জমিদার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
MerlIwBot (আলোচনা | অবদান)
বট মুছে ফেলছে: hi (strong connection between (2) bn:জমিদার and hi:ब्रिटिश भारत में रियासतें),en (strong connection between (2) bn:জমিদার and [[w:Princ...
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে; কোনো সমস্যা?
৫ নং লাইন:
 
== বাংলার জমিদার ==
মুগলদের বাংলা জয়ের পর জমিদার একটি বিশেষ পদবি হয় এবং জমিদার বলতে বোঝায় বিভিন্ন ধরনের জমি ও অধিকারের মালিক। স্বায়ত্তশাসিত কিংবা আধা স্বাধীন সর্দার বা গোষ্ঠীপ্রধান থেকে শুরু করে স্বত্বাধিকারী কৃষক যে কেউ জমিদার হয়ে উঠতে পারত। স্বাধীন বা আধা-স্বাধীন সর্দার বা প্রধানরা বশ্যতাক্রমে বা মিত্রতাক্রমে পেশকাশি (নজরানা প্রদানকারী) অধস্তন মিত্রে পরিণত হয়। কিন্তু তাদের প্রশাসনিক স্বশাসনের অধিকার কার্যত অক্ষুন্ন থাকে। আর বাকি সকলেই প্রায় মালজামিন (ভূমি রাজস্ব প্রদানকারী) ছিলেন। তারা মুগলদের জন্য রাজস্ব সংগ্রহ করতেন। মুগলরা স্বশাসিত অথবা সীমান্ত অঞ্চলের সর্দার বা প্রধানদের ছাড়া জমিদার শ্রেণীর বাকি সকল ব্যক্তির বংশানুক্রমিক পদমর্যাদা খর্ব করে। তাদের ওয়ারিশগণ জমিদারিতে বহাল থাকবে কিনা তা কিছুটা হলেও ছিল দেশের সার্বভৌম শাসকের ইচ্ছাধীন। বিদ্রোহ করলে কিংবা নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদেরকে অপসারণ করা যেত। শাসককে পরিতুষ্ট করার বিনিময়ে এই জমিদাররা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা যেমন, খিলাত (মর্যাদাসূচক পরিচ্ছদ) ও খেতাব লাভের অধিকারী ছিলেন। তাদের মর্যাদা, সম্পদ ও অন্যান্য বিষয়ের দ্বারা নির্ধারিত হতো ঐসব অধিকার।
 
প্রাক্‌-আধুনিক ভারতে বেসামরিক প্রশাসন প্রধানত রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়ের ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতো। সে কারণে জমি প্রদানের সঙ্গে বেশকিছু প্রশাসনিক দায়িত্বও অর্পণ করা হতো। এই দায়-দায়িত্বের আওতায় জমিদারগণকে রাজস্ব নির্ধারণের বিশদ বিবরণ প্রণয়ন, চাষিদের কাছ থেকে খাজনা আদায় এবং তা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অর্পণ করতে হতো। এছাড়াও স্থানীয় এলাকায় শান্তি রক্ষার কাজে রাজকীয় কর্মকর্তাদেরকে সাহায্য-সহায়তা এবং প্রয়োজনে সেনা সরবরাহ করতে তারা বাধ্য ছিলেন। উচ্চতর শ্রেণীর ভূম্যধিকারীদের শক্তি ও কর্তৃত্বের আংশিক উৎস ছিল জমিতে উৎপন্ন ফসল ও অন্যান্য সামগ্রীতে তাদের ভাগ এবং অংশত স্থানীয় জনপদে তাদের সনাতন আভিজাত্যপূর্ণ মর্যাদাগত অবস্থান। সম্রাটের সনদে এই শ্রেণীর লোকদেরকে যে রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালনের দায়িত্ব দেওয়া হতো সেগুলি পালনে তাদের এই অবস্থানগত মর্যাদা ও পরিস্থিতি বেশ অনুকূল ছিল।
১১ নং লাইন:
== চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ==
 
[[চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত]] (১৭৯৩) প্রবর্তনের আগে পর্যন্ত জমিদারদের মৌলিক অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য অপরিবর্তিত থাকলেও শাসক অভিজাত মহলের চাহিদার উপযোগী করার জন্য ভূমি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কাঠামোতে মাঝে মাঝে কিছু রদবদল করা হয়। এভাবেই তোডর মলের বন্দোবস্ত (১৫৮২) যা দূরবর্তী বাংলা সুবায় একদিন জমিদারি পদ্ধতির সূচনা করেছিল, তা ১৬৫৮ সন পর্যন্ত বজায় থাকে। এই সময়ে [[বাংলার সুবাহদার]] [[শাহ সুজার]] (১৬৫৭) রাজস্ব বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদারি ব্যবস্থায় কিছুটা বল সঞ্চার হয়। এরপর ১৭২২ সনে সুবাহদার মুর্শিদ কুলির মালজমিনি (ভূমি রাজস্ব) পদ্ধতি প্রচলিত হয়। সরকারি রাজস্ব সর্বাধিক করা ও রাজস্বের নিয়মিত পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য মুর্শিদ কুলি বাংলা প্রদেশকে পূর্ববর্তী চৌত্রিশটি সরকারের পরিবর্তে তেরটি চাকলায় (প্রশাসনিক বিভাগ) ভাগ করেন। আর সেসঙ্গে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র জমিদারদের চাকলাদারের এখতিয়ারাধীন করেন। এই চাকলাদারগণ মনোনীত হন বৃহৎ জমিদারবর্গ থেকে আর তারা জমির মালিক হিসেবে নয় অধস্তনদের তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। তাদের কাজ ছিল দক্ষতার সঙ্গে রাজস্বের আদায় ও সংগ্রহ নিশ্চিত করা। তবে প্রধান জমিদারগণকে রাজস্বের রাজকীয় অংশের জন্য খালসা বা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কাছে জবাবদিহি করার ফলে তাদের সনাতন ক্ষমতা ও মর্যাদাগত অবস্থান আরও বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও প্রতিভাবান জমিদারগণকে বিভিন্ন সরকারি পদে নিযুক্তির যে প্রস্তাব দেওয়া হয় তার ফলে রাজদরবারে তাদের অবস্থানগত মর্যাদা বৃদ্ধি ও সেসঙ্গে তাদের নিজ স্বার্থকে আরও এগিয়ে নেবার সম্ভাবনা অনেক দূর প্রসারিত হয়। রাজস্ব ব্যবস্থাপকের ভূমিকা থেকে জমিদারে রূপান্তরিত হওয়ার এই প্রক্রিয়াটি আঠারো শতকের মাঝামাঝি নাগাদ সম্পূর্ণ হয়।
 
== রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ==
৫৩ নং লাইন:
{{main|পিট্‌স ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৭৮৪}}
 
স্থায়ী ভিত্তিতে ঔপনিবেশিক রাজ্য গঠনের লক্ষ্যে এই আইনের অধীনে কলকাতা প্রশাসন অনেকগুলি বিধিবিধান প্রণয়ন করে। জমিদারদের সঙ্গে ভূমি বন্দোবস্তের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, এ লক্ষ্যে দক্ষতার সঙ্গে রাজ্য শাসন এবং শাসক ও শাসিত উভয় শ্রেণীর কল্যাণের উদ্দেশ্যে স্থায়ী বিধিবিধান প্রণয়ন করা হয়। নতুন রাজ্যকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল করার নির্দেশ দিয়ে [[লর্ড কর্নওয়ালিস|লর্ড কর্নওয়ালিসকে]] [[গভর্নর জেনারেল]] করে পাঠানো হয়। [[পিট্‌স ইন্ডিয়া অ্যাক্ট]]-এর অধীনে এবং [[কোর্ট অব ডিরেক্টরস]]-এর নির্দেশ অনুযায়ী লর্ড কর্নওয়ালিস ধ্বংসাত্মক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথ পরিহার করে দেশের জমিদার, তালুকদার ও অন্যান্য ভূম্যধিকারীদের সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা কার্যকর করেন।
 
== চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ==
৬৪ নং লাইন:
 
== সূর্যাস্ত আইন ==
জমিদারদের জন্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিধিবিধানগুলির মধ্যে সবচেয়ে মারাত্যক দিক ছিল রাজস্ব বিক্রয় আইন, যাকে তারা মোলায়েম ভাষায় বলতেন সূযাÆস্ত আইন। এই আইনের শর্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় রাজস্ব বারোটি কিস্তিতে জেলা কালেক্টরেটে পরিশোধ করতে হতো। কোন জমিদারের প্রদেয় কিস্তি বকেয়া পড়লে পরবর্তী মাসে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর ঐ জমিদারের জমি থেকে বকেয়া কিস্তির সমমূল্যের জমি বিক্রয় করে সেই টাকা উসুল করতেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যকর হওয়ার একেবারে শুরু থেকে রাজস্ব বিক্রয় আইনের (সাধারণ্যে সূর্যাস্ত আইন নামে পরিচিত) অধীনে শত শত জমিদারি সম্পত্তি বিক্রয় হয়ে যায়। সেকালের লোকেরা এই আইনকে সূযাÆস্ত আইন বলত এই অর্থে যে, এর ফলে একটি শাসক পরিবারে অন্ধকার নেমে আসত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যকর হওয়ার দশ বছরের মধ্যে বাংলার জমিদারি সম্পত্তির প্রায় অর্ধেকের মালিকানা বদল হয়।
 
নয়া জমিদার খোদ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কার্যপদ্ধতির মধ্যে পুরানো জমিদারদের স্থলে এক নতুন জমিদার শ্রেণীর উদ্ভবের সুযোগ নিহিত ছিল। এই ব্যবস্থার প্রণেতারা সচেতন ছিলেন যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যকর হওয়ার পর ভূমির একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হবে এবং তার ফলে দুর্বল ও অদক্ষ জমিদাররা ভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবেন, ভূমির মালিকানার ক্ষেত্রে নতুন রক্তের সঞ্চালন ঘটবে। আগেই ধারণা করা হয়েছিল যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে ভূমিনিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ডে টাকাওয়ালা ও উদ্যমী এক শ্রেণীর লোকের প্রবেশ ঘটবে, যারা কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তনে পালন করবে সহায়ক ভূমিকা।
 
কিন্তু দুভাÆগ্যক্রমে ভূমি ব্যবস্থাপনায় নয়া জমিদার ও পুরানো জমিদারদের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য ছিল না। নয়া জমিদারদের অধিকাংশেরই আগমন ঘটে জমিদারদের চাকুরে, সরকারি চাকুরে এবং বণিক ও ব্যবসায়ী শ্রেণীর মধ্য থেকে। সনাতন জমিদারদের মধ্যে দেখা যেত প্রণোদনার অভাব এবং আলস্য, আর ভূমি নিয়ন্ত্রণে নবাগতরা কৃষি খাতের উন্নয়নকল্পে কোন পুঁজি বিনিয়োগ না করে নিজেদের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করতেন বর্গাচাষিদের ওপর উচ্চ হারে খাজনা আরোপের মধ্য দিয়ে।