ভূমি জরিপ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
https://www.facebook.com/pages/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A4/526311197404216?ref=stream June 6, 2013 তারিখে লেখা
৩ নং লাইন:
'''ভূমি জরিপ''' হচ্ছে এমন এক কৌশল, পেশা, বিজ্ঞান যা নির্দিষ্টভাবে স্থানসমূহের ভূগোলক বা ত্রিমাত্রিক অবস্থানের পারস্পারিক দূরত্ব এবং কোণ নির্ণয় করতে পারে। এই বিন্দুসমূহে সাধারণত পৃথিবীপৃষ্ঠের ওপর অবস্থিত এবং তারা অধিকাংশ সময় ভূমি সীমানা নির্ধারণ করে ব্যক্তিগত অথবা [[সরকার|সরকারী]] পর্যায়ে।
লক্ষ্য অর্জনের জন্য [[জরিপকারী|জরিপাকারীরা]] [[গণিত]] ([[জ্যামিতি]] এবং [[ত্রিকোণমিতি]]), [[পদার্থবিজ্ঞান]], [[প্রকৌশল]] এবং [[আইন|আইন বিদ্যার]] সহায়তা নিয়ে থাকে।
 
 
== ইতিহাস ==
জরিপের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এমনকি প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় নীল নদের অতি প্লাবনের কারণে জমির সীমানা মুছে যাবার পর দড়ি দিয়ে সীমানা নির্ধারণের নথি পাওয়া গেছে।বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাসগেছে।
 
একসালা বন্দোবস্ত প্রথা চালুঃ-
 
১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর ধীরে ধীরে এদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে চলে যায়। বকসারের যুদ্ধে মীর কাশিম পরাজিত হলে ১৭৬৫ সালে মোগল সম্রাট শাহ আলমের নিকট থেকে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী একসালা চুক্তির মাধ্যমে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা রয়্যালটির বিনিময়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার ভূমি রাজস্ব আদায়ের পূর্ণ কর্তৃত্ব লাভ করেন। কোম্পানী মোহাম্মদ রেজা খানকে নায়েবে দেওয়ান নিযুক্ত করে রাজস্ব আদায় করতে থাকে। কিন্তু রাজস্ব আদায় আশানুরুপ না হওয়ায় রেজা খানকে অপসারন করে প্রত্যেক পরগনায় এক জন করে ইংরেজ রেভিনিউ সুপারভাইজার নিয়োগ করে। এ সময় থেকেই উল্লেখিত পরিমান রয়্যালটি উত্তোলনের জন্য রায়তদের(কৃষককুলের) উপর খাজনা আদায়ে নির্মম অত্যাচার করা হত। ১৭৬৯-৭০ খ্রিঃ (১১৭৬ বঙ্গাব্দ) সালে ভয়াভহ দূর্ভিক্ষে বাংলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। এই দূর্ভিক্ষকে ৭৬এর মনন্তর নামে আখ্যায়িত করা হয়। ভয়াবহ এই দূর্ভিক্ষ মাঝেও ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী রায়তদের নিকট থেকে তৎকালীন ১,২৪,০০০ টাকা খাজনা আদায় করেছে ।
 
পাঁচসালা বন্দোবস্ত প্রথা চালুঃ-
 
১৭৭২ সালে গভর্ণর হিসাবে লর্ড ওয়ারেন হোষ্টিং নিয়োগ পেয়ে রেভিনিউ সুপার ভাইজার পদ বিলুপ্ত করে রেভিনিউ কালেক্টর পদ সৃষ্টি করেন। এ সময় তিনি জমির খাজনা বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ নিলামকারীদের অনুকুলে পাঁচ বছর মেয়াদী জমিদারী বন্দোবস্ত দেন। আর এই সময়টিতে মুসলিম জমিদারগন ভূমির খাজনা বৃদ্ধিতে বিরোধিতা করায় সংশ্লিষ্ট জমিদারী অমুসলিমদের অনুকুলে দেওয়া হয়। বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের পিতামহ এই সুযোগ গ্রহন করেই জমিদারী বন্দোবস্ত নিয়ে জমিদার হন। পাঁচসালা বন্দোবস্ত পাওয়ায় জমিদারদের অত্যাচার আরো বৃদ্ধি পায়। এই সময়ই নগর আদালত প্রতিষ্ঠা করে খাজনা সম্পর্কিত বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
 
পূনরায় একসালা বন্দোবস্ত প্রথা চালুঃ-
 
খাজনা আদায় নিশ্চিত করতে রেভিনিউ কালেক্টরের কাজ তদারকী করার জন্য ৩ সদস্যের রেভিনিউ কাউন্সিল গঠিত হয়। এই কাউন্সিলের অধীন ৫ সদস্যের কমিটি অব সার্কিট গঠন করা হয়। সার্কিট কমিটির সদস্যগন জেলা সদরে তাবু স্থাপন করে অবস্থান করতেন। সার্কিট কমিটির এই আবাসস্থলের নামকরন করা হয় সার্কিট হাউজ। পরবর্তীতে সেই সার্কিট হাউজ অট্রালিকায় রুপান্তর হয়। পাঁচসালা বন্দোবস্তের কারনে জমিদারগন খাজনা আদায় করিয়া নিজেদের ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়ে এবং কোম্পানীকে পুরোপুরি খাজনা প্রদানে গড়িমসি করে। বিধায় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে ১৭৭৭ সালে পূনরায় একসালা বন্দোবস্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
 
দশসালা বন্দোবস্ত প্রথা চালুঃ-
 
কাঙ্খিত খাজনা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে কোম্পানী কর্মকর্তাগন রাজস্ব আদায় ও ব্যবস্থাপনায় পদ্ধতী পরিবর্তন করার চিন্তা ভাবনা করেন। ১৭৮৬ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশ ভারতের গভর্ণর জেনারেল নিযুক্ত হয়ে সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে ১৭৯০ সালে দশ বছর মেয়াদী জমিদারী বন্দোবস্ত প্রথা চালু করেন। তবে বন্দোবস্ত চুক্তিতে উল্লেখ করা হয় পরবর্তীতে এই মেয়াদ বর্ধিত করা হলে আলাদাভাবে নিলাম ডাকার প্রয়োজন হবে না। এই সময় রাজস্ব বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কালেক্টর কর্তৃক জমির খাজনা নির্ধারন করার নিয়ম চালু হয়।
 
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালুঃ-
 
১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ লর্ড কর্ণওয়ালিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন মজবুত করার জন্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু করেন। ১৭৯০ সালে নিলাম নেওয়া জমিদারগন এই সুযোগে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পেয়ে যান। এই প্রথা বাস্তবায়নে আবহমান বাংলার রায়ত(কৃষক) তাহাদের ভূমির মালিকানা হারায়। জমিদারগন খাজনা আদায়ের জন্য মধ্যস্বত্বভোগী নিয়োগ দিয়ে নিজেরা অলস ও উচ্চভিলাসী জীবন যাপন করে। মধ্যস্বত্বভোগীরা ইচ্ছে মত রায়তদের নিকট থেকে খাজনা আদায় করতো। খাজনা প্রদানে ব্যর্থদেরকে পাইক পেয়াদা দিয়ে অত্যাচার করতো। এ সময়ই কোর্ট, কোর্ট ফি, উকিল, মোক্তার প্রথা চালু হয়। মধ্যস্বত্বভোগীদেরকে তখন পাটোয়ারী, দফাদার, তরফদার জাতীয় খেতাবে ডাকা হত।
 
১৮৮৮ সাল থেকে শুরু করে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত প্রথম ভূমি জরিপ কার্য সম্পাদিত হয়। এই জরিপকে ক্যাডেষ্টাল সার্ভে সংক্ষেপে সি,এস বলে। এত নির্ভূল জরিপ আর ২য় বার এদেশে হয়নি। তাই সি,এস রেকর্ডকে সকল জরিপের মূল জরিপ হিসাবে ধরা হয়। ১৯৩৮ সালে স্যার ফ্রান্সিস ক্লাউডের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দীর্ঘ পর্যালোচনা করিয়া চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে অযৌক্তিক এবং রায়তদেরকে সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে জমিদারদের অত্যাচার থেকে রেহাই দেওয়ার সুপারিশ করেন। ১৯৪৫ সালে স্যার বাউল্যান্ডের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি গঠন করা হলে তারাও একই মতামত পূনর্ব্যক্ত করেন। সে অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১০ এপ্রিল বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন সভায় রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের খসড়া বিলটি উপস্থাপিত হয়।
 
জমিদারী প্রথা বাতিল ও প্রজাস্বত্ব প্রতিষ্ঠিতঃ-
 
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ ও ইংরেজদের বিদায় পর ১৯৫০ সালে ১৬ মে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়। উক্ত আইনে রাষ্ট্রের সকল ভূমি জমিদারদের নিকট থেকে সরকার কর্তৃত্ব গ্রহন করে প্রজাদের সম্পত্তির মালিকানা করে প্রজাদের স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে জমিদারদের নিকট থেকে ভূমি অধিগ্রহন করতে সরকারকে নির্ধারিত টাকা প্রদান করতে হয়। এ সময় একজন জমিদারকে সর্বোচ্চ ৩৭৫ বিঘা সম্পত্তি ব্যতিরেকে সমস্থ সম্পত্তি সরকারের অনুকুলে ফেরৎ দিতে হয়।
 
১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত যে জরিপ হয় তাহাকে ষ্টেট এ্যাকুইজেশন সার্ভে সংক্ষেপে এস,এ সার্ভে বলা হয়। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি একক ব্যক্তির অনুকুলে সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা সম্পত্তি রাখার বিধান চালু করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রপতি এর শাসনামলে একক ব্যক্তির অনুকুলে সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা সম্পত্তি রাখার বিধান চালু করেন। যাহা বর্তমানেও চালু আছে। রিভিশনাল সার্ভেকে সংক্ষেপে আর,এস এবং district সার্ভেকে সংক্ষেপে ডি,এস বলা হয়।
 
 
[[বিষয়শ্রেণী:পুরকৌশল]]