উইকিপিডিয়া আলোচনা:উইকিপ্রকল্প সরাসরি পরামর্শ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Bellayet (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
→‎ইসলামী দর্শন: নতুন অনুচ্ছেদ
১ নং লাইন:
''এ পাতাটি [[উইকিপিডিয়া:উইকিপ্রকল্প সরাসরি পরামর্শ|সরাসরি পরামর্শ]] কার্যক্রম সম্পর্কিত যে কোনো আলোচনার জন্য ব্যবহৃত হবে। নতুন আলোচনা সবার নিচ থেকে শুরু করুন।''
 
== ইসলামী দর্শন ==
 
‘দর্শন’ শব্দটি বাংলা শব্দ। দর্শনের সমর্থক শব্দ হল philosophy । philosophy শব্দটি একটি (গ্রীক) যৌগ শব্দ; philien ও sophos শব্দদ্বয়ের সমন্নয়ে গঠিত, philien -এর অর্থ হলো, ভালবাসা , অনুরাগ বা তৃষ্ণা। আর sophos শব্দের অর্থ হলো, জ্ঞান, বুদ্ধিবৃত্তি ( ব্যাপক ও সার্বিক অর্থে )। অর্থাৎ philosophy শব্দের প্রাথমিক ও আভিধানিক অর্থ হলো জ্ঞানপ্রেম, প্রজ্ঞা ও বিদ্যার প্রতি ভালবাসা । আর পরিভাষাগত অর্থে philosophy হলো, যে কোন বিষয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক গবেষণা বা অনুসন্ধান। philosophy শব্দটি কবে, কোথায় ও কিভাবে উৎপত্তি হয়েছিল তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। যেমন কেউ বলে থাকেন, সর্ব প্রথম ফিসাগোরাস (Pythagoras - ৫১০-৫৭৮ খৃঃপূঃ) এ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আবার কারো কারো অভিমত হলো, এশব্দটি সর্বপ্রথম সক্রেটিস (Socrates ৩৯৯-৪৬৯ খৃঃপূঃ) ব্যবহার করেছিলেন। তাঁদের কথা মতানুযায়ী তৎকালীন গ্রীক সমাজে একশ্রেণীর তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের আর্বিভাব ঘটেছিল ; যারা নিজদেরকে sophist পরিচয় দিতেন। sophist শব্দের অর্থ হলো; বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবি। শব্দটির মধ্যে জ্ঞানের বড়াই ও আমিত্বের অহংকার ফুটে ওঠে। এই শ্রেণীর বুদ্ধিজীবির বুদ্ধির ক্রমশঃ অবনতি ঘটে একপর্যায় এসে; তাদের বুদ্ধির ভিত্তি অপযুক্তির ওপর দন্ডায়মান হয় । এ সময়ে 'বুদ্ধি' শব্দের সমর্থক শব্দ হয়ে দাঁড়ায় অপযুক্তি। তাদের সকল যুক্তি ও চিন্তা -ভাবনার মূল সূত্র ছিল মানুষের ব্যক্তিগত উপলব্ধি এবং এটাই ছিলো তাদের নিকট বাস্তবতার একমাত্র মানদন্ড, । তাই তারা তাদের উপলব্ধির ভিত্তিতে বুদ্ধি -বিচার করে সত্য মিথ্যা নির্ণয় করতেন। এভাবে কখনো তারা ইচ্ছানুযায়ী সত্যকে মিথ্যায় পরিণত করতেন আবার মিথ্যাকে তথাকথিত যুক্তির আলোকে সত্য রূপে প্রমাণ করতেন ।
খৃষ্টপূর্ব ৫শতকে গ্রীসে এজাতীয় চিন্তার উৎপত্তি ঘটে ছিল মুলত: দু‘টি কারণে;
(১) বিষ্ময়কর ও পরস্পর বিরোধী বিভিন্ন দার্শনিক চিন্তার আর্বিভাব।
(২) বক্তৃতা ওবির্তকের ব্যাপক প্রচলন, বিশেষ করে আদালতে বাদী ও আসামীদের অভিযোগ বা দাবী প্রমাণের ক্ষেত্রে বিচারক ও আইনজীবীরা তাঁদের বক্তব্যে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন।
অর্থাৎ একদিকে নিত্য নতুন দার্শনিক মতের উদ্ভব এবং প্রতিপক্ষের চিন্তাকে খন্ডনের জন্য তথাকথিত যুক্তি ও অপযুক্তির আশ্রয়ে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতেন । ফলে সামাজিক চিন্তা-ভাবনার অঙ্গনে এক অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে ।
আবার অন্যদিকে তৎকালীন গ্রীক সমাজে আর্থিক লেনদেনঘটিত বিবাদ ও সমস্যা মীমাংসার জন্য বিষয়টি আদালতে নেওয়া হলে সেখানে তর্কবাগীশ আইনজীবীরা বিবাদী বা বাদীর পক্ষে আদালতে মর্মস্পর্শী বক্তব্য পেশ করতেন । তাদের এসব বক্তব্য শোনার জন্য বিপুল সংখ্যক পরিমাণে উৎসুক লোক সেখানে এসে ভীড় জমাতো।
আস্তে আস্তে এশ্রেনীর আইনজীবীর ব্যবসা বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। তারা এ সুযোগ বা ক্ষেত্রকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে বক্তব্যের বিভিন্ন কৌশল ও বাক্পটুতার পদ্ধতি শিক্ষার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে শিক্ষাকেন্দ্র খুলে বসেন।
এশ্রেনীর ব্যবসায়ী আইনজীবী আরো খ্যাতি অর্জনের উদ্দেশ্যে এবং বাক্পটুতায় নিজের পারদর্শিতা প্রমাণে সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন। এই প্রচেষ্টার সুত্র ধরে তারা যে কোন দাবীকেই ( তা সত্য হোক বা মিথ্যা ) সত্য প্রমাণে যুক্তি প্রদান করতেন, এমন কি কখনো কখনো একজন আইনজীবীই দু’পক্ষের সত্যতা প্রমাণের জন্যও যুক্তি প্রদান করতেন। এভাবে ক্রমশ তাদের চিন্তা-চেতনা এমন এক অবস্থা ধারণ করলো যে, তারা বিশ্বাস করতে শুরু করলেন বস্তুত সত্য কিংবা মিথ্যা বলে কিছু নেই বরং সত্য হলো যেটাকে মানুষ সত্য মনে করে, আর মিথ্যা হলো মানুষ যেটাকে মিথ্যা হিসাবে ধারণা করে। এচিন্তা ভাবনা ক্রমশ বিশ্বের অনত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং অবশেষে এই সুত্রের উদ্ভব ঘটে যে, প্রকৃত পক্ষে সার্বিকভাবে বাস্তবতা হলো: মানুষের অনুভব ও উপলব্ধি নির্ভরশীল একটি বিষয়।
এ জাতিয় পন্ডিতরা যেহেতু তাদের এ বিদ্যায় যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন তাই নিজেদেরকে sophist নামে পরিচয় দিতেন যার অর্থ জ্ঞানী ও পন্ডিত। পরবর্তী যুগে এসে উল্লেখিত মতাদর্শই sophistনামে পরিচিতি লাভ করে। sophist মতাদর্শের অন্যতম ব্যক্তিবর্গের মধ্যে protagoras ( ৪১০ - ৪৮৫ খৃঃ পূঃ ) ও gorgias ( ৩৭৫ -৪৮৩ খৃঃপূঃ ) সর্বাধিক প্রশিদ্ধ ।
এমতাবস্থায় সক্রেটিস নিজের বিনয়ী ভাব প্রকাশ ও তাদের থেকে নিজকে পৃথক এবং আপন চিন্তাধারাকে ভিন্নরূপে উপস্থাপনের জন্য philosophyশব্দটির ব্যবহার করেন। অর্থাৎ তিনি নিজেকে philosophy খেতাবে পরিচয় দেন। [দেখুন- শাহরিস্থানী রচিত মিলাল ওয়াল নিহাল গ্রন্থ, ২য়খন্ড, ২৩১পৃ.।] পরবর্তী কালে ঐ খেতাবটিই বিশেষ প্রকারের একটি শাস্ত্রের নামের পরিভাষায় পরিণত হয়।
যাহোক মুসললিম সমাজে philosophy শব্দটির দুটি পরিভাষা পরিচলিত রয়েছে। এখানে পরিভাষা বলতে সচারাচর সাধারণ মানুষর philosophyশব্দের সর্মাথক হিসাবে ক্ষেত্রে যেসব শব্দ ব্যবহার করে থাকে, সেই সকল শব্দসমূহকে বোঝানো হয়েছে। অথবা ইসলামী মণীষীরা philosophyশাস্ত্রের ক্ষেত্রে যে সকল নাম ব্যবহার করেছেন সেগুলো কি?
ইসলামী সমাজে কখনো কখনো ‘ফালসাফা’ philosophy-এর সর্মাথক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘হিকমাহ্’ [حکمة] শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন ঃ মাশাই দর্শনের (নিছক যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিনির্ভও দর্শন বা প্রজ্ঞা) প্রতিষ্ঠাতা ইবনে সীনার বিখ্যাত দার্শনিক রচনা ‘আল্ হিকমাতুল মাশরেকাইন’। এশরাখী দর্শনের (যৌক্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক হওয়ার পাশপাশি আধ্যাত্মিক সাধনা বলে অর্জিত দিব্যজ্ঞানের সমর্থক অর্থা তা যৌক্তিক ও আধ্যাত্মিক সাধনার দর্শন) প্রতিষ্ঠাতা শেইখ সোহরাওয়ার্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘আল্ হিকমাতুল এশরাক’ [حکمة الإشراق] অথবা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম দার্শনিক মোল্যা সাদরা যিনি নিজেই তার দর্শনপদ্ধতিকে ‘হিকমাতুল মুতাআলীয়া’ [حکمة المتعاليه] (উচ্চতর বুদ্ধিবৃত্তিক প্রজ্ঞা বা দর্শন) নামকরণ করেছেন। শুধু তাই নয় এযুগে রচিত গ্রন্থগুলোর ক্ষেত্রেও এই নামের প্রচলনই সর্বাধিক। যেমন , বিখ্যাত মুফাস্সির ও দার্শনিক আল্লামা তাবাতাবাঈ রচিত দর্শন গ্রন্থ, ‘বিদায়াতুল হিকমাহ্’ ও ‘নিহায়াতুল হিকমাহ্’। মোটকথা, ইসলামী সভ্যতায় পরিভাষার ক্ষেত্রে সর্বাধিক পরিচালিত শব্দ হল ‘হিকমাহ্’। এ শব্দটি ব্যবহারের কারণ পরবর্তীতে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করা হবে।
দর্শনের সংজ্ঞা
দর্শনের সংজ্ঞা দেয়া কঠিন ব্যাপার। কেননা দর্শনের সংজ্ঞার ক্ষেত্রে অসংখ্য মতামত রয়েছে, ফলে অভিন্ন সংজ্ঞা উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে `দর্শন' শব্দটি মুসলিম সমাজে সাধারণতঃ দু‘ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে ঃ
(ক) প্রশিদ্ধ অর্থে
(খ) অপ্রশিদ্ধ অর্থে
এপর্যায়ে দর্শনের সংজ্ঞা দেয়া আমাদের জন্য সহজ হবে। প্রশিদ্ধ অর্থে দর্শনের বিশেষ কোন সংজ্ঞা নেই। কেননা সকল প্রকারের বুৎপত্তিক জ্ঞানের সমষ্টিকেই দর্শন বলা হয়। এক্ষেত্রে সকল প্রকার যুক্তিভিত্তিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানই দর্শনের আওতাভুক্ত বিষয়।
আর অপ্রশিদ্ধ অর্থে দর্শনের সংজ্ঞা হল ঃ যে শাস্ত্র অস্তিত্বের অস্তিত্বগত অবস্থা নিয়ে ( এই দৃষ্টিতে যে সে অস্তিত্ববান ) আলোচনা করে তাকেই দর্শন বলা হয়।
দর্শনশাস্ত্র যথাক্রমে তাত্ত্বিক (সূত্রগত) দশর্ন ও ব্যবহারিক দশর্ন-দু’ভাগে বিভক্ত ।
 
তাত্ত্বিক (সূত্রগত) দশর্ন ঃ
সে সকল বিষয়ের পরিচয় লাভ করা সম্ভব বা যে সকল বিষয়ের পরিচয় লাভ করা উচিত এরূপ তাত্ত্বিক ও চিন্তাগত জ্ঞান হলো, তাত্ত্বিক দর্শনের আলোচ্য বিষয়। আর এ পরিচিতি বা জ্ঞানের বিষয়বস্তু হলো বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের বাস্তবতা। তাত্ত্বিক দর্শনে বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে । তবে এই বাস্তবতার আবার দু‘টি দিক রয়েছে ; একটি হল বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের বস্তুগত বাস্তবতা আর তা হলো প্রকৃতি, আরেকটি হলো অবস্তুগত বাস্তবতা।
(ক) প্রকৃতি ঃ প্রকৃতি দর্শনে বস্তুগত (পদাথর্) বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। আর বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের বাস্তবতা সমূহের মূল্যগত মানের আলোকে বস্তুজগতের মূল্য সবর্নিম্নে। কেননা সৃষ্টি জগতের অস্তিত্বগত পরম্পরায় বস্তুর অবস্থান সবর্নিম্নে, এজন্য প্রাকৃতিক দর্শনকে বলা হয়, নিম্ন পযর্ায়ের দর্শন।
(খ) গনিত : তাত্ত্বিক দর্শনের আরো একটি অংশ হলো গনিত। গনিতের আলোচ্য আলোচ্য বিষয় হলো হিসাব, জ্যামিতি ইত্যাদি। আর গনিতের মুল বিষয়বস্তু হলো রেখা, তল, পরিমাণ ও সংখ্যা। অন্যদিকে গাণিতিক বিষয়বস্তু সমূহের গণিত হিসাবে বস্তুগত কোন রূপ না থাকায় এবং গণিত সম্পূর্ণ অবস্তুগত অস্তিত্ব না হওয়ায়, বাস্তবতা সমূহের মূল্যগত মানের ক্ষেত্রে, গাণিতিক জগত বা গণিতের মূল্য বস্তুগত নিম্ন মানের উর্ধ্বে এবং ইলাহিয়াতের (স্রষ্টাতত্ত্ব ও অধিবিদ্যার ) নীচে অবস্থান করছে।
(গ) স্রষ্টাতত্ত্ব : তাত্ত্বিক দর্শনের আরো একটি অংশ হলো ইলাহিয়াত (স্রষ্টাতত্ত্ব) যা সার্বিক অস্তিত্বের বিধি-বিধান সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। অর্থাৎ স্রষ্টাতত্ত্বে অস্তিত্বের র্সাবিক অস্তিত্বগত অবস্থা আলোচিত হয়ে থাকে। এই অস্তিত্বসমূহের মধ্যে স্রষ্টার অস্তিত্বও একটি বিষয়। বরং প্রকৃত অর্থে সমস্ত অস্তিত্ব স্রষ্টার অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল। আর এজন্যই তাত্ত্বিকদর্শনের অস্তিত্ব সংক্রান্ত অংশটিকে বলা হয়ে থাকে ইলাহিয়াত বা স্রষ্টাতত্ত্ব। স্রষ্টাতত্ত্বকে আবার দু'ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে:
1. সাধারণ স্রষ্টাতত্ত্ব
2. বিশেষ স্রষ্টাতত্ত্ব
 
অন্য দিকে বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের বাস্তবতাসমূহের মূল্যগত অবস্থানের ক্ষেত্রে স্রষ্টাতত্ত্বের অস্তিত্বগত আলোচনার মান সবকিছুর ওপরে। তাই স্রষ্টাতত্ত্বকে বলা হয় সর্বোচ্চ দর্শন। শুধু তা-ই নয় বরং সকল বাস্তবতার অস্তিত্বগত ভিত্তি স্রষ্টাতত্ত্ব; এজন্যে স্রষ্টাতত্ত্বের মূল্য সবার শীর্ষে।
 
ব্যবহারিক হিকমাত
ব্যবহারিক দর্শনে ‘কোন বিষয়ের পরিচিতি লাভ করা উচিত’ তা আলোচ্য বিষয় নয় , বরং এ অধ্যায়ে আলোচ্য বিষয় হলো ‘কি করা উচিত’ আর ‘কি করা উচিত নয়’। ব্যবহারিক দর্শনকেও তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কেননা, ব্যবহারিক কার্যক্রম কখনো কখনো ব্যক্তি জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট, আবার কখনও সামষ্টিক জীবনে সাথে আবার কখনো রাষ্ট্রীয় জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন অঙ্গনে উপস্থিত এবং তার কার্যক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে ব্যবহারিক দর্শনকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে :
(ক) নীতিশাস্ত্র : প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তি জীবনে কিভাবে গড়ে উঠবে সে বিষয় নিয়ে নীতিশাস্ত্র আলোচনা করে থাকে। অর্থাৎ, ব্যক্তি জীবনে কি কি বৈশিষ্ট্য তার জন্য উত্তম বা লাভ করা উচিত এবং কোন্ কোন্ বৈশিষ্ট্য থেকে সে নিজকে দূরে রাখলে সৌভাগ্যবান হবে এসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নীতি দর্শন বিস্তারিত আলোচনা করে থাকে ।
(খ) পরিবার পরিচালনা সংক্রান্ত বিদ্যা : পরিবার হলো সামাজিক জীবনের একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের কিধরণের নীতি বা পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত তা-ই পরিবার দর্শনে আলোচিত হয়ে থাকে।
(গ) রাষ্ট্র বিজ্ঞান : এখানে দ্বিপাক্ষিক দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে, একদিকে রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শ নিয়ে আলোচনা করা হয়। অর্থাৎ, সুষ্ঠভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে রাষ্ট্রপ্রধানদের কি করা উচিত বা কোন্ পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত । আর অপর দিকে রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে জনগণের দায়িত্ব কি? আদর্শ রাষ্ট্র বাস্তবায়নে জনগণের ভূমিকা কি?
 
সংক্ষেপে তাত্ত্বিক (সূত্রগত) দশর্ন তিন ভাগে বিভক্ত, যথাক্রমে :
(ক) স্রষ্টাতত্ব( সর্বোচ্চ পর্যায়ের দর্শন ) :
(খ) গনিত ( মধ্যম পর্যায়ের দর্শন ) :
(গ) প্রকৃতি ( নিম্ন পর্যায়ের দর্শন ) :
 
আর ব্যবহারিক দর্শনকেও তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাক্রমে :
(ক) নীতিশাস্ত্র।
(খ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান ।
(গ) পরিবার পরিচালনা সংক্রান্ত বিজ্ঞান ।
তাত্ত্বিক দর্শনে স্রষ্টা , গনিত ও প্রকৃতি তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। উল্লিখিত বিষয়সমূহের বাস্তবতা ও অস্তিত্বগত অবস্থা নিরুপণই হলো তাত্ত্বিক দর্শনের প্রধান কাজ।
আর ব্যবহারিক দর্শনে, তাত্ত্বিক দর্শনে অর্জিত নীতির আলোকে মানুষকে কিভাবে গড়ে ওঠা উচিত, সেবিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। অতএব, কার্যক্ষেত্রে আদর্শ পথ ও পদ্ধতির নির্দেশনা দিয়ে থাকে ব্যবহারিক দর্শন ।
এখন আমরা যদি এ শ্রেণীবিন্যাসগুলোর প্রতি লক্ষ্য করি তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারবো যে, প্রাচীনকালে সকল প্রকারের বিদ্যা দর্শনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু যুগের বিবর্তনের সাথে সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানও বিস্তৃতি লাভ করেছে । যার ফলে এখন আর একজনের দ্বারা সকল প্রকারের জ্ঞানে পন্ডিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই দর্শনের বিভিন্ন শাখাই আজ একেকটি স্বাধীন শাস্ত্রে রূপ নিয়ে আলাদাভাবে গড়ে উঠেছে। এজন্যে এখন দর্শন বলতে কেবল স্রষ্টাতত্বকেই বোঝানো হয়ে থাকে ।
বর্তমান যুগে পাশ্চাত্যের কোন কোন দার্শনিক বিজ্ঞানকে দর্শনের মোকাবেলায় দাঁড় করিয়েছেন। অথাৎ তাদের দৃষ্টিতে বিজ্ঞান হলো নিশ্চিত আর দর্শন হলো অনিশ্চিত বিদ্যা। তাই দর্শনের কাছে নিশ্চিত কোন কিছু দাবী করা চলে না (দেখুন-Bertrand Russell তাঁর The problems of philosophy গ্রন্থের the value of philosophy প্রবন্ধের বাংলা অনুবাদ, অনুবাদ করেছেন সুশীল কুমার চক্রবত্তীর্)। তারা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা পরীক্ষামূলক ও অভিজ্ঞতালব্ধ সকল বিদ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য বিদ্যা হিসাবে ধরেছেন। আর বর্তমান দর্শন বা স্রষ্টাতত্ব যেহেতু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতা বা বস্তুগত পরীক্ষার বর্হিভুত তাই তাকে জ্ঞানের গন্ডি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আমাদের দৃষ্টিতে কোন বিষয়ের পরিচিতি লাভ করাই হচ্ছে জ্ঞান। তাই সে পরিচিতি মাধ্যম বৃদ্ধিবৃত্তি বা ইন্দ্রিয়শক্তি যা-ই হোক না কেন। দর্শন তো অজ্ঞতা (জাহল্) নয়। বরং দশর্ন আমাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ের যুক্তিসংগত পরিচয় দিয়ে থাকে। কখনো কখনো এরূপর যুক্তিসংগত পরিচয় দেয়া অন্যসকল বিদ্যার পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু তা-ই নয় ,প্রাথমিকভাবে প্রতিটি শাস্ত্রই দর্শনের মুখাপেক্ষী।
দর্শনের মাধ্যমই বিশ্বজগত সম্পর্কে বিভ্রান্ত দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি খন্ডন করা হয়ে থাকে এবং প্রতিটি জ্ঞানের বিষয়বস্তু, সম্ভবনা বা অস্তিত্ব নিয়েও একমাত্র দর্শনই আলোচনা করে থাকে। যেমন ধরুন, প্রাথমিক অবস্থায় আমরা যদি নিষ্প্রাণ বস্তুসত্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে না পারি তাহলে পদাথর্বিদ্যার (physics) বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রই তৈরী হয় না । কেননা, ভাববাদে (Idealism) বিশ্বাসীরা বিশ্বে বস্তুগত বাস্তবতায় অবিশ্বাসী । অথাৎ তারা মনে করেন বিশ্ব বাস্তব অস্তিত্ব শুন্য: তা সবই খিয়ালী অথাৎ অলীক কল্পনা মাত্র । ফলে যতক্ষণ পর্যন্ত এই দাশর্নিক চিন্তাকে খন্ডন করা না যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত পদাথর্বিদ্যার বিষয়বস্তুরই বাস্তব অস্তিত্ব ঘটবে না । এজন্য প্রথমে দর্শনশাস্ত্রের মাধ্যমে ভাববাদকে খন্ডন করে , বাস্তববাদে (realism) এসে বস্তুসত্তার বাস্তবতাকে প্রমাণ করার পর পদাথর্বিদ্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। বিষয়বস্তুশুন্য বা সংশয়যুক্ত বিষয়বস্তু নিয়ে কোন শাস্ত্র জ্ঞান বা বিদ্যার সারিতে দাঁড়াতে পারে না ।
স্রষ্টাতত্ব বা ইলাহীয়াতের অবস্থান ও মানের দিক থেকে অন্য সকল দর্শনের শীর্ষে অবস্থান করছে, যে কারণে স্রষ্টাতত্বকে সর্বোচ্চ দর্শন বলা হয়। ল্যাটিন ভাষায় সর্বোচ্চ দর্শনকে বলা হয়, অধিবিদ্যা (metaphisics)।
সনাতনী আলেমদের দৃষ্টিতে সর্বোচ্চ দর্শন অন্য সকল প্রকারের দর্শনের তুলনায় অধিক যুক্তিযুক্ত ও নিশ্চিতমূলক। তাই এ শ্রেণীর আলেমদের মতানুযায়ী সর্বোচ্চ দর্শন হল, সমস্ত জ্ঞানের জনক। কেননা, সমস্ত শাস্ত্র বিভিন্ন ভাবে তার মুখাপেক্ষী,। এছাড়াও তারা আরও অনেক যুক্তির ভিত্তিতে সর্বোচ্চ দর্শনকে প্রকৃতদর্শন নামকরণ করেছেন। উল্লেখিত দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর ভিত্তি করে কখনও কখনও কেউ কেউ দর্শন শব্দটিকে কেবল এই বিশেষ প্রকারের দর্শনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন।
 
দর্শন চর্চার প্রয়োজন
দর্শন শাস্ত্র চর্চার প্রয়োজনীয়তাকে আমরা দু’ভাবে বর্ণনা করতে পারি।
প্রথমত ঃ প্রতিটি সত্যেন্বেষী মানুষ সে তার স্বভাবগত বা সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যানুযায়ী জন্মের পর থেকে তার চারপাশে উপস্থিত প্রতিটি বস্তু সমূহকে জানতে চায়। সে তার চলমান জীবনে প্রতিটি ঘটনা ও বস্তুর ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ বা নিরব থাকতে পারে না। তাই তাকে সর্বক্ষণ বিভিন্ন পরিচিতি ও নির্বাচানের মধ্যে থাকতে হয়। উদহারণ স্বরূপ ; একটি আমগাছের কথাই ভাবুন, এই গাছটিকে যখন আমরা ধারণা করব যে, একটি নি¯প্রাণ অনুভুতিহীন বৃক্ষ যা একমাত্র অন্যের তৃপ্তি নিবারণের জন্য তৈরী হয়েছে। তখন এ পরিচিতির উপর ভিত্তি করে আমরা তার ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করব।
কিন্তু আমরা যদি গাছটির পরিচয় এভাবে অর্জন করি যে, এটি মহান প্রজ্ঞাবান স্রষ্টার বিশেষ একটি সৃষ্টি, আর প্রতিটি সৃষ্টিই সারাক্ষণ প্রভুর তাসবিহ্ পাঠে মশগুল এবং আল্লাহর বিশেষ নিদর্শন স্বরূপ। মহান প্রভু এ গাছের মাধ্যমে তার সৃষ্টির রিজিক প্রদান করে থাকেন।
এজাতিয় ধারণা বা পরিচিতি লাভের কারণে আমাদের যে দায়িত্ব নির্ধারিত হয়, তা উপরের পরিচিতির সৃষ্ট দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
মানুষ সে জানতে চায়; সে কোত্থেকে এসেছে? বর্তমানে কোথায় আছে ? এবং পরিশেষে তার জীবন যাত্রার পরিণতি কি হবে? সে কে? এজাতিয় আরো হাজারও হাজার প্রশ্নের উত্তর পেতে সে বিশ্ব পরিচিতির প্রয়োজন অনুভব করে । এ সকল প্রশ্নের উত্তর বা বিশ্বের অস্তিত্ব পরিচিতির একমাত্র সার্বজনীন পদ্ধতি হল দর্শন শাস্ত্র।
দ্বিতীয়তঃ প্রতিটি বস্তুর মতই মানুষ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন সম্পর্কহীন ভিন্ন কোন সৃষ্টি নয়। এমন কি বিশ্বও মানুষ থেকে সম্পর্কহীন বিচ্ছিন্ন কোন অস্তিত্ব নয়। পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর সাথে মানুষের প্রকৃত ও বাস্তব একটা সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ এবিষয়টাও অনুভব করে যে, প্রতিটি বস্তুই তার জন্য সমান লাভ বা ক্ষতিকর নয়।
এই অনুভুতির উপর ভিত্তি করে, পৃথিবীতে বিদ্যমান অন্য সকল অস্তিত্বকে সঠিক পন্থায় ব্যবহার ও উপকৃত হওয়ার একমাত্র পথ হল বিশ্ব পরিচিতি। আর বিশ্ব পরিচিতি নিয়ে একমাত্র দর্শন শাস্ত্রই আলোচনা করে থাকে।
বিশ্ব-জগতের কিছু কিছু বিষয় আমাদের কাছে প্রথমিক ভাবে সুস্পষ্ট হলেও ; অন্য আরো অসংখ্যা অস্তিত্বের রহস্য উদ্ঘাটন কিন্তু অতটা সাধারণ বা সহজ নয়। যে কারণে একই বাস্তবতা সম্পর্কে বিভিন্ন জন ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন।
অতএব, মানুষের এমন একটি শিল্প বা শাস্ত্রের প্রয়োজন যাদ্বারা সৃষ্টি জগতকে সে জানতে পারবে এবং অস্তিত্বের অবস্থা নিরুপন করতে পারবে। এজাতিয় শিল্পের বা পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা তখনই আরো অধিক উপলব্ধি হবে যখন আমরা বিশ্বাস করব যে, বিশ্বের সকল অস্তিত্ব বা বাস্তবতা পঞ্চান্দ্রিয় কেন্দ্রিক নয়। কেননা যদি সমস্ত অস্তিত্বের রহস্য বা বাস্তবতা ইন্দ্রিয়কেন্দ্রিক হত বা অনুভুতিশীল যন্ত্রের মাধ্যমে সরাসরি তাদের পরিচিতি লাভ সম্ভব হত্, তাহলে দর্শন; যে শাস্ত্র দ্বারা গভীর অদৃশ জগতের পরিচিতি ও সমস্যা সমূহ করা হয়, তার প্রয়োজন পড়ত্ না ।
কিন্তু বিশ্বের বিরাট একাংশ ইন্দ্রিয় বর্হিভুত বিষয়বস্তু যেমন ঃ মানবাত্মা , ঐশীবার্তা, আদি, অনন্ত, ঐশীদূতগণ, ও বিশ্বের শুরু এবং সমপ্তি পরিচিতির জন্য এমন এক শিল্পের প্রয়োজন যা এ সকল অস্তিত্ব বা বিষয়ের রহস্য আবিস্কার করতে সক্ষম হবে। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, উল্লেখিত শিল্পটা হবে ঐ বিশ্ব পরিচিতির মাপকাঠি, আর তা হল দর্শনশাস্ত্র ।
 
দর্শন শাস্ত্রের মূল্য
দর্শনশাস্ত্রের মুল্য ও সম্মান অন্য সকল বিদ্যার উর্ধ্বে ও শীর্ষে । এখানে সম্মান কথাটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে যথাক্রমে ঃ
প্রথমতঃ অস্তিত্বগত ভিত্তিতে । দ্বিতীয়তঃ মূল্যগত ভিত্তিতে ।
অস্তিত্বগত মর্যাদার অর্থ হলঃ অস্তিত্ব জগতে যে অস্তিত্বের ক্রমপর্যায়ের ধারা বিদ্যমান; সেই ধারার শীর্ষে অবস্থান করছে দর্শন। আরো সহজ ভাষায়, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ অস্তিত্ব হল, স্রষ্টার অস্তিত্ব, আর যে শাস্ত্র স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করে অবস্থানও ঐ শ্রেষ্ঠ পর্যায়ের। অতএব, শাস্ত্র সমূহের অস্তিত্বগত অবস্থানের ক্ষেত্রে দর্শন শীর্ষে অবস্থান করছে।
আর মূল্যগত মর্যাদার অর্থ হল; দর্শনের নৈতিক দিকটা, যা কর্ম ও ব্যবহারিক নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। দর্শনশাস্ত্রের সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রমাণের লক্ষ্যে আমরা এখানে একটি দার্শনিক সূত্রের উল্লেখ করতে পারি। আর তা’হল ‘এত্তেহাদে এলম্ আলেম ও মালুম’ অর্থাৎ জ্ঞান, জ্ঞানী ও জ্ঞাতব্য বিষয়ের অস্তিত্বগত একতা। আরো সহজ ভাষায় বলছি, ধরুন ‘আগুন গরম’ এ জ্ঞানটি যখন কেউ অর্জন করল, সে (আগুন গরম) জ্ঞানী, এখানে জ্ঞাতব্য বিষয় হল, আগুনের সত্তাগত বৈশিষ্ট্য ‘তাপ’। এখানে উল্লেখিত তিন বিষয়ের একক সমন্নয় সৃষ্টি হচ্ছে। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, কিভাবে আগুনের সাথে জ্ঞানীর সমন্নয় বা একতা সৃষ্টি হবে? কেননা, আগুনের সাথে একতা মানে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার সমান! হ্যাঁ’ আপনি ঠিকই ভেবেছেন, তবে আপনাকে জানতে হবে যে, দর্শনে অস্তিত্ব দু‘প্রকারের (১) বাহ্যিক অস্তিত্ব (২) কাল্পনিক অস্তিত্ব । এখানে কল্পনা শব্দটি সাহিত্যক কল্পনা নয়; বরং দার্শনিক পরিভাষা।
যাহোক এখানে ঐ সমন্নয় বা একতা কাল্পনিক অস্তিত্বের বলয়ে সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই সে ঐ বস্তুগত প্রভাব শুন্য, তবে কল্পনা শক্তি ও উপলব্ধির তারতম্যের ওপর ভিত্তি করে প্রভাবের পরিমানও ভিন্ন হয়ে থাকে ।
এবার আমরা আমাদের মূল কথায় ফিরে আসি, যদি কেউ গরুরগাড়ী তৈরীর প্রযুক্তি রপ্ত করে থাকে তাহলে, তার মূল্য যে, বাইসাকেল তৈরীর প্রযুক্তির কৌশল আর্জন করেছে যে তার মূল্যের মান সমান কি? অথবা যে বাস নির্মাণের কৌশলী বিদ্যা অর্জন করেছে তার মূল্য; আর যে বিমান তৈরীর প্রযুক্তি বা কৌশলী বিদ্যা লাভ করেছে তার মুল্য কি সমান? নিশ্চয় উত্তর হরে সমান নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল এ বিচারে মানদন্ড কি?
মানুষ হিসাবে তাদের প্রত্যেকের মূল্য সমান। তাদের মূল্যগত পার্থক্য হল জ্ঞানগত কারণে। অর্থাৎ জ্ঞানের মূল্যে তারতম্যের কারণে তাদের মূল্যের পার্থক্য ঘটছে। ঠিক একই ভাবে দর্শন প্রভুতত্ব নিয়ে আলোচনা করে, আর প্রভু যেহেতু শ্রেষ্ঠ তাই দর্শনও শ্রেষ্ঠ বিদ্যা।
"উইকিপ্রকল্প সরাসরি পরামর্শ" প্রকল্প পাতায় ফিরুন।