গদ্য: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Bellayet (আলোচনা | অবদান)
সংযোজিত বিষয়শ্রেণী:সাহিত্য; হটক্যাটের মাধ্যমে
৪ নং লাইন:
==প্রথম বাঙালা উপন্যাসের ভাষা==
==আধুনিক বাংলা গদ্য==
বাংলা গদ্য শুরুতে ছিল সংস্কৃতি গদ্যের চালে রচিত যার প্রমাণ বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ। প্রমথ চৌধুরী বাংলা গদ্যকে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন। [[অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের]] ঘরোয়া’র আলোচনা থেকে প্রমথ চৌধুরীর গদ্যরীতির সুস্পষ্ট পরিচয়ে মেলে। তিনি লিখেছেন :<blockquote>‘শ্রীযুক্ত অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরোয়া’ পড়লুম। চমৎকার বই। ঘরোয়া মানে ঠাকুর পরিবারের ঘরের কথা। . . . অবনীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র, এবং স্বগুণে স্বনামধন্য, সুতরাং তাঁর কোনও পরিচয় দেওয়া অনাবশ্যক। তিনি চিত্রবিদ্যায় একজন আর্টিস্ট বলে দেশে বিদেশে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জ্জন করেছেন। কিন্তু এ পুস্তকে তিনি নিজের কৃতিত্ব বিষয়ে কোনও কথা উল্লেখ করেন নি। তিনি ঠাকুর পরিবারের ঘরোয়া কথা বলেছেন। পূর্ব্বে বলেছি এ-পুস্তক ঠাকুর পরিবারের ইতিহাস নয়, তাই বলে উপন্যাসও নয়।’</blockquote> এ গদ্যকাঠমোর চারিত্র্য ঋজু এবং প্রাঞ্জল। অনেকটাই মুখের ভাষার কাছাকাছি যদিও তাতে প্রকাশক্ষমতা হ্রাস পায় নি।
===রবি ঠাকুরের গদ্য===
[[পরিচয়]]-এর কার্তিক ১৩৩৮ সংখ্যায়[[ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] জগদীশ গুপ্তের ''লঘু-গুরু'' গ্রন্থটি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আলোচনার বিস্তারে রবীন্দ্রনাথ কেবল লঘু-গুরুর মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকেন নি, সাহিত্যেও মান-মর্যাদা নিয়েও দু’চারটি কথা বলেছেন :<blockquote>‘সাহিত্যে সম্মানের অধিকার বহির্নির্দিষ্ট শ্রেণী নিয়ে নয়, অন্তর্নিহিত চরিত্র নিয়ে। অর্থাৎ, পৈতে নিয়ে নয়, গুণ নিয়ে। আধুনিক একদল লেখক পণ করেছেন তাঁরা পুরাতনের অনুবৃত্তি করবেন না। কোনোকালেই অনুবৃত্তি করাটা ভালো নয়, এ কথা মানতেই হবে। নরসংহিতাসম্মত ফোঁটা-তিলকটা, আধুনিকতাও গতানুগতিক হয়ে ওঠে। সেটার অনুবৃত্তিও দুর্বলতা। চন্দনের তিলক যখন চলতি ছিল, তখন অধিকাংশ লেখা চন্দনের তিলকধারী হ’য়ে সাহিত্যে মান পেতে চাইত। পঙ্কের তিলকই যদি সাহিত্যসমাজে চলতি হয়ে ওঠে, তা হলে পঙ্কের বাজারও দেখতে দেখতে চড়ে যায়।’</blockquote> লক্ষ্যণীয় যে, যে রবীন্দ্র-গদ্য মননশীলতায় ঋদ্ধ ; তথাপি তাঁর ভাষার গাঁথুনিতে তেমন কোন জটিলতা পরিদৃষ্ট হয় না। রবীন্দ্রনাথ স্বীয় চিন্তা-চেতনাকে বোধগম্য ক’রে প্রকাশ করার সুললিত একটি ভঙ্গী বেছে নিয়েছিলেন।
 
===জটিল গদ্যরীতি===
পত্র-পত্রিকার পাতা ঘেঁটে দেখা যায় সমসাময়িককালে কবি-সমালোচক [[মোহিতলাল মজুমদার]] তাঁর গদ্যে জটিল বাক্যরীতিকে অবলম্বন করেছিলেন। [[তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়|তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের]] [[কবি]] উপন্যাসটির আলোচনায় এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ মেলে। এর স্ব-পক্ষে দীর্ঘ উদ্ধৃতির বিকল্প নেই। এ আলোচনায় মোহিতলাল লিখেছেন : <blockquote>‘এই যে তারাশঙ্কর, ইনিই যখন জীবনের শিল্পরূপ নির্মাণ করেন, যেমন তাঁহার গল্পগুলিতে করিয়াছেন, তখন যে তাহাতে একটা সম্পূর্ণ নূতন ধরনের রসসৃষ্টি হইবে, ইহাই তো স্বাভাবিক। সে [[রস]] বাস্তবের রসই বটে, কিন্তু তাহার অন্তরালে একটা নির্মম অনাসক্ত তান্ত্রিক-দৃষ্টি আছে; সেই দৃষ্টি যখন নর-নারীর হৃদয়মধ্যেও উঁকি দিয়াছে তখন তাহা খাঁটি আর্টিস্টের নির্মমতায় পরিণত হইয়া, সর্বসংস্কারমুক্তির যে-আনন্দ সেই আনন্দের রস-সৃষ্টি করিয়াছে। ইহাই তারাশঙ্করের আর্ট, আমি তাহাকে একরূপ তান্ত্রিক রস-প্রেরণা বলিয়াছি; ইহার স্থূল দৃষ্টান্ত হিসাবে, তাঁহার গল্পে নর-নারীর প্রেম ও প্রেম-বিকারগুলি স্মরণ করিয়া বলি সেই প্রেমে নীতি-দুর্নীতির সংস্কার নাই, আছে কেবল প্রত্যেক চরিত্রে সেই প্রবৃত্তির রক্তগত সংস্কার।’</blockquote> লক্ষ্য করা যেতে পারে যে, মোহিতলাল মজুমদার একটি বাক্যের ভেতরে একাধিক অনুবাক্যকে ধারন করার প্রয়াস পেয়েছেন। ফলে বাক্য কেবল দীর্ঘায়িত হয়নি, তার গঠনে জটিলতা অনুপ্রবেশ করেছে। তিনি বিশেষ ক’রে মূল বাক্যের জরায়ুতে যতি-চিহ্ন-চিহ্নিত নতুন বাক্য জুড়ে দিয়ে বক্তব্যকে সংহত রূপ দেয়ার প্রয়াস পেয়েছেন। ঊনবিংশ শতকের শেষপাদে বা বিংশ শতকের প্রথমাংশে কা’র হাতে বাংলা গদ্য সাহিত্যে প্রথম এরূপ বাক্যকাঠামো প্রবর্তিত হয়েছিল তা নিরূপণ করার অপেক্ষা রাখে।
 
তবে নিঃসংকোচে বলা চলে যে, এর ফলে বাংলা গদ্যের আঙ্গিক ও স্বাদ বহুলাংশে বদলে গিয়েছিল। অন্যদিকে গদ্য লাভ করেছিল বক্তব্য প্রকাশের গভীরতর শক্তি ও বিস্তৃত অবকাশ। [[জীবনানন্দ দাশ|জীবনানন্দের]] গদ্য এই ঘরানারই উচ্চতর বিকাশ। তাঁর গদ্যভাষাতেও লক্ষ্য করা যায় অনুরূপ দীর্ঘ বাক্যে বহুতর বক্তব্য ধারণের প্রয়াস। অত্যূক্তি হবে না যে এভাবেই বাংলায় প্রবন্ধের যথোপযুক্ত একটি গদ্যভাষার প্রবর্তনা হয়েছিল। কিন্তু জীবনানন্দের রূপবন্ধ ও জটিলতা কেবল বাক্যপ্রকরণ রীতির মধ্যে সূত্রাবদ্ধ নয়, তাঁর শব্দব্যবহার রীতিও অনন্যসাধারণ। শব্দচয়নে তিনি অক্লেশে তৎসম শব্দের আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর ব্যবহৃত সমসাবদ্ধ পদগুলো গদ্যের প্রকাশক্ষমতাকে বিস্তৃত করেছে। তায়র ''কবিতার তথা'' থেকে একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারেঃ <blockquote>. . . আমি বলতে চাই না যে কাব্যের সঙ্গে জীবনের কোনো সম্বন্ধ নেই; সম্বন্ধ রয়েছে, কিন্তু প্রসিদ্ধ প্রকটভাবে নেই। কবিতা ও জীবন একই জিনিসেরই দুই রকম উৎসারণ; জীবন বলতে আমরা সচরাচর যা বুঝি তার ভিতর বাস্তব নামে আমরা সাধারণত যা জানি তা রয়েছে, কিন্তু এই অসংলগ্ন অব্যবস্থিত জীবনের দিকে তাকিয়ে কবির কল্পনা-প্রতিভা কিংবা মানুষের ইমাজিনেশন সম্পূর্ণভাবে তৃপ্ত হয় না; কিন্তু কবিতা সৃষ্টি করে কবির বিবেক সান্তনা পায়, তার কল্পনা-মনীষা শান্তি বোধ করে, পাঠকের ইমাজিনেশন তৃপ্তি পায়। কিন্তু সাধারণত বাস্তব বলতে আমরা যা বুঝি তার সম্পুর্ণ পুণর্গঠন তবুও কাব্যের ভিতর থাকে না; আমরা এক নতুন প্রদেশে প্রবেশ করেছি। পৃথিবীর সমস্ত জল ছেড়ে দিয়ে যদি এক নতুন জলের কল্পনা করা যায় কিংবা পৃথিবীর সমস্ত দীপ ছেড়ে দিয়ে এক নতুন প্রদীপের কল্পনা করা যায়, তাহলে পৃথিবীর এই দিন, রাত্রি, মানুষ ও তার আকাঙ্খা এবং সৃষ্টির সমস্ত ধুলো সমস্ত কঙ্কাল ও সমস্ত নক্ষত্রকে ছেড়ে দিয়ে এক নতুন ব্যবহারের কল্পনা করা যেতে পারে। যা কাব্য;- অথচ জীবনের সঙ্গে যার গোপনীয় সুড়ঙ্গলালিত সর্ম্পূর্র্ণ সম্বন্ধ; সম্বন্ধের ধুসরতা ও নূতনতা। সৃষ্টির ভিতর মাঝে মাঝে এমন শব্দ শোনা যায়, এমন বর্ণ দেখা যায়, এমন আঘ্রাণ পাওয়া যায়, এমন মানুষের বা এমন অমানবীয় সংঘাত লাভ করা যা কিংবা প্রভূত বেদনার সঙ্গে পরিচয় হয়, যে মনে হয় এই সমস্ত জিনিসই অনেকদিন থেকে প্রতিফলিত হয়ে কোথাও যেন ছিল; এবং ভঙ্গুর হয়ে নয়, সংহত হয়ে, আরো অনেকদিন পর্যন্ত, হয়তো মানুষের সভ্যতার শেষ জাফরান রৌদ্রলোক পর্যন্ত, কোথাও যেন রয়ে যাবে; এই সবের অপরূপ উদগীরণ ভিতর এসে হৃদয়ে অনুভুতির জন্ম হয়, নীহারিকা যেমন নক্ষত্রের আকার ধারণ করতে থাকে তেমনি বস্তু-সঙ্গতির প্রসব হতে থাকে যেন হৃদয়ের ভিতরে; এবং সেই প্রতিফলিত অনুচ্চারিত দেশ ধীরে ধীরে উচ্চারণ করে ওঠে যেন, সুরের জন্ম হয়; এই বস্তু ও সুরের পরিণয় শুধু নয়, কোনো কোনো মানুষের কল্পনামনীষার ভিতর তাদের একাত্মতা ঘটে, কাব্য জন্ম লাভ করে।’ </blockquote>
'https://bn.wikipedia.org/wiki/গদ্য' থেকে আনীত