ফ্রান্সিস বেকন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
180.211.172.99-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে Asifmuktadir-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
২৪ নং লাইন:
ফ্রান্সিস বেকন ১৬০৩ সালে নাইটহুড পান। এছাড়াও ১৬১৮ এবং ১৬২১ সালে ব্যারন ভিরলাম এবং ভিসকাউন্ট সেন্ট এলবান উপাধি পান। যেহেতু মৃত্যুর সময় তার কোন উত্তরশুরী ছিল না, তাই পরবর্তীতে তার উপাধিগুলো বিলীন হয়ে যায়।
 
 
ইংরেজি ভাষার প্রতি ফ্রান্সিস বেকনের (1561-1626) বড় একটা শ্রদ্ধাবোধ ছিল না। কারণ, তিনি মনে করতেন, এ সমস্ত আধুনিক ভাষা একসময় উপযুক্ত গ্রন্থের অভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়বে।তাই ল্যাটিন ছিল তার একমাত্র প্রিয় ভাষা।অথচ সেই ফ্রান্সিস বেকন ইংরেজি ভাষায় যে অবদান রেখেছেন, তা নি:সন্দেহে অবিস্মরণীয়। জনৈক সমালোচক এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ইংরেজি গদ্যের অগ্রযাত্রায় হুকার ও বেকনের অবদান যথার্থই মাইল ফলক।’ যখন অনুপ্রাস, বিরোধালঙ্কার ও উপমার আতিশয্যে ইংরেজি গদ্য রীতিমত ভারাক্রান্ত, উল্লিখিত পণ্ডিতদ্বয় বলিষ্ঠভাবে প্রমাণ করেছেন, এ ভাষাতেও স্বচ্ছন্দে কালাতিক্রম্য উঁচুমানের সাহিত্য নির্মাণ করা সম্ভব। এমন কি সুক্ষ্ম ভাবধারাও সোজাসুজি একক বাক্যে প্রকাশ করা যায়। প্রয়োজনবোধে, মাত্র কয়েকটি শব্দে ব্যাপক অর্থব্যাঞ্জনা সৃষ্টি করা যায়।
 
বেকন তার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘এসেইজ’ এর প্রবন্ধগুলো নিখুঁত অলঙ্কারে সুশোভিত করেছেন। তার রচনাশৈলী নমনীয় এবং আধুনিক না হলেও বিশেষ ভাব প্রকাশে বলিষ্ঠতা ও অর্থব্যাঞ্জনার জন্য অতুলনীয়। যখন অধিকাংশ ইংরেজি গদ্য সাহিত্য অতিদীর্ঘ ও শিথিল বাক্য বিন্যাসে রচিত হচ্ছিল, তিনি সংক্ষিপ্ত ও আঁটসাট বাক্য বিন্যাসে রীতিমত চমক সৃষ্টি করেন। তিনি সমসাময়িকদের পাণ্ডিত্যসুলভ চিত্রকল্পের বাহুল্য বর্জন করেন। কারণ, সঠিক অলঙ্কার ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে স্বীয় ভাবধারার সুচারুরূপে প্রকাশ ঘটানো যায়, তা তিনি ভাল করেই জানতেন। অথচ বেন জনসন উক্ত পরিস্থিতিতে অর্থাৎ সম্পূর্ণ নিরাভরণ গদ্য রচনা করেন। অপরদিকে, বেকনের ভাষা সকলের নিকট সমানভাবে উৎসাহব্যঞ্জক। আধুনিক লেখক এমার্সনের সাথে বেকনকে তুলনা করা যায়। তাদের উভয়ের ভাষা প্রয়োগরীতি প্রায় একই ধাঁচের। একগাদা তীক্ষ্ণ আপাত অসংলগ্ন বাক্যবিন্যাস, অথচ প্রবচনধর্মী এ বাক্যগুলোর সাহায্যেই তারা পাঠকের অন্তরে ঠাঁই নিতে চেষ্টা করেছেন।
 
সিডনি, লিলি, এ্যাসাম প্রমূখ বেকনের পূর্বসূরীদের লক্ষ্য করলে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি তাদের অতিকথন রীতি থেকে নিজেকে কত দূরে সরিয়ে রাখেন। সমসাময়িকদের অনেককেই তিনি যথার্থ অলঙ্করণ, শ্রুতিমাধুর্য্ ইত্যাদিতে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন। এমন কি স্বচ্ছ, সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেন জনসন ব্যতীত তার জুড়ি ছিল না। আজও তার প্রবন্ধগুলো সংক্ষিপ্ত ও প্রাঞ্জল গদ্যের চমৎকার নিদর্শনরূপে সমাদৃত।
 
প্রখ্যাত সমালোচক হাফ ওয়ার্কার ইংরেজি গদ্যে বেকনের অবদান সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ইংরেজি গদ্যরীতির বিবর্তনে বেকন অন্যতম দীর্ঘ অনতিক্রম্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, ইংরেজি গদ্য হয়ে ওঠে সমৃদ্ধ ও লালিত্যময়। প্রসঙ্গত, হুকার ও র্যালে গদ্যের বিবর্তন ধারায় প্রভূত অবদান রেখেছেন। কিন্তু তাদের গদ্যরীতি যথেষ্ট গাম্ভীর্য়পূর্ণ ও শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও বেকনের গদ্যরীতির মতো সব ধরনের ভাব প্রকাশের জন্য উপযোগী ছিল না। বরং তা গুরুগম্ভীর ভাব ও বিষয় প্রকাশের বাহন হলেও অনেক ক্ষেত্রেই ঋষভকণ্ঠের মতো নীরস ও নিষ্প্রাণ মনে হতো। সময়ের সঙ্গে বিষয়ের সঙ্গতি রক্ষা হতো না। অতিদীর্ঘ বাক্যের ব্যবহার ছিল এর অন্যতম ত্রুটি। ফলে, অনেক শক্তিশালী লেখকদের রচনাও পাঠকের নিকট দূর্বোধ্য ও ক্লান্তিকর মনে হতো। এমন কি বেকনেরও কিছু কিছু গুরুগম্ভীর এবং মহৎ রচনায় এ ধরনের গদ্যরীতির প্রয়োগ ঘটেছে। কিন্তু প্রবন্ধগুলোতে তার স্বকীয়তা এবং মেধার উৎকর্ষতা প্রকাশ পেয়েছে। ঠিক যেন প্রয়োজনের খাতিরে পরিকল্পনা মাফিক বাক্যগুলো সংক্ষিপ্ত ও প্রাঞ্জল।
 
বেকনের প্রবন্ধ পাঠ করতে হয় মন্থর গতিতে, যেন ভাববার যথেষ্ট সময় থাকে। কারণ, তার প্রকাশরীতি যে দূর্বোধ্য তা নয়, বরং অতি সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর ভাবব্যাঞ্জক।কখনো কখনো বাক্যবিন্যাসে ব্যাকরণগত ত্রুটির কারণে শিথিল মনে হলেও অস্পষ্টতা নেই। বেকনের এই নব্যরীতি বাড়িতে, বাগানে, প্রেমিকের কণ্ঠে কিম্বা কোন অনুষ্ঠানে যে কোন ক্ষেত্রে যে কোন ভাব প্রকাশের উপযোগী বাহনরূপে সমাদৃত হয়। বেকনের সাহায্যে, সংক্ষেপে বলতে হয়, ইংরেজি গদ্যের সবচেয়ে বড় ত্রুটি সংশোধিত হয়। ষোড়শ শতাব্দীর শেষ পাদ পর্য়ন্ত আর কেউ অনুবাদ ব্যতীত গদ্যে এরূপ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সমর্থ হননি।
 
প্রবন্ধগুলোতে বেকন গদ্যরীতির ক্ষেত্রে যে স্বকীয়তা সৃষ্টি করেন তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সংক্ষিপ্ত অথচ তীক্ষ্ণ ব্যঞ্জনাপূর্ণ বাক্যের স্বতস্ফূর্ত প্রয়োগ। অদ্ভূত দক্ষতাবলে বেকন একটা বৃহৎ ভাবকেও মাত্র কয়েকটা শব্দে ব্যক্ত করেন, যা প্রকাশ করতে সাধারণ মানের লেখকদের অন্তত কয়েকটা বাক্যের প্রয়োজন হতো। তার অনেক বাক্যই প্রবচনধর্মী। প্রবাদ বাক্যের মতই সেগুলো পরিস্থিতি মাফিক আওড়ানো যায়। যেমন- ‘He that hath wife and children hath given hostages to fortune.’ (Of Marriage and Single Life) ‘যার স্ত্রী ও সন্তান আছে, সে ভাগ্যের নিকট জিম্মী।’ ‘For in evil, the best condition is not to will, the second not to can.’ (Of Great Place) ‘মন্দের মধ্যে উত্তম পরিস্থিতি হলো, মন্দ কিছু করার ইচ্ছা না করা, দ্বিতীয়ত ক্ষমতা না থাকা।’ ‘Those that want friends to open themselves into are cannibals of their hearts.’ (Of Friendship) ‘যারা তাদের বন্ধুদের উন্মোচিত হৃদয় দেখতে চায়, তারা তাদের বন্ধুদের হৃদয় ভক্ষক।’ ‘Some books are to be tasted, others to be swallowed, and some few to be chewed and digested.’ (Of Studies) ‘কিছু বইয়ের স্বাদ নিতে হবে, কিছু গলধকরণ করতে হবে, আর মাত্র কিছু চিবিয়ে হজম করতে হবে।’ ‘A mixture of a lie doth ever add pleasure.’ (Of Truth) ‘একটি মাত্র মিথ্যার মিশ্রণে কখনো কখনো আনন্দ প্রযুক্ত হয়।’
 
প্রবচনাত্মক বাক্যরীতির কারণে প্রাবন্ধিক হিসেবে বেকন খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন।সংক্ষিপ্ত এই বাক্যগুলো তার প্রবন্ধের একক শক্তি এবং গাম্ভীর্যের পরিচয় বহন করে।অতিকথন, সংযোজক অব্যয় ও অলঙ্কারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নিষ্ঠুরভাবে বর্জন করার ফলে সংক্ষেপে ভাব প্রকাশের এই রীতি তার পক্ষে আয়ত্ব করা সম্ভব হয়। তবু তার ভাষায় দূর্বোধ্যতা যে একেবারেই নেই, তা কিন্তু হলফ করে বলা যাবে না। সুখের বিষয়, দূর্বোধ্যতা থাকলেও তা অতি নগণ্য।
বেকনের রচনাশৈলীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হচ্ছে, অলঙ্কারের যথার্থ প্রয়োগ। ‘অব ট্রুথ’ প্রবন্ধ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তার ভাব প্রকাশের জন্য প্রচুর রূপক ও উপমার সার্থক প্রয়োগে তিনি রীতিমত দক্ষতা দেখিয়েছেন। যেমন সত্যকে তিনি তুলনা করেছেন উজ্জ্বল দিবালোকের সঙ্গে, যখন কোন রঙ্গমঞ্চ অথবা বিজয় উৎসব তার অর্ধেকও আকর্ষণীয় মনে হয় না, যতটা প্রতিভাত হয় মোমের আলোয়। আর মিথ্যাকে তিনি তুলনা করেছেন, ‘খাদ’ বা শঙ্কর ধাতুর সঙ্গে, যে খাদ সোনা-রূপার সঙ্গে মিশ্রিত করা যায়।এতে মূল্যবান ধাতুগুলোকে অধিকতর কর্মক্ষম করে, যদিও সেগুলোর মূল্য কমিয়ে দেয়।
 
এ ধরনের আরো একটা সুন্দর দৃষ্টান্তঃ মানুষের, মন যদি দানের জন্য ব্যাকুল হতো, তাহলে স্বর্গীয় প্রশান্তি এবং সত্য তার ভিত্তিভূমি হতো’ ‘অব ম্যারেজ এণ্ড সিঙ্গেল লাইফ’ প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, ‘কিছু লোক স্বাধীনতার মূল্য এত বেশি মনে করেন যে নিজেদের পরিহিত কমর বন্ধনী ও মোজাগুলোকেও শৃঙ্খলরূপে ভেবে থাকেন।’ তিনি পুরোহিতের বাবাহ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছন, ‘দানের দ্বারা ভূমিতে জল সিঞ্চন সম্ভব নয়, যদি প্রথমেই তাকে খাল পূর্ণ করতে হয়।’ ‘অব ফ্রেণ্ডশিপ’ প্রবন্ধেও তার অলঙ্কারপূর্ণ ভাষার প্রয়োগ দেখা যায়। ‘জনতা কখনো বন্ধু নয়, তাদের মুখগুলো নিছক ছবির এ্যালবাম ও কথাবার্তা নিছক করতালের টুংটাং শব্দ, প্রকৃত ভালবাসা নেই।’ এ সমস্ত বাক্যগুলো যেমন প্রবচনধর্মী তেমনি যথাযথ অলঙ্কারে সুশোভিত।
 
বেকনের নিখুঁত উপমা প্রয়োগের আরো দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে, যেমন ‘প্রিয়জন ছাড়া পৃথিবী একটি বনভূমি। যে ব্যক্তি আমাদের অন্তর ও পরিস্থিতির সাথে পরিচিত নয় তার উপদেশ, রোগের সাথে অপরিচিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের মতো।’ ‘বন্ধুত্বের শেষ ফল বেদানার মতো অনেক দানায় পূর্ণ।’ ‘একজন বন্ধু পরশমণিতুল্য, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সে মঙ্গলকামী।’ ‘অব স্টাডিজ’ প্রবন্ধে তিনি চমৎকার উপমা ব্যাবহার করেছেন। ‘পরিচ্ছন্ন বই নির্মল জলের মতো। বেকনের প্রবন্ধগুলো ভাবদ্যোতক ও উদ্ধৃতিবহুল। বেশ কিছু সংখ্যক উদ্ধৃতি ল্যাটিন থেকেও এসেছে। আর এ সমস্ত উল্লেখ ও উদ্ধৃতি তার পাণ্ডিত্যের পরিচায়ক।
 
‘অব ট্রুথ’ প্রবন্ধে তিনি পিলেইট ও লুসিয়ানের উল্লেখ করেছেন এবং লিউক্রেসিয়াস ও কঁতের উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। এ সমস্ত উল্লেখ ও উদ্ধৃতি প্রবন্ধকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি পাঠকের নিকট চিত্তাকর্ষক হয়েছে।‘অব ম্যারেজ এণ্ড সিঙ্গেল লাইফ’ এ ইউলিসিসের উল্লেখ এবং প্রাচীন দার্শনিক থেইলজের উদ্ধৃতি রয়েছে।‘অব গ্রেইট প্লেইস’ এ ট্যাসিটাস পাসবা ও ডেসপাসিয়ানের উল্লেখ রয়েছে।
 
‘অব ফ্রেণ্ডশিপ’ এ ধরনের বহু দৃষ্টান্তসহ প্রমাণ করেছেন, ‘এমন কি যারা মহৎ ব্যক্তি, যাদের শক্তিশালী ও দৃঢ় অন্তর আছে, তাদেরও বন্ধুর প্রয়োজন যাদের নিকট তাদের মনের দুয়ার খুলে দিতে পারে।’ এ প্রবন্ধে অনেক দার্শনিকের উল্লেখ রয়েছে। তার উদ্ধৃতিপ্রীতির ও নিদর্শন এখানে পাওয়া যায়।তিনি অ্যারিস্টোটল, কমিনিয়াস, থেমিস্টোক্লিস, হিরাক্লিটাস প্রমূখ মনিষীদের উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। এতে মনে হয়, এ ধরনের হাজারো উল্লেখ ও উদ্ধৃতি তার হাতের কাছেই থাকতো, আর এগুলো বস্তুত তার রচনাকে গাম্ভীর্য় ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ করতে যথেষ্ট সহায়তা করেছে।
 
উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ কথা নির্বিদ্বিধায় প্রণিধানযোগ্য, যে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বর্তমানে সুবিশাল মহীরুহতে পরিণত হয়েছে, তার প্রাথমিক পরিচর্য়ার লক্ষ্যে যে সীমিত সংখ্যক মনিষী জল সিঞ্চন করেন, বিচিত্র প্রতিভাধর ফ্রান্সিস বেকন তাদের পুরোধা।
==তথ্যসূত্র==
{{reflist}}