বাঁকুড়া জেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে; কোনো সমস্যা?
২৪ নং লাইন:
বাঁকুড়া জেলা ও এর আশেপাশের অঞ্চলগুলি ছিল মধ্যযুগীয় পশ্চিমবঙ্গের [[মল্লভূম|মল্ল]] রাজত্বের কেন্দ্রভূমি। মধ্যযুগের শেষভাগে এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে [[বৈষ্ণবধর্ম]] মল্লভূমের রাজধর্মের মর্যাদা অর্জন করে। এরপর এই ধর্মই এই অঞ্চলের সংস্কৃতির দিক-নির্ণায়ক হয়ে ওঠে। ১৭৬৫ সালে [[ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]] মল্লভূম রাজ্য অধিকার করে নেয় এবং ১৮৮১ সালে আধুনিক বাঁকুড়া জেলাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলার নামকরণ করা হয় এর সদর শহরের নামানুসারে।<ref>ধনধান্যে (যোজনা পত্রিকা গোষ্ঠীর বাংলা মাসিক) জুন, ২০০৭ সংখ্যা, পৃ. ৫৭</ref>
 
== নামকরণ ==
‘বাঁকুড়া’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। [[হো ভাষা|কোল]]-[[মুন্ডা ভাষা|মুণ্ডাদের]] ভাষায় ''ওড়া'' বা ''ড়া'' শব্দের অর্থ বসতি। ''বাঁকু'' শব্দের অর্থ পরম সুন্দর। ‘বাঁকুড়া’ নামটি 'বাঁকা' শব্দ থেকেও উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জেলার সবচেয়ে প্রভাবশালী লৌকিক দেবতাদের একজন হলেন [[ধর্মঠাকুর]]। তাঁকে স্থানীয়রা 'বাঁকুড়া রায়' নামে ডাকেন।<ref>{{cite web | url=http://www.bankura.org/site/History.htm | title=Wecome to Historical Details of Bankura |work= Origin of Name| publisher=www.bankura,org | accessdate=2009-07-11}}</ref> স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, জেলা সদর বাঁকুড়া শহরের নামকরণ হয়েছে এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা তথা স্থানীয় গোষ্ঠীপতি নেতা বাঁকু রায়ের নামানুসারে। অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে, বিষ্ণুপুরের রাজা বীর হাম্বিরের ২২ পুত্রের অন্যতম বীর বাঁকুড়ার নামে এই শহরের নামকরণ করা হয়েছে। বীর হাম্বির তাঁর রাজ্যকে ২২টি তরফে ভাগ করে দেন। প্রতিটি তরফ তাঁর এক এক পুত্রের অধীনে আসে। জয়বেলিয়া তরফটি বীর বাঁকুড়ার ভাগে পড়ে। তিনিই বাঁকুড়া শহরটি গড়ে তোলেন। অন্য একটি মতে, বাঁকুড়া নামটি ''বানকুন্ডা'' নামের অপভ্রংশ। 'বানকুন্ডা' শব্দের অর্থ পাঁচটি দিঘি। পুরনো সরকারি নথিপত্রে ইংরেজি ''Bacoonda'' নামটি পাওয়া যায়।<ref name= omalley1/>
 
== ইতিহাস ==
{{Main|বাঁকুড়া জেলার ইতিহাস|প্রাচীন সাহিত্যে রাঢ়}}
বাঁকুড়া জেলার [[ডিহর|ডিহরে]] প্রাচীন জনবসতির নিদর্শন পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে [[দ্বারকেশ্বর নদ|দ্বারকেশ্বর নদের]] অংশে উত্তর তীরে তাম্র-প্রস্তর যুগীয় জনবসতি গড়ে উঠেছিল।<ref>{{cite web
৩৮ নং লাইন:
[[সংস্কৃত]] ও [[প্রাকৃত]] ভাষায় লেখা [[শুশুনিয়া]] শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে পুষ্করণার (আধুনিক পোখান্না অঞ্চল) রাজা ছিলেন সিংহবর্মণের পুত্র চন্দ্রবর্মণ।<ref>Majumdar, R.C., ''History of Ancient Bengal'', pp. 32, 444, Tulshi Prakashani.</ref> এলাহাবাদ লেখ থেকে জানা যায়, [[সমুদ্রগুপ্ত]] চন্দ্রবর্মণকে পরাজিত করে তাঁর রাজ্যকে [[গুপ্ত সাম্রাজ্য|গুপ্ত সাম্রাজ্যের]] অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।<ref>Sengupta, Nitish, ''History of the Bengali-speaking People'', p.21, UBS Publishers’ Distributors Pvt. Ltd.</ref> বহু বছর বাঁকুড়া জেলা ভূখণ্ডটি [[দণ্ডভুক্তি]] ও [[বর্ধমানভুক্তি]] রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।<ref name=Ghosh>Ghosh, Binoy, ''Paschim Banger Sanskriti'', (in Bengali), part I, 1976 edition, pp. 82-86, Prakash Bhaban</ref>
 
কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন, প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয়রা প্রথমে উত্তর ও পূর্ববঙ্গে বসতি স্থাপন করেন। পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের বসতিস্থাপনের ঘটনা অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের ঘটনা। বঙ্গে বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম বিস্তারের ক্ষেত্রেও এই অঞ্চলের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। তবে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যেই যে আর্যদের ধর্ম ও সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গে প্রাধান্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল, তার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।<ref name=Binoy/>
 
=== বিষ্ণুপুর রাজ্য ===
[[Fileচিত্র:Dalmadal Arnab Dutta 2011.JPG|thumb|left|বিষ্ণুপুরের দলমাদল কামান, মল্ল রাজাদের দ্বারা নির্মিত]]
খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাকাল পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলার প্রায় এক হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে [[বিষ্ণুপুর|বিষ্ণুপুরের]] হিন্দু রাজাদের শাসনকাল ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।<ref name=omalley2>O’Malley, L.S.S., ICS, ''Bankura'', ''Bengal District Gazetteers'', pp. 21-46, 1995 reprint, Government of West Bengal</ref> বিষ্ণুপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকা সেই সময় মল্লভূম নামে পরিচিত ছিল। মল্লভূম রাজ্যের বিস্তার ছিল পশ্চিমে [[সাঁওতাল পরগনা|সাঁওতাল পরগনার]] [[দামিন-ই-কোহ]], দক্ষিণে [[পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা|পশ্চিম মেদিনীপুর]], পূর্বে ও উত্তরে [[বর্ধমান জেলা]] পর্যন্ত। [[ছোটোনাগপুর মালভূমি|ছোটোনাগপুর মালভূমির]] কিছু অংশ এই রাজ্যের অধিভুক্ত ছিল। আদিবাসী রাজ্য [[ধলভূম]], [[টুংভূম]], [[সামন্তভূম]], বরাহভূম বা বরাভূম ধীরে ধীরে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবংশের অধীনস্থ হয়ে পড়ে।<ref name=omalley2/>
 
মল্ল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আদি মল্ল (জন্ম ৬৯৫ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি [[কোতুলপুর]] থেকে {{convert|8.4|km}} দূরে লাউগ্রাম থেকে ৩৩ বছর শাসনকাজ চালিয়েছিলেন। ১৫ বছর বয়সেই তিনি একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী মল্লযোদ্ধা হয়ে ওঠেন। এই কারণেই তিনি আদি মল্ল নামে পরিচিত হন। তিনি বাগদি রাজা নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র জয় মল্ল সিংহাসনে বসেন। তিনি রাজ্যের সীমানা প্রসারিত করেন এবং বিষ্ণুপুরের রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন। তাঁর পরের রাজারা রাজ্যের আয়তন আরও বৃদ্ধি করেছিলেন। এই বংশের রাজাদের মধ্যে কালু মল্ল, কাউ মল্ল, জৌ মল্ল ও সুর মল্লের নাম উল্লেখযোগ্য।
=== বৈষ্ণবধর্ম ===
[[Fileচিত্র:Jor Mandir 4 Arnab Dutta 2011.JPG|thumb|জোড়মন্দির চত্বর (১৭২৬ খ্রিস্টাব্দ), বিষ্ণুপুর।]]
মল্ল রাজবংশের ৪৯তম শাসক বীর হাম্বির ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। তিনি [[মুঘল সাম্রাজ্য|মুঘল সম্রাট]] [[আকবর|আকবরের]] সমসাময়িক ছিলেন। তিনি পাঠানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুঘলদের সাহায্য করেছিলেন। মুসলমান ঐতিহাসিকদের রচনায় তাঁর উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি বাংলার শাসনকর্তাকে বার্ষিক কর পাঠিয়ে মুঘলদের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিয়েছিলেন। শ্রীনিবাস আচার্য তাঁকে [[বৈষ্ণবধর্ম|বৈষ্ণবধর্মে]] দীক্ষিত করে বিষ্ণুপুরে মদনমোহনের পূজা প্রচলন করেন।<ref name=omalley2/>
 
বীর হাম্বিরের পুত্র রঘুনাথ সিংহ প্রথম ক্ষত্রিয় উপাধি ব্যবহারকারী মল্ল রাজা। তাঁর সময় থেকে বিষ্ণুপুরে স্থাপত্যশিল্পের বিকাশ ঘটে। এই সময় বিষ্ণুপুরে অনেক বিশালাকৃতি মন্দির নির্মিত হয়। মল্ল রাজারা হিন্দু শিল্পকলা ও ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে এই সময় বিষ্ণুপুরের আর্থিক অবস্থারও অবনতি ঘটে। বীর সিংহ তাঁর আঠারো পুত্রকে জীবন্ত হত্যা করেছিলেন। কনিষ্ঠ পুত্র দুর্জনের প্রাণ রক্ষিত হয় পরিচারকদের তৎপরতায়। পরবর্তীকালে মল্ল রাজারা সামন্ত রাজায় পরিণত হয়েছিলেন। তবে [[মুর্শিদাবাদ|মুর্শিদাবাদের]] দরবারে তাঁদের সশরীরে উপস্থিত থাকতে হত না। সেখানে তাঁদের প্রতিনিধি থাকত।<ref name=omalley2/>
 
=== পরবর্তীকাল ===
খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের প্রথমভাগে [[আদিমল্ল|রঘুনাথ মল্ল]] [[মল্ল রাজবংশ|মল্ল রাজবংশের]] প্রতিষ্ঠা করলে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তন ত্বরান্বিত হয়। [[বিষ্ণুপুর মহকুমা|বিষ্ণুপুর মহকুমার]] মহকুমা-শহর [[বিষ্ণুপুর|বিষ্ণুপুরে]], যা সেই সময় বন-বিষ্ণুপুর নামে পরিচিত ছিল, মল্লভূম নামে পরিচিত মল্লরাজ্যের রাজধানী স্থাপিত হয়। মল্লরাজবংশ প্রায় ১০০০ বছর এই অঞ্চল শাসন করেন ও বাংলার ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রজাহিতৈষী রাজবংশ রূপে খ্যাতি অর্জন করেন। [[১৭৬৫]] সালে দেওয়ানি লাভের পর বিষ্ণুপুর [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির]] অধীনে আসে। পরে মরাঠা আক্রমণ ও [[১৭৭০]] সালের মন্বন্তরে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক কাঠামো সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। [[১৭৮৭]] সালে বিষ্ণুপুর ও [[বীরভূম জেলা|বীরভূম]] জেলাদুটি সংযুক্ত করে একই জেলায় পরিণত করা হয়। [[১৭৯৩]] সালে বিষ্ণুপুরকে বীরভূম জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে [[বর্ধমান জেলা|বর্ধমান জেলার]] সঙ্গে যুক্ত করা হয়। [[১৮০৫]] সালে বিষ্ণুপুরকে জঙ্গলমহল জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। [[১৮৩৭]] সালে [[বাঁকুড়া|বাঁকুড়াকে]] সদর করে ও বিষ্ণুপুরকে পৃথক করে পশ্চিম বর্ধমান জেলা গঠন করা হয়। [[১৮৮১]] সালে বর্তমান বাঁকুড়া জেলা স্থাপিত হয়।
 
== ভূগোল ==
{{মূল নিবন্ধ|বাঁকুড়া জেলার ভূগোল}}
 
৬২ নং লাইন:
বাঁকুড়া জেলায় বনভূমির পরিমাণ ২৪৭.৭০ হাজার হেক্টর (জেলার মোট আয়তনের ২১.৪৭%)। মূলত শুষ্ক ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য বা শালবন বেশি দেখা যায়। এছাড়া পিয়াশাল, সেগুন, বহেড়া, পলাশ, কুসুম, মহুয়া, পিপুয়া, বাবলা, আম, কাঁঠাল, পারাষি প্রভৃতি গাছও দেখা যায়। <ref> ধনধান্যে (যোজনা পত্রিকা গোষ্ঠীর বাংলা মাসিক) জুন, ২০০৭ সংখ্যা, পৃ. ৫৮</ref>
 
== প্রশাসনিক বিভাগ ==
বাঁকুড়া জেলা মোট তিনটি মহকুমায় বিভক্ত। এগুলি হল –
* [[বাঁকুড়া সদর মহকুমা]]
* [[বিষ্ণুপুর মহকুমা]]
* [[খাতড়া মহকুমা]]
এই মহকুমাগুলি মোট ২২টি [[সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক| সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে]] বিভক্ত।
 
বাঁকুড়ায় মোট তিনটি [[পুরসভা]] আছে। এগুলি হল –
* [[বাঁকুড়া]]
* [[বিষ্ণুপুর]]
* [[সোনামুখি]]
এই জেলায় একটিও [[পৌরসংস্থা]] নেই।
 
== জনতত্ত্ব ==
২০০১ সালের জনগণনার হিসাব অনুসারে বাঁকুড়া জেলার মোট জনসংখ্যা ৩১,৯২,৬৯৫। তার মধ্যে পুরুষ ১৬,৩৬,০০২ ও মহিলা ১৫,৫৬,৬৯৩। পুরুষ ও মহিলার অনুপাত ১০০:৯৫। জেলার গ্রামীন জনসংখ্যা ২৯,৫৭,৪৪৭ (মোট জনসংখ্যার ৯২.৬৩%) ও পৌর জনসংখ্যা ২,৩৫,২৪৮ (মোট জনসংখ্যার ৭.৩৭%) । গ্রামীণ জনসংখ্যার ১৫,১৫,৪৫০ জন পুরুষ ও ১৪,৪১,৯৯৭ জন মহিলা। আবার পৌর জনসংখ্যার ১,২০,৫৫২ জন পুরুষ ও ১,১৪,৬৯৬ জন মহিলা। বাঁকুড়া জেলার মোট সাক্ষর জনসংখ্যা ১৭,৩৪,২২২ (মোট জনসংখ্যার ৬৩.৪৪%)। পুরুষ সাক্ষরতার হার ৭৬.৭৬% ও মহিলা সাক্ষরতা ৪৯.৪৩%। আবার এই জেলার গ্রামীণ সাক্ষরতার হার ৬২.০৯% ও পৌর সাক্ষরতার হার ৮০.২২%। বাঁকুড়া জেলায় তপশিলি জাতির মোট ৯,৯৭,৪০৮ জন (মোট জনসংখ্যার ৩১.২৪%) ও তপশিলি উপজাতির ৩,৩০,৭৮৩ জন (মোট জনসংখ্যার ১০.৩৬%) বাস করেন। ২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী বাঁকুড়ায় মোট শ্রমিকের সংখ্যা ১৪,২৭,২৭২ (মোট জনসংখ্যার ৪৪.৭%)। <ref>ধনধান্যে (যোজনা পত্রিকা গোষ্ঠীর বাংলা মাসিক) জুন, ২০০৭ সংখ্যা দ্রঃ</ref>
 
== শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ==
 
বাঁকুড়া জেলার সার্বিক সাক্ষরতার হার ৬৩.৪৪%। এর মধ্যে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৭৬.৭৬% ও মহিলা সাক্ষরতার হার ৪৯.৪৩%। গ্রামীণ সাক্ষরতার হার ৬২.০৯% ও পৌর সাক্ষরতার হার ৮০.২২%। ২০০৩-০৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, জেলার স্বীকৃত বিদ্যায়তনের সংখ্যা ৩৯৩০। এর মধ্যে স্বীকৃত বিদ্যালয় ৩৪৭২টি, জুনিয়র বিদ্যালয় ১১৯টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১৭টি ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ১০৩টি। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১৪টি স্নাতক কলেজ, ৫টি ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রাযুক্তিক কলেজ, ১টি পলিটেকনিক কলেজ রয়েছে এই জেলায়। জেলায় কোনও বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্র রয়েছে ৩টি। বাঁকুড়ায় শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ৪৫১টি ও আইসিডিএস-এর অন্তর্গত অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ২৮১টি। এছাড়া সাধারণ পাঠাগার ১৩০টি ও ১৩২টি ফ্রি-পড়ার ঘর রয়েছে এই জেলায়।
৮৪ নং লাইন:
বাঁকুড়া জেলায় সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ১৫। এছাড়া ৮৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৫০৮টি ক্লিনিক, ৪২টি ডিসপেনসারি রয়েছে। বাঁকুড়া পুরসভায় ৩টি, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী পুরসভায় ১টি করে হাসপাতাল বিদ্যমান।
 
== অর্থনীতি ==
বাঁকুড়া জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। জেলায় শতকরা ৮২ জন কৃষিজীবি। আবার জেলার মোট শ্রমশক্তির ৩১% কৃষক ও ৩৫% কৃষিমজুর। এই জেলার প্রধান উৎপন্ন ফসলগুলি হল ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ, পাট, মেস্তা, আলু, শুকনো লঙ্কা ও আদা। জেলার ৫০% জমিতেই কৃষিকাজ হয়। এছাড়া রেশমকীটের খাদ্য তুঁতগাছের চাষও হয়। তবে প্রতিকূল জলবায়ু ও ভূপ্রকৃতি এবং জলের অপর্যাপ্ত সরবরাহের জন্য চাষাবাদ অনেক ক্ষেত্রেই বিঘ্নিত হয়। তাই আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির সাহায্যে জেলার মোট কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।
 
বাঁকুড়ায় বৃহদায়তন শিল্প গড়ে না উঠলেও ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে এই অঞ্চল ঐতিহ্যবাহী। এই শিল্পগুলির মধ্যে রেশম, সুতি ও তসরের বয়ন প্রধান। লাল ‘ধূপছায়া’ শাড়ি, রেশম ও সুতি মিশ্রিত ‘খুটনি’ কাপড়, ‘ফুলম’ শাড়ি ও বিশেষত বিষ্ণুপুরের ‘বালুচরি’ শাড়ি জগদ্বিখ্যাত। বাঁকুড়া সদর মহকুমার শুশুনিয়ায় পাথর কেটে দেবদেবীর মূর্তি ও থালাবাসন তৈরির শিল্প বাঁকুড়া ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া পিতলের ডোকরা শিল্প আজ দেশ-বিদেশে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বাঁকুড়ার সাংস্কৃতিক আইকন হল ঘোড়া। হাতি, ঘোড়া ও মনসার ঝাঁপি তৈরির জন্য খাতরা মহকুমার তালডাংরা ব্লকের পাঁচমুড়া বিখ্যাত। চামড়ার জুতো
তৈরিতেও জেলার ঐতিহ্য রয়েছে।
 
বাঁকুড়া একটি খনিজ সমৃদ্ধ জেলা। শালতোড়া, মেজিয়া, বড়জোড়া ও গঙ্গাজলঘাটি অঞ্চলের কয়লা, থানাপাহাড়, চেরাডংরি অঞ্চলের টাংস্টেন, রানিবাঁধ থানার ঝিলিমিলি অঞ্চলের অভ্র ও রায়পুর অঞ্চলের চিনামাটি এই জেলার উল্লেখযোগ্য খনিজ।
 
== পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ==
বাঁকুড়া জেলা ব্রডগেজ ও ন্যারোগেজ/মিটারগেজ রেলপথে রাজধানী কলকাতা ও অন্যান্য জেলার সঙ্গে যুক্ত। দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের ৭০ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন এই জেলাকে [[পুরুলিয়া]]-[[আদ্রা]] ও [[খড়গপুর|খড়গপুরের]] সঙ্গে যুক্ত রেখেছে। ন্যারোগেজ রেলপথে বর্ধমান জেলার সঙ্গে বাঁকুড়ার যোগাযোগ রক্ষিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে জেলার সকল রেলপথই ব্রডগেজে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনগুলি হল বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, ওন্দা, সোনামুখী ও পাত্রসায়ের।
 
১০১ নং লাইন:
বাঁকুড়া জেলায় বিমান পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
 
== পাদটীকা ==
{{Reflist|2}}
 
== তথ্যসূত্র ==
* ধনধান্যে (যোজনা বাংলা), জুন, ২০০৭ সংখ্যা
* মনোরমা ইয়ারবুক ২০০৮
* পশ্চিমবঙ্গ পরিচয়, বাসুদেব গঙ্গোপাধ্যায়, শিশু সাহিত্য সংসদ, [[কলকাতা]], [[২০০০]]
 
== বহিঃসংযোগ ==
{{Wikisource1911Enc|Bankura|বাঁকুড়া}}
* {{Wikivoyage-inline|Bankura|বাঁকুড়া}}
* [http://bankura.gov.in/ বাঁকুড়া জেলার প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ]
* [http://www.wb.nic.in/dist/bankura.html পশ্চিমবঙ্গের জেলাসমূহ প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট]
* [http://www.onefivenine.com/india/villag/Bankura জেলার বিভিন্ন স্থান]
{{Geographic location
|Centre = বাঁকুড়া জেলা
১২৮ নং লাইন:
{{বাঁকুড়া প্রসঙ্গ}}
{{বাঁকুড়া জেলা}}
{{পশ্চিমবঙ্গের জেলাসমূহ}}
 
[[Categoryবিষয়শ্রেণী:পশ্চিমবঙ্গের জেলা]]
[[Categoryবিষয়শ্রেণী:বাঁকুড়া জেলা|*]]
[[বিষয়শ্রেণী:১৮৮১-এ প্রতিষ্ঠিত]]