গোলাম সামদানী কোরায়শী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে, কোনো সমস্যা?
Shafi aszad (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৩ নং লাইন:
শ্রম বলতে শুধু গাধার মতো জীবনের বোঝা বওয়াকে বুঝায়না; বরং সেই জীবনের উৎপত্তি, তার বিকাশ ও পরিনতি সম্যক রূপে উপলব্ধি করে এক মহান উত্তরাধীকারের দায়িত্ব নিয়ে তার কর্তব্য পালন করাকে বুঝায়। কারণ আমার অস্তিত্বেও বহু পূর্বে মানুষের এই সমাজ গঠিত হয়েছে। যে পরিবেশে আমরা জন্ম নিয়েছি, যতো সামান্যই হোক, তাও গড়ে উঠতে কোটি কোটি মানুষের উদ্দেশ্য পূর্ণ মননশীল শ্রমের প্রয়োজন হয়েছে। কতো রক্ত কতো ঘামের পরিবর্তে মানুষ এমনি এক পরিবেশের সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছে, তা যদি আমাদের উপলব্ধিতে না থাকে, তাহলে কখনোই আমরা মনুষত্ব নামক এই উত্তরাধিকারের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বহন করতে পারবো না। সুতরাং আমাদেরকে বুঝে শুনে পরিশ্রম করতে হবে। তবেই আমাদের পরিশ্রম সমাজ প্রগতির বাহক হয়ে আমাদের মনুষ্য জন্মকে ধন্য করবে।
কাজেই এমনি এক শ্রমের মাপকাঠি দিয়েই আমরা আদর্শ মানুষের অনুসন্ধান করতে পারি। যিনি যে পরিমাণে এই যথার্থ শ্রমের শ্রমিক, তিনিই ততো খানি আদর্শ মনুষ্য পদবাচ্য। যারা সমাজ প্রগতির ধারাবাহী এই শ্রমকে এড়িয়ে উপাসনা বা প্রতারণার দ্বারা মনুষ্যত্বের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চান, তারা শুধু সমাজকে প্রতারিত করেন না, বরং নিজেরাও প্রতারিত হন। অপরের শ্রমের ফসল ভোগ করে তারা যে কোনো পদবীই গ্রহণ করুন না কেনো, জীবন যাপনে তারা যতো ঐশ্বর্যের অধিকারীই হোন না কেনো, মানুষ হিসাবে তারা অবশ্যই নিকৃষ্ট। তাদের চাইতে সেই একজন শ্রমিক শ্রেষ্ঠতর - মনুষ্যত্বের অধিকারী, যে তার ক্ষমতা ও চেতনা অনুসারে জীবনের দায়িত্ব পালন করছে। হয়তো তার দেহে স্বাস্থ্যে চাকচিক্য নেই, হয়তো পরনে পোশাকের জৌলুস নেই, কিন্তু মানুষ হিসাবে সে শ্রেষ্ঠ’-- গোলাম সামদানী কোরায়শী।
অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী’র জন্ম ১৯২৯ সালের ৫ এপ্রিল। বর্তমান নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়ার কাউরাট গ্রামে। বাবা মৌলভী বাবু শেখ আবু আছল মোঃ আঃ করিম কোরায়শী। মা আলতাফুন্নেসা। তাঁর পূর্বপুরুষের ছিল ময়মনসিংহ গৌরীপুরের বীর আহাম্মদপুর। তিনি ১৯৯১ সালের ১১ অক্টোবর মারা যান।
 
==শিক্ষা জীবন==
পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর ঘাটুরকোণা প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঠালিয়া মধ্য ইংরেজি স্কুল থেকে ১৯৩৫-৩৬ সালে প্রাইমারি পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর ১৯৩৭--৪১ সাল পর্যন্ত ভর্তি হন নেত্রকোণার চন্দ্রনাথ হাই স্কুল ও বীর আহাম্মদপুর হাই স্কুলে পড়েন। এরপর ১৯৪৫-৫০ সাল পর্যন্ত বাস্তা জুনিয়র মাদ্রাসা(নেত্রকোণা) ও কাতলাসেন মাদ্রাসায় পড়েন(ময়মনসিংহ)। কাৎলাসেন মাদ্রাসা থেকে ১৯৫০ সালে আলিম ১ম শ্রেণীতে ৮ম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৫২ সালে জামাতে উলা (ফাজেল) ১ম শ্রেণীতে ৩য় স্থান ও ১৯৫৪ সালে এম. এ (কামিল) ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৫-৫৬সালে তিনি নাসিরাবাদ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (ময়মনসিংহ) থেকে আই. আই. এ ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অর্জন করে বাংলায় ভর্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে বাংলায় (অনার্স) ২য় শ্রেণীতে ৫ম ও ১৯৬০ সালে এম. এ. বাংলা - ২য় শ্রেণীতে ২য় স্থান অর্জন করেন।
সামরিক শিক্ষা (ইউ ও টি সি) ২০ দিনের মিলিটারী ট্রেনিং, এ্যানুয়েল ক্যাম্প, ময়নামতি, কুমিল্লা (১৯৫৩) হাই মাদ্রাসা শিক্ষা অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা (১৯৫৫)দেন।
 
==কর্ম জীবন==
গোলাম সামদানী কোরায়শী’র কর্ম জীবন এক বহুমুখী বিচিত্র অভিজ্ঞতার সমাহার। আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে রাখাল তিনি ৩ বছর ধরে রাখাল(১৯৪২-৪৫) ছিলেন। তারপর ধানীখোলা বাজার, ঈদগাহ্‌ মাঠ মসজিদের ইমাম ছিলেন। তিনি ১৯৫৫ সালে ধানীখোলা হাই মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এরপর তিনি ড. মুঃ শহীদুল্লার সম্পাদনা সহকারী, পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রকল্প ও পান্ডুলিপি ও সংকলন বিভাগ, বাংলা একাডেমীতে (১৯৬১-৬৮) কাজ করেন। বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নাসিরাবাদ কলেজ, ময়মনসিংহ (১৯৬৮-৯১)যুক্ত ছিলেন।
 
==সাহিত্য কর্ম==
অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী’র সাহিত্য কর্ম বিশাল। তাঁর এই সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর বিচিত্র বৈচিত্রের সাহিত্য দর্শন যে কোনো সাহিত্য প্রেমিককে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। তাঁর মৌলিক রচনার পাশাপাশি অনুবাদ ও সম্পাদনার পরিমাণ বিশাল।
প্রবন্ধঃ আরবি সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (বাংলাএকাডেমী), সাহিত্য ও ঐতিহ্য (মুক্তধারা), ইসলাম ও আমেরিকা (জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী), আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইসলাম, আসামীর কাঠগড়ায়্‌; পিতৃভাষা, ঐতিহ্য অন্বেষা।
২২ ⟶ ২৮ নং লাইন:
সম্পাদনাঃ পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রকল্প (১৯৬১-৬৮), পদ্মাবতী, আওয়াল, বাংলা একাডেমী (১৯৬৫), তোহফা, আওয়াল, বাংলা একাডেমী (১৯৭৫) ও সাপ্তাহিক ময়মনসিংহ বার্তা সম্পাদনা করেন।
অন্যান্যঃ নেংটির সংসার সদা সত্য কথা বলিব, মীরজাফর, বিড়ালের ডাক, গরুর শিং এগুলো তাঁর রস রচনা সংকলন। ‘সবুজ ঘাসের দেশে’(টি.ভি. কাহিনী চিত্র), লেখার খাতা(বিবিধ বিষয়ের সংকলন) ফার্সি - বাংলা অভিধান(অসম্পূর্ণ)।
 
==প্রাপ্ত পুরস্কার==
কুমারদী মাদ্রাসা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৫০)
 
ঢাকায় আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায়
পূর্ব পাকিস্তানের মাদ্রাসা ছাত্রদের মাঝে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক
 
এম.এ. কামিল পরীক্ষায় স্বর্ণপদক (১৯৫৪)
 
আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৭)
 
অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯০)
 
==সাংগঠনিক কর্মকান্ড==
অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী অসংখ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। তার মধ্যে তিনি সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ময়মনসিংহ সাহিত্য পরিষদ, আকুয়া জুনিয়র হাই স্কুল কমিটি, আকুয়া প্রাইমারি স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ময়মনসিংহ শাখা (১৯৮৪-৯১) উজিরাবাদ সমবায় সমিতি, আকুয়া পৌর কবরখানা, ময়মনসিংহ ও সহ-সভাপতি হিসেবে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী (ময়মনসিংহ) এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাদ্রাসায়ে আলীয়া, বাংলা সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৮), বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (১৯৮৪-৯১) দায়িত্বে ছিলেন।
এছাড়া তিনি বিভিন্ন সংগঠনের আহ্বায়ক, উপদেষ্টা ও সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিনেট(১৯৮২-৮৫, ১৯৮৭-৮৮)সদস্য, বাংলা একাডেমীর(নং ৪৪৫) আজীবন সদস্য ছিলেন।
তিনি ১৯৯১ সালের ১১ অক্টোবর মারা যান।