দেবেন্দ্র মোহন বসু: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Adib Khaled (আলোচনা | অবদান) সম্পাদনা সারাংশ নেই |
Adib Khaled (আলোচনা | অবদান) সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
৫১ নং লাইন:
==বসু বিজ্ঞান মন্দির পরিচালনা==
==মহাজাগতিক রশ্মি==
১৯৩৮ সালের একটি সায়েন্স কনফারেন্সে গিয়ে জার্মান নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানী ওয়ালথার বোথের (১৯৫৪ সালে বোথে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন) সাথে আলাপের পর ফটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর কসমিক রে বা মহাজাগতিক রশ্মির প্রভাব বিষয়ক গবেষণার উৎসাহ জাগে দেবেন্দ্রমোহনের। সহকর্মী বিভা চৌধুরির সাথে গবেষণা শুরু করলেন। তখনো পার্টিক্যাল এক্সিলারেটর আবিষ্কৃত হয় নি। ফলে অব-পারমাণবিক (সাব-এটমিক) কণার একমাত্র উৎস সূর্য। ওয়ালথার বোথে তাঁদের পরামর্শ দিলেন ফটোগ্রাফিক ইমালশনকে ক্লাউড চেম্বারে ডিটেক্টর হিসেবে ব্যবহার করে তার ওপর মহাজাগতিক রশ্মির গতিপথের ছাপ পড়ে কি না দেখতে। ফটোগ্রাফিক প্লেট ব্যবহার করলে তার ওপর স্থায়ী ছাপ আশা করা যায়।
==বিভা চৌধুরীর সাথে গবেষণা==
১৯৩৯-১৯৪২ সালের মধ্যে দেবেন্দ্রমোহন ও বিভা চৌধুরি দার্জিলিং এর পাহাড়ে গিয়ে ইলফোর্ড হাফ-টোন ফটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর দিনের পর দিন সূর্যালোকের বিচ্ছুরণ ঘটান। প্লেটের ওপর লম্বা বক্রাকার আয়নিত গতিপথ দেখতে পান। তাঁরা ব্যাখ্যা করে দেখান যে এগুলো প্রোটনের ট্র্যাক বা আলফা কণিকার ট্র্যাক থেকে ভিন্ন। তবে নিশ্চয় এরা অব-পারমাণবিক কণা ‘মেসোট্রন’ এর গতিপথ। তাঁদের ফলাফল প্রকাশিত হয় বিখ্যাত ‘নেচার’ সাময়িকীতে [23]। কিন্তু গতিপথগুলোকে তাঁরা ঠিকমত বুঝতে পারছিলেন না। তাঁরা আরো পরীক্ষা করার জন্য ফটোগ্রাফিক প্লেটগুলোকে এক নাগাড়ে ২০২ দিন সূর্যালোকে রেখে দিলেন। কিন্তু উচ্চ-শক্তির প্রোটন কণার গতিপথ দেখলেন না। তাঁদের গবেষণা এতই চাঞ্চল্যকর ছিল যে ‘নেচার’ সাময়িকীতে তা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হতে থাকে [24]।
দেবেন্দ্রমোহন ও বিভা চৌধুরির গবেষণার প্রতি সবার এত আগ্রহের কারণ হলো অব-পারমাণবিক কণা ‘মেসোট্রন’ বা ‘মেসন’ এর আবিষ্কারের প্রত্যাশা। জাপানী পদার্থবিজ্ঞানী হাইডেকি ইউকাওয়া ১৯৩৫ সালে (নোবেল পুরষ্কার ১৯৪৯) তত্ত্বীয় ভাবে প্রমাণ করেছেন যে নিউক্লিয়ার বলের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু নতুন ধরণের কণা বিনিময় হয় – যে গুলোকে ইউকাওয়া নাম দিয়েছেন এক্সচেঞ্জ পার্টিক্যাল (বিনিময়-কণা)। এই কণাগুলোর ভর হতে হবে ইলেকট্রনের ভরের চেয়ে সামান্য বেশি – কিন্তু প্রোটনের ভরের চেয়ে অনেক কম। ইউকাওয়া হিসেব করে দেখিয়েছেন যে এ ধরণের অব-পারমাণবিক কণার ভর হবে ইলেকট্রনের ভরের ২৭০ গুণ (প্রোটনের ভর ইলেকট্রনের ভরের ১৮৪০ গুণ) [5]। এদের ভর ইলেকট্রনের ভর ও প্রোটনের ভরের মাঝামাঝি বলে এদের নাম দেয়া হয় ‘মেসোট্রন’ – গ্রিক ভাষায় যার অর্থ ‘মধ্যবর্তী’। ‘মেসোট্রন’ থেকে আরো সংক্ষিপ্ত হয়ে এদের নাম হয় ‘মেসন’।
৬৫ ⟶ ৬৮ নং লাইন:
এদিকে ইংরেজ পদার্থবিদ সিসিল পাওয়েল দেবেন্দ্রমোহনের পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষা শুরু করলেন বলিভিয়ায় গিয়ে। কসমিক রশ্মি এখানে ইংল্যান্ডের চেয়ে প্রবল। ইংল্যান্ডের ইলফোর্ড লিমিটেডএ অর্ডার দিয়ে উন্নতমানের ফটোগ্রাফিক প্লেট বানিয়ে নিয়েছেন পাওয়েল। পরীক্ষার ফলাফল হিসেব করে দেখলেন নতুন কণিকার ভর হয়েছে ইলেকট্রনের ভরের ২৭৩ গুণ। ইউকাওয়ার মেসনের ভরের সাথে প্রায় হুবহু মিলে গেছে পাওয়েলের ফলাফল। ১৯৫০ সালে এ কাজের জন্য তিনি নোবেল পুরষ্কার পান। পদ্ধতি জানা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র উন্নতমানের উপাদানের অভাবে বাঙালির হাত ছাড়া হয়ে গেল আরো একটি নোবেল পুরষ্কার।
ভারতে বিজ্ঞানের প্রসারে নিরলস কাজ করে গেছেন দেবেন্দ্রমোহন। ১৯৪৩ সালে প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। সাথে ছিলেন মেঘনাদ সাহা, কে এস কৃষ্ণান, শান্তিস্বরূপ ভাটনগর। ১৯৪৫ সালে নিউক্লিয়ার কেমিস্ট্রি বিশেষজ্ঞ হিসেবে এটমিক এনার্জি কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন। লখনৌতে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন তিনি ১৯৫৩ সালে। সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনার সাথেও জড়িত ছিলেন তিনি। দীর্ঘ আঠারো বছর বিশ্বভারতীর সাম্মানিক কোষাধ্যক্ষ ছিলেন দেবেন্দ্রমোহন। ২৫ বছর ‘সায়েন্স এন্ড কালচার’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ এসোসিয়েশনের। এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। সমরেন্দ্রনাথ সেন ও সুব্বারাপ্পার সাথে যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন ভারতবর্ষের বিজ্ঞানের ইতিহাস। ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব হিস্ট্রি অব সায়েন্স’ সাময়িকীর প্রধান সম্পাদক ছিলেন দেবেন্দ্রমোহন।
|