবকাব্যের একটি অংশবিশেষ। যে কাব্যে কোন দেবতা বা অসাধারণ গুণসম্পন্ন পুরুষের কিংবা একবংশোদ্ভব বহু নৃপতি বা রাজা-বাদশাহর বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়, তা ''মহাকাব্য'' নামে পরিচিত।<ref name="sba">''সরল বাঙালা অভিধান'', সংকলকঃ সুবলচন্দ্র মিত্র, নিউ বেঙ্গল প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড, ৮ম সংস্করণ, ১৯৯৫, কলকাতা, পৃ. ৩৬৫</ref> যিনি মহাকাব্য রচনা করেন, তিনি '''মহাকবি''' নামে পরিচিতি পেয়ে থাকেন। দেবতা বা দেবতুল্য নায়কের বৃত্তান্ত নিয়ে বিশেষ রীতিতে রচিত বৃহৎ কাব্য রচনাকে ''মহাকাব্য'' নামে অভিহিত করা হয়।<ref name="sb">''সংসদ বাংলা অভিধান'', সংকলনঃ শৈলেন্দ্র বিশ্বাস, ৫ম সংস্করণ, ২০০৯, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, পৃ. ৬৮৯</ref>
 
১৩ নং লাইন:
অল্প আয়তন ও ক্ষুদ্রাকৃতি খণ্ডকাব্যের (যেমনঃ মেঘদূত, সীতার বনবাস, শকুন্তলা ইত্যাদি) চেয়ে মহাকাব্যের প্রেক্ষাপট বিস্তৃত ও ব্যাপক।<ref name="sba" />
 
== অবয়ব ==
{{মূল|কাব্যরস}}
 
২০ নং লাইন:
প্রসঙ্গক্রমে এতে বিভিন্ন [[ছন্দ|ছন্দে]] প্রকৃতি, যুদ্ধবিগ্রহ, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল প্রভৃতির বর্ণনাও থাকতে পারে। এর ভাষা ওজস্বী এবং গাম্ভীর্যব্যঞ্জক হবে। নায়কের জয় বা আত্ম-প্রতিষ্ঠার মধ্যে মহাকাব্যের সমাপ্তি হবে। কারণ, সাধারণতঃ এতে [[ট্র্যাজিডি|ট্র্যাজিডির]] স্থান নাই।<ref name = "L"/>
 
== বাংলা মহাকাব্য ==
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পর মহাকাব্য-রচয়িতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন [[হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]] (বীরবাহু কাব্য) এবং [[নবীনচন্দ্র সেন]] ([[পলাশীর যুদ্ধ (কাব্য)|পলাশীর যুদ্ধ]])। এ শতকের শেষে [[গীতিকাব্য|গীতিকাব্যের]] বন্যাবেগ না এলে, মহাকাব্যের ধারাকে বিশ শতকের আরম্ভ পর্যন্ত টেনে আনা চলতো। বিশ শতকেরও আমরা অনেক মহাকাব্য পেয়েছি। কিন্তু সমসাময়িক গীতিকাব্যের আন্তরিকতা, সত্যবোধ এবং দীপ্তির কাছে তা অত্যন্ত নিষ্প্রভ হয়ে যাওয়ায় আজ আর তার কোনও মূল্য নেই। বিশ শতকের মহাকাব্যের [[কবি|কবিদের]] মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন - [[আনন্দচন্দ্র মিত্র]] (হেলেনা কাব্য), [[কায়কোবাদ]] (অশ্রুমালা), [[হামিদ আলী]] (সোহ্‌রাববধ কাব্য), [[সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী]] (অনলপ্রবাহ) এবং [[যোগীন্দ্রনাথ বসু]] (পৃথ্বীরাজ)।<ref name="J">বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, ৮ম সংস্করণ, ১৯৯৭ইং, পৃষ্ঠা-২০১</ref>
 
== পাশ্চাত্য মহাকাব্য ==
সংস্কৃত আলঙ্কারিকদের মতে যা মহাকাব্য, তার সাথে [[পাশ্চাত্য সংস্কৃতি|পাশ্চাত্য]] মহাকাব্যের কোন কোন বৈসাদৃশ্য থাকলেও এদের মধ্যে ভাবগত সাদৃশ্য বর্তমান। পাশ্চাত্য আলঙ্কারিক [[এরিস্টটল|এরিস্টটলের]] মতে,
{{cquote|মহাকাব্য আদি, মধ্য ও অন্ত-সমন্বিত বর্ণনাত্মক কাব্য। এতে বিশিষ্ট কোন [[নায়ক|নায়কের]] জীবন-কাহিনী অখণ্ডরূপে একই বীরোচিত ছন্দের সাহায্যে কীর্তিত হয়।}}
৩১ নং লাইন:
সুতরাং, পাশ্চাত্য আদর্শে অনুসরণের মাধ্যমে আমরা মহাকাব্যের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলতে পারি যে, ''নানা সর্গে বা পরিচ্ছেদে বিভক্ত যে-কাব্যে কোন সুমহান বিষয়-বস্তুকে অবলম্বন করে এক বা বহু বীরোচিত চরিত্র অথবা অতিলৌকিক-শক্তি-সম্পাদিত কোন নিয়তি-নির্ধারিত-ঘটনা ওজস্বী ছন্দে বর্ণিত হয়, তাকে '''মহাকাব্য''' বলে''।<ref name = "LS">"সাহিত্য-সন্দর্শন", শ্রীশচন্দ্র দাশ, বর্ণ বিচিত্রা, ঢাকা, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা-৬৯</ref>
 
== রচয়িতা ==
মহাকাব্যের ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে, অনেক সময় কোন কোন মহাকাব্যের রচয়িতা সম্বন্ধে নিশ্চিত করে জানা যায় না। কারণ তাঁরা 'একলা কবির কথা' নহে। যুগে যুগে বিভিন্ন অজ্ঞাতনামা লেখকের হাতে পড়ে কাব্যের মূল বিষয়টি বর্দ্ধিতায়ন হয়ে উঠেছে। অথবা, বিভিন্ন চরিত্র অবলম্বনে বিভিন্ন লোকের লেখা একত্র সংগ্রথিত হয়ে মহাকাব্য বৃহৎ সম্প্রদায়ের কথা হয়ে উঠেছে। সর্বদেশের হৃদপদ্ম-সম্ভব এই শ্রেণীর কাব্য যেন 'বৃহৎ বনস্পতির মতো দেশের ভুতল-জঠর হতে উদ্ভূত হয়ে সেই দেশকেই আশ্রয়চ্ছায়া দান করিয়াছে'। এই শ্রেণীর মহাকাব্যকে ''এপিক অব গ্রোথ'' বা ''অথেনটিক এপিক'' নামে অভিহিত করা হয়। [[রামায়ণ]], [[মহাভারত]], [[ইলিয়াড|দি ইলিয়াড]], [[ওডিসি]], বিওয়াল্ফ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বলাবাহুল্য যে, বিভিন্ন লোকের রচিত মহাকাব্যের মধ্যেও সহস্র বৎসরের হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন অনুভূত হয়।
 
৩৯ নং লাইন:
{{cquote|কালে কালে একটি সমগ্র জাতি যে কাব্যকে একজন কবির কবিত্বশক্তি আশ্রয় করিয়া রচনা করিয়া তুলিয়াছে, তাহাকেই যথার্থ মহাকাব্য বলা যায়।}}
 
== মেঘনাদবধ কাব্য ==
{{মূল|মেঘনাদবধ কাব্য}}
 
৪৯ নং লাইন:
{{cquote|সমুদ্রতীরের শ্মশানে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া কাব্যের উপসংহার করিয়াছেন।}}
 
== বিদ্রুপাত্মক মহাকাব্য ==
কোন লঘু বা ক্ষুদ্র বিষয়-বস্তুকে কেন্দ্র করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার জন্য মহাকাব্য লক্ষণাক্রান্ত যে কাব্য রচিত হয়, তাকে ''বিদ্রুপাত্মক মহাকাব্য'' বা ''মক এপিক'' বলে। পোপের ''দ্য র‌্যাপ অব দ্য লক'' নামক কাব্যে 'মিস আরাবেলা ফার্মর' নাম্নী কোন এক [[মহিলা|মহিলার]] কেশ-কর্তনের কাহিনী অবলম্বনে মহাকাব্যোচিত করে লিখিত বলে তা 'মক এপিক' নামে খ্যাত।
 
বাংলা ভাষায় [[জগদ্বন্ধু ভদ্র|জগদ্বন্ধু ভদ্রের]] 'ছুছুন্দরী-বধ' (১৮৬৮) এবং [[ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়|ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের]] 'ভারত উদ্ধার' এই শ্রেণীর কাব্য।
 
== উল্লেখযোগ্য মহাকাব্য ==
=== প্রাচীন মহাকাব্য (প্রাচীনকাল থেকে ৫ম শতক) ===
* '''খ্রিস্টপূর্ব ২০শ থেকে ১০ম শতক পর্যন্তঃ''' 'গিলগামেশ' ও 'এত্রাহ্যাসিস' (মেসোপটেমিয়ার পৌরাণিক কাহিনী); 'এনুমা এলিশ' (বেবিলনের পৌরাণিক কাহিনী)। তন্মধ্যে বেবিলনের মহাকাব্য রচনার সময়কাল সুনির্দিষ্ট করা খুবই দূরূহ ব্যাপার। কেননা এটি হাতে লেখা ছিল এবং পরবর্তীকালে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হতো। এছাড়াও, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষণ এবং বিযোজন করার ফলেও সময়কাল নির্দিষ্ট করাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।
* '''খ্রিস্টপূর্ব ২০শ থেকে ৫ম শতক পর্যন্তঃ''' হিন্দু পৌরাণিক উপাখ্যান হিসেবে ব্যাস দেব কর্তৃক প্রণীত '[[মহাভারত]]' ও বাল্মিকী মুনি কর্তৃক প্রণীত '[[রামায়ণ]]'।
৬৯ নং লাইন:
* '''খ্রিস্টাব্দ ৫ম শতকঃ''' অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি কর্তৃক 'আর্গোনটিকা অরফিকা', নোনাস কর্তৃক 'ডাইওনিসিয়াকা'।
 
=== প্রাচীন মহাকাব্য (৫ম থেকে ১৫শ শতক) ===
* '''৭ম শতকঃ''' 'তায়েন বো কোয়াইলেঞ্জ' (প্রাচীন আইরিশ); [[পাণিনি]] প্রণীত রামায়ণ ও 'অষ্টদেহী' অনুসরণে সংস্কৃত ভাষায় পরিমার্জিত 'ভট্টিকাব্য'; মহাভারত অনুসরণে সংস্কৃত ভাষায় [[ভারবি]] রচিত 'কীর্তাঅর্জুনীয়া' ও [[মাঘ (কবি)|মাঘ]] রচিত 'শিশুপালবধম্‌'।
* ''' ৮ম থেকে ১৯ম শতকঃ''' 'বিউওল্ফ' এবং 'ওয়ালদেয়ার' (প্রাচীন ইংরেজি); ডেভিড অব সাসুন (আর্মেনিয়ান)।
৮০ নং লাইন:
* ''' ১৫শ শতকঃ''' অ্যালিটারেটিভ মোর্তে আর্থার; ম্যাটিও মারিয়া বোয়ার্দো রচিত অরল্যান্ডো ইনামোরাতো (১৪৯৫); স্যামুয়েল-বুখ; ম্লোখিম-বুখ; বুক অব ডিডি কোরকুট।
 
=== ভাষা অনুযায়ী (অক্ষরানুক্রমে) ===
* আর্মেনীয়ঃ ডেভিড অব সাসুন
* ফার্সিঃ শাহনামা
৮৭ নং লাইন:
* সংস্কৃতঃ [[মহাভারত]], [[রামায়ণ]], অষ্টদেহী, ভট্টিকাব্য, কীর্তাঅর্জুনীয়া, শিশুপালবধম্‌, [[ভাগবত পুরাণ]]
 
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
 
== বহিঃসংযোগ ==
* [http://www.claysanskritlibrary.org Clay Sanskrit Library] publishes classical Indian literature, including the Mahabharata and Ramayana, with facing-page text and translation. Also offers searchable corpus and downloadable materials.
* [http://humx.org/vocabulary/epic-poetry Humanities Index] has notes on epic poetry.
* [http://www.worldofdante.org/ World of Dante] Multimedia website that offers Italian text of Divine Comedy, Allen Mandelbaum's translation, gallery, interactive maps, timeline, musical recordings, and searchable database for students and teachers.
 
[[বিষয়শ্রেণী:মহাকাব্য]]