নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
চিত্র দেয়া হয়েছে
Saifulhasansifat (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৩৭ নং লাইন:
}}
 
নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা নওয়াব।[[নওয়াব]]। তিনি অনেকটা নিজের অদম্য ইচ্ছার কারনে শিক্ষিত হন। [[শিক্ষা]], সমাজকল্যাণ ও সেবাব্রতে তিনি যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তা ইতিহাসে বিরল ।
 
==জন্ম==
 
নওয়াব ফয়জুন্নেসার জন্ম [[কুমিল্লা]] জেলার হোমনাবাদ পরগনার (বর্তমানে লাকসামের) অন্তর্গত পশ্চিমগাঁয়ে, । তিনি ১৮৩৪ সালে।সালে জন্মগ্রহন করেন । তাঁর বাবার নাম [[আহমেদ আলী চৌধুরী।চৌধুরী]] তিনি, তাঁরবাবা বাবারজমিদার আর মা-[[আরাফান্নেসা চৌধুরাণী]] প্রথম কন্যাসন্তান।
 
==ব্যক্তিগত ও কর্মজীবন==
 
===প্রথম জীবন===
===সাহিত্যচর্চা===
 
তিনি তাঁর বাবার প্রথম কন্যাসন্তান। সে সময় [[জমিদার]] বংশের [[সন্তান]] হিসেবে বেশ আরাম-আয়েশের মধ্য দিয়ে তিনি বেড়ে ওঠেন। [[মোগল]] রাজত্বের উত্তরসূরী এই মহীয়সী নারীর দুই ভাই( এয়াকুব আলী চৌধুরী এবং ইউসুফ আলী চৌধুরী) আর দু’বোন (লতিফুন্নেসা চৌধুরাণী এবং আমিরুন্নেসা চৌধুরাণী) ছিল ।
==স্বীকৃতি==
ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় তাঁর প্রচুর আগ্রহ দেখে তার বাবা তার জন্য একজন [[গৃহশিক্ষক]] নিযুক্ত করেন। তিনি কঠোর নিয়মানুবর্তিতা পালন করে তাঁর জ্ঞানস্পৃহাকে আরো উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তোলেন। গৃহশিক্ষকের সাহায্যে ফয়জুন্নেসা খুব দ্রুতই কয়েকটি ভাষার উপর গভীর জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন । [[বাংলা]], [[আরবি]], [[ফার্সি]] ও [[সংস্কৃত]] এ চারটি ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ সহ ফয়জুন্নেসার এ প্রতিভা স্ফুরণে তাঁর শিক্ষক তাজউদ্দিনের অবদান অতুলনীয়।
 
===বিয়ে===
 
সে সময়ের আরেক স্বনাম [[জমিদার]] [[সৈয়দ মোহাম্মদ গাজী]]র সাথে ১৮৬০ সালে তার বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন মোহাম্মদ গাজীর দ্বিতীয় স্ত্রী। তার দাম্পত্য জীবন খুব একটা সুখের হয়নি। । এক পর্যায়ে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে । স্বামী বিচ্ছেদের পর তিনি শোকসন্তপ্ত মন নিয়েই [[সমাজ সংস্কার]] ও [[গঠনমূলক]] কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
 
কথিত আছে নওয়াব ফয়জুন্নেসা ১৮৫১ সালে বিয়ের সতের বছর পর জানতে পারেন তার স্বামীর আরেকটি স্ত্রী আছে । তাই [[সতীন]] থেকে পৃথক থাকার জন্য তিনি তার বিয়ের কাবিনের এক লক্ষ এক টাকা দিয়ে [[পশ্চিমগাও]] এ সাড়ে তিন [[একর]] জমিতে একটা বাড়ি করেন । এটি নির্মান করতে তিন বছরের মত সময় লেগেছিল ।
 
===জমিদারি লাভ===
 
তিনি জমিদারি পরিচালনার প্রশিক্ষন নিয়েছিলেন । তাছাড়া বুদ্ধির দীপ্ততা, বিচক্ষণতা আর কর্মদক্ষতায় তিনি অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন ।
তাই ১৮৭৩ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি পশ্চিমগাঁও-এর জমিদারি লাভ করেন এবং ১৮৮৫ সালে মায়ের মৃত্যুর পর তিনি মাতুল সম্পত্তিরও [[উত্তরাধিকারী]] হন।
 
===জমিদারি পরিচালনা===
 
[[ফয়জুন্নেসা]] তার চিন্তা কাজ কর্মে ছিলেন সে সময়ের চেয়ে অনেক বেশি [[আধুনিক]]। সেকালের [[সমাজ]] ব্যবস্থার সবরকম বাঁধা পেরিয়ে তিনি সম্পূর্ণ কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গঠনে মনযোগ দিয়েছিলেন । তাই একজন নারী হয়েও সে সময়ে জমিদারির কঠোর দায়িত্ব তিনি সফলভাবে পালন করতে পেরেছেন । তিনি নির্ভীকভাবে শাসনকাজ পরিচালনা করেন।
 
তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে ওয়ারিশদের প্রাপ্য অংশ বুঝিয়ে দেন আর নিজ জমিদারিটি পরিণত করেন [['ওয়াকফ']] সম্পত্তি হিসেবে।
 
==জমিদার ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণীর অবদান==
 
===সমাজ সংস্কার===
 
নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছিলেন [[দক্ষিণ এশিয়া]]র প্রথম মহিলা নওয়াব। তিনি সমাজ সংস্কারের অংশ হিসেবে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি জোর প্রচেষ্টা করেন । ১৮৭৩ সালে ('বেগম রোকেয়া'র জন্মের সাত বছর পূর্বেই) নারী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে তিনি মেয়েদের জন্য [[কুমিল্লা]]য় একটি [[বালিকা বিদ্যালয়]] প্রতিষ্ঠা করেন। উপমহাদেশের বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের প্রাচীন স্কুলগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
 
===শিক্ষা প্রচার===
 
দেশে বিদেশে শিক্ষার প্রচারে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি নওয়াব বাড়ীর কাছে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে এটি [['গাজীমুড়া আলিয়া মাদ্রাসা']] নামে পরিচিত । তাছাড়া তিনি আর তার কন্যা বদরুন্নেসা পশ্চিমগাঁওয়ে [["নওয়াব ফয়জুন্নেসা ও বদরুন্নেসা উচ্চবিদ্যালয়']] প্রতিষ্ঠা করেন।
মেয়েদেরকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য তিনি সব সময় উৎসাহিত করতেন। তিনি মেয়েদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করেছিলেন। তার জমিদারির আয় থেকে মেয়েদের জন্য নির্মিত এ হোস্টেলের সব খরচ বহন করা হতো। মেয়েদের জন্য মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থাও তিনি করেছিলেন ।
তিনি পবিত্র মক্কা শরিফে 'মাদ্রাসা-ই-সওলাতিয়া ও ফোরকানিয়া সহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে প্রচুর পরিমানে সহায়তা করেন।
 
===বিবিধ===
 
শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মেয়েদের [[স্বাস্থ্য]] রক্ষা ও [[সুচিকিৎসা]]রও ব্যবস্থা করেন । ১৮৯৩ সালে কুমিল্লা শহরে প্রতিষ্ঠা করেন '[[ফয়জুন্নেসা জানানা হাসপাতাল']]। ১৮৯৩ সালে নওয়াব বাড়ির কাছেই তিনি মেয়েদের জন্য একটি স্বতন্ত্র হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন ।
তিনি ১৪টি [[প্রাথমিক বিদ্যালয়]], অনেকগুলো [[দাতব্য প্রতিষ্ঠান]], [[হাসপাতাল]], [[এতিমখানা]]এবং সড়ক নিমার্ণ করে তার মানবতাবাদী ও সমাজ সংস্কারের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি নওয়াব বাড়ীর সদর দরজায় একটি দশ [[গম্বুজ]] বিশিষ্ট [[মসজিদ]] প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮৯৪ সালে পবিত্র হজ্ব পালন করার সময় তিনি মক্কায় হাজীদের জন্য একটি 'মুসাফিরখানাও প্রতিষ্ঠা করেন।
আমাদের এদেশে তখন [[বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন]] বিদ্যমান ছিল । নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারী জনহিতকর কাজেও প্রচুর অর্থ দান করতেন ।
 
==সাহিত্য চর্চা==
 
রবীন্দ্রযুগে যে কয়জন বাংলা সাহিত্য সাধনা করে যশ ও খ্যাতি অর্জন করেন, নবাব ফয়জুন্নেসা তাদের মধ্যে অন্যতম।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম সাহিত্যিক হিসেবে নবাব ফয়জুন্নেসা এর নাম চিরস্মরণীয়।
 
তার সাহিত্য সাধনা খুব অল্প সময়ে তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের সমসাময়িক লেখক। শুধু তাই নয় প্রথম মুসলিম গদ্য-পদ্যে লেখিকা ছিলেন। ১৮৭৬ খ্রীস্টাব্দে ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা গিরিশচন্দ্র মুদ্রণ যন্ত্র থেকে শ্রীমতি নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী রচিত সাহিত্য গ্রন্থ ‘রূপজালাল' প্রকাশিত হয়।
 
বৃটিশ অপশাসনের ফলে মুসলিম সমাজে কুসংস্কারের বেড়জালে অবরোধবাসিনী হয়েও ফয়জুন্নেসা সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে একটি গৌরবময় স্থান অধিকার করে আছেন। [[‘রূপজালাল']] ব্যতীত ফয়জুন্নেসা কর্তৃক দু'খানি গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়-[[‘সঙ্গীত লহরী']] ও [[‘সঙ্গীত সার']] প্রকাশিত হলেও তা এখন দুষ্প্রাপ্য। সামগ্রীকভাবে বিবেচনা করলে তার স্থান বাংলা কাব্য বিশেষত মধুসূধন, বিহারীলাল ও সুরেন্দ্রনাথের পাশাপাশি। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না সাহিত্য সাধনায় ফয়জুন্নেসার পথ ধরে বেগম রোকেয়ার আবির্ভাব হয়েছে । বাংলার নারীদের সাহিত্যে অবদানে নওয়াব ফয়জুন্নেসা সর্বাগ্রে।
 
==স্বীকৃতি==
 
ভারতের নিভৃত পল্লীর এ বিদূষী রমণী বেঁচে থাকতে তার কাজের স্বীকৃতি সেভাবে পাননি । মহারাণী ভিক্টরিয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ফয়জুন্নেসাকে বেগম এবং এর পর নওয়াব উপাধি দেন । ১৮৮৯ সালে তার নির্দেশক্রমে ফয়জুন্নেসাকে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে 'নওয়াব' উপাধি দেয়া হয়।
 
২০০৪ সালে ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীকে মরণোত্তর [[একুশে পদক]] প্রদান করা হয়।
 
==মৃত্যু==
 
১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এ মহীয়সীর জীবনাবসান ঘটে। তাকে তার প্রতিষ্ঠিত দশগুম্বুজ মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়
 
==আরও দেখুন==
 
* [[লাকসাম]]
 
==তথ্যসূত্র==
 
১। http://www.dailysangram.com/print.php?news_id=42675
২। http://www.kalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=Visa&pub_no=396&cat_id=5&menu_id=129&news_type_id=1&index=25&archiev=yes&arch_date=10-01-2011
 
{{অসম্পূর্ণ}}
==বহিঃসংযোগ==
 
১। http://books.google.com.bd/books/about/R%C5%ABpaj%C4%81l%C4%81la.html?id=tesCwx1j95IC&redir_esc=y
 
[[Category:বাঙালি লেখক]]
[[Category: ১৮৩৪ -এ জন্ম]]
[[Category:১৯০৩-এ মৃত্যু]]
[[Category:বাঙালি জনহিতৈষী নারী]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি সমাজ সংস্কারক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি শিক্ষাবিদ]]