পুনরায়নীকরণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
[[চিত্র:reion diagram.jpg|thumb|275px|মহাবিশ্বেরএকটি ইতিহাসেরকার্টুন ছবি।চিত্রের এখানেমাধ্যমে মহাবিশ্বের ইতিহাসে পুনরায়নীকরণেরগুরুত্বপূর্ণ যুগগুলো (যেমন, পুনরায়নীকরণ অবস্থানযুগ) দেখানদেখানো হয়েছেহয়েছে।]]
'''পুনরায়নীকরণ''' ([[ইংরেজি]]: Reionization) বলতে এমন একটি প্রক্রিয়া বোঝায় যার মাধ্যমে [[অন্ধকার যুগ (বিশ্বতত্ত্ব)|অন্ধকার যুগের]] পর মহাবিশ্বের তড়িৎ নিরপেক্ষ পদার্থগুলো (প্রধানত [[হাইড্রোজেন]] ও [[হিলিয়াম]]) পুনরায় আয়নীত হয়েছিল। 'পুনরায় আয়নীকরণ' বলার কারণ, এর আগে আরেকবার (প্রারম্ভিক কেন্দ্রীণ সংশ্লেষের পর থেকে পুনর্মিলনের পূর্ব পর্যন্ত) মহাবিশ্বের সবকিছু আয়নীত অবস্থায় ছিল। আনুমানিক ১৩,৭৯৮ কোটি বছর পূর্বে মহা বিস্ফোরণ (বিগ ব্যাং, এরপর থেকে ''বিব্যা'' লেখা হবে) ঘটার মাত্র তিন সেকেন্ডের মাথায় প্রারম্ভিক কেন্দ্রীণ সংশ্লেষের মাধ্যমে [[ইলেকট্রন]], [[প্রোটন]], [[নিউট্রিনো]], তাদের [[প্রতিকণা]] এবং [[ফোটন]] তৈরি হয়। তাপমাত্র অনেক বেশি থাকায় সে সময় বিচ্ছিন্ন ইলেকট্রন ও প্রোটন মিলে তড়িৎ নিরপেক্ষ পরমাণু গঠন করতে পারছিল না। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং অবশেষে বিব্যা-র আনুমানিক ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বছর পর ইলেকট্রন ও প্রোটনেরা মিলে নিরপেক্ষ হাইড্রোজেন পরমাণু গঠন করে। এই ঘটনাকে [[পুনর্মিলন]] বলা হয়। পুনর্মিলনের পর মহাবিশ্বের প্রধান উপকরণ ছিল নিরপেক্ষ হাইড্রোজেন, সামান্য হিলিয়াম, ফোটন ও নিউট্রিনো।
'''পুনরায়নীকরণ''' ([[ইংরেজি ভাষায়]]: Reionization) বলতে এমন এক প্রক্রিয়া বোঝায় যার মাধ্যমে [[অন্ধকার যুগ (বিশ্বতত্ত্ব)|অন্ধকার যুগের]] পর মহাবিশ্বের বস্তুগুলো আয়নীত হয়েছিল। পুনরায় আয়নীকরণ বলার কারণ, প্রথমবারের মত যখন বস্তুকণা তৈরি হয়েছিল তখন সেগুলো আয়নীত অবস্থায়ই ছিল। মহা বিস্ফোরণের ৪০০,০০০ বছর পর সেই আয়নীত কণাগুলো মিলিত হয়ে নিরপেক্ষ হাইড্রোজেন পরমাণু গঠিত হয়। সে সময় [[মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ]] বিচ্ছুরিত হয় এবং অন্ধকার যুগের সূচনা ঘটে। পুনরায়ীকরণের মাধ্যমেই আবার অন্ধকার যুগ শেষ হয়। অন্ধকার যুগ বলার কারণ এই যুগে দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ নিঃসরণ করার মত কোন উৎস ছিল না। প্রথম দিককার [[তারা]], [[কোয়েজার]], [[কৃষ্ণ বিবর]], [[গামা রশ্মি বিস্ফোরণ]] এবং [[অতিনবতারা]] গঠনের মাধ্যমেই আসলে আয়নীকরণ প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছিল।
 
পুনর্মিলন যুগের পর অন্ধকার যুগের সূচনা ঘটে। অন্ধকার যুগ বলার কারণ এ সময় মহাবিশ্বে এমন কোন বিকিরণের উৎপত্তি ঘটেনি যা আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি। এরপর পুনরায় পর্যবেক্ষণযোগ্য বিকিরণ তৈরি হয় বিব্যা-র আনুমানিক ৪০ লক্ষ বছর পর, যখন প্রথম [[তারা]], [[গ্যালাক্সি]] এবং [[কোয়েজার]] জন্ম নেয়। এই উৎসগুলো থেকে নিঃসৃত বিকিরণ নিরপেক্ষ হাইড্রোজেন পরমাণুকে আয়নীত করতে শুরু করে, অর্থাৎ হাইড্রোজেনের কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনগুলো বিকিরণের শক্তি শোষণ করে পরমাণুর বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এভাবেই পুনরায়নীকরণ যুগের সূচনা ঘটে। মহাবিশ্বের প্রায় সকল নিরপেক্ষ হাইড্রোজেনের পুনরায়নীকরণ শেষ হয়েছিল বিব্যা-র প্রায় ১০০ কোটি বছর পর, অর্থাৎ আজ থেকে আনুমানিক ১২,৭৯৮ কোটি বছর পূর্বে। বর্তমানে আমরা মহাকাশে যত কাঠামো দেখি তাদের অধিকাংশ সেই পুনরায়নীকরণ যুগেই জন্ম নিয়েছিল।<ref>Jelic, V.; 2010</ref>
 
অন্ধকার যুগের সমাপ্তিই পুনরায়নীকরণ যুগের সূচনা ঘোষণা করে। পুনরায়নীকরণের সূচনা ও সমাপ্তি সম্পর্কে যথাক্রমে [[মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ]] ও কোয়েজারদের [[বর্ণালী]] থেকে কিছুটা জানা গেছে। তবে সে যুগে ঠিক কিভাবে ও কি হারে নতুন জন্ম নেয়া বস্তুগুলো মহাবিশ্বকে আয়নীত করেছিল তার বিস্তারিত জানার সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম হচ্ছে হাইড্রোজেন থেকে নিঃসৃত ২১ সেন্টিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একটি বিকিরণ (''পুনরায়নীকরণ সংকেত'') যা আজও সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পৃথিবীতে স্থাপিত বেশ কয়েকটি দুরবিনের মাধ্যমে সংকেতটি পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এই দুরবিনগুলোর মধ্যে রয়েছে নেদারল্যান্ডসের [[লোফার]], দক্ষিণ আফ্রিকার [[পেপার]] এবং অস্ট্রেলিয়ার [[এমডব্লিউএ]]।<ref name="furlanetto">Furlanetto, Oh, Briggs; 2006</ref>
 
==মহাবিশ্বের পুনরায়নীকরণের ইতিহাস==
আজ থেকে প্রায় ১৩,৭৯৮ কোটি বছর পূর্বে আমাদের মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল।<ref>Planck collaboration (2013), I</ref> জন্মের ঘটনাকে অনেক সময় [[মহা বিস্ফোরণ]] (বিগ ব্যাং) বলা হয়। মহা বিস্ফোরণের ১০<sup>-৪৩</sup> সেকেন্ড পর মহাবিশ্ব সম্পূর্ণ সমসত্ত্ব, এবং প্রচণ্ড উত্তপ্ত ও এক ধরণের কোয়ান্টাম দশায় ছিল।
 
মহা বিস্ফোরণ ঘটার মাত্র তিন সেকেন্ডের মাথায় ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রিনো, তাদের প্রতিকণা এবং ফোটন তৈরি হয়। তাপমাত্র অনেক বেশি থাকায় সে সময় বিচ্ছিন্ন ইলেকট্রন ও প্রোটন মিলে পরমাণু গঠন করতে পারছিল না। সময়ের সাথে সাথে মহাবিশ্ব প্রসারিত হতে থাকে এবং এর তাপমাত্রাও কমতে থাকে। মহা বিস্ফোরণের ৪০০,০০০ বছর পর (যার লাল সরণ, z=১১০০) তাপমাত্রা ৩০০০ কেলভিনে নেমে আসে। এই তাপমাত্রায় প্রোটন এবং ইলেকট্রন মিলে পরমাণু গঠন করে, যাকে [[পুনর্মিলন]] নামে ডাকা হয়। এ সময় কণা এবং বিকিরণের [[যুগলায়ন]] (coupling) ভেঙে যায় এবং বিকিরণ মুক্ত হয়ে সমগ্র মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ মহাবিশ্ব সে সময় অনচ্ছ থেকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হয়ে গিয়েছিল। এর মাধ্যমে অন্ধকার যুগের সূচনা ঘটে। এই যুগে মহাবিশ্ব ছিল স্বচ্ছ। কারণ অনচ্ছ করার জন্য কণা-বিকিরণ যুগলায়নের প্রয়োজন পড়ে। পরমাণুর মধ্যস্থিত ইলেকট্রন কোন নির্দিষ্ট শক্তিস্তর থেকে উপরের শক্তিস্তরে যাওয়ার জন্য শক্তি শোষণ করে, পরে যখন সে আবার পূর্বের শক্তিস্তরে ফিরে আসা তখন শোষিত শক্তিটি তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ হিসেবে নিসৃত হয়। এর মাধ্যমেই মহাবিশ্বে অনচ্ছতা তৈরি হয়। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ পরমাণুর মধ্যকার ইলেকট্রনকে এভাবে আয়নীত করার মত কোন শক্তি সে সময় ছিল না বিধায় মহাবিশ্ব স্বচ্ছ থাকে। উল্লেখ্য, পুনর্মিলনের আগে কণা-প্রতিকণার অবিরাম সৃষ্টি ও [[পুনর্বিলয়|পুনর্বিলয়ের]] মাধ্যমে যে কণা-বিকিরণ যুগলায়ন ঘটছিল তার মাধ্যমেই অনচ্ছতার সৃষ্টি হয়েছিল।
 
অন্ধকার যুগ চলতে থাকে। পুনর্মিলনের সময় মহাবিশ্ব প্রায় সমসত্ত্ব থাকা সত্ত্বেও এর মধ্যে কিছুটা ঘনত্বের হেরফের ছিল যাকে ঘনত্বের ফ্লাকচুয়েশন বলা হয়। এই ফ্লাকচুয়েশন মহাবিশ্বের প্রসারণের সাথে সাথে বিবর্তিত হতে থাকে। এই বিবর্তনকে লিনিয়ার বিবর্তন বলা হয়, এই সময়কার সকল ঘটনাকে লিনিয়ার গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু লিনিয়ার বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি ফ্লাকচুয়েশনের ঘনকীয় ধ্বসের (spherical collapse) মাধ্যমে তৈরি হয় নন-লিনিয়ার বিবর্তনের। এর মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ঘন অঞ্চলগুলোতে বেশি বস্তুকণা জমা হতে থাকে এবং বিভিন্ন ছোট ছোট ছায়াপথ গঠিত হয়। এগুলোকে [[বামন ছায়াপথ]] নামে ডাকা হয়। এই ছায়াপথগুলোর মধ্যেই প্রথমবারের মত আলোক নিঃসরণে সক্ষম উৎস গঠিত হয়। এই উৎসগুলো বিভিন্ন কম্পাঙ্কের তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ নিঃসরণ করতে থাকে। সে সময় গঠিত কোয়েজার থেকে এ ধরনের বিকিরণের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রথম দিককার [[পপুলেশন ৩ তারা|পপুলেশন ৩ তারাগুলো]] [[অতিবেগুনী রশ্মি]] নিঃসরণ করত, আর কৃষ্ণ বিবর থেকে নিসৃত হতো [[এক্স রশ্মি]]।
১২ ⟶ ১৬ নং লাইন:
 
পুনরায়নীকরণ কোন আকস্মিক প্রক্রিয়া নয়। হঠাৎ শুরু হয়ে আবার হঠাৎ শেষ হয়ে যায়নি। পালিয়ে আসা বিকিরণের মাধ্যমে আন্তঃছায়াপথীয় মাধ্যমে আয়নিত হাইড্রোজেন বুদবুদের সৃষ্টি হচ্ছিল। এগুলোকে পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় [[এইচ ২ অঞ্চল|H II অঞ্চল]] নামে ডাকা হয়। এই বুদবুদগুলো ধীরে ধীরে প্রসারিত হতে থাকে। একসময় এক বুদবুদের সাথে অন্য বুদবুদের উপরিপাতন ঘটে। এভাবে পুরো আন্তঃছায়াপথীয় মাধ্যমই আয়নিত হাইড্রোজেনের বুদবুদে ছেয়ে যায়। আয়নিত থাকা অবস্থায় হাইড্রোজেন তথা মুক্ত ইলেকট্রন ও প্রোটন ফোটন শোষণ বা নিঃসরণ করতে পারে না। কিন্তু তাদের সাথে লেগে সে সময় [[ফোটন]] বিক্ষিপ্ত হতে পারে। কিন্তু আয়নিত তথা [[প্লাজমা অবস্থা|প্লাজমা অবস্থার]] ঘনত্ব অনেক কম থাকায় সে বিক্ষেপণও ছিল বেশ বিরল, ঘন ঘন ঘটে না আর কি। তাই যে মহাবিশ্বে কম ঘনত্বের আয়নিত হাইড্রোজেন বিদ্যমান সেটি তুলনামূলকভাবে [[ট্রান্সলুসেন্স|ট্রান্সলুসেন্ট]] হবে। মহাবিশ্ব বর্তমানে এই অবস্থায়ই আছে।
 
== আরও দেখুন ==
* [[মহা বিস্ফোরণ]]
* [[কোয়েজার]]
* [[হাইড্রোজেন শ্রেণী]] (২১ সেমি শ্রেণী)
 
==পাদটীকা==
২২ ⟶ ২১ নং লাইন:
 
== তথ্যসূত্র ==
* Furlanetto, Steven R.; Oh; Briggs; ''[http://dx.doi.org/10.1016/j.physrep.2006.08.002 Cosmology at low frequencies: The 21-cm transition and the high-redshift Universe]'', Physics Reports, Volume 433, Issues 4–6, October 2006, Pages 181-301, ISSN 0370-1573.
* Jelic, V. ''[http://dissertations.ub.rug.nl/faculties/science/2010/v.jelic/ Cosmological 21cm experiments: Searching for a needle in a haystack]'', 2010, PhD thesis, Rijksuniversiteit Groningen
* Planck collaboration (2013), I. "[http://arxiv.org/abs/1303.5062 Planck 2013 results. I. Overview of products and scientific results]". Submitted to Astronomy & Astrophysics. arXiv:1303.5062.
 
৩১ ⟶ ৩২ নং লাইন:
{{Big Bang timeline}}
 
[[বিষয়শ্রেণী:মহাকাশের প্লাজমা]]
[[বিষয়শ্রেণী:জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান]]
[[বিষয়শ্রেণী:ভৌত বিশ্বতত্ত্ব]]
[[বিষয়শ্রেণী:পুনরায়নীকরণ]]