বাংলার নবজাগরণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অ বট: আন্তঃউইকি সংযোগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা এখন উইকিউপাত্ত ... |
অ বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে; কোনো সমস্যা? |
||
২২ নং লাইন:
দেশপ্রেম, ও বিজ্ঞানের পথিকৃৎদের এক অন্যন্য সমাহার যা মধ্যযুগের অন্ত ঘটিয়ে এদেশে আধুনিক যুগের সূচনা করে।
== পটভূমিকা ==
বাংলার নবজাগরণ
== সভা ও বহু সমিতি ==
৩৩ নং লাইন:
রামমোহন রায় একাধারে [[সংস্কৃত]], [[আরবি]], [[ফারসি]] ভাষায় সুপণ্ডিত এবং পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতিবাদে তুহফাত-উল-মুওয়াহহিদিন [একেশ্বরবাদীদের উপহার] নামে এক যুক্তিবাদী পুস্তিকা (১৮০৩-০৪) প্রকাশ করেন। পরবর্তীসময়ে তিনি সেমেটিক একেশ্বরবাদের ধারায় উপযোগবাদের সাথে যুক্তিবাদ সংযুক্ত এবং সামাজিক অন্যায় ও বুদ্ধিবৃত্তিক কূপমণ্ডূকতা দূর করার লক্ষ্যে একটি কার্যক্রম গ্রহণ করেন। [[হিন্দু]] ও খ্রিষ্টানদের সঙ্গে দীর্ঘ পনেরো বছরের (১৮১৫-৩০) এক বিতর্কে তিনি তাঁর ব্রাহ্ম একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে বাহ্যত বহুঈশ্বরবাদ ও ত্রিত্ববাদকে পরাভূত করেন। তিনি সমাজিক বিচার, বিশেষ করে হিন্দু নারীমুক্তির জন্য সুদীর্ঘ শতাব্দীকালের সংগ্রামেরও সূচনা করেন। গভর্নর জেনারেল উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক এর ঔপনিবেশিক সরকার ১৮২৯ সালে স্বামীর সাথে হিন্দু নারীর সহমরণ তথা [[সতীদাহ প্রথা]] বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। রামমোহন রায় এ বিষয়ে সরকারের আইন পাসে সহায়তা করেন। রামমোহন সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেন এবং পাশ্চাত্য শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ ও বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষা নীতি প্রবর্তনের সুপারিশ করেন।
== নব্য বঙ্গ আন্দোলন ==
মুক্ত চিন্তার অধিকারী হেনরী ডিরোজিও হিন্দু কলেজে (১৮২৬-৩১) ইতিহাস ও সাহিত্য পড়াতেন। তিনি তাঁর প্রায় ডজনখানেক অনুসারীকে মুক্ত ও স্বাধীন চিন্তানুশীলনে অনুপ্রাণিত করেন। তাঁরা ছিলেন বিখ্যাত টমাস পেইন-এর এজ অব দ্য রিজনস ও রাইটস অব ম্যান-এর অত্যন্ত আগ্রহী পাঠক। তাঁরা সকলে সম্মিলিতভাবে ইয়ং বেঙ্গল নামে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁরা আনুমানিক ১৫ বছরের কাল পরিসরে (১৮২৮-৪৩) ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’ (১৮২৮) নামের একটি সমিতির মাধ্যমে তাঁদের বিপ্লবী ধ্যান-ধারণার প্রচার করেন। ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যরা কমপক্ষে ছয়টি সাময়িকীর সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। পত্রিকাগুলির নাম পার্থিনন (১৮৩০), ইস্ট ইন্ডিয়া (১৮৩১), ইনকুয়্যারার (১৮৩১-৩৪), জ্ঞানাম্বেষণ (১৮৩১-৪০), হিন্দু পাইওনিয়ার (১৮৩৫-৪০) ও বেঙ্গল প্সেক্টেটর (১৮৪২-৪৩)। প্রথম কয়েক বছর তাঁদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিল সনাতন হিন্দুধর্মীয় মতবাদের অসার চিন্তাধারা। পরবর্তীকালে ইয়ং বেঙ্গল চিন্তাধারার অনুসারীরা তাঁদের দৃষ্টি ও মনোযোগ ঔপনিবেশিক সরকারের নানা ব্যর্থতায়ই বেশি করে নিবদ্ধ করেন। রামমোহন ও তাঁর অনুসারীদের সাথে তাঁদের পার্থক্য ছিল এইখানে যে, তাঁরা আধ্যাত্মিকতা নয়, বিশুদ্ধ যুক্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁরা রামমোহনবাদীদেরকে ‘আধা-উদারবাদী’ বলে অভিহিত করতেন। ডিরোজিও ও রামমোহনপন্থীদের এই সংঘাত ১৮৪০-এর দশকের শেষ দিকে সবচেয়ে লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। ঐ সময়ে ব্রাহ্ম সমাজ এর অন্যতম নেতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিজ্ঞানপন্থী অক্ষয়কুমার দত্তের মধ্যে ধর্মীয় গ্রন্থের অভ্রান্ততা প্রশ্নে তীব্র সংঘাত দেখা দেয়। বস্তুত, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামমোহনের আধ্যাত্মিকতার উত্তরাধিকারী হন, আর দত্ত অনুপ্রাণিত হন রামমোহনের যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্কতায়। অক্ষয়কুমার দত্ত ব্রাহ্মবাদকে অতিবর্তী ঈশ্বরবাদে (ফবরংস) রূপান্তরিত এবং বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানাম্বেষাকে ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশের তথা অলৌকিকতার স্থলবর্তী করতে চেয়েছিলেন। ১৮৫০-এর দশকে এ সংঘাতে তৃতীয় আরেক মাত্রার যোগ ঘটে। ত্রিমাত্রিক সংঘাতের এ তৃতীয় বাহুর প্রতিনিধি ছিলেন মানবতাবাদী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। দত্তের বিজ্ঞানসম্মত যুক্তিবাদের সাথে বিদ্যাসাগরের মানবতাবাদের সুসমম্বয় ঘটলেও একই কারণে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আধ্যাত্মিকতাবাদ তাঁদের পরম বৈরী হয়ে ওঠে।
== যুক্তিবাদ ==
ফলত ব্রাহ্ম সমাজ বলয় থেকে দত্তের বহিষ্পারের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত তাৎপর্যময় এ সংঘাতের অবসান ঘটে। অজ্ঞেয়তাবাদী
বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমার দুজনে মিলে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পণ্ডিতবর্গ, শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট চার্চের কোন কোন মিশনারি এবং রামমোহন রায় ও তাঁর বিরোধীদের গড়া ভিত্তির ওপর আধুনিক বাংলা গদ্যের সৌধ গড়ে তোলেন। তারপর সেই গদ্য প্যারীচঁাদ মিত্র , বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের রচনার মধ্য দিয়ে নানা আকারে বিকশিত ও সমৃদ্ধ হয়। কাব্য ও নাটকে প্রতিমা-পূজা বিরোধী এবং ভাবের দিক থেকে ডিরোজিওপন্থী মাইকেল মধুসূদন দত্ত রীতি ভেঙে অমিত্রাক্ষর ছন্দ, সনেট, ব্যক্তিবাদ, জড়পার্থিবতা, দেশপ্রেমিকতা, নারীচরিত্রের প্রাধান্য ও নাটকে তীক্ষ্ম, তীব্র সংঘাতের উপাদানের প্রবর্তন করেন। তাঁর রীতির অনুসরণে অচিরেই বহু নাট্যকার ও অপেক্ষাকৃত নিম্ন মানের কবির আবির্ভাব ঘটে। সাহিত্য পরিমণ্ডলের কথা ছেড়ে দিলেও বিজ্ঞান, ইতিহাস ও দর্শনের ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেন মধুসূদন গুপ্ত, মহেন্দ্রলাল সরকার , জগদীশচন্দ্র বসু , প্রফুল্লচন্দ্র রায় , রাজেন্দ্রলাল মিত্র , রমেশচন্দ্র দত্ত , দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য্য। মধুসূদন গুপ্ত ছিলেন প্রথম হিন্দু যিনি শবব্যবদে করেন। ভাই গিরিশচন্দ্র সেন ইসলামি বিষয়ে জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত হন। তিনি ইসলামি ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে বহু সংখ্যক গ্রন্থ ও জীবনী রচনা করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে গৌরবময় জীবনকর্ম হলো পবিত্র কুরআনের সটীক বাংলা অনুবাদ (১৮৮৬)। বাংলা ভাষায় এ ধরনের কাজ তিনিই প্রথম করেন। নবজাগরণর আরেক বৈশিষ্ট্যময় চরিত্র হলেন অক্ষয়কুমার দত্ত। ফরাসি বুদ্ধিবৃত্তিক নবজাগরণ যুগের দার্শনিকদের মতো বাংলার নবজাগরণয় তিনি ও অন্যান্য বিদ্বৎজন ছিলেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সৌখিন অনুসন্ধানী, ঠিক জ্ঞানের কোন সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে একান্তভাবে নিবেদিত বিশারদ নন। তাঁরা বস্তুত জ্ঞানচর্চার নানা ক্ষেত্রে এভাবেই কাজ করেন। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের বিবিধার্থসংগ্রহ (১৮৫০-এর দশক) ও রহস্যসন্দর্ভ (১৮৬০-এর দশক) এবং বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শন (১৮৭০-এর দশক) আর সেই সাথে এ ধরনের আরও অনেক কাজ উল্লিখিত অভিমত বা পর্যবেক্ষণেরই সাক্ষ্য।
প্রকৃতপক্ষে বাংলার নবজাগরণ যুগের স্থিতিকাল ছিল উনিশ শতকের প্রথম ছয় দশক। এ কালপরিক্রমায় মূল চালিকাশক্তি বা প্রেরণা হিসেবে কাজ করে যুক্তিবাদ আর এর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সংস্কার। সংস্কারকদের সাধারণ লক্ষ্য ছিল হিন্দুত্বের কতকগুলি বিষয়। নবজাগরণর শেষ চার দশক জুড়ে প্রাধান্য ছিল জাতীয়তাবাদের, উদ্দেশ্য ছিল পুনর্জাগরণ সৃষ্টি করা এবং নির্ধারিত বিপক্ষ ছিল কায়েমি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ। যুক্তিবাদীরা তখন থেকে পরাধীনতা ও আধিপত্যের বিষয়টির প্রতি নীরব থাকতে পারেন নি। কালো আইন পাস (আদালতের ভারতীয় বিচারকগণ মামলায় শ্বেতাঙ্গ
নব্যহিন্দু ও জাতীয়তাবাদী আবেগের অস্তিত্ব সত্ত্বেও নবজাগরণর মূল প্রেরণা বিলুপ্ত হয় নি। বরং এ প্রেরণা নতুন এক ভিত্তিভূমি লাভ করে মুসলিম আর্থ-সামাজিক সমস্যার বিষয়ে যুক্তিবাদী চিন্তাবিদ, ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার দেলোয়ার হোসায়েন , সামাজিক বিষয়ের সমালোচক মীর মোশাররফ হোসেন এবং লেখক, শিক্ষাবিদ ও মুসলিম নারীমুক্তির জন্য সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন-এর মতো মুসলিম পথিকৃৎ মনীষীদের মাঝে। এ শতকের শেষ নাগাদ এই পুনরুজ্জীবিত চেতনার প্রেরণা উপমহাদেশের আরও বহুস্থানে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
বহু আধুনিক কালোত্তর বিদ্বৎজনের মতে বাংলার প্রেক্ষাপটে ‘নবজাগরণ’ এ পারিভাষিক শব্দটির প্রয়োগ যথার্থ হয় নি। এর সমর্থনে তাঁরা যুক্তি দেখান যে, এর উদ্ভব ঘটে তৎকালীন ঔপনিবেশিক সরকারের প্রশাসনিক ও শিক্ষা সম্পর্কিত কিছু উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে। সকল ব্যবস্থা অত্যন্ত সচেতন ও পরিকল্পিতভাবেই নেওয়া হয় যাতে এক বিশেষ সমাজ গড়ে ওঠে, যা ঐ উনিশ শতকেই লক্ষ্য করা গেছে। অবশ্য এ শ্রেণীর আকার-আয়তন ছিল খুবই ছোট আর তা ছিল শহুরে উঁচুতলার হিন্দুদের মাঝেই সীমিত। এ শ্রেণীর চিন্তা-ভাবনা ও কার্যকলাপ বাংলার বৃহত্তর জনসমাজে তেমন প্রভাব ফেলতে পারে নি, এমনকি বলতে গেলে কোন প্রভাবই পড়ে নি। মুসলিম সমাজ এর প্রভাব থেকে পুরোপুরি বাইরেই থেকে যায়। আর পল্লীজনপদের হিন্দু সমাজের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলা চলে।
== ইউরোপের নবজাগরণের থেকে পার্থক্য ==
== প্রভাব বিস্তারকারী স্মরনীয় ব্যক্তিরা ==
{|
|
১১৪ নং লাইন:
* [[কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়]]
* [[রাধানাথ শিকদার]]
* [[প্যারীচাঁদ মিত্র]]
* [[গিরিশচন্দ্র ঘোষ]]
|
১২৮ নং লাইন:
|}
== প্রভাব বিস্তারকারী প্রতিষ্ঠান ==
* [[এশিয়াটিক সোসাইটি]]
* [[ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ]]
* [[ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন
* [[বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ]]
* [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]]
১৫০ নং লাইন:
* [[ন্যাশন্যাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন, বেঙ্গল]]
* [[ইয়ং বেঙ্গল]]
* [[ব্রাহ্ম সমাজ]]
* [[জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি]]
== আরও দেখুন ==
* [[তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা]]
* [[সুলভ সমাচার]]
* [[সংবাদ প্রভাকর]]
* [[সমাচারদর্পণ]]
* [[সোমপ্রকাশ]]
== তথ্যসূত্র ==
<references/>
* [[রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ]]-[[শিবনাথ শাস্ত্রী]], নিউ এজ্ পাবলিসার্স পাঃ লিঃ
== সাহিত্য ==
* Sivanath Sastri, ''A History of the Renaissance in Bengal: Ramtanu Lahiri, Brahman and Reformer,'' London: Swan, Sonnenschein (1903); Kolkata: Renaissance (2002)
== বহিঃসংযোগ ==
* [http://www.rabindrabharatiuniversity.net/museum/tagore_family/tagore_society.htm
* [http://banglapedia.search.com.bd/HT/B_0418.htm বাংলাপেডিয়া]
* [http://sankalpa.tripod.com/roots/s1benren.html Some relevant articles]
{{অসম্পূর্ণ}}
১৭৬ নং লাইন:
{{বাংলার সংস্কৃতি}}
[[বিষয়শ্রেণী:১৯ শতক]]
▲[[Category:বাংলার নবজাগরণ]]
[[
[[বিষয়শ্রেণী:Brahmoism]]
▲[[Category:ত্রিটিশ রাজ]]
▲[[Category:হিন্দু আন্দোলন]]
▲[[Category:বাংলার ইতিহাস]]
▲[[Category:ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন]]
▲[[Category:আধুনিক ইতিহাস]]
▲[[Category:সামাজিক আন্দোলন]]
|